মাহির জামানের Bajaj Pulsar 150AS এর মালিকানা রিভিউ

This page was last updated on 07-Jul-2024 09:26am , By Shuvo Bangla

শুভেচ্ছা নিবেন, আমি মাহির জামান। এলএলবি শেষ করে বর্তমানে আমি স্বনির্ভর। আমার সবসময় নিজের একটি বাইকের স্বপ্ন ছিলো এবং তা অনেক আগেই পূরণও হয়েছে। এর মধ্যে আমি বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের বাইক ব্যবহার করেছি। সর্বশেষ আমি Bajaj Pulsar 150AS নিয়েছি। আর এখন সেই Bajaj Pulsar 150AS এর মালিকানা রিভিউ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

আমার কাছে মোটরসাইকেল মানেই শুধু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার বাহন নয়, বরং যতোবার আপনি তাতে চড়বেন ততোই অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন। যাহোক, আমি যেসব বাইক ব্যবহার করেছি তার মধ্যে রয়েছে ওয়াল্টন প্রিজম, দুইটি হিরো হাঙ্ক (এসডি ও ডিডি), টিভিএস অ্যাপচি আরটিআর ও লিফান কেপিআর। আর আজ আমি সেই বাইকের রিভিউ দিবো যেটা বর্তমানে আমি গর্বের সঙ্গে চালাচ্ছি—বাজাজ পালসার এএস১৫০, যেটাকে বলা হয় অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস ১৫০। আমি ২০১৬’র জানুয়ারি থেকে বাইকটি ব্যবহার করছি এবং বাংলাদেশে বাইকটি আসার পর প্রথম যে তিনজন বাইকটি কিনে, আমি তাদের একজন।

তখন থেকেই আমার চলাচল স্মুথ ও আরামদায়ক হয়ে গেছে। এবং এখন আমি বাজাজ পালসার এএস১৫০ প্রেমীদের সংগঠন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস ক্লাব এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তাহলে চলুন এই বাইকটি সম্পর্কে ভালোভাবে জানার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করি।

বাজাজ পালসার এএস১৫০ এর ডিজাইন

বাজাজ তাদের আর অ্যান্ড ডি সেক্টরে ব্যাপক উন্নতি করেছে, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস বাইকটি নিজেই যার প্রমাণ। যদিও বাইকটি তার সহোদর ‘এনএস’ এর কাছ থেকে কিছু বৈশিষ্ট্য ধার করেছে, তারপরও এটি দেখতে একেবারে নতুন ডিজাইনের এবং বাজাজ এর নাম দিয়েছে ‘আলফা-মেল স্টাইল’।

তাছাড়া পালসার এএস১৫০-ই বাংলাদেশের প্রথম বাইক যেটাতে আন্ডারবেলি এক্সজস্ট রয়েছে এবং আমার জানামতে, এ ধরনের এক্সজস্ট থেকে খুব কম ধোঁয়া বের হয়। পাশাপাশি এটাতে পা পুড়ে যাওয়ার বা পাইপের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে।

বাজাজ পালসার এএস১৫০ এর ইঞ্জিন/পারফরমেন্স

পালসার এএস১৫০’র ইঞ্জিনটি ১৪৯.৫ সিসির এয়ারকুলড। এর ৪-স্ট্রোক ইঞ্জিনটি ১৭ পিএস ক্ষমতা (এই ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ) @ ৯৫০০ আরপিএমে ও সর্বোচ্চ টর্ক ১৩ নিউটন মিটার @ ৭৫০০ আরপিএমে উৎপন্ন করতে পারে। আমি ৪০ কিমি/লিটার মাইলেজ পাচ্ছি। এএস১৫০’র ওজন ১৪৩ যা এর আগের প্রজন্মের বাইকগুলোর চেয়ে হালকা।

ইঞ্জিনটি বেশ স্মুথ ও গিয়ারবক্সও বেশ ভালো কার্যকরী। তাছাড়া যতোক্ষণই চালানো হোক না কেনো কোনো পাওয়ার লসও হয় না। আমি যমুনা সেতুতে সর্বোচ্চ ১৩০ কিমি/ঘণ্টা গতি তুলেছি। তাছাড়া আমি এএস ১৫০’র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ‘জিক্সার’-এর সঙ্গে বেশ কয়েকবার ড্র্যাগ রেসও করেছি, তাতে মাঝারি বা উচ্চ রেঞ্জে এএসের কাছে পাত্তাই পায়নি।

বাজাজ পালসার এএস১৫০ এর হ্যান্ডেলিং ও ব্রেকিং

এই ক্যাটাগরিতে এএস১৫০-ই প্রথম বাইক যেটাতে পেরিমিটার ফ্রেম ও প্রজেক্টর হেডলাইট রয়েছে। পেরিমিটার ফ্রেমের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, কারণ এর কারণে বাইকের হ্যান্ডেলিং সর্বোচ্চ মানের হয়েছে। এবং আমি আমার আপগ্রেড করা টায়ার লাগানোর পর কর্নারিং করে বেশ মজা পাচ্ছি। কারণ এর স্টক টায়ার মোটেও অতো ভালো ছিলো না। আমি সেগুলোর পরিবর্তে পিছনে সিয়েট অল ওয়েদার ১২০/৮০-১৭ ও সামনে পিরেলি ১০০/৮০-১৭ সাইজের টায়ার লাগিয়েছি।

এখন ব্রেক বেশ ভালো হয়েছে, যদিও স্টক টায়ার থাকার সময় এতোটা কার্যকরী ছিলো না। টায়ার আপগ্রেড করার পর ভালো ব্রেক পেলেও, আমার মনে হয়, ডিস্কে বাইবার ও নিসিন এর ক্যালিপার দিলে বেশি ভালো হতো।

বাজাজ পালসার এএস১৫০ এর সাসপেনশন ও সিটিং

এএস১৫০’র সাসপেনশন সিস্টেম যথেষ্ট আরামদায়ক, এটা সহজেই রাস্তার উঁচুনিচু ও খানাখন্দে মানিয়ে নেয়। তাছাড়া পালসার এএস১৫০-কে অফরোডে চালানোও তেমন কঠিন নয়। এর ১৭০ মিমি গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স রাস্তার যেকোনো ধরনের বাধা ডিঙিয়ে যেতে পারে। আমার তো মনে হয় এটা যেকোনো বিচারে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো।

এর সিটিং পজিশন খুবই আরামদায়ক—না তো খুব বেশি স্পোর্টি বা খুব বেশি ক্যাজুয়াল। বরং এটা লম্বা ভ্রমণের জন্য খুবই উপযুক্ত। পিলিয়নের সিটও মোটামুটি আরামদায়ক।

বাজাজ পালসার এএস১৫০’র ভালো দিক

১. ব্যালান্স ও হ্যান্ডেলিং খুব ভাল।

২. ইঞ্জিন ক্ষমতা অসাধারণ। ভাইব্রেশন বা অতিরিক্ত গরম হওয়ার ঝামেলা নেই।

৩. ৫৫ ওয়াটের শক্তিশালী হেডলাইট।

৪. গতির দিক থেকে এই ক্যাটাগরিতে সবচেয়ে দ্রুত।

৫. জ্বালানি সাশ্রয়ী।

৬. লম্বা ভ্রমণের উপযুক্ত, পিঠে বা অন্য কোনো ব্যথা হয় না। পাশপাশি পাওয়ার লসও নেই। (নিজে পরীক্ষিত)

৭. ব্রেকিং খুব ভালো, তবে স্টক টায়ারের অতোটা ভালো না।

বাজাজ পালসার এএস১৫০’র খারাপ দিক

১. বাইকটির উচ্চতা কিছুটা বেশি, যার ফলে ৫-৫.৭” উচ্চতার মানুষদের কিছুটা সমস্যা হবে।

২. স্টক টায়ারের সাইজ ও পারফরমেন্স ভালো না।

৩. স্টক মাডগার্ড খুব একটা ভালো না হওয়ার ফলে উঁচুতেও কাদা পড়ে।

৪. ইঞ্জিনে ১.২ লিটার ইঞ্জিন ওয়েল লাগে, যা একটু ঝামেলার, কারণ ১.২ লিটারের কোনো বোতল বাজারে পাওয়া যায় না।

বাজাজ পালসার এএস১৫০ – রায়

বাংলাদেশের বর্তমান মোটরসাইকেল মার্কেটের পরিপ্রেক্ষিতে আমি এটা বলতেই পারি, অর্থের সঠিক ব্যবহার, কারণ আপনি যে টাকা খরচ করবেন তার বিনিময়ে সর্বোচ্চ মান ও পারফরমেন্স পাবেন এএস১৫০ থেকে। যদিও বাইকটির আরো কিছু জিনিস উন্নত করা প্রয়োজন, তবুও টাকার তুলনায় যথেষ্ট ভালো বাইক। চালাকি করেই এর দাম রাখা হয়েছে ২,৪১,৫০০ টাকা!

  আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com - এই ইমেইল এড্রেসে।