কিছু ১২৫ সিসি বাইকের দাম সেগমেন্টের অন্যান্য বাইকের তুলনায় বেশি – কিন্তু কেন?

This page was last updated on 09-Sep-2025 12:16pm , By Badhan Roy

একজন সাধারণ বাংলাদেশি আমাদের মনে একটি প্রশ্ন বরাবরই আসে- KTM RC 125, Duke 125, Kawasaki Ninja 125, CFMOTO NK125, Yamaha R125, MT 125, এই বাইকগুলো ১২৫ সিসি হওয়া স্বত্তেও কেন অন্যান্য বাইকের তুলনায় দাম অনেক বেশি হয়ে থাকে? 

সাধারণত বাংলাদেশের বাজারে ১.৩০-১.৮ লাখ টাকার ভিতরে ১২৫ সেগমেন্টের বাইকগুলো পাওয়া গেলেও দেখা যায় উল্লেখিত বাইকগুলোর দাম ৩-৫ লাখ এবং ক্ষেত্রবিশেষে তার থেকেও বেশি হয়ে থাকে। এই লেখায় আমরা জানার চেষ্টা করব এই বাইকগুলোর দাম এত বেশি কেন এবং এই বাইকগুলো আসলে কাদের জন্য। 

কিছু ১২৫ সিসি বাইকের দাম সেগমেন্টের

কিছু ১২৫ সিসি বাইকের দাম সেগমেন্টের অন্যান্য বাইকের তুলনায় বেশি – কিন্তু কেন?

প্রথমত, আমরা যে ধরণের ১২৫ সিসি বাইকের সাথে পরিচিত সেগুলো হলো বেসিক কম্যুটার বাইক। বাজাজ ডিসকভার, হোন্ডা এসপি সাইন, টিভিএস স্ট্রাইকার, হিরো গ্ল্যামার এই বাইকগুলো এই সেগমেন্টে বেশ জনপ্রিয় বাইক। সাধারণত ১২৫ সিসি বাইক চিন্তা করলে আমাদের চোখে যেমন টা ভাসে তা হচ্ছে খুবই সিম্পল বেসিক লুক, সাধারণ এয়ার কুলড ইঞ্জিন, চিকন চাকা, ফ্লাট সিট এবং খুবই বেসিক কিছু ফিচারস।

এই ধরণের বাইকের টার্গেটেড কাস্টমার ও হয়ে থাকে সাধারণত মধ্যবয়সী মানুষজন যারা বাজেটের মধ্যে প্র্যাক্টিকালিটি, লো মেইনটেইনেন্স এবং লো মাইলেজের কথা চিন্তা করে এই বাইকগুলো কিনে থাকেন। যদিও বর্তমানে hero xtreme 125,  bajaj pulsar ns 125 সহ এই ধরণের বাইকগুলো লুক ও ফিচারস এ অন্য বাইকগুলোর তুলনায় অনেক এগিয়ে আছে এবং সব বয়সী মানুষ এই বাইকগুলোর বেশ প্রশংসা ও করেছেন। তারপরেও এই বাইকগুলোর দাম কিন্তু অতিরিক্ত বলে মনে হয় না।  

কিন্তু KTM RC 125, Duke 125, Kawasaki Ninja 125, CFMOTO NK125, Yamaha R125, MT 125 এই ধরণের বাইকগুলো আন্তর্জাতিক মার্কেটে “এন্ট্রি লেভেল স্পোর্টস/ন্যাকেড” বাইক হিসেবে পরিচিত। একটি স্পোর্টস বাইকের যা যা বৈশিষ্ট্য সবই এই ধরণের বাইকে লক্ষ্য করা যায়। যেমন ইলেক্ট্রনিক ফুয়েল ইনজেকশন (EFI), টিউনড পাওয়ারফুল ইঞ্জিন, লিকুইড কুলিং সিস্টেম, মোটা চাকা, এগ্রেসিভ লুক এবং বিল্ড কোয়ালিটি সহ এই বাইকগুলো অনেক রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর ফলে পারফরমেন্স অরিয়েন্টেড মেশিন হিসেবে তৈরি করা হয়। 

এছাড়াও সময়ের সাথে সাথে যুগোপযোগী বিভিন্ন আপডেট ফিচারস যেমন টিএফটি মিটার, ডুয়াল চ্যানেল এবিএস, ট্র্যাকশন কন্ট্রোল, এসিস্ট এন্ড স্লিপার ক্লাচের মত ফিচার গুলো এইধরণের বাইকগুলোতে দেওয়া হয়। যার কারনে এই বাইকগুলো বেসিক কম্যুটার থেকে অনেক আলাদা হয়ে থাকে এবং ম্যানুফ্যাকচারিং কস্ট ও অনেক গুণ বেড়ে যায়। তাই এই বাইকগুলোর দাম ও প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়।

স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে যেহেতু এই প্রাইসরেঞ্জে ১৫০-৩৫০ সিসি পর্যন্ত বর্তমানে প্রচুর বাইক এভেইলেবল তাই বাংলাদেশের সাধারণ বাইকাররা এই বাইকগুলোর প্রতি তেমন একটা আগ্রহী নন। আন্তর্জাতিক মার্কেটে এই বাইকগুলোর টার্গেটেড কাস্টমার ধরা হয় ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সী তরুনদের। সিসি লিমিট না থাকার পরেও ইউরোপে মোটরসাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স সরাসরি দেওয়া হয় না। 

বয়স, অভিজ্ঞতা আর মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন সিসি অনুযায়ী ধাপে ধাপে দেওয়া হয়। এইজন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের সর্বপ্রথম A1 ক্যাটাগরির লাইসেন্স করতে হয় আর A1 ক্যাটাগরির লাইসেন্স গ্রহণের শর্ত হিসেবে বাইকের সিসি ১২৫ এবং ১৫ হর্সপাওয়ারের বেশি পাওয়ার না এমন বাইকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিভিন্ন রোড কন্ডিশনে একজন প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে রাইডিং প্র্যাকটিস করতে হয়। যার কারনে ইউরোপের তরুণ প্রজন্ম কে টার্গেট করে বাইকগুলো পাওয়ারফুল এবং ফিচারস এ পরিপূর্ণ করে প্রোপার ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে বানানো হয়ে থাকে। যেটি এই বাইকগুলোর দাম বেশী হওয়ার আরেকটি কারন। 

তাহলে এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, এই বাইকগুলো তাহলে কাদের জন্য আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাইকগুলো এত টাকা দিয়ে কেনা উচিৎ কি না? প্রশ্ন টির উত্তর আসলে ভাষায় পরিপূর্ণভাবে দেওয়া সম্ভব না। যদি কখনো ১২৫ সিসির প্রিমিয়াম বাইকগুলো কখনো টেস্ট রাইড করেন এর উত্তর আপনি বুঝতে বা সহজে অনুধাবন করতে পারবেন। তবে এটুকু বলাই যায়, এই বাইকগুলো সৌখিন বাইকারদের জন্য যারা বাইকের সিসি এর থেকে পারফরম্যান্স এর দিকে বেশি আগ্রহী এবং একটি পাওয়ারফুল পাওয়ার আউটপুট ও প্রিমিয়াম ফিল নিতে চান। 

আর পারফরম্যান্স ওরিয়েন্টেড বাইক নিতে চাইলে বাইকের দাম গুলো রিজনেবল বলেই মনে হওয়া উচিৎ। তারপরেও প্রস্তুতকারক কোম্পানীগুলোর কাছে আমাদের প্রত্যাশা- ধীরে ধীরে এই চমৎকার বাইকগুলোর দাম যতটা পারা যায় কমিয়ে সাধারণ বাইকারদের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে তারা পদক্ষেপ গ্রহন করবেন। 

বাইক বিষয়ক জানা ও অজানা তথ্যের জন্য বাইকবিডির সাথেই থাকুন।