Lifan KPR এর বাংলাদেশে পথচলা - জনপ্রিয়তার কারন । বিস্তারিত
This page was last updated on 16-Nov-2023 04:42pm , By Ashik Mahmud Bangla
রাসেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২০০৪ সাল থেকে অটোমোবাইল ব্যবসায় যাত্রা শুরু করে। যাত্রা শুরুর পর থেকে দেশীয় অটোমোবাইল বাজারে রাসেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড অনেক খ্যাতি অর্জন করে। কোম্পানিটি দ্রুত তাদের কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের বাইকারদের মনে বেশ আস্থার জায়গা অর্জন করে নেয়। রাসেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বাংলাদেশে Lifan Brand এর মোটরসাইকেলের একমাত্র এজেন্ট এবং পরিবেশক। বর্তমানে তারা বাংলাদেশে লিফানের বাইকগুলো এসেম্বল করে থাকে ।
LIFAN এর নাম শুনলে বাংলাদেশের বাইকারদের মনে যে নামটি সবার আগে আসে সেটা হচ্ছে Lifan KPR। লিফান কেপিআর বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বাজারে অনেক জনপ্রিয় একটা স্পোর্টস বাইক। একটা সময় ছিলো যখন বাংলাদেশের মানুষ চাইনিজ বাইকের উপর আস্থা রাখতে পারতো না। কিন্তু রাসেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বাংলাদেশে Lifan KPR এর মাধ্যমে সেই ধারনাটি সম্পূর্ণ বদলে দিতে সক্ষম হয়। বর্তমান সময়ে Lifan KPR এর বাইকটিকে নামীদামী ব্রান্ডের স্পোর্টস বাইকের সাথে তুলনা করা হয়। কিন্তু এই সফলতা পাওয়াটা মোটেও সহজ ছিলো না। লিফান কেপিয়ার কিভাবে এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠলো ? এই জনপ্রিয়তার মূল কারন কি ? আজ আমি এই সম্পর্কে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
Lifan KPR 150 এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজারে লিফানের KPR সিরিজের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম দেখাতে বাইকটির যে দিকটা সবার নজর কেড়েছিলো সেটা হচ্ছে বাইকটির ইউনিক লুকস। বাজারে থাকা অন্যান্য স্পোর্টস বাইকের সাথে এই বাইকের ফ্রন্ট লুকস এর কোন মিল নেই।
Lifan KPR 150 সিসি বাইকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে 150 সিসির 4 Stroke ইঞ্জিন। ইঞ্জিন থেকে ম্যাক্সিমাম 14.5 Bhp @ 8000 RPM পাওয়ার এবং 14.8 NM @ 6500 RPM টর্ক উৎপন্ন হয়। বাইকটিতে Fuel Supply সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে Carburetor এবং ইঞ্জিনে Liquid Cooled রয়েছে। লিকুইড কুলড ইঞ্জিন ব্যবহার করার ফলে আপনি যখন হাইওয়েতে বাইক চালাবেন তখন ইঞ্জিন থেকে ভালো পারফরম্যান্স পাবেন এবং ইঞ্জিন থেকে পাওয়ার লস করবে না।
বাইকটির সামনে ব্যবহার করা হয়েছে Telescopic Suspension এবং পেছনে ব্যবহার করা হয়েছে Monoshock Suspension। এর সাথে এই বাইকটির সামনের চাকায় ব্যবহার করা হয়েছে 300 Mm ডিস্ক ব্রেক। সামনে এত বড় সাইজের ডিস্ক ব্রেক থাকার ফলে আপনি বাইকটি থেকে বেশ ভালো ব্রেকিং পাবেন।
কেন Lifan KPR বাংলাদেশে এতো বেশি জনপ্রিয় ?
বর্তমানে বাংলাদেশে লিফান কেপিআর এর বেশ কিছু মডেল রয়েছে,সেগুলো হচ্ছে Lifan KPR 165R EFI, Lifan KPR 165R Carburetor, Lifan KPR 165R, Lifan KPR 150 । লিফান তাদের কেপিআর বাংলাদেশের বাজারে ২০ হাজার ইউনিট সেল করেছে। লিফান কেপিআর এর এই জনপ্রিয়তার পেছনে অনেক কারন রয়েছে। সেগুলো হচ্ছেঃ
১- আমার মতে Lifan KPR আমাদের দেশের বাজারে জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান কারন হচ্ছে বাইকটির দাম , আপনি যদি আমাদের দেশের বাজারে থাকা অন্যান্য স্পোর্টস বাইকের সাথে এই বাইকটির মূল্য তুলনা করেন তাহলে দেখতে পাবেন বাইকটির মূল্য অন্য সব স্পোর্টস বাইকের থেকে কম। মূল্য সাধ্যের মধ্যে থাকায় অনেকের কাছে বাইকটি বেশ শক্ত একটা জায়গা তৈরী করে নিয়েছে।
২- লিফানের ইঞ্জিন সম্পর্কে বর্তমানে আমরা বাইকার সবাই কম বেশি জানি। আমাদের দেশের রাস্তায় লিফানের ইঞ্জিন পরীক্ষিতভাবে খুব ভালো পারফরম্যান্স দেয়। Lifan KPR এর ইঞ্জিন যেমন পাওয়ারফুল ঠিক তেমন এই ইঞ্জিনের স্থায়ীত্বকাল ও অনেক ভালো। আর যেই বাইকের ইঞ্জিন ভালো সেই বাইক জনপ্রিয় হবে এটায় সবাভাবিক।
৩- স্পোর্টস বাইক অনুযায়ী Lifan KPR এর বাইকগুলোর বিল্ড কোয়ালিটি বেশ ভালো। ভালো বিল্ড কোয়ালিটি থাকার ফলে এটি বাইকারদের মনে একটা অন্য রকম জায়গা করে নিয়েছে।
৪- রাসেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সব সময় বাইকারদের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকার চেষ্টা করে , এতে করে বাইকারদের মধ্যে একটা আস্থার জায়গা স্থাপন হয়।
Lifan KPR বাইকটি ট্যুরিং এর জন্য কেমন ?
আমরা যখন একটা স্পোর্টস বাইক কিনি কম বেশি সবার একটা ইচ্ছা থাকে বাইকটা নিয়ে লং ট্যুর দেয়ার। আর আমাদের দেশে লিফান কেপিয়ার বাইকটি ট্যুর করার জন্য বেশ জনপ্রিয়। Lifan KPR বাইকটি হাইওয়েতে আপনাকে কখনো নিরাশ করবে না। ট্যুরিং বাইক হিসেবে লিফানের জনপ্রিয়তার কারনগুলো হচ্ছেঃ
১- আপনি যখন বাইক হাইওয়েতে চালাবেন তখন বাইকের রেডি পিকাপ থাকাটা খুব জরুরী। আপনি যখন হাইওয়েতে কোন বড় যানবাহন ওভারটেক করবেন তখন বাইকের ইঞ্জিনে যদি পাওয়ার না থাকে সেক্ষেত্রে আপনি বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। কিন্তু Lifan KPR বাইকটির রেডি পিকাপ বেশ ভালো, যার ফলে এই বাইকটি নিয়ে আপনি হাইওয়েতে পাওয়ার সংক্রান্ত কোন সমস্যার সম্মুখীন হবেন না।
২- আমাদের দেশে অনেক বাইক আছে যেগুলো হাইওয়েতে দীর্ঘ সময় চালানোর পর বাইকের ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স ড্রপ করে। কিন্তু এই বাইকটির ইঞ্জিন দীর্ঘ সময় টানা চালানোর পরও আপনাকে একই রকমের পারফরম্যান্স দিবে। এর ফলে লিফান কেপিআর বাইকটি নিয়ে বাইকাররা ভ্রমণ করে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
৩- হাইওয়ে রাইড হউক অথবা পাহাড়ে রাইড বাইকের ব্রেকিং এবং ব্যালেন্স ভালো থাকা খুব জরুরী। Lifan KPR বাইকটি যারা ব্যবহার করেন তারা সবাই জানেন কেপিয়ারের ব্রেকিং এবং ব্যালেন্স অনেক ভালো।
৪- এই সব কিছুর পাশাপাশি আরও একটা জিনিস বাইকের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ , সেটা হচ্ছে বাইকের বিল্ড কোয়ালিটি। পাহাড়ে ভ্রমণ করতে গেলে বাইক পরে যাওয়া খুব সাধারণ একটা ব্যাপার। কিন্তু বাইক হাল্কা পরে গেলেই যদি ভেংগে যায় বা বডি কিট ফাকা হয়ে যায় এমন বাইক কখনো ট্যুরের জন্য উপযুক্ত না। কিন্তু এই দিকে লিফান কেপিআর অনেক এগিয়ে , আমাদের দেশে এটা পরিক্ষিত Lifan KPR এর বিল্ড কোয়ালিটি কতোটা ভালো।
৫- স্পোর্টস বাইক হলেও অন্যান্য স্পোর্টস বাইকের তুলনায় এই বাইকটির সিটিং পজিশন আমার কাছে কম্ফোর্টেবল মনে হয়েছে। তাই দীর্ঘ সময় রাইডের পরও আমি এই বাইকটি নিয়ে শরীরে ব্যাথা অনুভব করি নি।
৬- বাইক নিয়ে বিভিন্ন ধরনের রেকর্ড করা বাইকারদের একটা সখে পরিণত হয়েছে। টিটি থেকে শুরু করে বাংলাদেশের লং ট্যুরগুলোতে অনেক কেপিআর বাইকের ব্যবহার করা হয়েছে। আর বাইকটির পারফরম্যান্স অসাধারণ ছিলো।
৭- Lifan KPR বাইকটি দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরও বাংলাদেশি বাইকার সম্পন্ন করেছে। আর লাদাখ ট্যুর করা কোন সহজ কাজ না সেটা আমরা বাইকাররা সবাই জানি। এভাবেই সময়ের সাথে চায়না বেশি দিন যায় না এই চিন্তাটি রাসেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড মানুষের মন থেকে দূর করতে সক্ষম হয়েছে।
৮- বাংলাদেশে কেপিআর বাইক ১ লাখ কি.মি ব্যবহার করারও রেকর্ড রয়েছে। এজন্যই Lifan KPR এখন আমাদের দেশে এত বেশি জনপ্রিয়।
দেখতে দেখতে Lifan KPR বাংলাদেশের বাজারে অনেকটা সময় অতিক্রম করেছে। ভালো বিল্ড কোয়ালিটি, পাওয়ারফুল ইঞ্জিন পারফরম্যান্স, স্থায়িত্বকাল সব মিলিয়ে Lifan KPR এখন বাইকারদের আস্থার শীর্ষে রয়েছে। Lifan KPR বাইকটি নিয়ে ইউজারদের মতামত জানতে এই লিংকে ভিজিট করুন। সব সময় ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করুন এবং নিয়ন্ত্রিত গতিতে বাইক রাইড করুন।