QJ Monster SRK 180 টেষ্টরাইড রিভিউ – টিম বাইকবিডি রিভিউ

This page was last updated on 23-Jul-2025 05:29pm , By Saleh Bangla

হ্যালো রাইডারস! আমরা টিম BikeBD সম্প্রতি আবারও রাস্তায় নেমেছিলাম বাজারে সদ্য লঞ্চ হওয়া একটি স্ট্রিটফাইটার মোটরসাইকেল টেষ্টরাইডে। মোটরসাইকেলটি ইতিমধ্যেই বাইকারদের মধ্যে বেশ আলোড়ন তুলেছে। সেটি হলো QJ Monster SRK 180, যেটি একটি বেশ আকর্ষণীয় ডিজাইনের স্পোর্টি স্ট্রিট-নেকেড মোটরসাইকেল। আর এটি Speedoz Limited বাংলাদেশের বাজারে এনেছে, এবং এবার আমরা সেই বাইকটি বিস্তারিতভাবে টেষ্টরাইড করেছি।

এই টেষ্টরাইডে আমরা নতুন আঙ্গিকে মোটরসাইকেলটি মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছি। এটিকে বিভিন্ন ধরণের টেরেইন ও সারফেসে চালিয়েছি এবং বেশকিছু স্ট্রেসফুল রাইডে পুশ করেছি যাতে বাইকটির সঠিক পারফরমেন্স, ফিচার, স্ট্রাকচার, এবং রোড বিহেভিয়ার সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পেতে পারি। তো সেই অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে আমরা হাজির হয়েছি বাইকটির বিস্তারিত টেষ্টরাইড রিভিউ নিয়ে। চলুন, দেখা যাক QJ Monster SRK 180 আসলে কতটা সক্ষম, কি কি দুর্বলতা রয়েছে, আর বাস্তবে এটি কেমন পারফর্ম করেছে।

 

QJ Monster SRK 180 টেষ্টরাইড রিভিউ – ওভারভিউ

QJ Monster SRK 180 একটি অত্যন্ত স্টাইলিশ ও স্পোর্টি নেকেড বাইক। বাইকটির ম্যানুফ্যাকচারার চায়নার অন্যতম সুপরিচিত মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারার ও ব্র্যান্ড QJ Motors, যাদের মালিকানায় আরো রয়েছে Keeway ও Benelli ব্র্যান্ডগুলি। বাইকটির কমপ্যাক্ট ডিজাইন এবং এ্যাগ্রেসিভ রাইডিং ইরগোনোমিকস এটিকে ফান রাইড ও সিটি কমিউটিংয়ের জন্য আদর্শ করে তুলেছে। এছাড়ার বাইকটির চমৎকার ডিজাইন রাস্তায় সহজেই সবার নজর কাড়ে।

বর্তমানে বাংলাদেশে QJ মোটরসাইকেলের মার্কেটিং ও ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্বে রয়েছে Speedoz Limited। সেইসূত্রে Speedoz Limited, QJ Monster SRK 180 মোটরসাইকেলেটি বাংলাদেশের হার্ডকোর স্ট্রিটফাইটার ফ্যানদের জন্য বাজারে নিয়ে এসেছে। আর সেই সুযোগে আমরা মোটরসাইকেলেটি নিয়ে একটা এক্সটেনসিভ টেষ্টরাইড সম্পন্ন করেছি। আর সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমরা এখন তুলে ধরছি মোটরসাইকেলেটির রিয়েল রোডটেষ্ট পারফরম্যান্সের বিস্তারিত বিবরণ।

 

QJ Monster SRK 180 – লুকস ও ডিজাইন

ডিজাইনের দিক থেকে QJ Monster SRK 180 একটি অত্যন্ত টাইট ও কমপ্যাক্ট ডিজাইনের বাইক, যার গঠনজুড়ে রয়েছে টাইট মাসল, শার্পনেস, এবং এজিনেস। বাইকটির মূল আকর্ষণ শুরু হয় মূলত: এর এ্যাগ্রেসিভ লুকের হেডল্যাম্প অ্যাসেম্বলি থেকে। সামনের হুইল মাডগার্ড এবং এক্সপোজড গোল্ডেন ব্যারেল USD সাসপেনশনের ওপরে বসানো হেডল্যাম্প ইউনিটটিতে রয়েছে ফুল এলইডি লাইট এবং এলইডি ডিআরএল সেটআপ।

হেডলাইটটির ঠিক ওপরে একটি বিকিনি কাওলিংয়ে বসানো রয়েছে বাইকটির ওডোমিটার। এটি একটি ফুল ডিজিটাল ইউনিট যেটি বেশ কিছু প্যারামিটার ডিসপ্লে করে, সেইসাথে এর স্ক্রিন থিমটিও পরিবর্তনযোগ্য। বাইকটির ২৮মিমি ডায়ামিটারের পাইপ হ্যান্ডেলবারটি বেশ সলিড, সেইসাথে মানসম্পন্ন সুইচ গিয়ারসহ স্পোর্টি আপরাইট পজিশনে বসানো, যা বেশ এ্যাগ্রেসিভ রাইডিং প্রমোট করে।

এরপর ফুয়েল-ট্যাঙ্কটি বাইকটির আরেকটি নজরকাড়া অংশ। এটি বেশ মাসকুলার,  আকারে বড়, দুইপাশে শার্ক-টুথ শেপ দুটো শার্প শ্রাউড রয়েছে। আর ফুয়েল ট্যাঙ্কটি সিটের দিকে ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে এসেছে, ফলে বিশেষ করে এ্যাগ্রেসিভ রাইডিংয়ের সময় রাইডার যেন হাঁটু দিয়ে বাইকটি সহজে গ্রিপ করে নিতে পারেন। এরপর বাইকটির সিটটি একটি স্টেপ-আপ নেকেড স্প্লিট সিট, যার পিছনের অংশ একদম নেকেড, এবং কোনো গ্র্যাবরেইল নেই। 

ফলে বাইকটির টেইল একেবারেই নেকেড। এর প্যাসেঞ্জার সিটটি ছোট এবং সেটির পেছনের নিচের প্যানেলে একটি ছোট এলইডি টেইল-ল্যাম্প বসানো রয়েছে। তবে আলাদা একটি এক্সটেনশন আর্ম রিয়ার টার্ন-ইন্ডিকেটর এবং নাম্বারপ্লেট হ্যাঙ্গার ধরে  রেখেছে। বাইকটির অন্যান্য অংশের মধ্যে রয়েছে চমৎকার একটি আপরেইজড এক্সজস্ট, স্পোর্টি ইঞ্জিন আন্ডারবেলি প্যান, এবং স্পোর্টি অ্যালয় হুইল সেটআপ। সব মিলিয়ে বাইকটির ডিজাইন এ্যাগ্রেসিভ, শার্প, এজি এবং অত্যন্ত কমপ্যাক্ট।

 

QJ Monster SRK 180 – ফ্রেম, হুইল, ব্রেক ও সাসপেনশন সিস্টেম

QJ Monster SRK 180 একটি কমপ্যাক্ট মোটরসাইকেল। এটি স্টিল ট্রেলিস ফ্রেমে ডিজাইন করা। এর হুইলে রয়েছে অ্যালয় রিমসহ টিউবলেস টাইপ স্ট্রিট টায়ার, যেখানে সামনের হুইলে রয়েছে 100/80-17” মাপের এবং পেছনে 130/70-17” মাপের টায়ার।

ব্রেকিং সিস্টেমে বাইকটির সামনের ও পেছনের উভয় হুইলেই রয়েছে হাইড্রলিক ডিস্ক ব্রেক। সাসপেনশন সিস্টেমে সামনে রয়েছে ইউএসডি হাইড্রলিক টেলিস্কোপিক ফর্ক সাসপেনশন, আর পেছনে রয়েছে ৭-স্টেপ অ্যাডজাস্টেবল মনো-সাসপেনশন।

 

QJ Monster SRK 180 – ইঞ্জিন প্রোফাইল ও ফিচারস

একটি ডেডিকেটেড স্ট্রিটফাইটার মোটরসাইকেল হিসেবে QJ Monster SRK 180 মূলত: ফান রাইডিং এবং ডেইলি কমিউটিংয়ের জন্য ডিজাইন করা। বাইকটিতে রয়েছে 179.8cc সিঙ্গেল-সিলিন্ডার, ফোর-স্ট্রোক, লিকুইড-কুলড, ফুয়েল-ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন। ইঞ্জিনটিতে রয়েছে SOHC 4-valve, আর হাইয়ার কম্প্রেশন রেশিও এর সিলিন্ডারের বোর ও স্ট্রোক যথাক্রমে 64.0mm x 55.9mm.

এখানে ক্লাচ সিস্টেম ম্যানুয়াল মাল্টি-প্লেট ওয়েট ক্লাচ। গিয়ারে রয়েছে ৬-গিয়ার ট্রান্সমিশন সিস্টেম যার প্যাটার্ন 1-N-2-3-4-5-6। বাইকটির স্টার্ট সিস্টেম শুধুমাত্র ইলেকট্রিক স্টার্ট সিস্টেমে, কিকস্টার্ট অপশন নেই। আর পারফরম্যান্স ফিগারের দিক থেকে, ইঞ্জিনটি সর্বোচ্চ 18.2BHP @ 9,500RPM পাওয়ার এবং 15.2Nm @ 6,000RPM টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম।


QJ Monster SRK 180 টেষ্টরাইড রিভিউ – টিম BikeBD’র অভিজ্ঞতা

QJ Monster SRK 180 বাংলাদেশের বাজারে নতুন আসা একটি সলিড স্ট্রিট-নেকেড বাইক। এটি বেশ এ্যাগ্রেসিভ স্ট্রিটফাইটার প্রোফাইল সমৃদ্ধ। ফলে এর রাইডিং, কন্ট্রোলিং, এবং হ্যান্ডেলিং অত্যন্ত ক্ষিপ্র ও উপভোগ্য। পাশাপাশি বাইকটির ডিজাইন ও স্টাইলিং এতটাই এ্যাগ্রেসিভ যে রাস্তায় সহজেই সবার নজর কাড়ে। তো বাইকটি আমরা নিবিঢ়ভাবে টেষ্টরাইড করেছি এবং আমাদের পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নগুলি এবার তুলে ধরছি।

 

ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি

একটি আধুনিক স্ট্রিটফাইটার হিসেবে QJ Monster SRK 180 বাইকটির কমপ্যাক্ট স্ট্রাকচার এবং এর লুক ও স্টাইল এক কথায় দুর্দান্ত। বাইকটির এক্সটেরিয়রে রয়েছে রেজর-শার্প এবং এজি ডিজাইনের এ্যাগ্রেসিভ এক সমন্বয়, যা একে আরও বেশি স্টাইলিশ করে তুলেছে।

বাইকটির সামনের দিকে তাকালেই নজরে পড়ে শার্প-লুকের ডুয়াল-পিট এলইডি হেডল্যাম্প, গোল্ডেন ইউএসডি ফর্ক, আপরেইজড হ্যান্ডেলবার, এবং নেকেড ককপিট ডিজাইন। আর এর মাসকুলার ফুয়েল ট্যাঙ্ক, স্প্লিট স্টেপ-আপ সিট, রেইজড এক্সজস্ট, এবং ইঞ্জিন আন্ডারবেলি প্যান মিলিয়ে বাইকটি একটি টাইট-প্যাকড ও প্রিমিয়াম অবয়ব ধারন করেছে।

সেইসাথে বাইকটি কেবল দেখতেই আকর্ষনীয় নয়, বরং এর বিল্ড-কোয়ালিটি ও ক্রাফ্টসম্যানশিপও আমাদের পর্যবেক্ষণে বেশ ভালো মনে হয়েছে। সামগ্রিকভাবে, কিছু সমালোচনার জায়গা থাকলেও বাইকটির বিভিন্ন অংশ ওয়েল-ফিনিশড এবং শক্তপোক্ত। বিশেষ করে বাইকটিতে বসে এর হ্যান্ডেলবার ধরে প্রথমেই যে প্রিমিয়াম ফিল-টা পাওয়া যায়, তা রাইডারের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিতে সক্ষম।

 

ফিচারস ও এনহান্সমেন্টস

QJ Monster SRK 180 সাব-২০০সিসি সেগমেন্টে বলা যায় একটি ফিচার-প্যাকড মোটরসাইকেল। QJ Motor বাইকটিতে কিছু দারুণ ফিচার সমন্বয় করেছে, যেগুলো বাইকটিকে এই ক্লাসে অন্যান্য বাইক থেকে কিছুটা আলাদা করে তুলেছে। বাইকটির উল্লেখযোগ্য কিছু ফিচার হলোঃ

* ফুল এলইডি হেডলাইট ও টেইল লাইট সেটআপ।

* ইউএসডি (USD) ফ্রন্ট ফর্ক সাসপেনশন।

* মনোশক রিয়ার সাসপেনশন।

* সামনের ও পেছনের চাকায় হাইড্রলিক ডিস্ক ব্রেক এবং ডুয়াল-চ্যানেল এবিএস।

* ডিজিটাল ওডো কনসোল, মোবাইল কানেক্টিভিটি, ও পরিবর্তনযোগ্য ডিসপ্লে থিম।

* ইউএসবি গ্যাজেট চার্জিং সুবিধা।

* সাইড স্ট্যান্ড ইঞ্জিন কাট-অফ ফিচার।

 

এইসব ফিচার একটি আধুনিক মোটরসাইকেলের জন্য যেমন আকর্ষনীয়, তেমনি এসবের ব্যবহারিক দিকও অনস্বীকার্য। তবে আমাদের মতে বাইকটির কিছু কিছু ফিচারে আরো উন্নতির সুযোগ রয়েছে। প্রথমত, বাইকটির এলইডি হেডলাইটের আলো শহরের জন্য যথেষ্ট হলেও লো-বিম অনেকটাই দুর্বল। তবে হাই-বিম অপেক্ষাকৃত বেশ ভালো আলো দেয়।

সবমিলিয়ে সাধারন চলাচলে স্টক হেডলাইট সেটআপ মোটামুটি যথেষ্ট হলেও, ভিন্ন রাইডিং কন্ডিশনে চলাচলের জন্য অক্সিলারি লাইট ব্যবহারের প্রয়োজন হবে। দ্বিতীয়ত, এই বাইকটির টেইল লাইটের সাইজ একটু বেশিই ছোট, যার ফলে বিশেষকরে দিনের ‌উজ্জল আলোতে সেটি একটু দুরে থাকা যানবাহনের স্পষ্ট দৃষ্টি আকর্ষনে অক্ষম।

বাইকটিতে হাইড্রলিক ডিস্ক-ব্রেক এবং ডুয়াল-চ্যানেল এবিএস থাকলেও এবিএস অন/অফ সুইচিং অপশন নেই। এটি থাকলে বিভিন্ন রাইডিং কন্ডিশনে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যেত। আর বাইকটির এ্যাগ্রেসিভ প্রোফাইল বিবেচনায় এতে অন্তত দুটি রাইডিং মোড থাকলে পারফরম্যান্স ও ইকোনোমি রাইডিংয়ে চমৎকার ব্যালান্স করা সম্ভব হতো।

বাইকটির ডিজিটাল এলসিডি ওডো কনসোলটি যথেষ্ট ব্রাইট এবং দিন-রাত উভয় সময়েই স্পষ্ট দেখা যায়। এতে অটো স্ক্রিন-থিম চেঞ্জ ফিচারও রয়েছে, যা কার্যকরী একটি ফিচার। পাশাপাশি, এতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাইডিং ইনফোও দেখা যায় এবং হ্যান্ডেলবারে থাকা ডেডিকেটেড সুইচ দিয়ে এগুলো নেভিগেট করা যায়।

তবে একটা দিক আমাদের কিছুটা হতাশ করেছে – ওডো স্ক্রিনে যেসব ইনফরমেশন দেখানো হয়, সেগুলোর পজিশনিং খুব একটা আই-ফ্রেন্ডলি মনে হয়নি। বরং রাইডিংয়ের সময় মাঝে মাঝে প্রয়োজনীয় প্যারামিটারটি খুঁজে নিতে হয়েছে, যেটি রাইডিংয়ের সময় যেমন বিভ্রান্তিকর তেমনি বিপজ্জনক একটি বিষয়।

 

সিটিং, রাইডিং, কন্ট্রোলিং ও হ্যান্ডলিং বিহেভিয়ার

একটি কমপ্যাক্ট স্ট্রিটফাইটার হিসেবে QJ Monster SRK 180-এ রয়েছে অত্যন্ত এ্যাগ্রেসিভ সিটিং ও রাইডিং অ্যারেঞ্জমেন্ট। বাইকটিতে রয়েছে বেশ এ্যাটাকিং আপরাইট রাইডিং এরগোনোমিকস - যেখানে স্পোর্টি আপরাইট সিট, আপরাইট হ্যান্ডেলবার, এবং স্পোর্টসবাইকের মতো রিয়ার-এ্যালাইনড রাইডার ফুটপেগ। আর এই সবকিছু রাইডারকে একটি এ্যাগ্রেসিভ ও এ্যাটাকিং রাইডিং পজিশনে রাখে।

এই রকম একটি সেটআপ একটি বাইকে বেশ এ্যাজাইল হ্যান্ডলিং এবং কন্ট্রোলিং ক্যারেক্টারিস্টিকস দেয়, যা শহরের ভিড়ভাট্টা বা ডেইলি কমিউটিংয়ের জন্য বেশ উপযোগী। সেইসাথে, এই সেটআপ রাইডারকে বাইকটি সর্বোচ্চ সীমায় পুশ করতে এবং ফান রাইড উপভোগ করতে প্ররোচিত করে।

টুইস্টেড রোড, ব্যস্ত সিটি ট্রাফিক, বা প্লেইন সারফেসে এ্যাগ্রেসিভ রাইডিংয়ের জন্য এই বৈশিষ্ট্যগুলো নিঃসন্দেহে কার্যকর। তবে এর বিপরীতে, এই ধরনের এ্যাগ্রেসিভ সিটিং ও রাইডিং মোড লং-হাইওয়ে রাইডের ক্ষেত্রে অনেকটাই কমফোর্টের অভাব তৈরি করে। কেননা, দীর্ঘ সময় এই ভঙ্গিমায় রাইডে শারীরিক ক্লান্তি ও চাপ অনুভূত হয়, যা লং-ট্যুরিংয়ের জন্য অসুবিধাজনক।

 

টিম বাইকবিডি’র টেষ্টরাইড এক্সপেরিয়েন্স

QJ Monster SRK 180 একটি বেশ চটপটে এবং প্রাণবন্ত ধরণের মোটরসাইকেল। এটি ওজনে মাত্র ১৪৫ কেজি, সিটের উচ্চতা ৭৯০ মিমি, এবং গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৯০ মিমি। আপনি যখনই বাইকটিতে বসে হ্যান্ডেলবার ধরবেন, তখনই অনুভব করবেন যে বাইকটি চলতে প্রস্তুত, যাস্ট রেডি-টু-রোল। আর বাইকটি নিয়ে আমাদের টেষ্টরাইড এক্সপেরিয়েন্সও মোটামুটি সেরকমই। তবে বিভিন্ন রোড ও ওয়েদার কন্ডিশনে বেশকিছু স্ট্রেসফুল রাইডে আমরা কিছু ভিন্নধর্মী রাইডিং এক্সপেরিয়েন্সও পেয়েছি।

যাহোক, বাইকটির হালকা ওজন এবং এ্যাগ্রেসিভ আপরাইট রাইডিং পজিশনের সাপেক্ষে, সিটি রোডে বিশেষ করে টাইট ট্রাফিক কন্ডিশনে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে। এর রাইডিং অনেকটাই খোলা মাঠে একটা খরগোশের অবাধে ছুটে বেড়ানোর মতোই বেশ দুরন্ত ধরণের। সেই রাইডিং ছিল সত্যিই উপভোগ্য। বাইকটি সরু ও প্যাঁচানো রাস্তাগুলোতেও চমৎকার ব্যালান্স ও কন্ট্রোল নিশ্চিত করে। রাইডিংয়ের সেই সময়গুলোতে বাইকটির ব্রেক, সাসপেনশন, এবং ডুয়াল-চ্যানেল এবিএস সিস্টেম আমাদের দুর্দান্ত সাপোর্ট দিয়েছে।

তবে প্যাসেঞ্জার নিয়ে রাইডিংয়ে বাইকটা কিছুটা স্ট্যাবিলিটি হারায়, যদিও সিটি রাইডিংয়ে সেটা ম্যানেজেবল। তবে এ্যাগ্রেসিভ রাইডিংয়ে প্যাসেঞ্জার যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়ে যাবেন। কেননা, বাইকটির পেছনের সিটটি খুবই ছোট, এবং রাইডার সিটের তুলনায় এটির উচ্চতা অনেকটাই বেশি, উপরন্তু এতে কোনো গ্র্যাবরেইল নেই। ফলে হাইওয়ে রাইডে এই বাইকে প্যাসেঞ্জার নিয়ে চলার অভিজ্ঞতা একেবারেই বাজে।

আর হাইওয়েতে এই বাইক রাইডিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলতে গেলে – কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাইকটির রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স অত্যন্ত মজার। বিশেষ করে আপনি যখন বাইকটিকে এর সর্বোচ্চ সীমায় পুশ করবেন, অথবা দ্রুতগতির যানবাহনকে দ্রুত পাশ কাটাবেন, তখন SRK 180 নিঃসন্দেহে মজাদার একটি রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স দেবে। 

তবে স্মুথ ও প্লেইন সারফেসে এতে রাইডিং বেশ মজার হলেও এটি লং-রাইডের ক্ষেত্রে পীড়াদায়ক, বিশেষ করে বাজে রোড ও ওয়েদার কন্ডিশনে। কেননা, লং-হাইওয়ে রাইডে লম্বা সময়ে বাইকটির এ্যাগেসিভ রাইডিং পজিশনের কারনে রাইডারের হাতের কব্জি, কাঁধ, ও হাঁটুর জয়েন্টে বেশ ব্যথা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে হাঁটুর এ্যাগ্রেসিভ ফোল্ডিং এ্যাঙ্গেলটির কারণে, আর পেছনে প্যাসেঞ্জার থাকলেও এই কষ্ট দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

সবমিলিয়ে আমাদের মূল্যায়নে বলা যায়, QJ Monster SRK 180 সিটি রাইডের জন্য একটি দারুণ ফান রাইডিং মেশিন, এবং সলো রাইডিংয়ের জন্যও আদর্শ। তবে সিটি রাইডিংয়ে প্যাসেঞ্জার বহনে তেমন সমস্যা না থাকলেও, কিন্তু হাইওয়ে রাইড বা লং-ট্যুরে প্যাসেঞ্জার সহ চালানোর জন্য এটি উপযুক্ত নয়। সবশেষে, এই বাইকটি ৫ ফুট ২ ইঞ্চি থেকে ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার রাইডারদের জন্য বেশি মানানসই।

 

ব্রেকিং ও সাসপেনশনের রেসপন্স

QJ Monster SRK 180 একটি ফিচার প্যাকড মেশিন, যেটি মূলত প্লেইন সারফেসে এ্যাগ্রেসিভ রাইডিং উপভোগ করার সুবিধা দেয়। তবে আমাদের টেষ্টরাইডে বাইকটির ব্রেকিং সিস্টেম প্রায় সব ধরণের রাইডিং কন্ডিশনে, এমনকি প্রতিকূল আবহাওয়াতেও দারুণ সাপোর্ট দিয়েছে। আমাদের বিভিন্ন ধরণের স্ট্রেসফুল রাইডে, সামনের ও পেছনের দুটো ব্রেক থেকেই আমরা চমৎকার পারফরম্যান্স পেয়েছি। পাশাপাশি, এর ডুয়াল-চ্যানেল এবিএস ও টেষ্টরাইডের সময় অসাধারণ কাজ করেছে।

আর এটির সাসপেনশন রেসপন্সের ক্ষেত্রেও আমরা টেষ্টরাইডগুলোতে সাসপেনশনগুলো থেকে ভালো পারফর্ম্যান্স পেয়েছি। এ্যাগ্রেসিভ স্ট্রিটফাইটার হিসেবে এগুলো তুলনামূলকভাবে একটু হার্ড টিউনিংয়ের, যাতে করে শহরের মসৃণ রাস্তায় এ্যাগ্রেসিভ রাইডিং সহজ হয়। আর এই স্টিফার সাসপেনশন সেটআপ দ্রুত স্পিড তুলতে, কুইক মুভমেন্টে, এবং টাইট টার্নিংয়ের সময় ভালো সাপোর্ট দেয়।

মূলত: এসব কারণেই সিটি রাইড বা হাইওয়ের স্বাভাবিক রাইডিংয়ে রাইডার তেমন কোনো অস্বস্তি অনুভব করবেন না। তবে, বাইকটির এ্যাগ্রেসিভ ইরগনোমিকসের কারণে লম্বা সময়ের রাইডে বা বাজে রোড কন্ডিশনে অস্বস্তির সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, এ্যাগ্রেসিভ ডিজাইনের কারণে বাইকটির পেছনের চাকার কিছুটা স্কিড করার প্রবণতা রয়েছে। বিশেষ করে অসম‍ান রাস্তায়, হঠাৎ হার্ড ব্রেক করলে, টাইট কর্নারিংয়ের সময়, বা ভেজা ও খারাপ রাস্তায় এটি বেশি অনুভব করা যায়। তবে সব মিলিয়ে ব্রেকিং এবং সাসপেনশন সিস্টেমে SRK 180 যথেষ্ট পরিণত।

 

ইঞ্জিন পারফরম্যান্স ও অন-রোড এক্সপেরিয়েন্স

QJ Monster SRK 180 একটি বিলো-কোয়ার্টার-লিটার ক্যাটাগরির মোটরসাইকেল, যার ১৮০সিসির ইঞ্জিন যথেষ্ট পাওয়ারফুল ও ব্যালান্সড পারফরম্যান্স দেয়। এর টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন আমরা আগেই উল্লেখ করেছি। শুরুতেই বলতেই হয়, বাইকটির প্রথম থেকেই বেশ দ্রুত রেসপন্স করে এবং যেকোনো গিয়ার কন্ডিশনে স্মুথলি রান করে। গিয়ার রেশিও ও একদম ব্যালান্সড এবং ক্লাচ অপারেশন অসাধারণ রকম মসৃণ।

এই ইঞ্জিনটির অপারেশন এতটাই স্মুথ যে, টপ-এন্ড আরপিএমেও তেমন কোনো ভাইব্রেশন অনুভব হয় না। ক্লাচ ইন এবং আউট করার সময় কোনো রকম বাজে আওয়াজ বা ক্লিকিং শোনা যায় না, এবং গিয়ার চেঞ্জও একেবারে নিখুঁত ও ঝামেলাহীন। ইঞ্জিনটির এই বৈশিষ্ট্যটি বিশেষভাবে প্রশংসনীয়, কারণ অনেক চায়না-মেইড বাইকে ক্লাচ ও গিয়ারে বাজে শব্দ হয় ও রাফনেসও অনেক বেশি থাকে।

আমরা ইঞ্জিনটির এই স্বাচ্ছন্দ্যময় পারফরম্যান্সে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি, আ্রর এটি বাইকটির এ্যাগ্রেসিভ প্রোফাইলের সঙ্গে ভালোভাবে ম্যাচ করে গেছে। তবে একটি দিক আমাদের কিছুটা বিভ্রান্ত করেছে - তা হলো এর থ্রটল রেসপন্স। বাইকটির থ্রটল রেসপন্স এর পুরো আরপিএম রেঞ্জে লিনিয়ার নয়। বরং মিড আরপিএম রেঞ্জে থটল রেসপন্স অনেকটা ড্রপ করে।

ফলে লোয়ার ও হাইয়ার আরপিএম রেঞ্জে বাইকটির থ্রটল রেসপন্স চমৎকার হলেও মিড আরপিএম রেঞ্জে থ্রটল রেসপন্স একেবারেই ফ্ল্যাট হয়ে যায়। এই সময় ইঞ্জিন হালকা হয়ে যায় এবং অনেকটা Airy বা বাতাসে চলে বলে মনে হয়। সেসময়ে কার্যকর পাওয়ারও অনেকটা কম থাকে। এটি সম্ভবত ECU টিউন ইস্যু, যেটি আমাদের রাইডিং কন্ডিশন অনুযায়ী রি-টিউন করা প্রয়োজন হতে পারে। তবে সবমিলিয়ে এটি কিছুটা হতাশাজনক।

আরেকটি বিষয় হলো, এই ইঞ্জিনটির যথাযথ পারফর্মেন্সের জন্য সবসময়ই কোয়ালিটি ফুয়েল প্রয়োজন। নিম্নমানের ফুয়েলে বাইকটির থ্রটল রেসপন্সে বেশ বাজে প্রভাব পড়ে এবং তখন ইঞ্জিন বেশ হার্শ হয়ে যায়। এছাড়াও বাইকটিতে হালকা থ্রটল ল্যাগের সমস্যাও রয়েছে, যা খারাপ ফুয়েল ব্যবহারে আরও বেড়ে যায়। তবে এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, ইঞ্জিনটি যথেষ্ট রেসপনসিভ এবং নি:সন্দেহে এটি একটি ফান-রাইডিং মেশিন।

 

রোড-টেস্টেড পারফরম্যান্স ফিগারস

SRK 180 একটি এ্যাগ্রেসিভ স্ট্রিট-নেকেড মেশিন, যেটি মূলত: এ্যাগ্রেসিভ ফান রাইডিং প্রমোট করে। ফলে এর ডিজাইন ও ফিচার লং হাইওয়ে রাইডের জন্য অনেকটাই সীমিত। এটি বিশেষ করে শহরের রাস্তায় দুর্দান্ত পারফর্ম করে। তাই বাইকটি দ্রুত এক্সিলারেট করতে পারে, কিন্তু টপস্পিড একটি নিরাপদ সীমায় মধ্যে সীমাবদ্ধ।

আমরা একাধিকবার বাইকটির টপস্পিড পরীক্ষা করেছি, এবং প্রায় প্রতিবারই এটি ১১৬ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত অনায়াসে উঠে গেছে, তবে তার ওপরে যেতে বাধা পায়। তবে বেশ কয়েকবার ক্রমাগত চেষ্টার পর অবশেষে আমরা সর্বোচ্চ ১২৫ কিমি/ঘন্টা স্পর্শ করতে পেরেছি, এবং আমাদের ধারণা যথাযথ ECU আপডেট সম্ভব হলে এই টপস্পিড সহজেই পাওয়া সম্ভব হতো।

ফুয়েল ইকোনমি নিয়ে কথা বলতে গেলে, QJ Monster SRK 180 আমাদের কিছুটা মিশ্র ফলাফল দিয়েছে। আমরা বাইকটিকে হাইওয়েতে বাজেভাবে পুশ করেছি আর সিটি ট্রাফিকেও যথেষ্ট অত্যাচার করেছি। এই সময় বাইকটির ফুয়েল ইকোনমি গড়ে ২২–২৪ কিমি/লিটার পর্যন্ত নেমে এসেছিল। তবে যখন শান্তচিত্তে স্বাভাবিক থ্রটল টুইস্ট করে স্মুথ রাইডিং করেছি, তখন ইকোনমি বেড়ে ২৬–২৮ কিমি/লিটার পর্যন্ত উঠেছে।

 

টিম বাইকবিডি’র মূল্যায়ন

সবশেষে টিম বাইকবিডি’র চূড়ান্ত মূল্যায়নের পালা। আমাদের পর্যবেক্ষণ ও রোডটেষ্ট অনুযায়ী আমরা বলতে পারি, QJ Monster SRK 180 একটি টাইট-প্যাকড মেশিন, যেটিকে সরাসরি সিটি বাইক বা সলো রাইডিং উপযোগী বাইক বলা যেতে পারে। তবে এমন নয় যে এটি নিয়ে আপনি হাইওয়ে রাইডে যেতে পারবেন না। তবে সত্যিকার অর্থে এটি স্ট্রেসফুল বা লং রাইডিংয়ের জন্য তেমন উপযুক্ত নয়। সেইসাথে এতে প্যাসেঞ্জার নিয়ে রাইডও বেশ কষ্টকর ও নিরুৎসাহযোগ্য। 

তবে আপনি যদি ৫ ফুট ২ ইঞ্চি থেকে ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার মধ্যে কেউ হন এবং এটিকে একটি “ফান মেশিন” হিসেবে দেখেন, তবে সিটি বা হাইওয়েতে সলো রাইডে এই বাইক আপনাকে অনন্য এক অভিজ্ঞতা দেবে। এর কুইক থ্রটল রেসপন্স, ইনস্ট্যান্ট টর্ক ডেলিভারি, স্মুথ গিয়ার শিফট এবং লাইট ক্লাচ অপারেশন সবকিছুই আপনি চরম উপভোগ্ করবেন। আর টাইট স্পেসে স্লিপ করে গলে যেতে যেতে, ইউ-টার্ন নিতে নিতে, এবং অসাধারণ গ্রিপ ও কন্ট্রোল উপভোগ করতে করতে চমৎকার এক রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স পাবেন তা নিশ্চিত করে বলা যায়।