প্রতি মাসে মোটরসাইকেলের যে ১০টি অংশ চেক করা উচিত

This page was last updated on 21-Aug-2025 01:51pm , By Rafi Kabir

মোটরসাইকেল শুধু একটি যানবাহন নয়, বরং একজন রাইডারের প্রতিদিনের চলাচলের বিশ্বস্ত সঙ্গী। প্রতিদিনের যাতায়াত হোক বা দীর্ঘ ভ্রমণ জন্য বাইকের যত্ন নেওয়া । অনেক সময় আমরা বাইকের যত্নের বেলায় অবহেলা করি, যার ফলে অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা বা বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তাই প্রতি মাসে কিছু নির্দিষ্ট অংশ নিয়মিত চেক করলে বাইক রাইডিং এ যেমন আলাদা মজা পাওয়া যায়, তেমনি রাইডও হয় ঝামেলাহীন। সেই সব কথা ভেবে নিচে বাইকের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Also Read: বাইকের কালার নষ্ট হওয়ার কারন এবং সমাধান 

১. ইঞ্জিন অয়েল (Engine Oil)

ইঞ্জিন অয়েল হলো বাইকের আমরা যেমন খাবার খেয়ে থাকি তেমনি ইঞ্জিন অয়েল ও বাইকের খাবার। এটি ইঞ্জিনের ঘর্ষণ(Friction) কমায়, ঠান্ডা রাখে এবং মসৃণ পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে। প্রতি মাসে অয়েলের লেভেল ও রং চেক করতে হবে। সাধারণত ২,০০০-৩,০০০ কিলোমিটার পর বা ম্যানুফ্যাকচারার গাইডলাইন অনুযায়ী অয়েল পরিবর্তন করা উচিত। কালো বা পোড়া গন্ধযুক্ত অয়েল হলে দ্রুত পরিবর্তন জরুরি।

২. ব্রেক সিস্টেম (Brake System)

ব্রেক ছাড়া নিরাপদ রাইড কল্পনাই করা যায় না। ডিস্ক ব্রেকের ফ্লুইড(fluid) লেভেল ও ড্রাম ব্রেকের শু নিয়মিত চেক করা উচিত। ব্রেক করার সময় কোনো শব্দ হলে বা ব্রেক ধরতে সময় বেশি নিলে তাৎক্ষণিক সার্ভিস নিতে হবে। ব্রেক লাইন ও কেবলও ফাটা বা লিক হচ্ছে কিনা দেখতে হবে।

৩. টায়ার ও টায়ার প্রেশার (Tyre & Tyre Pressure)

টায়ারের গ্রিপ ও ট্রেড ভালো আছে কিনা চেক করতে হবে। টায়ারের প্রেশার কম হলে জ্বালানি খরচ বাড়ে, বেশি হলে গ্রিপ কমে যায়। ম্যানুফ্যাকচারার নির্ধারিত PSI অনুযায়ী (সাধারণত সামনের 28–32, পেছনের 30–36 PSI) প্রেশার রাখতে হবে। টায়ারে ফাটল, কাঁটা বা বেশি ঘষা আছে কিনা দেখাও জরুরি।

৪. চেইন ও স্প্রকেট (Chain & Sprocket)

প্রতি মাসে চেইনের টেনশন সঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে। অতিরিক্ত ঢিলে বা শক্ত হলে পারফরম্যান্স খারাপ হয় এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। নিয়মিত লুব্রিকেশন দিলে চেইন দীর্ঘস্থায়ী হয়। স্প্রকেটের দাঁত ক্ষয়ে গেলে পরিবর্তন করতে হবে।

৫. ব্যাটারি (Battery)

বাইকের বিদ্যুৎ সরবরাহের মূল উৎস হলো ব্যাটারি। ব্যাটারির ভোল্টেজ ও ওয়াটার লেভেল (যদি ওয়েট ব্যাটারি হয়) চেক করতে হবে। ব্যাটারি টার্মিনালে মরিচা পড়েছে কিনা দেখা উচিত। হেডলাইট বা হর্ন দুর্বল হয়ে গেলে তা ব্যাটারি সমস্যার ইঙ্গিত।

৬. লাইট সিস্টেম (Headlight, Tail Light & Indicators)

রাতের রাইডে হেডলাইট ঠিকমতো জ্বলছে কিনা তা দেখা জরুরি। টেইল লাইট ও ব্রেক লাইট ঠিকমতো কাজ করছে কিনা দেখুন। ইন্ডিকেটর খারাপ থাকলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। মাসে একবার হলেও সব লাইট পরীক্ষা করা উচিত।

৭. এয়ার ফিল্টার (Air Filter)


এয়ার ফিল্টার এ ময়লা জমলে ইঞ্জিনে পর্যাপ্ত বাতাস ঢুকতে পারে না, ফলে মাইলেজ কমে যায়। শহরের ধুলাবালির কারণে মাসে অন্তত একবার পরিষ্কার করা উচিত। খুব বেশি নোংরা হলে নতুন ফিল্টার লাগাতে হবে।

৮. সাসপেনশন (Suspension)


খারাপ রাস্তায় রাইডিং এর সময় সাসপেনশন সবচেয়ে বেশি কাজ করে। সামনের শক অ্যাবজর্বার বা পেছনের সাসপেনশন লিক করছে কিনা চেক করতে হবে। সাসপেনশন ঠিকঠাক না থাকলে বাইকের ভারসাম্য নষ্ট হয়।

৯. কেবল ও কন্ট্রোলস (Clutch, Accelerator, Brake Cable)


ক্লাচ, অ্যাক্সেলেটর ও ব্রেক কেবল নিয়মিত স্মুথলি চলছে কিনা দেখা দরকার। কেবল ঢিলে বা শক্ত হলে অ্যাডজাস্ট করতে হবে। কোনো কেবল ছিঁড়ে গেলে মাঝপথে বিপদ হতে পারে, তাই মাসে একবার অবশ্যই চেক করুন।

১০. নাট-বোল্ট ও অন্যান্য ছোট পার্টস


বাইকের ফ্রেম, ফুটরেস্ট, সাইড স্ট্যান্ড, মিরর, হ্যান্ডেলবারের নাট-বোল্ট টাইট আছে কিনা দেখা উচিত। ভাইব্রেশনের কারণে এগুলো ঢিলা হয়ে যেতে পারে। মাসে একবার সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে জেনারেল চেকআপ করলে এসব সমস্যা ধরা পড়ে যায়।


নিয়মিত এই ১০টি অংশ মাসে একবার চেক করলে বাইকের পারফরম্যান্স যেমন ভালো থাকবে, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও অনেক কমে যাবে। মনে রাখবেন, “সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ মানেই নিরাপদ রাইড”। একজন সচেতন বাইকার সবসময় নিজের সঙ্গীকে ভালো রাখেনতাহলেই পথচলাও হয় আনন্দময়।