হোন্ডা সিবি ট্রীগার ৪,০০০কিমি মালিকানা রিভিউ - ফজলে রাব্বি

This page was last updated on 16-Jul-2024 04:00am , By Saleh Bangla

আমি ফজলে রাব্বি। আজকে আমি যে বাইকটির রিভিউ দিতে যাচ্ছি,সেটা হল হোন্ডা কোম্পানির হোন্ডা সিবি ট্রিগার। আমার বাইকটি মাত্র ৪০০০ কিমি পথ পারি দিয়েছে। এত অল্প সময় চালিয়ে আসলে একটি বাইকের ভাল খারাপ দিক বোঝা খুব মুশকিল তারপরেও চেষ্টা করেছি এর মাঝে যে অভিজ্ঞতাটা হয়েছে তা শেয়ার করার।

 হোন্ডা সিবি ট্রীগার ৪,০০০ কি.মি. মালিকানা রিভিউ 

Honda-cb-trigger-150-honda-cb-trigger বাইকের প্রতি ভালবাসার শুরু সেই এসএসসি পর থেকেই। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম একটা বাইক কেনার, অবশেষে ২০১৭ সালের ২১ এ সেপ্টেম্বর সেই স্বপ্নটাই সত্যি হয়ে ধরা দেয়। আমার জীবনের প্রথম বাইক। হোন্ডা সিবি ট্রীগার দিয়েই আমার জীবনের বাইক চালানো শেখারও হাতেখড়ি। বাইক কেনার আগে আমি আসলে বাইক চলাতেই পারতাম না। আমার বাইকটি পাবনার হোন্ডা এর শোরুম থেকে কেনা হয়েছিল ১৮৬০০০/- টাকা দিয়ে। প্রথমেই বাইকের প্রাথমিক জিনিস গুলো জেনে নেয়া যাক। এর ইঞ্জিন এবং অন্যান্য ফিচার সম্পর্কে যেনে নেওয়া যাক।

হোন্ডা সিবি ট্রীগার ১৫০সিসি  বাইকটি ১৫০ সিসি বিশিষ্ট-এয়ার কুলড ইঞ্জিন,যা প্রায় ১৪ হর্স পাওয়ার শক্তি উতপন্ন করতে পারে। আর ইঞ্জিন কার্বুরেটর বিশিষ্ট যা এই সেগমেন্ট এর অন্যান্য বাইকের মতই।গাড়িটিতে ফুয়েল ধরে প্রায় ১২ লিটার মত আর ২ লিটার রিজার্ভ;অর্থাৎ মোট ১৪লিটার। Honda-sub-trigger-150-price-in-bangladesh বাইকটি প্রায় ১৩ নিউটন টর্ক উতপন্ন করে ৬৫০০ ঘুর্নন গতিতে, যা আপনাকে কোন সময় নিরাশ করবে না। সহজেই আপনি গতি তুলতে পারবেন। বাইকটি ৫ গিয়ার বিশিষ্ট, যার প্রথমটি নিচে এবং বাকি ৪টি উপরে। বাইকটির সবচেয়ে আকর্ষণিয় জিনিস হল এর ড্যাশবোর্ড মিটার যা সম্পুর্ন ডিজিটাল, এবং এই দাম এ সব বাইকের মধ্যে আলাদা। মিটারটি আরপিএম,স্পিড মাইলেজ,সময় এবং তেলের পরিমাপ নির্দেশ করে। কিন্তু এতে কোন গিয়ার ইন্ডিকেটর সুইচ নেই।বাইকটির হ্যান্ডেল বার অন্যান্য কমিউটার বাইকের মতই তবে বেশ আরামদায়ক। বাইকটির সামনের চাকায় ২৪০ মিমি ডিস্ক ব্রেক রয়েছে যা উচ্চ গতিতে ভাল ব্রেক কনফিডেন্স দেবে আপনাকে। আর পেছনে রয়েছে ২২০ মিমি ড্রাম/আপনি ডিস্ক সহও নিতে পারবেন।এর উচ্চতা প্রায় ৭৬০ মিমি, যা একটু খাটো(৫'৪") এর নিচের কারো জন্য একটু অসুবিধার কারন হতে পারে।

হোন্ডা সিবি ট্রীগার ১৫০সিসি সাপেনশন এবং সিট গাড়ির সাসপেনশন খুবি আরাম দায়ক, আর সবচেয়ে ভাল কথা এর পেছনের বা রেয়ার সাসপেনশন হল মনোশক সাসপেনশন যা আরামদায়ক ভ্রমনের জন্য খুবি কাজে দেয়,ভাংঙ্গা চোরা রাস্তা হউক বা ভাল রাস্তা সব রাস্তায় আপনি অনেক ভাল অনুভব পাবেন।

Honda-All-Trigger-User-Reviews

তবে নতুন অবস্থায় সাসপেনশন বেশ শক্ত থআকবে আপনাকে ১৫০০-২০০০ কিমি পর্যরন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে এর আসল মজা পেতে। আর এর সিট বেশ চউড়া যা দির্ঘ ভ্রমনে ক্লান্তি বা পিঠে/কোমরে ব্যাথা থেকে অনেকাংশেই আপনাকে আরাম দিবে।সিটিং পজিশন খুবি ভাল কমিউটার বাইক হিসেবে, আপনাকে ড্রাইভ করার সময় কখনই বাকা হয়ে বা আনকম্ফোর্ট হয়ে চালাতে হবে না।

গাড়ির ইলেক্ট্রিক সুইচ গুলো মোটামুটি মানের এবং ওয়ারিং বেশ ভাল মানের বলেই মনে হয়েছে, বাইকটির টেইল লাইট সম্পুর্ন এল ই ডি এবং দুইটি ধাপে বিন্যাস্ত যা বেশ সুন্দর দেখায়।তবে গাড়ির হেডলাইটের আলো পিকাপের সাথে সম্পর্কিত, আর রাত্রে রাইড করার পক্ষে তেমন ভাল না কারন অনেক কম আলো হয়,এর জন্য আপনাকে অবশ্যই বাড়িত লাইট লাগাতে হবে।যারা নিয়মিত হাইওয়ে রাইড করেন,একটা ভাল ফগ লাইট ব্যাবহার করলে আলো নিয়ে ফেমন সমস্যা করতে হয় না আর।ইন্ডিকেটর লাইট গুলাও বেশ ভাল এবং টেকশই।

গাড়ির প্লাস্টিক বডি কিট গুলোও বেশ ভালমানের সহজে ভেংঙ্গে যাওয়া বা নষ্ট হউয়ার কোন ভয় নেই।গাড়ির সামনের এবং পেছনের উভয় টায়ারই টিউবলেস। সামনে ৮০/১০০/১৮ এবং পেছনে ১১০/৮০/১৮ এম আর এফ টায়ার ব্যাবহার করা হয়েছে যা ব্রেকিং কন্ট্রোলে ভাল সহায়তা করে আর চাকা ফিউব্লেস হউয়ায় বেশি গতিতেও ভাল ব্রেকিং ও কন্ট্রল এর কনফিডেন্স দেয়। Honda-All-Trigger-Ownership-Review

বাইকটির এক্সেলারেশন খুবি ভাল, মোটামুটি দ্রুতই এর স্পিড তুলতে পারবেন।আর স্পিড কম/বেশি সব অবস্থাতেই ভাল পারফর্মেন্স পাওয়া যায় কন্ট্রোলে।সব আরপিএম এবং স্পিডে খুব কম ভাইব্রেশন অনুভুত হয়, যদি আপনি সঠিক গ্রেড এবং মানের ইঞ্জিন ওয়েল ব্যাবহার করেন তাইলে মাইলেজ+এক্সেলারেশন খুব ভাল পাবেন।

এতে ইঞ্জিন স্মুথ আর সাইলেন্ট থাকবে। মাইলেজ বলতে গেলে ১৫০ সিসি সেগমেন্ট এ ট্রিগার মাইলেজের জন্য বেশ ভালোবর্তমানে আমি ৪৪-৪৮ এর মধ্যে মাইলেজ পাচ্ছি। বাইকটির টপ স্পিড জদিও সেভাবে যাচাই করে দেখিনি,আর আমি অতো স্পিডে বাইক চালাইও না,তবুও একবার ১০০ পর্যন্ত তুলে আর সাহস হয়নি তোলার।

বাইকটির মেইনটেইন্স এর কথা বলতে গেলে খুবি কম খরচ ৪০০০ কিমি এর মধ্যে শুধু তিনবার চেইন টাইট দেয়া ছাড়া আর শুধু জ্বালানী খরচ ছাড়া আর কোন খরচ নেই,এমনকি আপনাকে ইঞ্জিন ওয়েল ফিল্টার বা তেল ফিল্টার পরিবর্তন করার পেছনেও খরচ করতে হবে না কারন এগুলো ২০হাজার  কিমি পর পর শুধু পরিষ্কার করে নিলেই হবে।

honda-cb-triggering60599fc01fcif

হোন্ডা সিবি ট্রীগার ১৫০সিসি -  ভাল দিক

১-বাইকের মাইলেজ খুব সন্তোষজনক।

২-অনেক স্মুথ সাশপেনশন,যা আমাদের দেশের রাস্তা অনুযায়ি ভাল কাজ করে।

৩-স্পেয়ার পার্টস এর জন্য ঝামেলা নেই, সারা দেশে ৬৪ জেলায় সব সময় যেকোন ধরনের পার্টস পাওয়ার জন্য রয়েছে ডিলার+সার্ভিস।

৪-যারা দীর্ঘ বাইক রাইড করেন,তাদের জন্য আদর্শ,কারন কোন অসুবিধা অনুভুত করবেননা।

৫- মনোশক সাশপেশন কর্নানিং বা যেকোন পরস্থিতিতে ভাল পারফর্মেন্স এর নিশ্চয়তা  দিবে

হোন্ডা সিবি ট্রীগার ১৫০সিসি - খারাপ দিক

১-হেডলাইটে আলো কম।

২-পেছনের শক এবসরভারে কোন গার্ড নেই বিধায় ময়লা জমে যায় প্রচুর।

৩- শহরে চালানোর সময় রেডি পিকাপে কিছুটা ঘাটতি অনুভুত হতে পারে।

সর্বোপরি ২ লাখের নিচের সেগমেন্ট এর বাইক গুলোর মধ্যে ট্রিগার হতে পারে আপনার সবচেয়ে ভাল পছন্দ। আপনি নিত্তদিনের ব্যবহার বা লম্বা ট্যুর যেখানেই ব্যাবহার করেননা কেন, এটি আপনাকে নিরাশ করবে না।


লিখেছেন - ফজলে রাব্বি