সুজুকি জিক্সার এর মালিকানা রিভিউ লিখেছেন সুব্রত
This page was last updated on 19-Aug-2024 08:43am , By Shuvo Bangla
সবাইকে শুভেচ্ছা ! আমি সুব্রত, রেড ক্রিসেন্ট বাংলাদেশে আইসিটি ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছি। প্রায় একবছরের মতো হয়ে গেছে আমি একটি সুজুকি জিক্সার কিনেছি এবং এতোদিনে আমি সেটাকে ঢাকার রাস্তায় প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার চালিয়েছি। আমি খুবই ধীরস্থির রাইডার , অনেকটা শখের চালকও বলা চলে। সুজুকি জিক্সার বাইকটি নিয়ে আমার এই একবছরের অভিজ্ঞতা আমি সকলের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি, যেকোন ভুল হলে বা যেকারো সাথে কোন বিষয়ে মতের মিল না হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহবান রইলো।
সুজুকি জিক্সার এর মালিকানা রিভিউ
আমি সর্বপ্রথম মোটরসাইকেল চালানো শিখেছিলাম ১৯৯৪ সালে, আমার এসএসসি পরীক্ষার পরপরই। আমি হোন্ডা সিডিআই ১০০ বাইকটি দিয়ে বাইক চালানো শিখি, যা এখনো সদর্পে রাস্তা কাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আমি নিয়মিতভাবে বাইক চালানো শুরু করি ১৯৯৭ সালের দিকে, যখন আমি আমার গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার জন্য ভারতের চেন্নাইতে যাই। সেসময়ে আমার বেশকিছু বাইক নিয়মিতভাবে চালানোর সুযোগ হয়েছিলো, যার মধ্যে বাজাজ কেবি ১০০, ইয়ামাহা আরএক্স ১০০, হিরো হোন্ডা সিবিজেড, পালসার ১৮০ উল্লেখযোগ্য।
Also Read: সুজুকি জিক্সার নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা- অনিক
বলে রাখা ভালো যে আমার বাইকিং জীবন সম্পর্কে আমার পরিবার কিছুই জানতো না, কারন তারা তখন খুলনাতে বসবাস করতো। সত্য বেশিদিন চাপা রইলো না, একদিন আমি একটি দুর্ঘটনার শিকার হই এবং পায়ে গুরুত্বর আঘাত এর শিকার হই, যার ফলে আমাকে প্রায় দেড়মাস সম্পূর্ন বিশ্রামে থাকতে হয়েছিলো, এবং তখনই আমার পরিবার সবকিছু জেনে যায়। এর ফলে আমি যখন দেশে ফিরে এসে ঢাকায় নিজের ক্যারিয়ার শুরু করি , তখন আমার পরিবারের কড়া নির্দেশ ছিলো যেনো আমি বাইক থেকে ১০০ হাত দূরে থাকি। তখন থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় একযুগেরও বেশি সময় লেগেছিলো আমার বাবাকে বোঝাতে যে আমার একটি বাইকের অত্যান্ত প্রয়োজন। ২০১৫ সালের অক্টোবরে তিনি আমাকে বাইক চালানোর অনুমতি দিতে নিমরাজি হন এবং তিনি মত পালটে ফেলার আগেই আমি ৮ই নভেম্বর, ২০১৫ তে আমার সুজুকি জিক্সার বাইকটি ক্রয় করি।
যেহেতু সকলে বুঝতেই পারছেন যে বাইকটি ক্রয় করার সময় আমি মোটামুটি বয়স্ক একজন মানুষ তাই আমি একটি ভালোমানের বাইক কিনতে চাচ্ছিলাম। আমি বেশ কিছু সময় ধরে অনলাইনে এবং অফলাইনে বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন বিভিন্ন বাইক নিয়ে রিসার্চ করি । আমার লক্ষ্য ছিলো এমন একটি বাইক কেনা যা হবে স্টাইলিশ, কমফোর্টেবল, শক্তিশালি, এবং টেকসই। তখনো বাংলাদেশে এফজেড এফআই বাইকটি আসেনি এবং এফজেডএস বাইকটি ছিলো খুবই কমন, তাই আমি হোন্ডা সিবি ট্রিগার বাইকটি কেনার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু বাস্তবে সামনাসামনি দেখে আমার বাইকটির লুক এবং স্টাইলিং খুব বেশি পছন্দ হলো না। এরই মাঝে আমি আমার এক বন্ধুর সুজুকি জিক্সার বাইকটি টেস্ট রাইড দেবার সুযোগ লাভ করি – এবং রাইড দেবার সাথে সাথেই আমি বাইকটির প্রেমে পরে যাই। অনলাইনেও বিভিন্ন ভারতীয় ও বাংলাদেশি ওয়েবসাইটে বাইকটির পজেটিভ রিভিউ দেখেই আমি আমার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করি।
সুজুকি জিক্সার এর পজেটিভ দিকগুলোলুকস: যেদিন আমি গুলশানে শোরুমে বাইকটির ফুল ব্ল্যাক ভার্শন সাজানো অবস্থায় দেখতে পাই সেদিনই আমি বাইকটির প্রেমে পড়ে যাই। ইঞ্জিন: আমার মতে, সুজুকি জিক্সার এর ইঞ্জিনটি ১৫০ সিসি সেগমেন্টের সবচাইতে স্মুথ ইঞ্জিন। এটি একটি সিঙ্গেল সিলিন্ডারবিশিষ্ট ফোর স্ট্রোক SOHC ইঞ্জিন। ইঞ্জিনটি ১৫৪.৯ সিসির। ইঞ্জিনটির সর্বোচ্চ শক্তি হচ্ছে ৮০০০ আরপিএমে ১৪.৮ পিএস এবং সর্বোচ্চ টর্ক হচ্ছে ৬০০০ আরপিএমে ১৪ এনএম।এটি একটি কার্বুরেটর ইঞ্জিন যা ৫-স্পীড ট্রান্সমিশন বিশিষ্ট। এতে কিকস্টার্ট এবং ইলেকট্রিক স্টার্ট উভয়ই রয়েছে। আমার মতে বাইকটির সবচাইতে ভালো পারফর্ম করে ৬ থেকে ৮ হাজার আরপিএমে।
মাইলেজঃ সুজুকির আধুনিক ফুয়েল সেভিং টেকনোলজির ফলে বাইকটির মাইলেজ অসাধারন সন্তোষজনক, আমি ঢাকার রাস্তায় চালানো সত্ত্বেও বাইকটি ৪০ কিমি/লিটার এর মাইলেজ দিয়েছে। রাইডিং পজিশনঃসুজুকি জিক্সার এর রাইডিং পজিশন ও স্টাইল অত্যান্ত স্পোর্টি এবং যেকোন বয়সের ও যেকোন স্টাইলের রাইডার এর সাথে একজন ভালোভাবে খাপ খায়। ফলে যেকারো বাইকটি চালাতে সামান্যতম অসুবিধা হয় না।
সাসপেনশনঃসুজুকি জিক্সার এর সামনে টেলিস্কোপিক ও পেছনে মনো সাসপেনশন রয়েছে যা বিভিন্নরকমের রোড কন্ডিশনেও অসাধারন পারফর্ম করে। ব্রেকঃ বাইকটির সামনে বিশ্ববিখ্যাত BYBRE ব্র্যান্ডের হাইড্রোলিক ব্রেক এবং পেছনে ড্রাম ব্রেক রয়েছে যা একত্রে অসাধারন পারফর্ম করে।
টায়ারঃ বাইকটির সামনে ১০০/৮০-১৭ এবং পেছনে ১৪০/৬০-১৭ টায়ার রয়েছে যা অসাধারন অনরোড এবং অফরোডে – উভয় জায়গাতেই অসাধারন গ্রিপ দেয়। মিটারঃ সুজুকি জিক্সারে একটি ফুল ডিজিটাল মিটার রয়েছে যা গিয়ার ইন্ডিকেট থেকে শুরু করে সকল তথ্য প্রদান করে।
নেতিবাচক দিকগুলোঃগ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সঃ বাইকটির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৬০ মিমি হওয়া সত্ত্বেও প্রায়শই স্পীডব্রেকারে বাইকটির নিচের অংশ ঘষা খায়। তবে একটু অভ্যাস করলেই রাইডার এই সমস্যা এড়িয়ে চলতে পারেন। বিল্ড কোয়ালিটিঃ মাত্র ৬০০০ কিলোমিটারের সময়েই আমার বাইকের বল রেসার সেট ক্ষয় হয়ে যায় – যা কোন কমন সমস্যা নয়, এবং আমার সময়কার অন্যান্য সুজুকি জিক্সার বাইকেও এরকম সমস্যা দেখা দেয়।
দুর্বল হেডলাইটঃ সুজুকি জিক্সার এর স্টক হেডলাইট খুবই দুর্বল, প্রত্যেকের উচিত স্টক হেডলাইট পরিবর্তন করে এলইডি লাইট লাগিয়ে নেয়া। দুর্বল হর্নঃ স্টক হর্নটি খুবই দুর্বল, ঢাকার রাস্তায় এটি প্রায় শোনাই যায় না । নিন্মমানের প্লাস্টিক কোয়ালিটিঃ ইন্সট্রুমেন্টগুলোর প্লাস্টিক কোয়ালিটি আরেকটু ভালো হতে পারতো ।
উপসংহারঃ প্রায় দুইবছর গবেষনার পরে সুজুকি কোন উপায় এবং পদ্ধতিই বাদ রাখেনি যাতে করে তারা জিক্সার বাইকটিকে আরো বেশি স্পোর্টি করে তুলতে পারে। সুজুকি জিক্সার বাইকটি একটি পরিপূর্ন প্যাকেজ। অসাধারন রাইডিং স্টাইল এবং অসম্ভবরকমের পরিশোধিত ইঞ্জিন সুজুকি জিক্সার বাইকটিকে করে তুলেছে সুজুকির ফ্ল্যাগশিপ প্রোডাক্ট।
একজন মাঝারী মানের চালক হওয়া সত্ত্বেও যেভাবে বাইকটি প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতিটি রাস্তায় আমাকে সম্পূর্ন সমর্থন দিয়েছে, তাতে করে আমি মুগ্ধ। ঢাকা শহরে নিয়মিত বাইক চালানো প্রত্যেকেই জানেন ঢাকা শহরের রাস্তার অবস্থা, ঢাকা শহরের প্রতিটি রাস্তা – তা যতটা খারাপই হোক না কেনো , আমার সুজুকি জিক্সার আশানুরূপ পারফর্ম করেছে। বিশেষত বৃষ্টির সিজনে প্রায়শই আমাকে বাইকটি নিয়ে প্রায় সাতার কাটতে হয়েছে, তবুও বাইকটি আমাকে হতাশ করেনি। এবং এতোকিছুর পরেও বাইকটি আমাকে এখন পর্যন্ত কোনপ্রকার সমস্যায় ফেলেনি। যে কেউ যদি আমার কাছে পরামর্শ চায়, যে ১৫০ সিসি সেগমেন্টে পাওয়ার, মাইলেজ, কমফোর্ট, এবং নিয়ন্ত্রন এর দিক দিয়ে কোন বাইক সেরা , তবে নির্দ্বিধায় আমি সুজুকি জিক্সার এর কথা বলবো।
লিখেছেনঃ সুব্রত বিশ্বাস
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com - এই ইমেইল এড্রেসে।