বাইক চুরি হয়ে যাওয়া একটি বাইকারের কাছে অনেক কষ্টের - রিয়াজুর
This page was last updated on 30-Jul-2024 04:37pm , By Shuvo Bangla
আমি রিয়াজুর রহমান। আমি নোয়াখালী সদর বসবাস করি । বর্তমান ঠিকানা চট্রগ্রাম । সবাই তো বাইক নিয়ে আনন্দের অনুভূতি শেয়ার করে , বাইক চুরি হয়ে যাওয়া একটি বাইকারের কাছে অনেক কষ্টের যা আজ আমি শেয়ার করবো ।
আমার জীবনের প্রথম বাইক সুজুকি জিক্সার মেরুন কালার, বাইকটি আমার মামা কিনে দিয়েছিলো, আসলে বাইকের প্রতি ভালোবাসাটা মামার থেকেই শেখা সেই ছোটোবেলা থেকে দেখতাম যে মামা বাইক চালায়, মামা বাইককে এতই যত্ন করতো যে বাইকে একটা ধুলো ও দেখতাম না সব সময় ক্লিন ঝকঝকে রাখতো ।
মামার বাইকের প্রতি যত্ন দেখতে দেখতে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছি আর নিজে ও বাইকের প্রেমে পড়ে যাচ্ছি, আমি কিন্তু তখন ও বাইক চালাইতে পারতাম না , পরে আমার এক বন্ধু কে বললাম যে বন্ধু আমারে বাইক চালানো শিখিয়ে দে , বন্ধু বলে যে দিলাম সমস্যা নাই, বাইক এনে দে শিখিয়ে দিব ।
বাইক তো আর এক দুই দিনে শিখতে পারবিনা সময় লাগবে প্রতিদিন একটু একটু চালাতে হবে, আমার বড় ভাইর কাছে ছোটো মামার বাইকটা সব সময় থাকতো ভাইরে বললাম যে ভাই বাইক টা দে আমি বাইক শিখবো , এই কথা বলার সাথে সাথে ভাই না বলে, বলে মামা বকা দিবে আমাকে।
পরে বললাম আমরা এক জায়গায় যাবো বাইক টা দে, ভাই বলে যে চালাবে কে ? বললাম বন্ধু সজিব চালাবে । এরপরে বাইকটা দিলো প্রথম দিন চালাতে যখন স্ট্যাডিং এ বসলাম বুকটা ধুর:ধুর করে কাপতেছিল বন্ধু বলে যে আরে ভয় নাই আমি আছিতো, পরে স্টার্ট দিলাম ।
২ দিন এভাবে চালাতে চালাতে শিখে ফেললাম, পরে কিছুদিন গেলো মামা ও জানলো আমি বাইক শিখছি একদিন আমারে বলে যে বাইক টা একটু মুছে ফেল, মুছতেছি মার আর মামা তাকিয়ে আছে বলে যে পার কিনা দেখি এটা চালাতো এটা বলার সাথে সাথে যে খুশি হয়েছিলাম যা বলার বাহিরে ।
চাবি দিলো স্টার্ট দিলাম বসে প্রথম গিয়ার দিয়ে যখন সামনে যাচ্ছিলাম , আমি খুশিতে এতোই আত্মাহারা ছিলাম যে দ্বিতীয় গিয়ার দেওয়ার কথা ভুলেই গেছি । কিছুদুর গিয়ে আবার ঘুরায় নিয়ে আসলাম, মামা বলে যে কিছুই হয়নি আরো ভালো করে শিখতে হবে তবে এর আগে কখনো মামার বাইক চালাইনি ঐ দিনের পর থেকে মামা ও মাঝে মাঝে আমাকে সাথে নিয়ে যেতো আর বলতো চালা ।
যদি ও পুরাপুরি ভয়ে থাকতাম তবে ভিতরটা খুশিতে ভরে উঠতো, এরপর যতবারি বাড়িতে যেতাম ততবারই মামা আর বাইক নিতো না আমার জন্যে রেখে যেতো । আবাক করার মত বেপার হল আমি একদিন বাইক নিয়া একটা ইমোসনাল স্টোরি দিলাম ঐদিন মামা স্টোরিটাতে রিপ্লাই দিলো যে তোকে ও একটা কিনে দিবো একটু অপেক্ষা কর । কি যে একটা খুশি লাগলো , আরো কিছুদিন গেলো একটা বন্ধুর বিয়েতে যাচ্ছিলাম মামা বলে যে বাইক নিবি আমি বলি যে না সাথে আরো বন্ধু আছে ওদের নাই আমি একা নিয়ে কি করবো ।
হটাৎ রাতে মামা কল দিলো কই তুই আমি বললাম বাসায় মাম বলে আসেন আপনার বাইকটা নিয়ে যান আমারটা দিয়ে যান, এটা বলার সাথে সাথে আমিতো পুরাই অবাক হয়ে গেলাম । গিয়ে দেখি ঝকঝকে চকচকে মেরুন কালাল Suzuki Gixxer আমার জন্যে রাখা আছে ।
আমার হাতে চাবি দিয়ে বলে যে আমার টারে এবার রক্ষা দে আর তোরটা খুবই সাবধানের সাথে চালাবি । প্রায় দুই বছর খুব যত্ন করে চালালাম একটা দাগ ও লাগতে দেইনি, কিন্তু খুশিটা বেশি দিন সইলোনা, ডিসেম্বর মাসের ২০ তারিখ আমার জন্মদিন ।
আমার গালফ্রেন্ড আমার জন্যে জন্মদিনের পার্টি করলো, পার্টিতে গেলাম সাথে একটা বন্ধুকে নিয়ে । পার্টি শেষ করে এসে বাইক পার্কিং-এ রাখলাম পরের দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার বাইকটা নাই, চুরি হয়ে গেছে ।
সিসি ক্যামেরা চেক করে দেখি, মাত্র দের মিনিটে বাইকের তালা ভেংঙে নিয়ে গেছে, এরপর কান্নাকাটি করে প্রায় ৬মাসের মত বাইক ছাড়া ছিলাম । এরপর কোথাও যেতে যখন লোকাল গাড়ি বা সিএনজি তে উঠতাম তখন এতো খারাপ লাগতো, একটা জিনিস নাই তো নাই কিন্তু পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা টা কি সেটা আমি তখন বুঝতাম ।
দেখতে দেখতে ৬ মাস গেলো প্রতিদিন আবার বাইক নিয়ে স্টোরি দেওয়া শুরু হলো তারপর আবার মামা কিছু দিলো ছোটো বোন কিছু দিলো আর আমি কিছু দিয়ে R15M মনস্টার বাইকটি নিলাম, ইয়ামাহার শোরুম চট্টগ্রাম হাইওয়ে ফাইটার থেকে ।
মূলত বাইকের প্রতি ভালোবাসা জন্মানোর পর থেকেই একটা স্পোর্টস বাইক চালানোর স্বপ্ন দেখতাম । রাস্তায় কেউ সামনে দিয়ে বাইক চালিয়ে গেলে দু চোখ দিয়ে মন ভরে দেখতাম আর মনে মনে বলতাম আহা কবে যে আমার একটা বাইক হবে । ক্রাস ছিলাম R15 v3 বাইকটির প্রতি ।
V3 নেওয়ার প্রস্তুতি ও প্রায় নিয়ে নিছিলাম তখন লন্স হল R15M এই বাইকটার রিভিউ আর লুক দেখে পুরোপুরি এটার প্রতি মন ঝুকে যায় বাইকটা নিয়ে যখন প্রথম বার বাইকটার উপরে বসলাম আমার চোখে পানি টলমল করতেছে হয়তো এটাকেই সুখের কান্না বলে ।
আমি এর আগে কখনোই R15 বাইক চালাইনি তবে বসে ছবি তুলছি অন্যের বাইকে তবে প্রথম রাইড নিজের বাইক দিয়েই,বাইক টা রাইড করে আমি খুবি আনন্দ উপভোগ করি আমার যখনি মন খারাপ লাগে তখনি আমি বাইকটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি মনটা ভালো হয়ে যায় ।
আমি নিজের থেকে বাইকের খুব যত্ন করি, বাইক শুধু চালাইলেই হবে না চালানোর সাথে সাথে বাইকের যত্নও করতে হবে,সময় মত ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন বাইকের জন্যে অতি জরুরি । আমার বাইকে আমি ইঞ্জিন অয়েল "ইয়ামাহা রেসিং" ব্যবহার করি যার বর্তমান বাজার মূল্য ১৮০০ টাকা, ইয়ামাহা রেসিং এর গ্রেড হচ্ছে 10W40 ।
আমার বাইকটা প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার চলেছে, আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি, বাইকের সর্বোচ্চ স্পীড তুলেছি ১৪০ পর্যন্ত, এটা দিয়ে আমি চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালী, নোয়াখালী থেকে চাঁদপুর, চাঁদপুর থেকে কুমিল্লা ট্যুর করেছি । যতই চালাচ্ছি ততই তার প্রতি ভালোলাগা আরো বেড়ে যাচ্ছে ।
বাইকের প্রতি ভালোলাগা ভালোবাসা আজকে এই টুকুতেই শেষ করলাম, অন্য দিন বাকি অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ইনশাআল্লাহ
বিঃদ্রঃ হয়তো সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে পারিনি যদি ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে ক্ষামার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ ।