ইয়ামাহা এফজেডএস বনাম হোন্ডা ট্রিগার—বাইকের মালিকের অভিজ্ঞতা

This page was last updated on 03-Jul-2024 07:49am , By Shuvo Bangla

হ্যালো বন্ধুরা, আমি ফজলে রাব্বি, টাঙ্গাইল থেকে। পেশায় আমি একজন ব্যাঙ্কার এবং অবশ্যই বাইক প্রেমী। আজ আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী—ইয়ামাহা এফজেডএস ও হোন্ডা ট্রিগারের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ হাজির করবো। 

আমার ইয়ামাহা এফজেডএস বনাম হোন্ডা ট্রিগার—বাইকওয়ালার অভিজ্ঞতা।

আমি ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাইক চালাই। সেই শুরুর দিকে আমি আমার বাবার হোন্ডা এমবিএক্স-৮০ চালাতাম। এরপর একেএকে ইয়ামাহা আরএক্স, হোন্ডা সিডিআই ১০০ও চালিয়েছি। তবে ইয়ামাহা এফজেডএস আমার নিজের টাকায় কেনা প্রথম বাইক। আমি এটা সেকেন্ড হ্যান্ড কিনেছিলাম এবং প্রায় দেড় বছর চালিয়েছি। এরপর ২০১৫’র জুনে আমি ময়মনসিংহের আনিস মটরস থেকে আনকোরা নতুন হোন্ডা সিবি ট্রিগার কিনি এবং সেটা এখনো চালাচ্ছি। আসলে আমি এফজেডএস থেকে ট্রিগারে এসেছি রুচি পরিবর্তনের জন্য, তাছাড়া নতুন বাইক টেস্ট করাটাও একটি উদ্দেশ্য বটে।

২০১৩ থেকেই আমি বাইকবিডি’র সঙ্গে আছি। এখানে আমি সারাদেশের বাইকারদের অভিজ্ঞতা ও মন্তব্যগুলো আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ করতাম। পরে ভাবলাম, আমি আমার অভিজ্ঞতাটাইবা শেয়ার করবো না কেনো! যেই ভাবা সেই কাজ, আপনাদের জন্যে নিয়ে এলাম আমার ইয়ামাহা এফজেডএস বনাম হোন্ডা ট্রিগারের তুলনামূলক বিশ্লেষণ।

হোন্ডা সিবি ট্রিগার চালানোর অভিজ্ঞতা :

আমি দুই বাইকেই দূরের পথে ভ্রমণ করেছি। ইয়ামাহা এফজেডএস নিয়ে আমি শ্রীমঙ্গল, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, বিরিশিরি ইত্যাদি জায়গায় এবং ট্রিগার নিয়ে রাজশাহী, শ্রীমঙ্গল, পটুয়াখালী, যশোর, কুয়াকাটাসহ অনকে জায়গায় ঘুরেছি। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে ট্রিগার নিয়ে আমার বক্তব্য এখানে উপস্থাপন করছি।

হোন্ডা সিবি ট্রিগারের যে বিষয়গুলো আমাকে টানে :

  • এফজেডএস এর সঙ্গে তুলনা করতে গেলে বলতে হয়, ট্রিগার যথেষ্ট ভালো কার্যদক্ষ বাইক।
  • দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সিটিং পজিশন, ফলে হাত বা পিঠ ব্যথা হয় না।
  • হাইওয়েতে চলার জন্য স্মুথ অ্যাক্সিলারেশন ও লঙ গিয়ার রেশিও।
  • বাইকটি লম্বা হলেও হ্যান্ডলিং চমৎকার।
  • ক্লাচ যথেষ্ট সক্রিয়।

হোন্ডা সিবি ট্রিগারের যে বিষয়গুলো বিরক্তিকর :

  • গিয়ার রেশিও বেশি হওয়ায় অধিক যানজটে ঝামেলায় ফেলে।
  • খুবই নিম্নমানের সুইচ গিয়ার ও এসি হেডল্যাম্প।
  • সাইড প্যানেলগুলোতে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে এবং এক্সজস্ট পাইপের কালার মোটেও আকর্ষণীয় নয়। অন্তত হোন্ডার মতো কোম্পানির কাছ থেকে এটা আশা করিনি।
  • পিছনের টায়ার একটু শক্ত, ফলে বেশি গতিতে চলার সময় স্কিড করে। আমি নিজেই বেশ কয়েকবার এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি। যার কারণে পিছনে আরো প্রশস্থ টায়ার লাগিয়েছি।
  • অ্যাক্সিলারেশন ভালো, তবে এফজেডএস এর চেয়ে ভালো না। এটা সম্পূর্ণই আমার নিজে অভিজ্ঞতা, অন্যদের ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকতে পারে।
  • গিয়ার আরো স্মুথ হওয়া উচিৎ ছিলো এবং সামনের শক অ্যাবজর্ভার খারাপ না, তবে খুব ভালোও নয়!
  • হেড লাইটের স্টাইল আরো ভালো হওয়া দরকার ছিলো।

ইয়ামাহা এফজেডএস চালানোর অভিজ্ঞতা :

ইয়ামাহা এফজেডএসও খুব চমৎকার একটি বাইক। এটা চালানোর অভিজ্ঞতা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। তবে এটা চালিয়ে আমি বেশ কয়েকটি সুবিধা ও অসুবিধার সম্মুখীনও হয়েছি। এগুলো হলো :

ইয়ামাহা এফজেডএস এর যে বিষয়গুলো ভালো লেগেছে :

  • সবচেয়ে কার্যদক্ষ বাইক, চালিয়ে ব্যাপক মজা পাওয়া যায়।
  • স্টক টায়ারেই চমৎকার ব্রেকিং।
  • অধিক যানজটের মধ্যেও সহজে চলার জন্য শর্ট গিয়ার রেশিও।
  • এই সেগমেন্টে সবচেয়ে ভালো হ্যান্ডেলিং।
  • গিয়ার সবচেয়ে স্মুথ এবং খুবই ভালো শক অ্যাবজর্ভার।
  • উচ্চ মানের প্লাস্টিক প্যানেল।
  • স্পিড যতোই হোক, বাইক মাটি কামড়িয়ে চলে।
  • সহজলভ্য খুচরা যন্ত্রাংশ।

ইয়ামাহা এফজেডএস এর বিরক্তিকর দিক :

  • হেডলাইট আরো উজ্জ্বল হওয়া উচিৎ ছিলো।
  • দীর্ঘ ভ্রমণে কব্জি ব্যথা করে।
  • পিলিয়নের বসাটা আরামদায়ক নয়।
  • জ্বালানি সাশ্রয়ী নয়

রায় – ইয়ামাহা এফজেডএস বনাম হোন্ডা সিবি ট্রিগারের তুলনামূলক বিশ্লেষণ

বলে নেওয়া দরকার আমি ১৩ হাজার কিমি হোন্ডা ট্রিগার চালিয়েছে। এ সময়ে মাত্র একবার স্পার্ক প্লাগ ও এয়ার ফিল্টার পাল্টেছি। ৫ হাজার কিমির পর থেকে আমি মটুল ৭১০০ ব্যবহার করে আশাব্যঞ্জক ফল পেয়েছি। আমি একটু মোটা হওয়ার পরও আমার সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১০৭ কিমি। যাহোক, একজন বাইকার হিসেবে আমি আপনাদেরকে সবসময় ভালো মানের হেলমেট ও অন্যান্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম পরিধান করার অনুরোধ করছি। কারণ জীবনটা আপনার এবং একে রক্ষা করাটাও আপনারই দায়িত্ব।

সবশেষে বলেত চাই যে, যদিও হোন্ডা ট্রিগার খুবই চমৎকার একটি বাইক, তার পরও ইয়ামাহা এফজেডএস এর পিছনেই পড়ে আছে এটি। আমার দুই বাইক মিলিয়ে ২৫ হাজার কিমি বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা থেকে এতো কথা বললাম।

ধন্যবাদ

শশী রাব্বি