Yamaha FZS V2 বাইক নিয়ে ১৬ হাজার কিলোমিটার রাইডিং অভিজ্ঞতা - মেহেদী
This page was last updated on 08-Sep-2024 08:41am , By Shuvo Bangla
আমি মেহেদী হাছান , আমার বাসা ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ১ নং সুন্দরপুর দূর্গাপুর ইউনিয়ন এর ২ নং ওর্য়াড এর সিংদাহ গ্রামে। আপনাদের সাথে আমার Yamaha FZS V2 বাইকের মালিকানা রিভিউ শেয়ার করবো ।
আমার জিবনের প্রথম বাইক হলো Yamaha FZS V2। সত্যি কথা বলতে আমি বাইক কিনার ১ সপ্তাহ আগে মাত্র ১ দিন ৫ থেকে ১০ মিনিট জন্য আমার এক বন্ধুর বাইক চালিয়ে বাইক চালানো শিখেছিলাম Discovery বাইক দিয়ে। আর যেদিন বাইক কিনেছিলাম সেইদিন আমার ওই বন্ধুর বাইক এ ৪/৫ কিলোমিটার চালিয়েছিলাম। তারপরে সন্ধ্যার দিকে আমার বাইক আমি হতে পাই এবং আমার বন্ধুকে পিছনে বসিয়ে ১ কিলোমিটার চালিয়ে নিয়ে যাই।
যাওয়ার পথে ঘুরাতে যেয়ে বাইক বন্ধ হয়ে যায় ঠিক ভাবে ক্লাস না ধরার কারনে। তারপরে একটা খেলার মাঠে যেয়ে বাইক চালাই তারপর আবার আমার বন্ধু বাইক চালিয়ে আমার বাসায় দিয়ে যায়। তার দুই দিন পরে আমি নিজে নিজেই ২ কিলোমিটার চালিয়ে বাসায় পাশে একটা বাজারে গিয়েছিলাম আবার সন্ধ্যার আগে বাসায় চলে আসি এভাবেই প্রতিদিন যাওয়া আসার পরে একটু একটু করে অভিজ্ঞতা হতে থাকে।
আর যেইদিন আমার বাইক কেনা হয় সেইদিন আমার ইন্টার এর ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষ করে বিকালে যশোর বাইক কিনতে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যশোর শোরুমে FZs V2 বাইক মাত্র ১ টাই ছিল আর আসেপাশের কোন শোরুমে FZs V2 বাইক ছিল না। বলে রাখা ভালো আমি যখন বাইক কিনেছিলাম তখন এই বাইক অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছিল তাই তখন সব প্রি অর্ডার দিতে হচ্ছিল।
তাই যশোর একটাই বাইক থাকার কারনে বাইক কিনার সময় আমি যেতে পারিনি আমার দাদা আর আমার দুলাভাই গিয়ে কিনে আনে। আমি তাদের মুখে শুনেছি যে একটাই বাইক ছিল এটা আরো একজন নিতে চাচ্ছিল কিন্তু তার কাছে কিছু টাকা কম থাকার কারনে সে নিতে পারিনি ও আমাদের কাছে ফুল টাকা থাকার করনে আমরা নিতে পারি বাইকটি। একটাই বাইক ছিল এটা আগে থেকে খোজ নিয়েছিলাম। ধন্যবাদ দিলেও ছোট করা হয়ে যাবে আমার আব্বাকে যিনি আমাকে বাইক কিনে দিয়েছেন।
বাইকিং এর ভালোবাসার কারণ বলতে গেলে প্রথম বলতে হয় যে এখানে অনেক ভালোবাসা পাওয়া যায়। ছোট ও বড় ভাইদের সাথে মিলেমিশে একসাথে আনন্দ করার একমাত্র জায়গা বাইকিং। এখানে সবাই সবার সাথে নিজের মতো আনন্দ করতে পারে ছোট বড় ভাইদের সাথে মজা করতে পারে । এখানে অনেক ভালো কাজ করা হয় যেমন কারো রক্ত লাগলে রক্ত মেনেজ করে দেওয়া , কারো সাহায্য লাগলে তাকে সবাই মিলে একসাথে সাহায্য করা ইত্যাদি।
আমার বাইক বেছে নেওয়ার কথা বল্লে বলবো আমি যখন বাইক কিনেছিলাম তখন আমি বাইক সম্পর্কে কোনো কিছুই বুঝতাম না। আমার দুলাভাই এর বাইক এর গ্যারেজ আছে তার বাইক সম্পর্কে অনেক অভিজ্ঞতা ও ধারনা আছে সেই আমার বাজেটের মধ্যে এই Yamaha FZs V2 বাইকটি নিতে বলে এবং এই বাইকটিই নিই। এখন আমি বাইকটি সম্পর্কে বলতে গেলে বলবো আমার বাজেটের মধ্যে এটাই সেরা বাইক।
আমি আমার বাইকটি নিয়েছিলাম ইয়ামাহার শোরুম SR Orion Motors যশোর থেকে নিয়েছি। আমি যখস বাইকটি নিয়েছিলাম তখন এই বাইকটির দাম ছিল ২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। বাইকে কিছু জিনিস লাগিয়ে দিয়েছিলো বলে আরো ১ হাজার নিয়েছিল। তাই মোট দাম ছিল ২ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা।
বাইক কিনতে যাবার দিনের ঘটনা বলতে গেলে উপরেই বলেছি যে আমার ইন্টার এর ইয়ার ফাইনাল পরিক্ষা থাকার কারনে বিকালে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আশেপাশে কোনো শোরুমে ছিলনা যশোরে ১ টা থাকার কারনে আমাকে রেখেই চলে গিয়েছিল বাইক কিনতে।
বাইকটি প্রথম চালানোর অনুভুতি এক অন্য রকম। নতুন বাইক চালাচ্ছি তার পরেও আমি নতুন বাইক চালানো শিখেছিলাম একটু বড় বাইক তাই একটু ভয়ও কাজ করছিল যদি কোনো ভাবে পরে যাই। তবে যাই হলো এখন ভয় দূর হয়েছে তার পরেও সতর্কতার সাথে বাইক রাইড করি কেননা দূর্ঘটনার তো আর বলে কয়ে আসেনা। আর সব সময় চেষ্টা করি সমস্ত নিয়ম মেনে বাইক রাইড করার।
আমার বাইক চালানোর মুল কারন বলতে গিয়ে বলতে হবে যে বাইক হলো একটি সহজ যানবাহন এটিতে কম সময়ে নিদিষ্ট জায়গায় পৌঁছাতে পারি। আর আরো একটি কারন বলতে গেলে আমার একটা অসুখের কারনে আমি বিভিন্ন জায়গা থেকে ঔষুধ খাওয়ার ফলে আমার শরির একটু বেশি মোটা হয়ে যায় যার ফলে আমার বাইসাইকেল চালাতে একটু কষ্ট হয় এবং আমার আব্বাই বাইকের কথা বলতো ও বাইক কিনে দেয়।
বাইকের ফিচারগুলো সম্পর্কে বলতে গেলে বলবো বাইকের লুক আমার অনেক ভালো লেগেছে এবং এই বাইকটির অনেক ভালো। এই বাইকটি ভালো সার্ভিস দেয় তবে মিটারটা ডিজিটাল মিটার হওয়ার পরেও অনেক কিছু দেওয়া হয়নি যেমন কয়টা গিয়ারে আছে সেটা দেখা যায়না ও এই বাজেটের প্রায় বাইকেই সময় দেখা যায় কিন্তু এটাতে সেইটা নেই।
প্রতিদিন বাইক চালানোর সময় অনেক ভালো লাগে। নিজের বাইকের প্রতি এটকা অন্য রকম ভালোবাসা কাজ করে। সব সময় এটা ভাবি যে নিজের বাইক কিভাবে সবসময় পরিষ্কার রাখা যায়। কি করলে বাইকের কোনো ক্ষতি হবেনা সব সময় সেইটা ভাবি।
বাইকের সার্ভিস বলতে আমি কোনো শোরুমে থেকে সার্ভিস করাইনা। আমার দুলাভাইয়ের গ্যারাজ আছে সেখান থেকে সার্ভিস করি। তবে এখনো বড় কোনো সার্ভিস করিনি টুকটাক সেই সার্ভিস গুলো করতে হয় সেই গুলো করানো হয়েছে।
২৫০০ কিলোমিটারের পূর্বে ও পরে আমি একয় রকম মাইলেজ পেয়েছি। আমি ৪৮থেকে ৪৯ মাইলেজ পেয়েছি হাইওয়ে তে ৫৫ পেয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করে ২ মাস ৪৪/৪৫ করে মাইলেজ পাচ্ছি এটার কারন আমার মনে হয় তেলে হয়তো কম পাচ্ছি। তেলের কারনে কম পাচ্ছি এটা আমি শিওর হচ্ছি তার কারন একবার আমি তেল ফুল নিয়েছিলা তা আমার ফুল নিতে ১১.৫ লিটার তেল লেগেছিল কিন্তু আমার বাইকে ১ লিটার এর বেশি ছিল।
নিজের বাইকের প্রতি একটা আলাদা রকম ভালোবাসা থাকে এটা বলে বোঝানো যাবেনা। সবাই চেষ্টা করে তার নিজের বাইককে সব সময় পরিষ্কার রাখার জন্য। সব সময় ভাবি কি করলে বাইক ভালো থাকবে সেইটা মেনে চলার। সব সময় চেষ্টা করি কি করলে বাইক সুন্দর দেখাবে সেইটা করার কিন্তু ছাপরি গিরি কিরিনা।
আমি সবসময় Yamalube ইঞ্জিন অয়েল এর 10W 40 গ্রেডের ৭৭০ টাকার ইঞ্জিন অয়েল টা ব্যবহার করি। এটি ভালো সার্ভিস দেয় । আমি আমার বাইকে তেমন কিছু পার্টস বদলাইনি বদলানোর মধ্যে শুধু ইঞ্জিন অয়েল , ফিল্টার, এয়ার ফিল্টার, ব্রেক প্যাড ও বল রেসার ছাড়া আর তেমন কিছু বদলাইনি। এগুলো বদলানোর কারন আমার বাইক যেনো সব সময় ভালো সার্ভিস দেয়।
আর আমি প্রতি ৩ হাজার কিলোমিটার চালানো পরে ইঞ্জিন অয়েল ফিল্টার চেঞ্জ করি। বল রেসারের সমস্যা দেখা দিলে বল রেসার চেঞ্জ করি। বাইকটি একবার রাখার পরে মাটি নরম থাকার কারনে পরে ক্লাস লিভারটা ব্যাকা হয়ে যায় তাই এটা চেঞ্জ করি।
আমি আমার বাইকে আলো ছাড়া অন্য কিছু মডিফাইড করিনি। যেমন আপনারা সবাই জানেন যে Yamaha FZs V2 বাইকটিতে হেডলাইটের আলো তেমন ভালোনা তাই এই হেডলাইট এর বাল্ব চেঞ্জ করে এলইডি বাল্ব লাগিয়েছি। সেই সাথে হেডলাইট এর নিচে যেই ছোট বাল্ব টা থাকে সেটা চেঞ্জ করেছি ও ইঞ্জিন এ একটা বাল্ব লাগিয়েছি। এছাড়া আমি আর কোনো মডিফাইড করিনি।
সত্যি কথা বলতে আমি ব্যক্তিগত ভাবে স্পীডিং একেবারে পছন্দ করিনা ও আমার টপ স্পিড কত এটাও কাউকে বলিনা। তার পরেও একদিন ১০৩ তুলেছিলাম সামনে বাজার থাকার কারনে এর থেকে বেশি আর তুললাম না। আমি এই একবারই স্পিডিং করেছি।
Yamaha FZS V2 বাইকটির কিছু ভালো দিক -
- বাইকটির সাসপেন্সন অনেক ভালো
- বাইকটি ১৫০ সিসির ইঞ্জিন হিসেবে মাইলেজ ভালো দয়।
- এই বাইকটির ডিজিটাল মিটার থাকায় আমার ভালো লেগেছে ।
- বাইকটির ছিটিং পজিশন অনেক ভালো ও আরামদায়ক , পিলিওন ছিট ও অনেক ভালো।
- বাইকটার ইঞ্জিন অনেক স্মুথ ।
Yamaha FZS V2 বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- ডিজিটাল মিটার থাকায় পরেও এটাতে গিয়ার এন্ডিকেটার বা কত গিয়ারে আছে সেটা দেখা যায় না ।
- এই বাজেটের অনেক বাইকেই সময় দেখা যায় কিন্তু এই বাইকে দেখা যায়না ।
- বাইকটির হেডলাইট এর আলো একেবারে বাজে যেখানে এখন প্রায় সব বাইকেই এলইডি বাল্ব থাকে কিন্তু এটাতে তা নাই ।
- ট্রিপ মিটার একটি থাকায় আমরা কোথাও ট্যুরে গেলে এটার হিসাব আলাদা ভাবে করতে হয়। এই বাইকটার এটা আমার কাছে খারাপ লেগেছে ।
- মাত্র ১১ হাজার কিলোমিটার চলার পরে বলরেসার এর সমস্যা দেখা দেয়।
বাইকটি দিয়ে আমার যেকোন লম্বা দুরত্বের ভ্রমন -
আমার নিজ জেলা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভ্রমন ছিল আমার লম্বা দুরত্বের ভ্রমন। ঢাকায় গিয়েছিলাম শুধু ঘুরাঘুরি করার জন্য। সেখানে নারায়নগঞ্জে ছিলাম। তাছাড়া একবার পদ্মা সেতু গিয়েছিলাম ঘুরতে এক বছর আগে কুরবানির ঈদে। সেবার বাসা থেকে আবহাওয়া ভালো দেখে গিয়েছিলাম। কিন্তু যাওয়ার পথে অনেক বৃষ্টি হয়েছিল। সেদিন পুরো পথ বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ভ্রমন করেছিলাম। দুইটা জায়গাতেই আমি আর আমার দুলাভাই গিয়েছিলাম। যাইহোক ভ্রমনে কোনো সমস্যা হয়নি ভালো ভাবে ভ্রমন শেষ করেছিলাম।
বাইকটি নিয়ে চূড়ান্ত মতামত -
বাইক সম্পর্কে বলতে গেলে যে সমস্যা গুলো আছে তাতে কোনো সমস্যা হয়না। শুধু মাত্র সময় দেখা যায় না আর কত গিয়ারে আছে এই দুইটাই আমার কাছে বেশি সমস্যা মনে হয়। তাছাড়া এই বাইক আমাকে অনেক ভালো সার্ভিস দেয় । আমার এই বাইকটি দুই বছর ধরে রাইড করছি। গত ১১-০৬-২০২৪ তারিখে আমার বাইকটি আমার কাছে দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। এছাড়াও আরও অনেক জায়গাতেই টুকটাক ঘুরাঘুরি করেছি। যেমন আমাদের আশে-পাশের সব জেলাতেই ভ্রমন করেছি।
কোনো প্রকার দূর্ঘটনা ছাড়াই সব জায়গাতেই ভ্রমন করেছি। আমার বাইকটি বর্তমান ১৬ হাজার কিলোমিটার এর বেশি চলেছে। এখনো আমি লোকাল রাস্তায় ৫০ ও হাইওয়ে তে ৫৩/৫৪ মাইলেজ পাচ্ছি।
সব শেষে ধন্যবাদ বাইক বিডি কে এমন সুন্দর একটা মাধ্যমে টি-শার্ট বিতরণের জন্য। এছাড়া ধন্যবাদ বাইক বিডির এডমিন মডারেটর সহ প্রতিটা জেলার সকল সদস্য দের।
লিখেছেনঃ মেহেদী হাছান