Revoo C32 ই-বাইক শহুরে জীবনে টাকার সাশ্রয় আর শান্তির নতুন নাম - ফরহাদুল

This page was last updated on 31-Jul-2025 10:58am , By Shuvo Bangla

আমি ফরহাদুল হক , আমি Revoo C32 মডেল এর একটি বাইক ব্যবহার করছি । বাইকটি নিয়ে আজ আপনাদের সাথে আমার রাইডিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।

REVOO C32 রাইডিং অভিজ্ঞতা - ফরহাদুল

revoo c32 riding experience

প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে, বাজার করার সময় যাতায়াতে যথেষ্ট খরচ হয়, মাসে প্রায় ৫০০০-৬০০০ টাকা এবং বছরে প্রায় ৫৫০০০-৬০০০০ টাকার মতো খরচ, এটা কমাতে হলে বর্তমান যুগে বাইকের কোনো বিকল্প ছিলো না। তাছাড়া  আমার নিজের একটি বাইক / গাড়ি থাকবে প্রতিটা ছেলের মতো আমারও স্বপ্ন ছিলো। আমি পূর্বে বাইক চালাতে পারতাম না,  তারপরেও পরিচিত কারো থেকে পেলে  টুকিটাকি ৮০ সিসির পুরাতন লক্কর ঝক্কর মার্কা বাইক দিয়ে হঠাৎ হঠাৎ মাঠে একটু চালাতে চেষ্টা করতাম। 

২০২৩ সালের শেষের দিকে কি মনে করে কার ড্রাইভিং শিখে  ড্রাইভিং লাইসেন্স টা করে ফেললাম । এই বছর (২০২৫ সাল)  টার্গেট করি যেভাবে হোক ভালো ভাবে বাইক চালনা শিখে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক নিয়ে নিবো । খুজছিলাম ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যে একটা ৮০-১০০ সিসির পুরাতন বাইক কিনে চালানো শিখে সেটা বিক্রি করে সেকেন্ড হ্যান্ড ৬০-৮০ হাজার টাকার মধ্যে একটা নিবো ।

হঠাৎ চোখে পড়লো Revoo এর এড,  বিভিন্ন ব্লগাররা যখন ই-বাইকের রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করছিলো তখন আমার ই-বাইকের প্রতি একটা আগ্রহ তৈরী হলো । এরপর আমি প্রায় ২ মাস দেশী - বিদেশী ই-বাইক নিয়ে রিচার্স করলাম । নেট ঘাটলাম , রিভিউ ব্লগ ভিডিওগুলো দেখালাম । বিভিন্ন ব্যান্ডের ই-বাইকের কনফিগারেসন, ডিজাইন, প্রাইজ ইত্যাদি তালিকা করলাম। 

revoo c32 user review

আমার বন্ধু বান্ধব, পরিচিত / ভাই ব্রাদার -যাদেরই ই-বাইকের কথা বললাম তারাই আমাকে বললো টাকা নষ্ট হবে, ই- বাইকের ব্যাপারে অনেকে নেগেটিভ কথা বললো। এই ট্যাবু / সংকা ভেংগে আমি সাহস করে একক সিদ্ধান্তে (এমনকি বাবা-মা কে না জানিয়ে, শুধু ওয়াইফকে রঙ পছন্দ করতে বলেছিলাম)  ই-বাইক ১ রাতের সিদ্ধান্তে কিনে ফেলে বাসায় নিয়ে আসি, আমি যেহেতু চালাতে পারতাম না বড়ো ফুপাতো ভাইকে নিয়ে গিয়েছিলাম যিনি রাইড করে নিয়ে এসেছিলেন বাসায়, ঘটনার এমন আকস্মিকতা দেখে বাবা-মা ২ জনেই হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন, কারণ তারা কেউই বাইক পছন্দ করেন না । যেহেতু কিনেই ফেলেছি না জানিয়ে তাই কোনো কিছু আমাকে বলারও সুযোগ পান নাই। 

যেভাবে ইন্সপায়ার হয়েছি - 

  • মোটো ব্লগ - নেক্সট গিয়ার (রিভো নিয়ে কয়েকটি রিভিউ করেছিলো)
  • বাইক বিডি- (একটা ভিডিও ছিলো যেখানে Revoo c-03 নিয়ে সাজেকে শেষ ৫ কিমি. খাড়া পাহাড়ে ওঠা হয়েছিলো)

আমি যেহেতু চট্টগ্রাম থাকি,  চৌমহনী তে রিভোর নতুন শোরুম উদ্বোধন হয় ১৭ ই এপ্রিল,  ২০২৫। আমি সেদিনই গিয়ে শোরুম ভিজিট করে বাইকগুলো দেখে আমার খুবই পছন্দ হয়েছিলো। আমি বাইক কিনি ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫।

উল্লেখ্য যে,  এই নতুন রিভো দিয়েই আমার বাইক শেখার হাতে খড়ি । বাসার পেছনে মাঠে - অলি গলিতে প্রতিদিন ২ ঘন্টা রাইড করে ৩০০ কিলো প্র্যাকটিস করার পরেই আমি মেইন রাস্তায় নেমেছিলাম ।revoo c32 price bd

Revoo C32 কেনার কারন - 

  • এর চারপাশে স্ট্রং গার্ড 
  • সামনে পেছনে ডিক্স ব্রেক
  • বড়ো গাড়ি, সিট যথেষ্ট বড়ো এবং বাইক যথেষ্ট ভাড়ি (প্রায় ১৪০ কেজি)
  • সহজে স্ত্রী,  সন্তান (৫বছর বয়স) নিয়ে বাইক রাইডিং করা যাবে
  • পেছনে বড় টুল বক্স এবং সীটের নীচে প্রচুর জায়গা , পা রাখার জায়গা বড় । 
  • বাজারের ব্যাগ / পলি ব্যাগে জিনিষ নিয়ে সামনের অংশে ঝোলানোর জন্য ৫ টি হ্যাংগিং পয়েন্ট 
  • ফুল চার্জ হতে মাত্র ২ ইউনিট খরচ,  যাতে প্রায় ৯০-১০০ কিমি রাইড করা যাবে   
  • ভেরি স্মার্ট ডিজাইন , লুকেটিভ কালার । কারো সাইড দিয়ে গেলে একবার না একবার তাকিয়ে জিজ্ঞাস করবেই এটা কি বাইক । যখন শুনে এটা চার্জে চলে তখন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে । 
  • বাইকের ব্যালেন্সটা কিন্তু সত্যিই দারুণ , পিলিয়নে কাউকে নিলে এটার ব্যালেন্স আরো স্ট্যাবেল হয়ে যায়
  • গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন এখন পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করা হয় নাই , সুতরাং রাস্তায় হ্যারাজমেন্টের কোনো ব্যাপার নাই

সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার হচ্ছে Revoo C32 এর যে কনফিগারেশন দেয়া হয়েছে , সেইম কনফিগারেশনের গাড়ির অন্য ব্র্যান্ডে প্রায় ২.২০ - ২.৫০ লাখ এর মধ্যে প্রাইজ রেঞ্জ ধরা হয়েছে । রিভো মার্কেটে অন্যান্য ব্রান্ডের বর্তমান প্রাইজ থেকে কিভাবে কম দাম রাখলো তা আসলেই প্রশংসার ব্যাপার। অফিসে যাতায়াত, সাশ্রয়ী, সময় সেভিং  আসলে এই ই বাইকের গুনগান করে শেষ করা যাবে না । 

বাইকটি কিনেছিলাম চট্টগ্রামে একমাত্র রিভো'র শো-রুম চৌমহনী থেকে,  প্রাইজ ছিলো ১.৪০ লাখ। বাইকটি প্রায় ১০০০ কিলোমিটার এর উপরে রাইড করেছি । রেঞ্জ এর কথা বললে এটা আসলে বলা দুষ্কর , আমার বাইক ১০০০ কিলোমিটার চলেছে ,  এই পর্যন্ত ক্রয় এর দিন ২৩ ই এপ্রিল ২০২৫ থেকে)মোট ১৭ বার চার্জ দিয়েছি,  যখন ৩০% এর নীচে নামে তখন বাইক চার্জে দেয়া হয় । মনে হয় এভারেজ ৭০-৮০ কিলোমিটার পাচ্ছি সম্ভবত।

চার্জিং টাইম এবং চার্জিং খরচ - 

যেহেতু গ্যারেজে আমাদের মিটার থেকে তার বেড় করে বক্স বানিয়ে সেখানে চার্জের ব্যবস্থা করা হয়েছে,  আমাদের ফ্লাটের প্রি-পেইড মিটারে আগে কারেন্টের যে বিল ভরা হতো এখনও তাই ভরা হয়, কোনো পরিবর্তন হয়নি । যদি ধরা যাক ফুল চার্জ হতে ২ ইউনিট বিদ্যুত খরচ হয় মোট ১৭ বার চার্জ দেয়া হয়েছে (আমি নিজে থেকে রিভিউ করার জন্য কবে কবে চার্জ দিচ্ছি তা লিখে রাখি) , তাছাড়া যেহেতু ব্যাটারী একদম শূন্য করে চার্জ দেয়া হয় না সেক্ষেত্রে ২ ইউনিটও পুরো বিদ্যুত লাগছে না। 

তারপরেও ১৭ বার চার্জের জন্য ২ ইউনিট করে ধরলে মোট ৩৪ ইউনিট আসে। প্রতি ইউনিট ৫ টাকা করে ধরলে (৩৪*৫ = ১৭০/-) টাকা এর আশে পাশে। এই খরচ তো আমার গত ২.৫ মাসে তাহলে (১৭০/২.৫= ৬৮ /- টাকা মাত্র) যদি হিসেব অনুযায়ী আমার ভুল না হয়ে থাকে। আর যদি প্রতি কিমি বাবদ খরচ ধরি তাহলে (১৭০/১০০০= ০.১৭ পয়সা..!!!) এটা কি অবশ্বাস্য ?   revoo c32 in bangladeshসার্ভিসিং বা পার্টস -

সার্ভিসিং এবং শোরুমের ম্যানেজার / কর্মীদের ব্যাবহার নিয়ে কোনো কথা হবে না,  তারা খুবই আন্তরিক এবং ফোনে,  শোরুমে যথেষ্ট সহযোগিতামুলক ব্যবহার করেছে।

ব্রেকিং সিস্টেম -

কমপ্লেইনের একটা খুব স্ট্রং জায়গা রয়েছে যা ব্রেক সিস্টেম,  ফেবু গ্রুপ গুলোতে মেক্সিমাম বাইকের চাকা ঘোরার সময় লোহার ঘর্ষনের শব্দ হতো । যা দিন যাওয়ার সাথে সাথে তীব্র হওয়া শুরু করে।  আমারও পেছনের চাকায় ঘর্ষনের শব্দ হতো ,  শোরুমে জানালে পরে জানতে পারি ব্রেক প্যাড / ব্রেক সু নষ্ট হয়ে / ক্ষয়ে গেছে , অনেক বাইকেরও দেখলাম ড্রাম ব্রেকও দ্রুত ক্ষয়ে গেছে ।  এটাতে আমি সহ অনেকেই সম্ভবত সমস্যায় পড়েছে । 

যদিও গত সপ্তাহে আমার বাইকের নতুন ব্রেক প্যাড লাগানো হয়েছে । পরিবর্তীর ব্রেক সু লাগানোর পর বাইকের ব্রেকিং সিস্টেম এতো সুন্দর এবং স্মুথ হয়েছে তা বলার মতো না, যা পুর্বের থেকে যঠেষ্ট ভালো ছিলো । আমার মনে হয় নতুন বাইকের ব্রেকিং সিস্টেমের দিকে খুব গুরুত্ব সহকারে নজর দেয়া উচিত।


মাইলেজ - 

মাইলেজের ব্যাপারটি আসলে কনফিউজিং , স্পেসিফিক মাইলেজ কিভাবে নির্নয় করা যায়, এ ব্যাপারে আরো সুন্দর করে বাস্তব সম্মত মেজারমেন্ট টেকনিক কাষ্টমারদের কে দেখাতে পাড়লে তা সকলের জন্য উপকার হতো। 

ওয়াটার রেজিস্টেন্স - 

যদিও বলা হচ্ছে রিভো-র ই-বাইক গুলো ওয়াটার রেজিষ্টেন্স / তারপরেও বৃষ্টির পানি ঢুকে আমার বাইকের হর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।  পরে তা ঠিক করে নিতে হয়েছিলো । প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে একদিন রাস্তায় জলাবদ্ধতা থাকার দরুন বাইককের সামনের চাকা ড্রেনে পড়ে গিয়েছিলো (সবচেয়ে দারুণ ব্যাপারটি হলো বাইকের সামনের অংশসহ সিংহভাগ ডুবে যাওয়ার পরেও স্টার্ট বন্ধ হয় নি এবং পাওয়ারও একবারের জন্যও ফ্লাকচুয়েট করে নাই ।  

এতে করে সামনের হেড লাইটের ভেতরে পানি ঢুকে গিয়েছিলো (প্রায় ২ মাস আগে) । যেই পানি এখনও কিছু পরিমান আছে , রোদে রেখে রেখে শুকিয়ে পানি কমানো হচ্ছে । ওয়াটার রেজিসট্যান্স ব্যাপারটির দিকে আরো ভালো ভাবে নজর দেয়া উচিত।

রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স শহরে / হাইওয়েতে -

রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স এক কথায় দারুণ, শব্দহীন, রাইডিং স্মুথ এক্সপেরিয়েন্স,  কি পরিমান খরচ এবং সময় সাশ্রয়ী বাইক না কিনলে এটা বোঝাই যেত না । স্পোর্টস মুডে সর্বোচ্চ ৬০-৬২ কিলোমিটার স্পিড ওঠে , যা হাইওয়েতে চালানোর সময় আরো কনফিডেন্স দেয় ।

EV বাইক নিয়ে মতামত - 

সত্যি কথা বলতে,  যারা চাকুরীজীবী, ব্যাবসায়ী, মার্কেটিং এ জব করে, মুভমেন্ট করে জীবিকা নির্ধারণ করতে হয়,  যাতায়াতের খরচ এবং ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট এর কথা চিন্তা করলে ই-বাইকের বিন্দু মাত্র কোনো বিকল্প দেখি না । অন্যান্য বাইকে প্রতি মাসে তেলের খরচ, মেইন্টেইনেন্স এর খরচ যা একেবারেই টেনসন ফ্রি করে দিয়েছে, তা হলো ই-বাইক।  দৈনন্দিন কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতের জন্য পরিবেশ বান্ধব ই-বাইকই সেরা। আমি যতদূর জানতে পেরেছি চট্টগ্রামের শো - রুম থেকে ,  আমার রিভিউ দেখে কয়েকজনই রিভো থেকে ই-বাইক ক্রয় করেছে।revoo c32 user riding experienceবাইক চালিয়ে সবচেয়ে ভালো / মজার অভিজ্ঞতা -

আমার জানা মতে,  চট্টগ্রামে রিভোর - একটাই শোরুম, গত ৩ মাসে প্রায় ৭০+ বাইক বিক্রি হয়েছে । প্রতিদিন বাহিরে বের হলে চট্টগ্রামে শহরে বসবাস কারী একজন না একজন রিভো ইউজারের সাথে দেখা হবেই । হাসি মুখে অপরিচিত একজন আরেকজনকে রাইডিং এর সময় ইশারাতে কুশল বিনিময় করে ব্যাপারটি আসলেই খুব দারুন । মনে হয় ই-বাইক ইউজার একজন আরেকজনের ফ্যামিলি মেম্বার । 

সিগনালে দাড়ালে প্রতিদিনই,  কেউ না কেউ প্রশ্ন করবেই ভাই এটা কি তেলে চলে ? কোন ব্র্যান্ডের ? যখন শুনে ইলেক্ট্রিক বাইক,  তখন অবিশ্বাসী চোখে বাইকের চারপাশে দেখে তেলের টাংকি খুজতে থাকে । আর অবাক হয়ে দাম , মাইলেজ জিজ্ঞাস করে তখন খুবই মজা লাগে ।

পরিশেষে, ই-বাইক আসলেই জ্বালানী সাশ্রয়ী পরিবেশ বান্ধব নতুন দিনের সূচনা প্রতিদিন চাকুরী , ব্যাবসা করে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলোর জন্য একটা নতুন দিগন্ত এই নির্দিষ্ট গোষ্টিকে টার্গেট করে, দাম আরো কিছু কমিয়ে কিস্তিতে কেনার ব্যাবস্থা এবং  প্রচারণা আরো ব্যাপক হারে বাড়ানো গেলে ই-বাইক বাংলাদেশে প্রতিটা জেলাতে একটা ইতিহাস সৃষ্টিকারী রিভোলুশন তৈরী করবে । 


লিখেছেনঃ ফরহাদুল হক



আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।