TVS Stryker 125 ১৮,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - নাহিদ
This page was last updated on 30-Jul-2024 03:05pm , By Shuvo Bangla
আমার নাম নাহিদ হাসান। ঠিকানা রাজশাহী বিভাগ, নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম থানা। আমি একটি TVS Stryker বাইক ব্যবহার করি । বাইকটি আমি ১৮,০০০ কিলোমিটার রাইড করি । আজ আমি আমার এই TVS Stryker বাইক নিয়ে ১৮,০০০ কিলোমিটার রাইডিং অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
TVS Stryker 125 ১৮,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ
আমার জীবনে প্রথম বাইক ছিল Dayang 100cc। ২০১৫ সালের শেষের দিকে আমি বাইক চালানো শিখেছিলাম। তখন আমি সপ্তম শ্রেণীতে পড়াশুনা করি। যার কারণে আমি বাইক চালাতে পারলেও বাসায় বাইক কিনে দেওয়ার কথা কখনো বাসায় বলতে পারিনি। আমি যখন ৯ম শ্রেনীতে পড়ি তখন আমি বাবা-মাকে বললাম একটি বাইক কিনে দেওয়ার জন্য।
বাবা আমার বাইক কেনার কথা শুনে জোরে একটা ধমক দিয়ে বলল এই বয়সে কিসের বাইক। আমি তখন মন খারাপ করে আমার ঘরে চলে গেলাম। তারপরে আমি প্রতিদিন মা কে বাইক কিনে দেয়ার কথা বলতাম। কিছুদিন পরে মা-বাবাকে অনেক বুঝানোর পরে বাইক কিনে দেওয়ার জন্য রাজি হলো।
কিন্তু বাবার একটাই কথা যে ছোট বাইক কিনে দিবে। তখন আমি ছোটর মধ্যে কিছু বাইক পছন্দ করতে শুরু করলাম। কিন্তু আমি যে সব বাইক পছন্দ করলাম একটি বাইক ও বাবার পছন্দ হয়নি। এরমধ্যেই আমাদের এখানকার এক বড় ভাই TVS Stryker বাইক কিনে আনে। বাইকটি বাবার দেখে পছন্দ হয়। তখন বাবা বাইকটি কেনার কথা বলে।
বাবার কথা শুনে TVS Stryker বাইকটি দেখতে যাই। তখন বাইকটি মার্কেটে নতুন আসছে । বাইক টি প্রথম দেখে আমার ও পচ্ছন্দ হয়ে যায়। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের ১৮ তারিখে দিনটি ছিল শনিবার আমি, আমার বাবা , আমার বড় ভাই এবং আমার কাকা বাইকটি কিনতে নাটোরে গনি মোটরস যাই।
ওখানে গিয়ে আমি নীল কালার এর বাইকটি পছন্দ করি। নীল কালারে প্রতি আমার আগের থেকে অনেক আকর্ষণ ছিল। তাই বাইকটি নীল কালারের নিলাম। এ দিনটি ছিল একটি স্মরণীয় দিন আমার জন্য যা আমি কখনোই ভুলবো না।
TVS Blockbuster 2 - Five TVS Motorcycles Launched In Bangladesh!
বাইকটি তখন আমি অফিশিয়ালি ১,৪৮,৫০০ টাকা দিয়ে ক্রয় করি। বাইকের প্রতি ভালোবাসার সেই ছোট বেলা থেকেই। অন্যসব যানবাহনের থেকে বাইকের প্রতি বেশি আকর্ষণ ছিল। গাড়িও আমার ভালো লাগে কিন্তু বাইকের প্রতি ভালবাসা সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে বাইক রাইড করতে।
এতটুকু বলতে পারি বাইক মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। বাইক আমার মন মানসিকতা সতেজ রাখতে অপরিসীম ভূমিকা রাখে। বাইক মানুষকে প্রকৃতির খুব কাছে নিয়ে যেতে পারে। যার কারনে বাইকিং আমি ভালোবেসে ফেলেছি। বাইক কিনার আগে থেকেই আমি বাইকিং গ্রুপে বরাইগ্রাম বাইক রাইডার (BBR) এ আছি ছোট থেকেই বাইক এবং বাইকিং ও টুরিং ব্যাপারটার প্রতি এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করতো আস্থে আস্থে এটা স্বপ্নে পরিনত হলো।
আমার TVS Stryker বাইক এর লুকস এই সেগমেন্ট এর সব বাইক থেকে সেরা বলে আমি মনে করি। রেডি পিকআপ যা আমার বাইকটিকে ভালোবাসার অন্যতম কারণ, ️আর এই ভালোবাসা থেকেই আমি আমার বাইকটা ক্রয় করার জন্য পছন্দ করেছিলাম। আমি বাইক কিনার পর ফাস্ট আমি বাবাকে নিয়ে বাইক রাইড করি।
প্রথমে বাবাকে নিয়ে চালাই মনের ভেতর এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল যা আমি আপনাদের লিখে বোঝাতে পারবোনা। বাইকটির কন্ট্রোলিং আমার কাছে ভালো লেগেছে আমার বাইকটি মোট ছয় বার সার্ভিসিং করিয়েছি যা আমি টিভিএস এর অফিসিয়াল সার্ভিস সেন্টার থেকে করিয়েছি । যার মধ্যে ফ্রী সার্ভিস ছিল ৪ টা ।
অফিসিয়াল সার্ভিস সেন্টারের সার্ভিস আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। বাইকটি ক্রয় করার পরে শুরুর দিকে আমি মাইলেজ পেয়েছি ৫৫ থেকে ৫৯ কিলোমিটার । ১০ হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করার পরে মাইলেজ একটু সমস্যা করতেছিল । যার ফলে তখন আমি মাইলেজ পাচ্ছিলাম ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
আমি তখন বড়াইগ্রাম থানার মোড় বাজারে সার্ভিসিং সেন্টার বাইকটি দেখাই তখন তারা মাইলেজ ঠিক করে দেয়। তখন আমি মাইলেজ পাচ্ছিলাম ৫২ থেকে ৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।
আমার বাইকটি বর্তমানে ১৮,০০০ কিলোমিটার চলেছে আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি মাইলেজ ৫০ থেকে ৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পাচ্ছি যা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান , যাদের একটা বাইক কেনার জন্য টাকা ম্যানেজ করতে অনেক কষ্ট করতে হয়। সেই কষ্টার্জিত টাকায় কেনা স্বপ্নের বাইকটা কতটা যত্নে রাখতে হবে এটা আপনারা সবাই ভালোভাবেই জানেন।
তারপরও বলি প্রতিদিন বাইক বাসা থেকে বের করার আগে ভালো করে পরিষ্কার করে নেই। সপ্তাহে একদিন দোকান থেকে ওয়াশ করাই। আমি সব সময় মনে করি যে আপনি মেশিনকে যত যত্ন নেবেন , মেশিন আপনাকে ততটা পার্ফরমেন্স দিবে। আমি সব সময় বাইক ওয়াশ করার পরে উন্নত মানের স্প্রে পলিশ ব্যবহার করি।
আমি আমার বাইকে প্রথম ইঞ্জিন অয়েল দেই মটুল যার গ্রেড় 20W40 এবং দাম ৫০০ টাকা। TVS Stryker বাইকের জন্য মটুল ইঞ্জিন অয়েলটি অনেক ভালো। বাইকের পার্টস তেমন কিছু পরিবর্তন করা হয়নি। শুধুমাত্র পিছনের ব্রেক সু দুইবার পরিবর্তন করেছি আর ক্লাসের তার পরিবর্তন করা হয়েছে।
বাইকের পেছনের ব্রেক ভালো কাজ করছিলনা তাই ব্রেক সু পরিবর্তন করতে হয়েছে। বাইকের ক্লাস ক্যাবল অনেক টাইট ছিল তাই ক্লাস ক্যাবল পরিবর্তন করেছি। TVS Stryker বাইকটি আমার মডিফাই ছাড়াই ভালো লাগে। তাই আমি কোন মডিফাই করিনি শুধুমাত্র দুই একটা স্টিকার লাগিয়েছি।
বাইকটির টপ স্পিড পেয়েছি ১১১ যা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি। ১২৫ সিসির বাইকে ১১১ উঠবে এটা কেউ আশা করতে পারে না। এই বাইক ভালোলাগার এটি আরেকটা কারণ।
TVS Stryker বাইকটির কিছু ভালো দিক হলো-
- রেডি পিকআপ খুব ভালো
- সামনের ব্রেক কন্ট্রোলিং অনেক ভালো
- অসাধারণ মাইলেজ
- স্মুথ ইঞ্জিন
- পিলিয়ন সিটিং পজিশন খুব ভালো লেগেছে
- এক্সস্ট সাউন্ড অনেক সুন্দর
- লুকস
TVS Stryker বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- গাড়ি হাই স্পিড এ চললে ভাইব্রেট করে
- বাইক টা একটু বেশি হালকা মনে হয়েছে
- পেছনের ব্রেক করলে কমফোর্ট ফিল কম হয় একটু স্লিপ করার ভয় থাকে
- রাতে হেডলাইট এর আলো হাইওয়েতে পর্যাপ্ত না
- টিভিএস কোম্পানির প্রতিটা পার্টস এর দাম তুলনামূলক অনেক বেশি
বাইকটি দিয়ে মোটামুটি অনেক জায়গায় আমি ভ্রমণ করেছি তার মধ্যে সিরাজগঞ্জ,পাবনা, কুষ্টিয়া ও রাজশাহী ইত্যাদি। হাইওয়েতে বাইকটির পার্ফরমেন্স খুব ভালো পেয়েছি যা মন ছুঁয়ে যাবার মত । হাইওয়েতে রাইড করার সময় মাইলেজ প্রায় 50 পেয়েছি যা অসাধারণ একটি মাইলেজ।
বাইকটি রাইড করতে বেশ কমফোর্ট তবে দীর্ঘ সময় চালালে কোমর ও হাত ব্যাথা করে। ২০০ কিলোমিটার + চালালে বাইকটির ইঞ্জিন সাইন্ড কিছুটা পরিবর্তন হয়, যা আমার কাছে একটুও ভালো লাগে নাই। এর ফলে 200 কিলোমিটার রাইড করে একটু বিরতি দিতে হয়।
বাইক নিয়ে চুড়ান্ত মতামত হচ্ছে TVS Stryker বাইকটি খুব ভালো একটি বাইক এর ইঞ্জিন পার্ফরমেন্স , লুকস সব দিক মিলিয়ে বাইকটি সবার পছন্দের একটি বাইক এবং আশাকরি সবার এই বাইকটি অনেক অনেক ভালো লাগবে। বাইকটি ফ্যামিলির জন্য বেস্ট বাইক এবং পিলিয়ন নিয়ে কমফোর্ট হবে। কষ্ট করে লেখাটি পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ নাহিদ হাসান
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।