TVS Apache RTR 160 বাইকের সাথে মালিকানা রিভিউ - কামরান

This page was last updated on 29-Jul-2024 09:12am , By Shuvo Bangla

আমি মোহাম্মদ কামরান আহমদ। আমি একটি TVS Apache RTR 160 বাইক ব‍্যবহার করি। আমি সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার অন্তভূক্ত রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের একজন স্থায়ী বাসিন্দা। আমি বর্তমানে অনার্স ৪র্থ বর্ষের একজন ছাত্র।

এই বাইকটি নিয়ে আজকে আমার রাইডিং অভিঞ্জতা শেয়ার করব। আমি ছোট বেলা থেকেই একজন বাইক পাগল মানুষ। আমি ভাবতাম কখন বড় হব আর আর বাইক চালাবো। সেই স্বপ্ন বুকে ধারণ করে বড় হই। আমি যখন ক্লাস ৫ এ পড়ি তখন আমাদের একটা বাইক ছিল Freedom। আমি ছোট ছিলাম বলে বাইক চালাতে দেন নাই আমার পরিবার, তবে আমি রোজ বিকেলে বাইকে বসে থাকতাম আর ছোট বাচ্চাদের দিয়ে পিছনে ধাক্কা দিয়ে বাড়ির উঠুনে বাইক চালাতাম।

সেটার কী যে ফিলিংস ছিল বলে বুঝানো যাবে না। যাই হোক আমি যখন ক্লাস সেভেন পরি তখন আমি লুকিয়ে চাবি নিয়ে বাইক চালাই । সেই প্রথম আমার বাইক চালানো শুরু। তার এক বছর পর আমার পরিবার Hero glamour বাইক কিনে দেয় আমায় সেটি অনেক দিন চালানোর পর 2020 সালের লাষ্টের দিকে আমায় RTR 160 বাইকটি কিনে দেয়।

আমার বাড়ি থেকে আমার কলেজের দূরত্ব  প্রায় ৬০ কিলোমিটার হওয়া আমাকে বাইকটি দেওয়া হয়। এ বাইকটি কেনার পেছনে মূল কারণ হল এর বাজার মূল‍্য ২ লাখ টাকার আশে পাশে থাকার কারণ এবং এই বাজেটে এত সুন্দর লুকস এর ডিসপ্লে প‍্যানেল। এই বাইকটি আমি টিভিএস এর শোরুম থেকে ক্রয় করি। বাইকটি ক্রয় করার পর ৪ বার ফ্রি সার্ভিস  আমি করাই এর পর আমি ১০০০ কিলোমিটার পর পর সার্ভিস করাই। ২৫০০ কিলোমিটার পর বাইকটি থেকে ৩০ থেকে ৩৩ কিলোমিটার মাইলেজ পেয়েছি।

বাইকটি নিয়ে কিছু মন্তব্য - 
এই বাইকের ইঞ্জিন নিয়ে ইতিমধ্যে আমরা সবাই জানি । আমি যে বাইক ব‍্যবহার করি সেটা ডাবল ডিস্ক ব্রেকের । এই বাইকে ১৫৯.৭ সিসি ক্ষমতার একটি ইঞ্জিন দেওয়া হয়েছে। রয়েছে স্মার্ট এক্স কানেক্ট সিস্টেম যা বাইক টিকে আরও নতুনত্ব এনে দিয়েছে।
 
 
ডিজাইন -
ডিজাইনের কথা বলতে গেলে এক কথায় আমার কাছে অসাধারন লেগেছে। গ্রাফিক্স ডিজাইন থাকার কারণে বাইকটিকে আরও বেশি সুন্দর লাগে।
ফিচার - 
এল ই ডি হেট লাইট ব‍্যাক লাইট। ডিজিটাল মিটার। গিয়ার ইন্ডিগেটর। এর চাকার সাইজ। কিক ও সেল্ফ সিস্টেম। সব মিলিয়ে পুরা একটা রেসিং নেকেট স্পোর্টস বাইক।
আমার তোলা সবোচ্চ গতি-
আমার বাইকটি দিয়ে 137k.m/h স্পিড তুলতে সক্ষম হই । যেটি আমি ইটনা মিঠামইন রোডে তুলি। আসলে যত গতি তত ক্ষতি। স্পিডিং না করাই ভালো ।

মাইলেজ -
আমি শহরে প্রতি লিটারে ৩০ থেকে ৩২ এবং হাইওয়েতে ৩৫ থেকে ৩৬ মাইলেজ পেয়ে থাকি। স্পোর্টস বাইক হওয়াতে এই বাইক তুলনা মূলক আমার মনে হয় তেল একটু বেশি যায় যা আমি আমার বাইকে দেখেছি।
 
মেইনটেন‍্যান্স - 
আমি আমার বাইক সবসময় সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে গিয়ে সার্ভিস করাই। ১ হাজার কিলোমিটার চালানোর পর পর সব সময় এটিকে সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে গিয়ে সার্ভিস করাতে হবে। সর্বদা রোদ থেকে দূরে রাখতে হবে। ইঞ্জিন ওয়েল ভালো মানের ব‍্যবহার করতে হবে। আমি মতুল 10w30 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব‍্যবহার করি । তেল ক্রয় করার সময় সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে যাতে ভালো মানের তেল সংগ্রহ করা যায়। সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে এতে করে আসা করা যায় এই বাইক থেকে ভালো একটা পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে।
 
অতিরিক্ত পানি ব‍্যবহার থেকে বিরত থাকুন। ২০২১ এর লাষ্টের দিকে আমি সার্ভিসিং সেন্টারে আমার বাইক ওয়াস করাই। পানির অতিরিক্ত প্রেসারের কারনে আমার বাইকের TCI unit নষ্ট হয়ে যায়। যা পরবর্তীতে শোরুম আমাকে নতুন আরেকটি লাগিয়ে দেয়।

TVS Apache RTR 160 বাইকের কিছু ভালো দিক -

  • ইঞ্জিন পারফরম্যান্স অনেক ভালো।
  • স্মাট এক্স - কানেক্ট থাকার কারণে ফোন কল আসলে তা মিটারে শো করে যার কারণে মোবাইল ফোন বের করতে হয় না, এতে করে ফোনটি জুরুরি কী না তা বুঝা যায়।
  • পিলিয়ন নিয়ে দীর্ঘ যাতায়াতে কোন প্রকার সমস‍্যা বা পিঠে ব‍্যাথা হয় না।
  • পিছনের মন সক সাসপেনসন অনেক বেশি সাপোর্ট দেয়।
  • এর বাজার মূল‍্য অন‍্য সকল স্পোর্টস বাইক থেকে তুলনামূলক কম।
 

TVS Apache RTR 160 বাইকের কিছু খারাপ দিক -

  • ডিজিটাল মিটারটিতে গিয়ার ইন্ডিগিটর আইকন সব সময় ভূল দেখায়।
  • পিছনের সিট উচু থাকার কারণে পিলিয়নের অনেক সমস‍্যা হয়।
  • কিছুটা ভাইব্রেশন করে।
  • হার্ড ব্রেক করলে পিছনের চাকা কিছুটা সরে যায়।
  • মাইলেজ তুলনামূলক কম।
লম্বা দূরত্বের যাত্রা -
গত বছর আমার বাইকটিকে নিয়ে মৌলভীবাজার হতে কিশোরগঞ্জ হয়ে ইটনা, মিঠামইন  ভ্রমণ করি। অনেক লম্বা পথ, অনেক দূরের যাত্রা থাকার কারণে সাথে পিলিয়ন ছিল। সত‍্যি কথা বলতে আমি অনেক কমফোট ফিল করি আমার এই বাইক নিয়ে। এত দূরের যাত্রা হওয়াতে কখন ও কোন সমস‍্যা ফিল করি নি। হাতে একটু ব‍্যাথা অনুভব করেছিলাম। সব মিলিয়ে বাইক নিয়ে যাত্রাটা অনেক মজার ছিল।
 
বাইকটি এক কথায় সব মিলিয়ে অসাধারণ বাইক। মূলত এর ডিজাইন দেখে আমি মুগ্ধ। বাইকটির লুকিং, পারফরম্যান্স, রেডি পিকআপ অনেক ভালো। তবে ব্রেকিংটা আর একটু ভালো করলে আমার মনে হয় ভালো হবে। সকল বাইকের কিছু সমস‍্যা থাকবেই তাই আমি মনে করি এই বাইকটি আপনারা ব‍্যবহার করতে পারেন।
 
যারা বাইক চালানোতে অনেক দক্ষ তারা এটি ব‍্যবহার করলে আমার মনে হয় বেশি ভালো হবে যেহেতু বাইকটির হর্স পাওয়ার অনেক বেশি। সর্বদা হেলমেট পরিধান করে বাইক ব‍্যবহার করবেন। বাইকের কাগজপত্র সাথে রাখবেন এবং ডাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কেউ বাইক চালাবেন না। সর্তকতার সহিত বাইক চালান, নিজে সেইফ থাকুন এবং অন‍্যকে সেইফ রাখুন। ধন‍্যবাদ ।
 

লিখেছেনঃ মোহাম্মদ কামরান আহমদ

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।