TVS Apache RTR 160 4V X-Connect ABS টেস্ট রাইড রিভিউ - টিম বাইকবিডি
This page was last updated on 31-Jul-2024 12:38pm , By Raihan Opu Bangla
পাইপ হ্যান্ডেলবার এর সাথে রয়েছে দুজনের বসার মত একটি আরামদায়ক সিট ও সেই সাথে যুক্ত করা হয়েছে একটি পাওয়ারফুল ইঞ্জিন, হ্যা এটাই হচ্ছে RTR এর সবচেয়ে দারূণ ব্যাপার। আর অপর দিকে স্পিডের দিক থেকেও বাইকটি বেশ এগ্রেসিভ বলা যায়। তাই আজ টিম বাইকবিডি আমরা নিয়ে এসেছি TVS Apache RTR 160 4V X-Connect ABS এর টেস্ট রাইড রিভিউ।
তো চলুন দেখা নেয়া যাক বাইকটি আসলে কেমন!
স্মার্ট এক্স-কানেক্ট এর বিষয়টি হচ্ছে ব্লু-টুথ কানেকশন, যা আপনাকে একটি এপ্লিকেশন এর মাধ্যমে বাইকের সাথে কানেক্ট করে রাখবে। এর সাথে অনেক ফিচার্স যুক্ত করা হয়েছে যা আপনাকে অনেক বেশি আকর্ষণ করবে।
- প্রথমত, এতে আপনি আপনার ইনকামিং কল বা এসএমএস এর নোটিফিকেশন পাবেন
- আপনার বাইকের ফুয়েল কমে গেলে আপনি গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে কাছাকাছি ফিলিং স্টেশনের অবস্থান জানতে পারবেন
- এপের মাধ্যমে আপনি আপনার গন্তব্য সেট করে নিতে পারবেন, তার নেভিগেশন আপনি বাইকটির স্পিডোমিটারে দেখতে পাবেন
- এপের মাধ্যমে আপনি আপনার রাইডের অনেক তথ্য দেখতে পাবেন, এদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে স্পিড, এভারেজ মাইলেজ সহ অনেক কিছু।
- এছাড়া আপনি বাইকটির কর্নারিং এর সময় এর লিন এঙ্গেল দেখতে পাবেন, সেই সাথে তখন কত স্পিড ছিল সেটাও দেখতে পাবেন
- এই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আপনি সুইচ গিয়ার্স এর উপর একটি ডেডিকেটেড আই বাটন পাবেন
- আপনি বাইকটির স্পিডোমিটারে টপ স্পিড, এভারেজ স্পিড এবং ল্যাপ টাইম দেখতে পাবেন
এই সফটওয়্যার এড করার সাথে সাথে টিভিএস বাইকটিতে নতুন ভাবে যুক্ত করেছে একদম সম্পূর্ন নতুন এলইডি হেডলাইট, যা RTR 4V তে প্রথমবারের মত যুক্ত করা হয়েছে। এই নতুন এলইডি হেডলাইটের কারণে বাইকটিতে অনেক বেশি পাওয়ারফুল মনে হয়।
টিভিএস বাইকটির কিছু কিছু অংশে অনেক বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। যেমন তারা যুক্ত করেছে ডুয়েল টোন সিট কভার ও সামনের দিকের ইন্ডিকেটর গুলো কিছুটা উচুতে স্থাপন করা হয়েছে।
অন্য সবার মতই টিভিএস এই সেগমেন্টে ইঞ্জিনের সেভাবে কোন ধরনের পরিবর্তন আনেনি। তারা একই রকম ১৬০সিসি সিঙ্গেল সিলিন্ডার ৪ ভাল্ব, ওয়েল কুলিং কার্বুরেটর ইঞ্জিন যুক্ত করেছে। ওয়েল কুলিং হবার কারনে বাইকটি অন্যান্য বাইক থেকে খুব তাড়াতাড়ি ইঞ্জিন ঠান্ডা করে দেয়।
ইঞ্জিন দ্রুত ঠান্ডা হতে হয় এর কারণ হচ্ছে বাইকটির ইঞ্জিন থেকে 16.3 BHP @ 8000 RPM এবং 14.8 NM @ 6500 RPM টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম। যা বেশ পাওয়ারফুল বলা যায়।
ইঞ্জিনের ভাইব্রেশন আপনি ৭০০০ আরপিএম এর পর থেকে অনুভব করতে পারবেন, যা এই সেগমেন্টের বাইকের জন্য স্বাভাবিক বলা যায়। তবে RTR160 2v এর মত এই ভাইব্রেশন ম্যানেজ করে নেয়া যায়, এতে করে বোঝাই যাচ্ছে টিভিএস বাইকটি বেশ রিফাইন করে তৈরি করেছে। আপনি ভাইব্রেশন ফুট পেগ ও হ্যান্ডেলবারে অনুভাব করতে পারবেন।
TVS Apache RTR X-Connect With ABS Full Test Ride Review
পরিবর্তনের কথা বলতে গিয়ে বলতে হয়, টিভিএস এই বাইকটিতে যুক্ত করেছে সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস। যা বাইকটির সামনের চাকার সাথে যুক্ত করা হয়েছে এবং টিভিএস এটাকে সুপার মটো এবিএস বলছে, কিন্তু কেন সেটা আমরা বুঝতে পারছি না।
বাংলাদেশের রাস্তায় বাইকটির এবিএস ফিডব্যাক বেশ ভাল পেয়েছি আমরা। যদিও সামনের দিকের বিটে কিছুটা কমতি খেয়াল করেছি আমরা তবে একে বারে খারাপ নয়। এই পাওয়ার ফুল বাইকের সাথে এবিএস যুক্ত করার ফলে বাইকটি রাইড করতে আপনি বেশ ভাল কনফিডেন্স পাবেন।
নতুন বাইকটির এলইডি হেডলাইট আগের হ্যালোজেন লাইটের চেয়ে বেশ পাওয়ারফুল, এর সাথে বাইকটি বেশ এগ্রেসিভ লুকিং এনে দিয়েছে। আমরা এটা বলব না যে বাইকটির আলো এই সেগমেন্টে বেস্ট তবে বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দিয়েছে আগের ভার্সনের থেকে।
যেহেতু বাইকটিতে পাইপ হ্যান্ডেলবার যুক্ত করা হয়েছে তাই এর সিটিং পজিশন অনেক বেশি আরামদায়ক। বাইকটির রেয়ারে দেয়া হয়েছে শোয়া এবং ৭ স্টেপ এডজাস্টেবল সাসপেনশন, যা রাস্তার অবস্থার উপর নির্ভর করে সেট করে নেয়া যায়। আপনি পিছনে পিলিয়ন বা লোড নিয়ে বেশ আরামদায়ক ভাবে বাংলাদেশের রাস্তায় রাইড করতে পারবেন।
এখন বাইকটির দিকে যদি লক্ষ্য করি তবে দেখতে পাই যে বাইকটি হাইটের দিক থেকে কিছুটা লো করা। এর স্যাডেল হাইট হচ্ছে ৮০০ মিমি যা বর্তমানে একটি স্ট্যান্ডার্ড হাইট। তবে এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স হচ্ছে ১৮০মিমি, এতে করে আপনি যদি ১৪০কেজির বেশি লোড নিয়ে থাকেন, তারপরও স্পিড ব্রেকারে আপনার ঘষা লাগার সম্ভাবনা নেই।
Apache RTR1604V X Connect ABS বাইকটিতে কোন ধরনের মেক্যানিক্যাল পরিবর্তন আনা হয়নি। এটি এর আগের ভার্সনের মতই রয়েছে, মানে বর্তমানে এর ওজন ১৪৫ কেজি (ডুয়েল ডিস্ক ভার্সন)।
বাইকটির অন্যতম বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে এর টায়ারে। যদিও আমাদের টিভিএস রেমুরা টায়ার নিয়ে কোন অভিযোগ নেই, তবুও এবার তারা এমআরএফ রেডিয়াল টায়ার ব্যবহার করেছে। এতে করে আপনি টায়ার গ্রিপ আরও ভাল হয়েছে সেই সাথে ভেজা বা শুকনো রাস্তায় আপনার কর্নারিং এ আপনি ভাল গ্রিপ ও কনফিডেন্স পাবেন।
যদিও অনেক গরমের সময় বাইকটির টায়ার গ্রিপ করতে অনেক সময় লাগে। তবে বাইকটির এডিশনাল সুইচ আমাদের ভাল লাগেনি। আমাদের মনে হয়েছে এটা না দেয়াটাই বরং ভাল হত।
এর ইঞ্জিন লো এবং মিড রেঞ্জে বেশ ভাল রেসপন্স করে থাকে। যেহেতু বাইকটির ইঞ্জিনের মধ্যে পাওয়ার আছে, তাই সন্দেহাতীত ভাবে ১৬০সিসি সেগমেন্টে বাইকটি অন্যতম স্পিডী বা দ্রুতগামী বাইক।
বাইকটির সাসপেনশন পিলিয়নসহ বা ছাড়া যেকোন অবস্থায় বেশ ভাল একটা ফিডব্যাক প্রদান করে থাকে। ৭ স্টেপ রেয়ার মনো-শক সাসপেনশন লং রাইডের ক্ষেত্রে দারূণ ফিডব্যাক প্রদান করে থাকে।
মাইলেজঃ হাইওয়ে ৩৮ – ৪০ কিলোমিটার প্রতি লিটার এবং শহরে ৩৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার
TVS Apache RTR 160 4V X-Connect ABS ভাল দিকঃ
- এই সেগমেন্টের সবচেয়ে পাওয়ারফুল বাইক
- রিফাইন ও স্মুথ ইঞ্জিন
- স্মার্ট এক্স-কানেক্ট যা এই সেগমেন্টে প্রথম ও আকর্ষণীয় ফিচার্স
- সাসপেনশন ফিডব্যাক ভাল
- হেডলাইটের ইলুমিনেশন অনেক ভাল, হাইওয়েতে সেভাবে খারাপ লাগে না
- বিল্ড কোয়ালিটি বেশ ভাল
TVS Apache RTR 160 4V X-Connect ABS খারাপ দিকঃ
- ব্রেকিং দিক থেকে কিছু পিছিয়ে রয়েছে এই সেগমেন্টের অন্যান্যদের চেয়ে
- ভেজা রাস্তায় রেয়ার টায়ার ফিডব্যাক ভাল নয়
- টার্নি রেডিয়াস অনেক বেশি
- এক্সট্রা AHO এর কোন প্রয়োজন ছিল না
টিভিএস আর প্রতিযোগিদের মত ফুয়েল ইঞ্জেকশন (এফআই) বাইক নিয়ে আসেনি, এফআই বাইকটি এই ভার্সনের চেয়ে বেশি পাওয়ার তৈরি করতে পারে কিন্তু তার জন্য এর মেইনটেনেন্সও অনেক বেশি। অনেকের মনেই এই প্রশ্ন আসতে পারে যে কেন RTR160 4V ১৬০সিসি সেগমেন্টের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বাইক। এর কারণ হচ্ছে বাইকটি পাওয়ার এর প্রতিযোগীদের থেকে অনেক বেশি এবং রাইডিং এর ক্ষেত্রে অনেক আরামদায়ক ও সেই সাথে বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি অনেক দারূণ। ধন্যবাদ।