Honda CB Hornet 160R CBS বাইকের ৪১,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - সোলায়মান

This page was last updated on 01-Aug-2024 05:36am , By Shuvo Bangla

আমি মোহাম্মদ সোলায়মান, আমার নিজ জেলা সুনামগঞ্জ,  কর্মসুত্রে থাকি সিলেট।  আপনাদের সাথে আমি আমার Honda CB Hornet 160R CBS বাইকের ৪১,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ শেয়ার করবো ।

Honda CB Hornet 160R CBS

আমার জীবনের প্রথম বাইক ছিল ইয়ামাহা RX100 , ১৯৯৭ সালে আমার এক বড় ভাইয়ের বাইক ছিল উনাকে না বলেই বাইক চালাইতে শুরু করি, সেই থেকে আজ পর্যন্ত বাইক চালাচ্ছি।

প্রথমত আমি ভ্রমন করতে ভালবাসি, প্রকৃতি ভালবাসি, আমার বাড়িও সুনামগঞ্জের টুরিস্ট এলাকায় যাদুকাটা নদীর পাড়ে, আর আমি মনে করি প্রকৃতির সবচেয়ে কাছাকাছি যাওয়া যায় একমাত্র বাইক নিয়ে। ২০২১ সালে যখন বাইক নেব তখন আমার বাজেট ২ লাখ টাকা, আর পছন্দ ছিল কমিউটার বাইক, ভাল ব্রেকিং, তখন পালসার দেখলাম, হিরো থ্রিলার দেখলাম পছন্দ হলনা, হঠাৎ দেখলাম হরনেট বাইক টি রাস্তার পাশে রাখা, বাইকের মালিককে বাইক সম্পর্কে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করে এক বন্ধুকে নিয়ে গেলাম হোন্ডার সিলেট শোরুমে ।

কিন্তু কপাল খারাপ সিলেটে ২ টা শোরুমেই হরনেট ছিল না , তারা বলল বুকিং দিলে ৭-১০ দিনের মাঝে এনে বাইক দিবে,  কিন্তু আমারত আর্জেন্ট লাগবে কারন আমি বাইক ছাড়া একদিন ও চলতে পারিনা, দিলাম আমার নিজ জেলায় ফোন, সুনামগঞ্জ জহুরা হোন্ডা শোরুম থেকে বলল হরনেট আছে । তাদেরকে বললাম বাইক রেডি করেন আসতেছি নিতে । 

আমরা ৪ বাইকে ৬ জন ফ্রেন্ড সন্ধায় রওনা দেই সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ, উল্লেখ্য আমার সাথের সবাই বাইকার এবং সবাই বাইকেই ট্যুর করে। রাতেই বাইক নিলাম সবাইকে নিয়ে পার্টি দিলাম, সেই অনুভূতি বলে বোঝানো যাবেনা  

সিবি হরনেট ১৬০ বাইক টি বেছে নেওয়ার কারন হলো আমার কাছে এই বাজেটে এই সেগমেন্টর সেরা বাইক। মাইলেজ ভাল, সিবিএস ব্রেকিং ভাল, লুকস ভাল। আমি ০২/০২/২০২১ সালে বাইক টি নেই সুনামগঞ্জ জেলার জহুরা হোন্ডা থেকে তখন দাম ছিল ১,৮৯,৯০০. টাকা । 

বাইক কিনে যখন প্রথম স্টার্ট দেই তখন অন্য রকম ফিল হইছিল, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। ২০২১ থেকে এই পর্যন্ত বাইকটি চালানোর মূল কারন হলো আমার চাহিদার প্রায় সবেই আছে এই বাইকে, মাইলেজ, ব্রেকিং, লুকিং, কমফোর্ট ।

সিবিএস ব্রেকিং অসাধারণ, যারা সিবিএসে ব্রেকিং এ একবার অভ্যস্ত হয়ে যায় তারা এটা ছাড়তে পারবেনা, মিটারে ঘড়ি দারুন কাজে লাগে, AHO লাইটে আলো কম। আমি প্রতিদিন বাইক চালাই, সকালে বাইক মুছে চাকার হাওয়া চেক করেই আমি বাইক স্টার্ট দেই আল্লাহর নাম নিয়ে। আল্লাহ যেন নিরাপদে আবার বাসায় ফিরিয়ে আনেন এই দোয়া করি।

আমি সময়মত প্রত্যেকটা সার্ভিস করাইছি শোরুমে, বাইক সুনামগঞ্জ থেকে কেনে হলেও আমি সার্ভিস করাই সিলেট থেকে, কারন কাজের সুত্রে আমি সিলেট থাকি । হোন্ডার সার্ভিস ভালই তবে আরো অভিজ্ঞ মেকানিক রাখার রিকোয়েস্ট করছি আমি। শুরু থেকেই আমি মাইলেজ পেয়েছি ৪৩। আমি সময়মত ইঞ্জিল ওয়েল চেঞ্জ করি, চাকার হাওয়ার প্রেসার ঠিক রাখি , চেইনে ভাল লুব ইউজ করি,  এবং সব হোন্ডার জেনুইন পার্টস ইউজ করি।

আমি শুরু থেকে ৮০০০ কিলো পর্যন্ত হোন্ডার রেকোমেন্ডেড ইঞ্জিল ওয়েল ব্যবহার করছি, ৮ হাজারের থেকে আমি ইউজ করি SPX-1 10*30 ইঞ্জিল ওয়েল। এবং এই ইঞ্জিল ওয়েল ইউজ করে আমি সন্তুষ্ট, সাউন্ড ও পাই দারুন স্মুথ। বাইক কেনার ২ মাসের মাথায় আমি মনোশক সাসপেন্সন এ সমস্যা পাই, মানে ইজিলি স্প্রিং উটানামা করত না, আমি সুনামগঞ্জ শোরুমে ক্লেইম করলে তারা আমার বাইক দেখে ছবি, ভিডিও নিয়ে হেড অফিসে পাঠায়, এবং প্রায় ৫ মাস পরে আমার মনোশক সাসপেন্সন কোম্পানি চেঞ্জ করে দেয়, হোন্ডা কোম্পানি কে ধন্যবাদ এজন্য।

 বাইকের ৪০ হাজার কিলো পার হওয়ার পরে আমি বাইকের ফুল সার্ভিস করাই, সেই সার্ভিসে চেঞ্জ করছি চেইন কিট সেট, ক্লাসপ্লেইট সেট, ক্লাস কেবল, এক্সিলেটর কেবল, ও উভয় টায়ার । আমি অনেক কিছুই মোডিফাই করছি তার মাঝে শুরুতেই হর্ন, বাইকের সাথে যে হর্ন থাকে তা খুবেই কম সাউন্ড, আমি অন্য এক জোড়া হর্ন লাগাইছি, হেড লাইটের আলো খুবেই কম, আর যারা ট্যুর করে তাদের জন্য এই আলো পর্যাপ্ত না৷ তাই আমি এক্সট্রা ফগ লাইট লাগাইছি। 

ট্যুর করার সুবিধার্থে আমি সামনে উইন শিল্ড ও হ্যান্ডেল গার্ড এবং পিছনে কেরিয়ার লাগাইছি, যা আমার ট্যুর করতে অনেক কাজে লাগে। আমি স্পিডিং করিনা পছন্দ ও করিনা তবে কখনো রাস্তায় স্পিড উটে যায়, এই বাইক দিয়ে আমি ১২৮ স্পিড তুলছি উইথ পিলিয়ন ও ব্যাগ সহ।

Honda CB Hornet 160R CBS বাইকের কিছু ভালো দিক -

  • ব্রেকিং
  • মাইলেজ
  • কম্ফোর্ট
  • লুকিং
  • বাজেট ফ্রেন্ডলি 

Honda CB Hornet 160R CBS বাইকের কিছু খারাপ দিক -

  • লাইটের আলো কম
  • মনোশক সাসপেন্সন শক্ত
  • সিট শক্ত
  • হর্নের সাউন্ড কম
  • ব্রেক প্যাডের দাম বেশি

এই বাইক নিয়ে আমি সারা দেশ অর্থাৎ ৬৪ জেলা ভ্রমন করছি, এবং প্রতি বারেই পিছনে পিলিয়ন ও ব্যাগ ছিল, সিলেট থেকে টানা বান্দরবান ও সিলেট থেকে টানা নাটোর পর্যন্ত গেছি একদিনে । বাইকের ইঞ্জিল গরম হয়না, এখন পর্যন্ত আমি ৪১,০০০ এর বেশি রাইড করছি এই বাইকে।

বাইক নিয়ে আমার চুড়ান্ত মতামত হলো এই বাজেটে বর্তমান বাজারে ১৬০ সিসি সেগমেন্টের মাঝে সেরা বাইক, বাজেট ফ্রেন্ডলি বাইক, মাইলেজ, লুকিং, ব্রেকিং মিলিয়ে এভারেজে ভাল একটি বাইক, আমি আমার বাইক নিয়ে সন্তুষ্ট,  আশা করি আমি ১ লাখ কিলো চালাবো বাইকটি । ধন্যবাদ । 

লিখেছেনঃ মোহাম্মদ সোলায়মান

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।