Suzuki Gixxer ৪৫০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - রাফসান রহমান
This page was last updated on 18-Nov-2023 12:31pm , By Shuvo Bangla
আমার নাম রাফসান রহমান মিশেল। আমি একজন ছাত্র। আজ আমি আমার ব্যবহার করা Suzuki Gixxer বাইকটি নিয়ে ৪৫০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ শেয়ার করবো ।
Suzuki Gixxer ৪৫০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - রাফসান রহমান
আমি বসবাস করছি ঢাকার ইব্রাহিমপুর, মিরপুর-১৪। যখন ছোট ছিলাম কৌতুহল বশত সাইকেল চালানো শিখেছিলাম। তখন সাইকেল চালাতে খুব ভালো লাগতো। যখন সামনে দিয়ে কোন মোটরসাইকেল যেতে দেখতাম তখন তাকিয়ে থেকে ভাবতাম বড় হলে মোটরসাইকেল চালানো শিখব।
ছোট থাকতে যখন মোটরসাইকেলে উঠে কোথাও যেতাম তখন খুব ভালো লাগতো, সেই থেকে মটরসাইকেলের প্রতি খুব ভালোলাগা শুরু হলো এবং সপ্নে দেখা শুরু করলাম বড় হয়ে মটরসাইকেল চালাবো এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাবো। আমি যখন ষষ্ঠ শ্রেনীতে পরাশুনা করি তখন আমার বাবা Honda CG125 কিনেছিলো।
প্রায় সময় বাবার সাথে মটরসাইকেলে উঠে বিভিন্ন জায়গায় যেতাম এবং খেয়াল করতাম বাবা কিভাবে মটরসাইকেল চালাতো। যখন আমি অষ্টম শ্রেণিতে তখন বাবাকে বলেছিলাম আমি মটরসাইকেল চালানো শিখবো। তখন বাবা আমাকে চালানো শিখালো। ঐ দিনের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়, এক কথায় অসাধারণ অনুভূতি হয়েছিল।
বাইকের প্রতি দিন দিন দূর্বল হয়ে পড়ি, বাইক চালানোর প্রতি ভালোবাসা বাড়তে থাকে। এরপর এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় চালানো শুরু করি, আস্তে আস্তে আশে পাশে ছোট বড় বিভিন্ন রাস্তায় এবং সব শেষে হাইওয়ে রাস্তায় নিজেকে পারদর্শী করেছি সেই সাথে অনেক কিছু শিখেছি।
এরপর যখন আমার বিবিএ ফাইনাল ইয়ার শুরু হলো বাবাকে বলি আমাকে মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য , বাসা থেকে বাইক ক্রয় করার জন্য বাজেট ছিল সবকিছু মিলিয়ে ২ লাখ টাকা। আমি মোটামুটি সব ব্রান্ডের বাইক চালিয়েছে, এবং পছন্দের তালিকায় ছিল Suzuki Bike তখন সিদ্ধান্ত নিয়ে সুজুকি শোরুম থেকে Suzuki Gixxer বাইকটি ক্রয় করি ।
তখন বাইকটির বাজার মূল্য ছিল ১,৭৫,০০০ টাকা । ২ বছরের রেজিস্ট্রেশন সহ Omega Motors থেকে বাইকটি ক্রয় করি। প্রথম বারের মতো নিজের বাইক কিনে চালাতে খুবই ভালো লাগা কাজ করছিলো, সেই মুহূর্তে খুব ইমোশনাল হয়ে গেছিলাম।
আমি বাইকে ঘুরতে অনেক পছন্দ করি, নিজের বাইকে বাংলাদেশ ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা এবং দেশের বাইরে বাইক নিয়ে ভ্রমন করার ইচ্ছে। এই বাইকটি কেনার পেছনে আরো কিছু কারণ ছিল, যেমন: বাইকের লুকস আমার চোখে অসাধারণ লেগেছিল, এই বাইকের ইঞ্জিনের পাওয়ার রেসপন্স, ব্রেকিং, কন্ট্রোলিং, পারফরম্যান্স ইত্যাদি মিলিয়ে আমার কাছে খুব পছন্দ ছিল।
আমি বরাবরই বাইকের ওপর খুবই যত্নশীল। ৪ মাসে ৪,৫০০ কিলোমিটার চালানো হয়েছে। ম্যানুয়াল বই অনুযায়ী ১,৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্রেক ইন পিরিয়ড মেনেছি। প্রথম ৮০০ কিলোমিটার ৪,৫০০ আর পিএম এবং পরবর্তী ৮০০ কিলোমিটার ৭,০০০ আর পিএম চালানো হয়েছে। দিনের শুরুতে কিক স্টার্ট দিয়ে ইঞ্জিন ওয়ার্ম আপ করে চালানো হয়।
বাইকটিতে 10w40 গ্রেডের মটুল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করছি। ব্রেক ইন পিরিয়ড থাকা অবস্থায় প্রথম ৪০০ কিলোমিটার , পরবর্তীতে ২ বার ৬০০ কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করেছি এবং প্রতিবার অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করা হয়।
পরবর্তীতে ৮০০-৯০০ কিলোমিটার এর মধ্যে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি সেইসাথে অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করা হয়। এখন পর্যন্ত ২ বার ফ্রি সার্ভিস করানো হয়েছে এবং ৫,০০০ কিলোমিটার হলে ৩য় ফ্রি সার্ভিস করানো হবে। বাইকের চেইন এ গিয়ার অয়েল ব্যাবহার করি যেটা চেইন এর জন্য খুবই ভালো এবং কোম্পানি রিকমেন্ড চাকার প্রেশার সামনে ২৯, পিছনে পিলিয়ন সহ ৩৫ রাখি।
এখনও পর্যন্ত বাইকের কোন পার্টস পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়নি। এই ৪,৫০০ কিলোমিটার এর মধ্যে প্রথম সর্ট টুর ছিল ঢাকা-কুমিল্লা-ঢাকা এবং ২য় লং টুর ছিল ঢাকা-যশোর-চুয়াডাঙ্গা-ঢাকা। সিটিতে এভারেজ মাইলেজ ৩৮+- এবং হাইওয়ে রাস্তায় ৪৪+- পেয়েছি। সবসময় ভালো যায়গা থেকে অকটেন ব্যাবহার করি। এই বাইকে সর্বোচ্চ ১৩০ টপ স্পিড উঠাতে সক্ষম হয়েছি।
Suzuki Gixxer বাইকের কিছু ভালো দিক -
- দ্রুত এক্সেলারেসন
- ব্যালেন্সিং
- কন্ট্রোলিং
- ব্রেকিং
- ফ্লাট টায়ার থাকার কারণে স্লো ও হাই স্পিডে কর্ণারিং করা যায়।
Suzuki Gixxer বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- ফ্রন্ট সাসপেনশন একটু শক্ত থাকায় ভাঙ্গা রাস্তায় অস্বস্তিকর
- পিলিয়ন ছিট ছোট ও শক্ত
- পিলিয়ন থাকলে যেকোন উঁচু স্পিড ব্রেকারে বাইকের নিচের অংশে ঘসা লাগে
- বাইকের প্লাস্টিক কোয়ালিটি ও সুইচ গিয়ার্স গুলো আরও উন্নত করলে ভালো হতো
- এয়ার কুলিং এর বদলে ওয়েল কুলিং হলে ভালো হতো
বাইকারদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই গতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখবেন। সব সময় সার্টিফাইড হেলমেট পরে বাইক চালাবেন।ধন্যবাদ।