Runner Knight Rider 150 V1 এর ১০,০০০ কিলোমিটার রাইড - অর্ণব
This page was last updated on 16-Jul-2024 05:35pm , By Raihan Opu Bangla
আমি অর্ণব। আমার বাসা রাজবাড়ী জেলা শহরের বিনোদপুর এলাকায়। আমি একটি Runner Knight Rider 150 V1 বাইক ব্যবহার করি । আজ আমি আমার এই বাইকটি নিয়ে আমার কিছু রাইডিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
Runner Knight Rider 150 V1 এর ১০,০০০ কিমি রাইড
ইন্টার ১ম বর্ষে উত্তীর্ণ হওয়ার পরপ রই মোটরসাইকেলের উপর আগ্রহ বাড়তে থাকে। বাড়ীর একমাত্র ছেলে হওয়ায় আমার জন্যে মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি পাওয়া বিশাল এক চ্যালেঞ্জিং ব্যপার ছিল। সেই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে উঠতে অবশেষে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে এসে পরিবারের সম্মতিতেই আমার স্বপ্ন পূরণ হয়। কিনে নিলাম পছন্দের Runner Knight Rider 150 V1 বাইকটি ।
বর্তমানে আমার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি হচ্ছে Runner Knight Rider 150 V1। বাইকটি আমি ১০ হাজার কিলোমিটার রাইড করেছি। বাইকটি আমার আগে থেকে পছন্দ ছিল ব্যাপারটি এমন না। কম বাজেটে Hero Hunk পছন্দের তালিকায় থাকলেও একই সেগমেন্টে, মাইলেজ, ইঞ্জিন পাওয়ার, কম্ফোর্টনেস এবং লুকিং এর ফিচার গুলো এগিয়ে গিয়ে Runner Knight Rider 150 V1 বাইকটি আমার মনে জায়গা করে নেয়।
২০১৯ সালের ৩০ শে অক্টোবর বাইকটি ক্রয় করি তখন বাইকটির মূল্য ছিল ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা ।
বাইকটি আমার জেলা শহর রাজবাড়ী বিনোদপুরে অবস্থিত রানার অটোমোবাইলস এর ডিলার পয়েন্ট রাফি অটো থেকে ক্রয় করি। Runner Knight Rider 150 V1 বাইকটি কেনার পর অনেকে অনেক কথা শুনিয়েছে আমাকে। বিল্ড কোয়ালিটি ভাল না, মাইলেজ ভালো পাবোনা ইত্যাদি। কিন্তু এই ধারণা কতটুকু যুক্তিসংগত আজকে আমি আমার বাইকটি চালানোর অভিজ্ঞতা থেকে আলোচনার মাধ্যমে তা জানাবো।
প্রথমে বলি কন্ট্রোলিং নিয়ে। বাইকের ডিফল্ট ব্রেকিং সিস্টেম অন্যান্য বাইকের তুলনায় তেমন একটা ভাল না। এর পেছনের ড্রাম ব্রেক আরেকটু ভালো হওয়ার দরকার ছিল। তারপরেও ব্রেক টেস্ট এর সময় ৪ সেকেন্ডে ৮০ স্পিড থেকে ০ স্পিডে সহজেই নিয়ে আসতে পেরেছিলাম।
Runner Knight Rider 150 First Impression Review In Bangla – Team BikeBD
টায়ারের গ্রিপ খুব ভাল না হওয়ায় ওভার স্পিডে সাধারণ রাস্তায় কর্ণারিং করতে গেলে স্লিপ করার যথেষ্ট আশংকা রয়েছে, তাই ওভারস্পিডে কর্ণারিং করিনি বললেই চলে। তাছাড়া সামনে ৯০ সেকশন এবং পেছনে ১১০ সেকশন টায়ারে বাইকটির কর্ণারিং চমৎকার।
বাইকটি সবথেকে বেশি আমাকে স্যাটিস্ফাইড করে এর স্মুথ পাওয়ারফুল ইঞ্জিন দিয়ে। বাইকটির এক্সেলেরশন আর টপ স্পিড যখন চেক করা হয়, ১৪ এনএম টর্ক এবং ১২ বিএইচপি এই ইঞ্জিনে মাত্র ১৫ সেকেন্ডেই ১০০কি.মি./ ঘন্টা গতি তুলতে সক্ষম হয় বাইকটি এবং টপস্পিড ১১৯ কি.মি./ ঘন্টা অনায়াসে পেয়ে যাই৷
পেছনের মনোশক আর সামনের টেলিস্কোপিক সাস্পেনশন থাকায় অনাকাংখিত গর্ত বা স্পিডব্রেকারের উপর দিয়ে গেলে খুব একটা ঝাকি অনুভূত হয়না। সিটিং পজিশন যথেষ্ট ভাল, সেই সাথে হ্যান্ডেলবার একটু উচু থাকায় লং রাইডে তেমন ব্যাকপেইন অনুভব করিনি।
ফুয়েল সাপ্লাই কার্বুরেটর সিস্টেম হলেও বাইকটির মাইলেজ যথেষ্ট ভাল। সিটিতে মাইলেজ ৪০ কিলোমিটার এর আশেপাশে থাকলেও হাইওয়েতে কখনো কখনো ৫০ কিলোমিটারও পেয়েছি। বাইকটি রাইডিং এর সময় আরেকটা মজার দিক হল এই বাইকে কোনো প্রকার নয়েজি সাউন্ড এবং ভাইব্রেশন নেই বললেই চলে। যদিও পরিস্থিতি সাপেক্ষে ব্যাতিক্রম হয় কখনো কখনো।
যেমন - ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড অনুযায়ী ব্যবহার না করলে, মেইনটেনেন্স এর অভাব থাকলে, খোলা ফুয়েল ব্যবহার করলে বাইকের পার্ফরমেন্স কমে যায় । সব বাইকেরই ভাল খারাপ দুইদিকই আছে। Runner Knight Rider 150 V1 বাইকটি কোনো অংশে ব্যতিক্রম না।
Runner Knight Rider 150 V1 বাইকটির কিছু ভাল দিক -
- ইঞ্জিন পাওয়ার ।
- ভাইব্রেশন ছাড়া স্মুথ পার্ফরমেন্স ।
- মনোশক সাসপেনশন ।
- সেগমেন্ট অনুযায়ী সেরা মাইলেজ ।
- বিল্ড কোয়ালিটি ।
Runner Knight Rider 150 V1 বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- ব্রেকিং তেমন ভালো লাগেনি
- টায়ারের গ্রিপ খুব বেশি ভাল নয়
- হেডলাইট এর আলো কম
- নিম্নমানের হর্ণ
- নড়বড়ে সুইচ
- গিয়ারবক্স স্মুথ না
- রিসেল ভ্যালু খুব-ই কম
এবারে আলোচনা করবো এই ১০ হাজার কিলোমিটার পথচলায় Runner Knight Rider 150 V1 বাইকটিকে আমি কি দিয়েছি এবং ফিডব্যাক হিসেবে সে আমাকে কি দিলো -
প্রথম ৪০০ কিলোমিটারে প্রথমবার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করেছি । ইঞ্জিন অয়েল Castrol 20W40 ব্যবহার করতাম। মাইলেজ পাচ্ছিলাম ২০ - ২৫। ১০০০ কিলোমিটারে ২য় বার আবার Castrol 20W40 ব্যবহার করলাম। এরপর আর ব্রেক ইন পিরিয়ড নিয়ম মেনে মানা হয়নাই।
২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এভাবে চালানোর পর ভাবলাম একটা ফ্রি সার্ভিস করাই । কার্বুরেটর টিউন করানো হল, আর নাট গুলো টাইট দেওয়া হল। মাইলেজ পাচ্ছিলাম আগের চেয়ে ১৫ বেড়ে ৩৫ কিলোমিটার পার লিটার। ৩০০০ কিলোমিটার-এ দ্বিতীয় সার্ভিসে আবার কার্বুরেটর টিউন দেওয়ার পর মাইলেজ ৪৫ কিলোমিটার পার লিটারে পেয়েছি। স্মুথনেস ঠিক থাকলেও এক্সেলারেশন কিছুটা কমে যায়।
ইঞ্জিন অয়েলের গ্রেড পরিবর্তন করে 20W40 থেকে 20W50 ব্যবহার করা শুরু করলাম। ইঞ্জিনের শব্দ আগের থেকে অনেক কমে আসলো । শুধু মাত্র ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা ছাড়া ৬০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত কোনো পার্টস পরিবর্তন করতে হয়নি। ৬০০০ কিলোমিটার থেকে ৯০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত কিছু সমস্যার সম্মুখীন হই।
যেমন-
- ব্রেক সু ক্ষয় হওয়া।
- চেইন লুজ হয়ে যাওয়া।
- সাসপেনশন থেকে শব্দ আসা।
- ব্যাটারির চার্জ কমে যাওয়া।
অল্পকিছু সমস্যায় পরেছিলাম-
- ব্যাটারির লাইনের ফিউজ কেটে যাওয়া (অনেক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজে রাইড করার ফলে হয়ত হয়েছিল)।
- দিনের শুরুতে সেল্ফ স্টার্ট নিতে ঝামেলা।
- স্পার্ক প্লাগের কার্যকরিতা কমে যাওয়া।
যেসব দিকগুলি এখনো আগের মতোই আছে অথবা আরো ইম্প্রুভ হয়েছে -
- মাইলেজ- হাইওয়েতে ৫০, সিটিতে ৪০-৪৫।
- টপ স্পিড আগের মতোই ।
- রেডি পিকাপ / এক্সেলারেশন আগের মতোই।
- স্ট্রার্ট ছেড়ে দেওয়ার সমস্যা কমে গেছে।
বাইকের যত্নে যা যা করা উচিত -
- ব্রেক ইন পিরিয়ড ঠিকভাবে মেইন্টেইন করা।
- ঠিকভাবে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন ।
- সময়মত সার্ভিস করানো।
বাইকটি নিয়ে আমি এখন পর্যন্ত লং ট্যুর দেইনি। তবে একদিনে ২০০+ কিলোমিটার চালিয়েছি। গন্তব্য ছিল পদ্মা সেতুর জাজিরা পয়েন্ট। যেটা আমার বাসা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে । যাওয়া আসা ২০০ কিলোমিটার আমরা ৬ ঘন্টার মধ্যে কাভার করে ফেলি। এক্সপ্রেসওয়েতে ১০০-১১০ গতিতে খুবই স্মুথ পারফর্মেন্স ছিল বাইকটির। যার কারনে মাত্র ১৩ মিনিটেই কোনো সমস্যা ছাড়া নিরাপদে ৩০কি.মি. পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হই, যেটি ছিল বাইকটির সবচেয়ে অল্প সময়ে বেশি পথ পাড়ি দেওয়ার রেকর্ড।
রানার অটোমোবাইল দেশের একমাত্র মোটরসাইকেল কোম্পানি যারা বাইকের ৯২ শতাংশ স্পেয়ার্স এবং পার্টস দেশের মাটিতেই তৈরি করে থাকে। বিদেশী মোটরসাইকেল এর বাজার এর সাথে তাল মিলিয়ে রানার অটোমোবাইলস চেষ্টা করছে তাদের সর্বোচ্চ ভালো সার্ভিস দিয়ে ক্রেতাদের মন জয় করতে।
কম মূল্যে সহজ কিস্তি সুবিধার মাধ্যমে বাইক প্রেমীদের বাইকের স্বপ্ন পূরণ করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া দাম হিসেবে ফিচার্সের দিক দিয়ে বিদেশী বাইকের থেকে কোনোদিক থেকে পিছিয়ে নেই আমার Runner Knight Rider 150 V1 বাইকটি। এক কথায় বাইকটি নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।
আপনারা যে ব্রান্ড এর যেই সেগমেন্ট এর বাইক-ই চালান না কেন, মনে রাখবেন সবসময় মেইনটেন্যান্স-ই আসল বিষয় সেটা যে ব্রান্ডের বাইক-ই হোক না কেন। আপনি আপনার বাইকে করে বিভিন্ন জায়গায় যেতে পারছেন, চাইলে পাহাড়ে যেতে পারছেন, চাইলে সমুদ্র সৈকতে, প্রকৃতির ডাকে সহজেই সাড়া দিতে পারবেন, দূরত্বকে হার মানাতে পারবেন। বিনিময়ে বাইকটি শুধু আপনার কাছে প্রোপার মেইনটেন্যান্স এর দাবিদার। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ অর্ণব
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।