Royal Enfield Hunter 350 - ২০০০ কিলো চালানোর অভিজ্ঞতা - আহমেদ খুবাইব

This page was last updated on 27-Jul-2025 04:10pm , By Shuvo Bangla

প্রিবুক অনুযায়ী Royal Enfield Hunter 350 মে মাসে পাওয়ার কথা থাকলেও ভাগ্যক্রমে মার্চ মাসেই আমার বাইকটা পেয়ে যাই। আর ২০ দিন পরেই কাগজপত্র রেডি। ব্যস, দুই মাসে ২০০০+ কিমি চালিয়ে ফেললাম, যার অর্ধেক ঢাকায় আর বাকি অর্ধেক হাইওয়েতে। মাওয়া, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টেকনাফ সব ঘুরে এসে যে অভিজ্ঞতা হল তা এক কথায় অসাধারণ !

Royal Enfield Hunter 350 - ২০০০ কিমি মালিকানা রিভিউ

Royal Enfield Hunter 350 - ২০০০ কিমি মালিকানা রিভিউ

পারফরম্যান্স -

পারফরম্যান্সের দিক থেকে হান্টার দশে দশ! টর্ক এত বেশি যে হাইওয়েতে আত্মবিশ্বাসের সাথে যেকোন গাড়ি অভারটেক করা যায়, আবার শহরেও মাত্র ২০-৪০% থ্রটল দিয়ে চালানো যায়। কোন বাড়তি চাপ দেয়ার প্রয়োজনই পড়ে না। গিয়ার শিফটিং ভীষণ স্মুথ এবং গিয়ার রেশিও বেশি হওয়ায় ঘন ঘন গিয়ার শিফট করা লাগে না। ব্রেকিং অনেক স্ট্রং - টার্গেট অনুযায়ী নিরাপদে ব্রেক করা যায় এবং ডুয়াল-চ্যানেল এবিএস থাকায় চাকা স্কিড করার ভয় নেই।

অনেকে মনে করেন হায়ার সিসি মানে বেশি গতি। কিন্তু এক্ষেত্রে ধারণাটা ভুল। ১৫০ সিসির কিছু বাইকের টপ স্পিড হান্টারের চেয়েও বেশি। বরঞ্চ বাইকটির সবচেয়ে বেশি যে বিষয়গুলো আমাকে মুগ্ধ করেছে, তা হলে বাইকের কন্ট্রোল, সেফটি এবং স্ট্যাবিলিটি। ১৮১ কেজির বাইক দেখে মনে হতে পারে কন্ট্রোলিং বোধ হয় কঠিন হবে। কিন্তু একদমই তা না। চালানোর সময় যেকোন নেকেড বাইকের মতই সহজেই ম্যানুভার করা যায়।

বাড়তি ওজনের কারণে যত ঝড়-বাতাস আসুক না কেন, বাইক স্ট্যাবল থাকে। আমি মাওয়া রোডে প্রবল সাইড বাতাসের মাঝে ৬০-৮০ কিমি স্পিডে হ্যান্ডলবার ছেড়ে দিই (এই কাজ কেউ করবেন না), বাইকের সামনের চাকা তীরের মত সোজা ছিল, কোন নড়াচড়া নাই। জোড়ে থ্রটল দিলে বা ব্রেক করলেও চাকা একদম সোজা থাকে। বাইক পড়ে যাওয়ার ভয় কাজ করে না আলহামদুলিল্লাহ।

Royal Enfield Hunter 350 - ২০০০ কিমি

রাইডিং অভজ্ঞতা - 

রয়াল এনফিল্ড চালানোর যে অনুভূতি তা বাংলাদেশের অন্য কোন বাইক দিতে পারে না। অনেকে ভাইব্রেশনের কথা বলেন। কিন্তু লুকিং গ্লাস আর হ্যান্ডলবার ছাড়া আমি সারা বাইকে তেমন কোন ভাইব্রেশন পাই নি (স্পিড ১০০+ হলে ভিন্ন কথা)। দুইদিনে ৫৬০+ কিমি চালিয়েও দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল ছাড়া আমার সারা শরীরে কোন ব্যাথা বা ঝিনঝিন অনুভূতি হয় নি। সিটও যথেষ্ট কম্ফর্টেবল। সত্যি কথা বলতে একবার অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার পর আমার কাছে এখন অন্য কোন বাইকে বসতেই ভালো লাগে না। এনফিল্ডের চিরচেনা গুড়গুড় সাউন্ড ও এফআই ইঞ্জিনের ইলেক্ট্রিকাল সাউন্ডের মিশেলে বাইকটার এক্সস্ট নোট যে ইউনিক অনুভূতি দেয়, মনে হবে আপনি যুদ্ধবাহন কিংবা ব্যাটমোবিল চালাচ্ছেন। এটা শুধু একটা বাইক না, যেন ওর নিজেরও আত্মা আছে, অভিব্যাক্তি আছে এবং চালানোর সময় সে সারাক্ষণ আপনার সাথে কথা বলতে থাকবে।

রেট্রো স্ক্র‍্যাম্বলার লুকের বাইক আমার সবচেয়ে পছন্দ। যতদিন এই বাইক নিয়ে বের হয়েছি, রাস্তাঘাটে মানুষ বাইকটার দিকে তাকায় নি, দু'চারটা প্রশ্ন করে নি বা ছবি তুলতে চাই নি এমনটা এক দিনও ঘটে নি। বিষয়টা মাঝে মাঝে বিড়ম্বনারও সৃষ্টি করে।

কিছু সমস্যা -

  • প্রধান সমস্যা এর শক্ত ক্লাচ, জ্যামে দশ মিনিট চালালেই হাত ব্যাথা হয়ে যায়। দু:খজনকভাবে এর কোন স্থায়ী সমাধানও আমার জানামতে নেই।
  • বাইকের সাস্পেনশনও বেশ শক্ত (আস্তে আস্তে নরম হচ্ছে) এবং সিট কিছুটা ছোট হওয়ায় পিলিয়নের জন্য বসা বেশ আনকম্ফর্টেবল। ব্যাকরেস্ট না থাকলে পিলিয়ন ছিটকেও পড়ার ভয় থাকে!
  • বাম হাতের সুইচগুলোর (বিশেষ করে ডিপার সুইচ) পজিশন কিছুটা দূরে হওয়ায় চালানোর সময় সমস্যা হয়।
  • স্টক হেডলাইট খুব উজ্জ্বল, কিন্তু আলো বেশিদূর যায় না।
  • ম্যাট কালারটায় রঙের ফিনিশিং খুব একটা ভাল না। সাদা অংশটা ভালোই ময়লা হয়, সময়ের সাথে রং নষ্ট হওয়ার ভয় আছে।
  • বাইকের কিছু জায়গায় (যেমন ইন্ডিকেটর লাইট) প্লাস্টিকের ব্যবহার আমার কাছে ভালো লাগে নি, মজবুত বিল্ড কোয়ালিটির সাথে ব্যাপারটা যায় না।
  • ব্যক্তিগত মতামত - সাথে আরপিএম মিটার থাকলে আরও ভাল হত।
  • ট্রিপার পডটা আমার কাছে বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত মনে হয় নি - ফ্লাইওভারে, বিভিন্ন জংশনে ট্রিপারটা আরও কনফিউজ করে ফেলে। এর চেয়ে ভাল হয় (যাদের প্রয়োজন) মোবাইল হোল্ডার লাগিয়ে সেখান থেকে গুগল ম্যাপ ফলো করা।
  • বাইকের প্রতিটি পার্টসের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেশি। আশার কথা আফটারমার্কেট অনেক এক্সেসরিজ চলে এসেছে যেগুলোর দামও সহনীয়, কোয়ালিটিও খারাপ না।

Royal Enfield Hunter 350 - ২০০০ কিমি মালিকানা রিভিউ বাইকবিডি

কিছু কমন প্রশ্ন -

মাইলেজের কথা বললে শহরে ২৭ আর হাইওয়েতে ৩৩-৩৯ করে পাচ্ছি। অনেকে মনে করেন এক্সস্ট পাইপে লেগে পা পুড়ে যেতে পারে। এটা ঠিক যে ইঞ্জিন ভীষণ গরম হয় এবং ঠাণ্ডা হতেও কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু ইঞ্জিন এবং এক্সস্ট পাইপের পজিশন এমন যে সহজে পা লেগে পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

রয়াল এনফিল্ড কি ডেইলি ড্রাইভার হিসেবে ব্যবহারযোগ্য - 

অন্য মডেলগুলোর ব্যাপারে জানি না, তবে আমি হান্টার নিয়মিতই চালাচ্ছি। শুধু চারটা বিষয় সামলাতে পারলে বাইকটা আপনার জন্য ঠিক আছে 

১ - শক্ত ক্লাচ

২ - অত্যন্ত ভারি হওয়ায় বাইক ঠেলার সমস্যা

৩ - বাইকের নিরাপত্তা

৪ - উচ্চ মেইন্টেনেন্স খরচ

Royal Enfield Hunter 350 - ২০০০ কিমি মালিকানা রিভিউ বাইকবিডি রিভিউ

শেষ কথা -

পরিশেষে বলতে হয়, বাজারে গতানুগতিক যত বাইক আছে প্রায় সবগুলোর ক্ষেত্রেই পারফরম্যান্স, লুকস, কন্ট্রোল, কম্ফোর্ট - কোন না কোনটা স্যাক্রিফাইস করতে হয়। কিন্তু হান্টার ৩৫০ তে সবগুলোই আছে, আরও আছে মজবুত বিল্ড কোয়ালিটি। আমার চোখে হান্টার ৩৫০ তাই একটা আদর্শ বাইক। অন্য কোন কোম্পানি হয়ত দাম রাখত ৬-৭ লাখ। ইফাদকে ধন্যবাদ তার অর্ধেক প্রাইসে বাইকটা বাজারজাত করার জন্য। ধন্যবাদ । 

লিখেছেনঃ আহমেদ খুবাইব

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।