New Suzuki Gixxer ৮৫০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - শুভ
This page was last updated on 01-Aug-2024 03:20am , By Shuvo Bangla
আমি শুভ। আমার বাসা খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায়। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আমার New Suzuki Gixxer বাইকের মালিকানা রিভিউ । বাইক আসলে প্রতিটা ছেলের জন্যই একটি স্বপ্নের নাম। বাইক ভালবাসেনা এমন ছেলে খুজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
তবে পারিবারিক কারনে অনেক ছেলে তাদের স্বপ্ন পূরণে অসমর্থ হয়। আমারো বাইক খুব ভাল লাগে। পরিবার সবসময় সন্তানদের দীর্ঘায়ু কামনা করে, তারা মনে করে বাইক কিনে দিলে যদি সন্তান কোনো দুর্ঘটনান সম্মুখীন হয়! এটা ভেবে অনেক পরিবার তার সন্তানের কাছে বাইক তুলে দিতে নাকোচ করে দেয়। অনেক কষ্টে আমি এবং আমার বড় ভাই আমাদের মা-বাবাকে রাজি করালাম।
জীবনে প্রথমবার এতোটা খুশি হয়েছিলাম। বাইক কেনার আগে অনেক রিভিও দেখলাম। আমি MSI ভাইয়ার ব্লগ দেখাত বেশ। উনি তখন Gixxer Fi Abs বাইকটা ব্যবহার করতেন। বাইকটা এমন একটা বাইক যেটা খুব বেশি স্পোর্টি ফিল দেয়। বলে রাখি, আমি সাধারনত ন্যাকেড স্পোর্টস বাইক গুলাই বেশি পছন্দ করি। তার ভেতর এই বাইকটা আমার কাছে সেরা মনে হয়েছিলো।
তবে আমি মনে প্রাণে দুইটা বাইক চয়েস করে রেখেছিলাম। প্রথমটা ছিল ইয়ামাহা এফ জেড ভার্সন থ্রি এবং দ্বিতীয়টা সুজুকি জিক্সার এফআই এবিএস। তাই আমি ২ টা বাইকেরই কম্পেয়ার রিভিউ দেখা শুরু করি। দুইটাই রিভিউ ১৯/২০। এফ জেড ভার্সন থ্রি তে টর্ক টা একটু কম ছিল কিন্তু সুজুকি জিক্সার এফ আই এবিএস এ টর্কটা একটু বেশি ছিল সেই সাথে জিক্সার এর আউট লুকটাও বেশ ভালো ছিল।
তাই সব মিলিয়ে ভেবেই নিলাম আমি জিক্সার এফ আই এবিএস টাই নিব। আমার বড় ভাইকে বললাম বাইকটি দেখালাম সেও পছন্দ করলো। তখন মা-বাবাকেও দেখালাম তারাও দেখে বেশ ভালো বললো। অতঃপর আমি এবং আমার ভাই বাইকটি কেনার সিদ্ধান্ত নিলাম। তারিখ ২৭ আগস্ট ২০২২ সকালে বাইক কেনার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলাম।
খুলনার সুজুকি শোরুম সুজুকি কর্নার থেকে আমার বাইকটি কিনলাম। তখন বাইকটার দাম ছিল ২ লক্ষ ৬৪ হাজার ৫০০ টাকা। বাইকটি কেনার পর যে কতটা খুশি লাগছিল সেটা আসলে বোঝানো যাবেনা। তখন আমিও মনে মনে বলতে লাগলাম এখন আমিও বাইকার। আমার একটি বাইক আছে। যাই হোক শোরুম থেকে হাফ লিটার তেল দিল। সেটা দিয়ে চালিয়ে কোনমতে পাম্প পর্যন্ত আসলাম তারপর টেংকি ফুল করে নিলাম।
এরপর বাড়িতে চলে আসলাম। খুলনা থেকে রামপালের দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। আমি জানতাম না যে একদম নতুন বাইক যখন চালানো হয় তখন ইঞ্জিন পোড়ার গন্ধ বের হয়। সত্যি বলতে যখন আমি বাড়িতে আসছিলাম বাইক চালিয়ে তখন এমন গন্ধ বের হচ্ছিল। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম যে নতুন বাইকে আবার কি হলো! তারপর বাড়িতে এসে যাদের বাইক আছে তাদের কাছে শুনলাম যে নতুন বাইকে এমন পোড়া পোড়া গন্ধ বের হয়।
পোড়া পোড়া গন্ধ হলেও গন্ধটা ভালই ছিল। বাইক কেনার পরের দিন আমি নানা বাড়ি চলে গেলাম। নতুন বাইক, অনেক খুশি, সত্যি বলতে সবাইকে একটু দেখার উদ্দেশ্যে নানা বাড়ি গিয়েছিলাম। কারণ ওই এলাকায় এমন বাইক একটাও ছিল না। আমার বাইক চালানোর পেছনের মূল কারণ হলো, বাইক আসলে একটা মানুষকে স্বাধীনতা দেয় সেটা ছিল আমার মূল কারণ।
আমার বাইকটিতে রয়েছে ১৫০ সিসি ইঞ্জিন, ফুয়েল ইনজেকশন , যেটা তেল সাশ্রয় করে। এ বি এস ব্রেকিং সিস্টেম যেটা বাংলাদেশের রাস্তার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। হেড লাইটের আলোটাও বেশ ভালো ছিল। যেটা কুয়াশার সময় খুবই উপকারী। পাচটা গিয়ার ছিল, ক্লাসটা বেশি ভালো ছিল, স্মুথ ছিলো, তবে প্রথম প্রথম একটু শক্ত ছিল মানে একটু হার্ড ছিল।
কষ্ট হতো গিয়ার সিফটিং করতে , ইঞ্জিনটা ছিল এয়ার কুল , এজন্য প্রথম প্রথম একটু গরম হত একটু না বেশ খানিকটাই গরম হত। কিছুক্ষণ চালালেই অনেক হিট হত আর তেমন কোন সমস্যা ছিল না। প্রতিদিন বাইক চালানোর পেছনে আমার একটা অনুভূতি কাজ করতো আমি স্বাধীন আমার যেখানে খুশি আমি সেখানেই যেতে পারি। যেটা সত্যি একটা মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এখন পর্যন্ত আমি পাঁচটা সার্ভিস করিয়েছি যার ভেতর তিনটা ফ্রি সার্ভিস ছিল এবং দুটি পেইড সার্ভিস ছিল।
যেটা আমি করিয়েছি খুলনার সুজুকি কর্নার থেকে মানে যেখান থেকে আমি বাইকটা কিনেছি। প্রথম প্রথম আমি মাইলেজ পেতাম ৪৮ থেকে ৫০ এর ভেতর। মানে প্রথম ২৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত তারপর আসলে সত্যি বলতে আমি মাইলেজ অতোটা খেয়াল করি না। কারন যখন বাইক চালাই তখন মাইলেজটা চেক করা হয় না। তবে মাঝেমধ্যে যখন চেক করেছি তখন ৪৭ থেকে ৫০ বা ৫১ এমনই ছিল।
মাইলেজটা প্রথম সার্ভিস থেকে এখন পর্যন্ত একরকমই আছে । কোন জিনিস ভালো রাখতে গেলে তার সঠিক যত্নের প্রয়োজন। বাইক ভালো রাখতে গেলেও বাইকের যত্ন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন আমি কোথাও যাওয়ার আগে বাইকটা সুন্দর করে মুছে ফেলি। রাত্রে যখন বাইকটা রাখি তখন ঢেকে রাখি। কোথাও যাওয়ার আগে অন্তত পাঁচ মিনিট বাইকটি রাখতাম ওয়ার্ম আপ এ। তারপর সপ্তাহে অন্তত একবার বাইকটি সুন্দর করে ওয়াশ করি এবং প্রতিদিন অর্থাৎ প্রতিবার বাইক চালানো শেষ করে রাতে বাইকটি মুছে রাখি।
সবসময় চেষ্টা করি বাইকে যেন কোন ধুলাবালি বা ময়লা না থাকে। কারণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই আদ্র আবহাওয়া বা ধুলাবালি যদি বাইকে থাকে তাহলে বাইকটি ডিসকালার বা অন্য কোন সমস্যা হতে পারে। তাই টুকটাক এভাবেই যত্ন নিই। আমি বাইক কেনার প্রথম দিন থেকে ইঞ্জিন অয়েল হিসেবে মটুল ব্যবহার করেছি। প্রথম ৭০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মটুল মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেছি। এখন আমার বাইকটি ৮৫০০ কিলোমিটার রানিং। এখনও মটুলের সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল টা ব্যবহার করছি।
আমি তেমন কোন পার্টস এখনো পর্যন্ত পরিবর্তন করিনি । শুধু একটা এয়ার ফিল্টার আর একটা বল রেসার পরিবর্তন করেছি । আমি বাইকে কোন মডিফাই করিনি শুধু হেডলাইটে একটি স্টিকার লাগিয়েছি। কারণ মডিফাই আমার খুব একটা পছন্দ না। বাইকের তোলা আমার সর্বোচ্চ স্পিড ছিল ১১৪ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়। বাইকটার কিছু কিছু ভালো দিক আছে, প্রথমত বাইকের লুক, দ্বিতীয়ত এটার কন্ট্রোলিং, তৃতীয়ত এটার মাইলেজ, চতুর্থ এটার রাইডিং কমফোর্ট, পঞ্চমত সিটিং পজিশন।
বাইকটার কিছু খারাপ দিকও আছে, প্রথমত এটার কালার ফেড হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত বিল্ড কোয়ালিটি অতটা ভালো না, তৃতীয়ত ২ লক্ষ ৬৪ হাজার ৫০০ টাকার বাইকে এয়ারকুল ইঞ্জিন যেটা সত্যি হতাশা জনক, চতুর্থত ৪০/৫০ কিলোমিটার রাইড করার পর বাইকের পাওয়ার কমে যায়, পঞ্চমত ইঞ্জিন বেশ হিট হয়। বাইক নিয়ে আমার লম্বা ট্যুর খুব একটা হয়নি কারণ আমার ড্রাইভিং এবং গাড়ির কাগজ করতে অনেক দিন লেগে যায়। তারপর আমার পরীক্ষা চলে আসে। এর জন্য আর খুব লম্বা টুর দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে সামনে লং ট্যুর দেওয়ার ইচ্ছা আছে তখন সে বিষয়ে বিস্তারিত বলবো। সবশেষে বাইক সম্পর্কে আমার চূড়ান্ত মতামত হলো বাইকটা আমার খুবই পছন্দের। আসলে খারাপ দিকগুলো দেখলে স্বপ্ন কখনো পূরণ হয় না। ভালোর সাথে খারাপ, খারাপের সাথে ভালো একে অপরের পরিপূরক। যেকোনো কিছুরই খারাপ দিক থাকবে। সেটাকে পরিহার করে ভালো কিছু কে নিয়েই চলো উচিত। সব মিলিয়ে আমার জিক্সার এফ আই এবিএস নিয়ে কোন অভিযোগ নেই। সেইসাথে আমি খুবই আনন্দিত সুজুকি পরিবারের সদস্য হতে পেরে। ধন্যবাদ বাইক বিডির সকল সদস্যদের।
লিখেছেনঃ শুভ