Yamaha Fazer FI V2 ২০,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - মানিক
This page was last updated on 28-Jul-2024 11:55am , By Shuvo Bangla
আমি নুরুল আফসার মানিক । Yamaha Fazer FI V2 বাইক টি আমি ২০,০০০ কিলোমিটার চালিয়েছি। আমি বর্তমানে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় বসবাস করি। এলাকার নাম, চৌধুরী ছড়া। আমার জীবনের প্রথম বাইক ছিল Hero Honda CBZ Extreme। যেটি আমি প্রায় ৫০,০০০ কিলোমিটার চালিয়েছিলাম।
কেন বাইক এবং বাইকিং ভালবাসি -
কেন বাইক ভালবাসি তা বলতে গেলে আসলে শেষ হবে না। শুধু এতটুকু বলবো এই দুই চাকার বাহনে অনেক আবেগ লুকিয়ে আছে। আর বর্তমানে আমার প্রায় সকল যাতায়াত আমি বাইক দিয়েই করি। আর বাইকিং কেন ভাল লাগে তা বলতে গেলে বলবো বাইকিং কমিউনিটি তে অনেক কিছু শেখার আছে। কারণ বাইকিং কমিউনিটি তে না এলে আমার লাইফের বড় বড় ট্যুর গুলো সম্পন্ন করতে পারতাম না।
আমি ফেজার দিয়ে দেশের প্রায় ৪৫ জেলা ঘুরেছি। এছাড়াও বাইকিং কমিউনিটি আমাকে শিখিয়েছে সেইফটি মেনটেইন কি। যেমন বাইকিং কমিউনিটি তে আসার আগে আমার হেলমেট ছিল একটি হাফ ফেইস হেলমেট। আর এখন একটি সার্টিফাইড হেলমেট ব্যবহার করি আর সাথে আছে অন্যান্য সেইফটি গিয়ারস।
কিভাবে বাইকটি বেছে নিলাম -
আমার জীবনে প্রথম বাইক ছিল Hero Honda CBZ Extreme যেটি আমি প্রায় ৫০ হাজার চালিয়েছি। যার সাথে রয়েছে আমার অনেক আনন্দ আর কষ্টের স্মৃতি। এর পর ফুয়েল ইফেসিয়েন্সির জন্য ভাবলাম Fuel injector system বাইক নিবো। আর ট্যুরিং বেশি করা যাবে এমন বাইক। তাই ভাবলাম সাধ্যের মধ্যে কোন বাইক টা আমার জন্য ভাল হবে। আর আমার শরির আর ওজনের সাথে দেখলাম ইয়ামাহা ফেজার বাইকটা মানানসই। তাই মাইন্ড লক করলাম যে এবার ফেজার ই নিবো।
কি কারণে বাইক ব্যবহার করছি -
আমি মূলত ফেজার কিনেছি ট্যুর কে ফোকাস করে। আর বাসার ব্যবহার এর জন্য ও। আর আমার টার্গেট ছিল এই বাইক দিয়ে আমি পুরো বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াবো।
বাইকটির মূল্য ও যেখান থেকে কিনেছি -
বাইকটি আমি যখন কিনেছি তখন বাজার মূল্য ২,৭১,০০০/- ( দুই লক্ষ একাত্তর হাজার) টাকা। কিনেছিলাম ইয়ামাহা বাইকের শোরুম Motorcycle Gallery, Agrabad, Chittagong থেকে। যেটি ACI Limited এর authorities sell Center।
বাইকের ফিচার গুলো -
- ১৫০ সিসি ইঞ্জিন
- এয়ার কুলড ইঞ্জিন
- ১৪ নিউটন মিটার টর্ক
- হর্স পাওয়ার ১৬.৮
- efi সিস্টেম
- ৫ স্পিড গিয়ার বক্স
প্রথমবার চালানোর অভিজ্ঞতা -
যেহেতু আমার প্রথম বাইক একটি কার্বুরেটর সিস্টেম বাইক ছিলো সেহেতু এই বাইকটির স্বাদ আমার কাছে ভিন্ন। আমি কেনার পর বাইকটি চালিয়ে আমার বাসা পর্যন্ত এসেছিলাম। পুরোটা রাস্তার ভাবছিলাম যে এটি একটি প্রাইভেট কার। কারণ এই বাইকের ব্যালেন্স এতই জোস যে আমি ব্রেক করতে গেলে বুঝতেই পারছিলাম না যে গাড়ী থামছে।
যতবার সার্ভিসিং করিয়েছি - আমি বাইকটি কেনার পর প্রথম ৪০০ কিলোমিটার এর মধ্যে একবার গিয়েছি সার্ভিস সেন্টারে। এর পর সার্ভিস কার্ডের উল্লেখিত সময় ও কিলোমিটার হিসেব করে সার্ভিস করিয়েছি। টোটাল আমি ২০,০০০ কিলোমিটার এর মধ্যে ৪ বার ফ্রি সার্ভিস পেয়েছি। আর Yamaha এর সার্ভিসিং এর মত ফ্রি সার্ভিস আমি অন্য কোথাও দেখিনি। ফ্রি সার্ভিস শেষ হবার পরে প্যাকেজে পেইড সার্ভিসিং করাতাম।
২৫০০ কিলোমিটার আগে ও পরে মাইলেজ -
ব্রেক ইন পিরিয়ডে মাইলেজ পেয়েছিলাম ৩৫-৪০ কিলোমিটার। ৪০০০ কিলোমিটার পর থেকে পেয়েছিলাম ৪০-৪৫ এভারেজ। যা পেয়ে আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট।
বাইকের যত্ন যেভাবে নেই -
আমি বাইকের টুকিটাকি কাজ গুলো নিজেই করতে পছন্দ করি, যেমন,- বাইক ওয়াশ, চেইন এডজাস্টমেন্ট, ক্লাচ এডজাস্টমেন্ট, ফুল বডি চেকআপ, ওয়েরিং চেকআপ, টায়ার প্রেশার চেক এবং আমি নিজেই বাইক ওয়াশ করি। সেইসাথে প্রত্যেকবার ট্যুরে যাওয়ার আগে আমি চেইন স্প্রোকেট গুলো ভাল মত দেখে নেই।
বাইকে যা যা পরিবর্তন করেছি এবং কেন -
যেহেতু আমি বাইক মাত্র ২০ হাজার কিলোমিটার চালিয়েছি তাই আমার তেমন কিছুই পরিবর্তন করা লাগেনি। টুকটাক যা পরিবর্তন করেছি তা হল,- হেলোজেন বাদ দিয়ে 7s Led headlight লাগিয়েছি, এছড়া ২০ হাজার কিলোমিটারে আমি কিছুই পরিবর্তন করিনি।
বাইক নিয়ে তোলা Top Speed -
এই বাইকে গতি তেমন ভাল না। টপ ইস্পিড নাই বললেই চলে। তারপরো টাঙ্গাইল থেকে রাজশাহীর পথে ১২২ কিঃমি ঘন্টায় পেয়েছিলাম এর বেশি আর উঠানো সম্ভব হয়নি।
Yamaha Fazer FI V2 বাইকটির কিছু ভাল দিক -
- লুকিং খুব ভাল
- ওয়েট ব্যালেন্স ভাল
- ব্রেকিং কন্ট্রোলিং ভাল
- স্টেবিলিটি অনেক ভাল
- সাস্পেনশান অনেক আরামদায়ক
Yamaha Fazer FI V2 বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- টর্ক আর টপ ২ টাই নাই বললেই চলে
- প্লাস্টিক কোয়ালিটি ভাল না
- মিটারে অনেক কিছুই নাই, যেমন ঘড়ি, গিয়ার ইন্ডিকেটর, ট্রিপ শুধু একটি ইত্যাদি।
- ফ্রন্ট অয়েল সিল তাড়াতাড়ি কেঁটে যায়
- একটানা ৫০ কিলোমিটার চালালেই গাড়ির সাউন্ড খুব বাজে হয়ে যায়।
বাইকটি নিয়ে লং ট্যুর -
বাইকটি নিয়ে লম্বা ট্যুর বলতে গেলে একবার কাপ্তাই হতে চট্টগ্রাম - ফেনী - কুমিল্লা - ঢাকা - গাজীপুর - রাজশাহী - সিরাজগঞ্জ - কুষ্টিয়া - নাটোর - ঝিনাইদহ হয়ে বেনাপোল গিয়েছিলাম এবং আসার সময় বেনাপোল - মাগুরা - ফরিদপুর - মাওয়া ফেরি পার হয়ে যাত্রাবাড়ী - কুমিল্লা - চট্টগ্রাম - কাপ্তাই এসে এই লম্বা ভ্রমণ শেষ করলাম। সব মিলিয়ে মোট ১৭০০ কিলোমিটার এর মত চালিয়েছিলাম। এটাই ছিল বড় ট্যুর যা ২০১৯ সালে সম্পন্ন করেছি।
চুড়ান্ত মতামত -
বাইকটি নিয়ে চুড়ান্ত মতামত হচ্ছে বাইকটি দেখতে যেমন সুন্দর কিন্তু পারফর্মেন্স ততই খারাপ। যেমন টপ নেই, ওয়েল/লিকুইড কুল্ড ইঞ্জিন নেই, অভারটেকিং এ কনফিডেন্স একদমি থাকে না, সেই পুরাতন এমটা মডেলে সীমাবদ্ধ রয়েছে, আর Abs system নেই, স্টক হেডলাইটে আলো কম ইত্যাদি আমার কাছে বাজে লেগেছে। যার কারণে আমি ঐ লং ট্যুর এর পরে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, এই বাইক আর চালাবো না। এই বাইক শুধু বসেই আরাম আর কিছু না আমি মনে করি। তাছাড়া অভার প্রাইজ একটি বাইক। এগুলো আমার ব্যক্তিগত মতামত তাই এটা কেউ অন্যভাবে নিবেন না।
কষ্ট করে রিভিউ টা পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ নুরুল আফসার মানিক