Keeway RKS 125cc ২৫,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - শরীফ আহমেদ

This page was last updated on 13-Jul-2024 02:25am , By Ashik Mahmud Bangla

আমি শরীফ আহমেদ। আজ আমি আমার Keeway RKS 125cc বাইকটি নিয়ে ২ বছর এ ২৫ হাজার কিলোমিটার পথ চলার ছোট একটা গল্প বলবো।

Keeway RKS 125cc ২৫,০০০ কিমি রাইড রিভিউ

আমি বর্তমানে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইন্সটিটিঊট এ কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। গ্রামের বাড়ি চরফ্যাশন, ভোলা। বর্তমান এ থাকা হয় মৌচাক, ঢাকা । বাইক চালানোর প্রথম আগ্রহটা আসে আমার বড় ভাইকে দেখে। ভাইয়া স্পীডে বাইক রাইড করত। আমার বয়স যখন ১২বছর তখন থেকেই বাইক চালানো শিখবো এমন একটা জেদ চেপে বসে। ফ্যামিলি থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে বাইক চালানো শিখতাম । কোন নির্দিষ্ট বাইক ছিলো না। যখন যেটা পেতাম সেটা নিয়েই চেষ্টা করতাম। তবে এর মধ্যে যে বাইক গুলো ছিলো তা হলো Suzuki GP 100, Hero Splendor, Hero Glamour এবং Bajaj CT 100 এভাবেই আমার বাইক চালানো শেখা ।

বাইকিং ভালো লাগার অনেক কারনই রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম হলো বাইক নিয়ে যেকোনো জায়গায় ঘুরতে যাওয়া যায়, ট্যুর দেয়া যায়। অল্প সময়ে নিরাপদে গন্তব্যে যাওয়া যায়। একটা বাইক থাকলে জীবনটা অন্য ভাবে উপলব্ধি করা যায়। বাইক কেনার আগে ইউটিউবে বিভিন্ন রিভিউ দেখি। বাইকবিডির ফেসবুক গ্রুপে রিভিউ দেখে Keeway RKS 125 বাইকটা সিলেক্ট করি। বেশ ভালোই লাগে বাইকটা। বাইক কোনার আগ্রহ অনেক আগে থেকেই ছিলো কিন্তু বাজেট ছিলো কম। Keeway RKS 125cc বাইকটির লুক দেখে ভালো লাগছিলো। কম বাজেটে এই বাইকটা ভালো লাগলো তাই নিয়ে নিলাম। বাইকটা কিনছিলাম ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসে মগবাজার আকরাম মটরস থেকে। ঐসময়ে বাইকের দাম নিয়েছিলো ১,২৬,০০০/- টাকা। আর পেপার্স সহ দাম হয় ১,৪৫,০০০০/- টাকার মতো ।


এ পর্যন্ত মোট আট বার সার্ভিস করিয়েছি। "Keeway central service centre " নাবিস্ক,তেজগাঁও থেকে । আটটি সার্ভিসের মধ্যে ৪ টি ফ্রী ছিলো। বাকি ৪ টা পেইড সার্ভিস করিয়েছি। সার্ভিস এর মান খুব ভালো। যখন যা সমস্যা ছিল সমাধান পেয়েছি। কখনো সার্ভিস নিয়ে সমস্যা হয়নি ।

২৫০০ কিলোমিটার পূর্বে ব্রেকিং পিরিয়ড এর সময় বাইকের মাইলেজ ছিলো ২৮ কিলোমিটার প্রতি লিটারে। কিন্তু ব্রেকিং এর পরে সার্ভিস করানোর পরে আস্তে আস্তে মাইলেজ বাড়তে থাকে। আর বর্তমানে মাইলেজ পাচ্ছি ৩২ কিলোমিটার প্রতি লিটারে । আমি প্রতি ৮০০ কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন ওয়েল চেন্জ করি এবং ২০০০ কিলোমিটার পর এয়ার ফিল্টার পরিস্কার করি, ৫০০০ কিলোমিটার পর এয়ার ফিল্টার চেন্জ করি। মাসে ২ বার বাইক ওয়াশ করি এবং প্রতি ২০০০ কিলোমিটার পর পর কিওয়ের সার্ভিস সেন্টার থেকে সার্ভিস করাই।

  keeway bike price 

আমি আমার বাইকে শুরু থেকে একটাই ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করতেছি। ইন্জিন অয়েলটির নাম Rabenol এবং গ্রেড হচ্ছে 10w30 সেমি সিন্থেটিক, দাম ৫০০ টাকা । ইঞ্জিন ওয়েলের পার্ফরমেন্স ভালো মনে হওয়াতে কখনো ব্রান্ড চেঞ্জ করে অন্য ব্রান্ডে যাওয়ার ইচ্ছে হয়নি । 

২৫ হাজার কিলোমিটার চালানোর মধ্যে আমি কিছু কিছু পার্টস পরিবর্তন করেছি সেগুলো হচ্ছেঃ

  • একবার চেইন স্প্রোকেট পরিবর্তন করা হয়েছে
  • একবার কার্বুরেটর পরিবর্তন করেছি
  • এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করেছি দুইবার
  • ওয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করেছি চারবার
  • ক্লাচ ক্যাবল পরিবর্তন করেছি একবার
  • মিটার ক্যাবল পরিবর্তন করেছি একবার

আমি আমার বাইকের কিছু অংশ মডিফাই করেছি সেগুলো হচ্ছেঃ

  • দুই চাকা টিউবলেস করে নিয়েছি
  • হেড লাইটের বাল্ব পরিবর্তন করেছি ও এলইডি বাল্ব লাগিয়ে নিয়েছি
  • পিছনে মাডগার্ড লাগিয়ে নিয়েছি
  • Yamaha FZ-S এর হ্যান্ডেল বার লাগিয়েছি
  • পালসারের ডুয়াল হর্ন লাগিয়েছি
  • সিট কভার পরিবর্তন করেছি
  • লুকিং গ্লাস পরিবর্তন করে অন্য মডেল লাগিয়েছি

Keeway RKS 125cc দিয়ে এখন পর্যন্ত আমার তোলা সর্বোচ্চ স্পীড ১০৮ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। এটা আমি তুলে ছিলাম ঢাকা-কুমিল্লা হাইওয়েতে। 

বাইকটির ৫ টি ভালো দিক বলিঃ

  • লং ট্যুর করার জন্য খুব দারুন বাইক
  • ১২৫সিসি অনান্য বাইকের তুলনায় এই বাইকের ওজন একটু বেশি। তাই বাইকের কন্ট্রোলিং অনেক ভালো ।
  • রাইডারের ব্যাক পেইন হবার সম্ভবনা নাই ।
  • বাইকের সাউন্ড খুব স্মুথ ।
  • ১২৫সিসি বাইকের তুলনায় RKS 125cc বাইকের টায়ার একটু মোটা। সামনের দিকে দেয়া হয়ছে 90/90-17 এবং রেয়ারের দিকে দেয়া হয়েছে 110/80-17

বাইকটির ৫ টি খারাপ দিক বলিঃ

  • বাইকের পার্টসের দাম একটু বেশি আর সচরাচর সব যায়গায় পাওয়া যায় না
  • মাইলেজ কম
  • সার্ভিসিং সেন্টার খুব কম
  • বাইকের সাথের যে হেডলাইট ছিলো তার পাওয়ার খুব কম
  • চেইন স্প্রোকেট খুব দ্রুত ক্ষয় হয়।

লম্বা দুরত্বের ভ্রমন বলতে গেলে বাইক নিয়ে বাড়িতে যাওয়া হয়। ঢাকা-ভোলা(চরফ্যাশন)। ১২৫সিসি বাইক হিসাবে ভালোই সার্ভিস পেয়েছি লং ট্যুর দিয়ে । মতামত বলতে গেলে Keeway RKS 125cc চালিয়ে খুব মজা আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ১২৫সিসি হিসাবে যে মাইলেজ পাওয়ার কথা সেটা যায় নাহ । আর পার্টসের মূল্য খুব বেশি তবে কম বাজেটের মধ্যে স্টাইলিশ বাইক হিসাবে এটা পারফেক্ট একটি বাইক । ধন্যবাদ।   

লিখেছেনঃ শরীফ আহমেদ   

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।