Keeway RKS 150 টেস্ট রাইড - টিম বাইকবিডি
This page was last updated on 07-Jul-2024 06:20pm , By Saleh Bangla
Keeway Bike বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় চাইনিজ মোটরসাইকেল কোম্পানী। তারা তাদের RKS সিরিজের কমিঊটিং বাইকের জন্য বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কয়েকমাস আগে তারা তাদের RKS সিরিজের নতুন বাইক Keeway RKS 150 Sports লঞ্চ করেছে। আমরা এই বাইকটিকে শহরে এবং হাইওয়েতে চালিয়েছি। টীম বাইকবিডি আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Keeway RKS 150 Sports টেস্ট রাইড রিভিউ যা বাংলাদেশের প্রথম CBS মোটরসাইকেল।
Keeway RKS 150 টেস্ট রাইড
নতুন কি আছে Keeway RKS 150 Sports: CBS? Keeway RKS 150 Sports মার্কেটে ছাড়ার আগে থেকেই Keeway RKS 150 মার্কেটে আছে যার রিভিউ আমাদের ওয়েবসাইটে আছে, Keeway RKS 150 Sports একটি নতুন মডেলের বাইক। এই ২০১৭ সালের নতুন ভার্সনে নতুন কিছু ফিচার যোগ করা হয়েছে, যেমনঃ
- CBS স্ট্যান্ডার্ড
- ডুয়েল ডিস্ক ব্রেক
- ২৪০ মিঃ মিঃ তিন পিস্টন যুক্ত সামনের ব্রেক এবং ১৯০মিঃ মিঃ দুই পিস্টন যুক্ত পিছনের ব্রেক।
- টিউবলেস টায়ার
- নতুন গ্রাফিক্স
- LED ইনডিকেটর
- USB চার্জার পয়েন্ট
- নতুন ডিজাইনের হুইল রিম
- এই বাইকটির ওজন ৬ কেজি বেশি
CBS কি? CBS এর পূর্নাঙ্গ নাম হচ্ছে Combined Braking System. স্কুটার এ CBS ব্রেকিং সিস্টেম দেখা যায়, কিন্তু মোটরসাইকেলে CBS ব্রেকিং সিস্টেম বাংলাদেশে নতুন। এই ব্রেকিং সিস্টেমে মোটরসাইকেলে সামনের ব্রেক এবং পিছনের ব্রেক একসাথে যুক্ত হয়ে কাজ করে। CBS ব্রেকিং এর জন্য অন্যতম ভাল সিস্টেম। এই সিস্টেমে রাইডার যখন একটি ব্রেক ধরে তখন দুই চাকার ব্রেকই একসাথে কাজ করে। ব্রেকের প্রেশার নির্ধারন করে কন্ট্রোল ভালভের একটি অংশ। তাই Keeway RKS 150 Sports এ যখনই পায়ের ব্রেক ধরা হয় তখন একসাথে সামনের ও পিছনের চাকায় ব্রেক একসাথে কাজ করে। এতে করে ব্রেকিং এর ডিসট্যান্স কমে যায়। এই সিস্টেমে ব্রেকিং ফোর্স একসাথে সামনের এবং পিছনের চাকায় ডিস্টিবিউট হয় পারফেক্ট ব্যালেন্সের জন্য। একটা ব্যাপার হচ্ছে যে CBS এবং ABS কিন্তু এক জিনিস নয়, দুটি সম্পূর্ন আলাদা বিষয়। তাই এই ব্যাপারে কনফিউসড হবার কোন দরকার নেই।
Keeway RKS 150 Sports: CBS - Features
এই বাইকের সামনের দিকটা দেখতে কিছুটা KTM DUKE 125 এর মত। এছাড়া তারা এর আরো কিছু স্ট্যাইল কপি করেছে। এর পার্কিং লাইটটি এর হেডলাইটের নিচে যুক্ত। এই বাইকের আরো আছে স্ট্যান্ডার্ড শাড়ি গার্ড, লেগ গার্ড এবং কনভেনশনাল সুইচ গিয়ার। মিটার কনসোলে আছে এ্যানালগ রেভ কাউন্টার এবং ডিজিটাল স্পিডোমিটার সাথে স্পিড ইনডিকেটর, গিয়ার চেঞ্জ ইনডিকেটর, ফুয়েল গজ এবং অন্যান্য ওয়ার্নিং লাইট। এই বাইকে একত্রে সেলফ এবং কিক স্ট্যার্ট এর ব্যাবস্তা আছে।
এর সিটিং পজিশন আপরাইট যা অনেকটা কমিউটিং মোটরসাইকেলের মত। এর হ্যান্ডেল বার এবং মিরর গুলো একটু প্রশস্ত যা জ্যামের মধ্যে ছোট ছোট গ্যাপের মধ্যে চালানো কষ্টকর। এর পিছনের গ্রাব রেইল দেয়া আছে যাতে করে পিলিয়ন আরামে বসতে পারে। এর স্প্লিট সিট এর একটি অন্যতম আকর্ষনীয় দিক। এর ফুয়েল ট্যাঙ্ক এ ১৬ লিটার তেল ধরে এবং এর সাইড স্কুপ ঠাণ্ডা বাতাসকে ইঞ্জিনে ভালোভাবে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। এর পিছনের ১২০ সেকশনের টায়ার কর্নারিং এর সময় ভাল গ্রিপ দেয়। এর গিয়ার চেঞ্জ লিভার এ দুইটি পজিশন আছে যা আপনার জুতাকে নষ্ট না করতে সাহায্য করবে। এর সামনের সাসপেনশন হচ্ছে টেলিস্কোপিক ও ১১০ মিঃ মিঃ ট্রাভেল যেখানে পিছনের সাসপেনশন হচ্ছে মনোশক। এর ব্রেক, টায়ার, এবং সাসপেনশন এর কম্বিনেশন শহরে এবং হাইওয়েতে ভালো সাপোর্ট দেয়। এর সামনের ব্রেকে আছে একটি প্রেশার এ্যাডজ্যাস্ট্যাবেল লিভার, যা দিয়ে আমরা কন্ট্রোল করতে পারি যে আমরা সামনের ব্রেকে কত প্রেশার দিব।
Keeway RKS 150 Sports: CBS - Engine & Transmission এই বাইকে নতুন অনেক ফিচার যোগ করলেও Keeway এর ইঞ্জিনটি আগের মডেলের একই ইঞ্জিন ব্যাবহার করেছে। এর ১৫০সি সি এয়ার কুলড ইঞ্জিন ১৪ BHP @ ৯৫০০ RPM পাওয়ার এবং ১২.৮ NM @ ৭৫০০ RPM টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। এর ইঞ্জিনে কার্বুরেটর রয়েছে এবং এর ইগনিশনে আছে TLI ইগনিশন। আমাদের মতে এর ইঞ্জিনের শব্দ নিয়ে কিছু কাজ করা উচিত, এর ইঞ্জিনের শব্দ স্মুত নয়। আমরা এর ২০০০ কিঃ মিঃ টেস্ট করার সময় এর সর্ব্বোচ্চ স্পিড ছিল ১১৫ কি; মিঃ/ঘঃ, কিন্তু আমার এর মাইলেজ নিয়ে সন্তষ্ট হতে পারিনি, আমরা শহরের মধ্যে মাইলেজ পেয়েছি ৩৫ কিঃ মিঃ/ঘঃ এবং হাইওয়েতে মাইলেজ পেয়েছি ৪২ কিঃ মিঃ/ঘঃ।
Keeway RKS 150 Sports: CBS - রাইডিং অভিজ্ঞতা
আগের যে বাইকগুলো আমরা টেস্ট করেছি সেই বাইকগুলোর মত নতুন এই বাইকেও হুইলের স্পিনে সমস্যা হচ্ছে যার কারন হচ্ছে এর ক্লাচ প্লেটের ভূল সেটআপের কারনে। এর আপফ্রন্ট গিয়ার লিভার প্রথম কয়েকশত কিলোমিটারে হার্ড মনে হতে পারে যা প্রথম সার্ভিসিং এর সময় ঠিক হয়ে যায়। শহরের মধ্যে এই বাইকটি রাইড করা খুবই সহজ। এর দীর্ঘ হুইলব্যাস এবং প্রশস্ত হ্যান্ডেল ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে টার্নিং এ্যাঙ্গেল খুব ভালো সহায়তা করে। কিন্তু এর প্রশস্ত হ্যান্ডেলবার জ্যামের মধ্যে ছোট ছোট গ্যাপের মধ্যে দিয়ে যেতে একটু কঠিন হয়।
এই বাইকের সবচেয়ে বড় আলোচ্য বিষয় হচ্ছে এর CBS ব্রেকিং সিস্টেম। প্রথম ৫০০ কিঃ মিঃ এই সিস্টেম এর পারর্ফরমেন্স একটু কম, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি আস্তে আস্তে এর পারর্ফরমেন্স বাড়তে থাকে। যদি এর ব্রেকিং সিস্টেম থেকে সবচেয়ে ভাল ফিডব্যাক পাওয়ার চিন্তা করি তবে এর টায়ার এর প্রেশারের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে যাতে এর টায়ার এর প্রেশার সঠিক থাকে। ব্রেকিং পিরিয়ডের বেশিরভাগ সময় আমরা পায়ের ব্রেক ব্যাবহার করেছি যা সামনের এবং পিছনের দুই চাকায়ই একসাথে অপারেট হয়। ব্রেকিং এর বেশিরভাগ সময় বাইকটি স্ট্যাবল তবে থাকে মাঝে মাঝে এর পিছনের চাকা পিছলে যায় এবং হেবি ব্রেকিং এর সময় পিছনের চাকা লক হয়ে যায়। এই নতুন বাইকটির ওজন পূর্বের বাইকের থেকে ৬ কে জি বেশি যার কারনে এই বাইকের এক্সিলারেশন CBS ব্রেকিং সিস্টেম এবং টিউবলেস টায়ার এর পারর্ফরমেন্স খুব ভালো ভাবে উপভোগ করতে পারবেন তবে এই বাড়তি ওজনের জন্য আমি সন্তুষ্ট। আমি এর জনি কোন অভিযোগ করব না। এই বাড়তি ওজনের জন্য এর স্ট্যাবিলিটি বেড়েছে কিন্তু সাথে সাথে এর টপ স্পিডও কমেছে।
আমি মনে করি এই এই মূল্যের মধ্যে এই ফিচার সমৃদ্ধ বাইটি বিশেষ করে শহরের জন্য খুবই ভাল। যদি এই বাইকে পিলিয়ন নিয়ে বা একা রাইড করে তাহলেও এর ব্রেক, সাসপেনশন এবং টায়ার খুব ভালো ফিডব্যাকআপ দেয় শহরের মধ্যে চালানোর জন্য। হাইওয়েতে একা আমরা রাইড করে আমরা এর টপ স্পিড পেয়েছি ১০০-১১০ কিঃ মিঃ/ঘঃ এর মত এবং এর ব্রেকিং এর ফিডব্যাক ভালো ছিল। যদিও CBS ব্রেকিং এর সামনের চাকায় ব্রেকিং একটু বেশি দিলে ভাল হত। হাইস্পিডে অফ রোডে CBS ব্রেকিং সিস্টেমে একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে যখন বালিতে চালানো হবে তখন আরো স্পেশাল নিতে হবে CBS ব্রেকিং এর জন্য। এর হেডলাইটটি হাইওয়েতে চালানোর জন্য খুবই উপযোগী। এবার যদি শারীরিক ব্যাথার কথা বলি তাহলে বলতে হয় যে আমাদের দীর্ঘ যাত্রাও আমি কিছু ফিল করিনি। এর প্রশস্ত হ্যান্ডেলবারটি দীর্ঘ যাত্রার জন্য খুবই উপযোগী। CBS ব্রেকিং সিস্টেম হাইওয়েতে খুব ভালো ফিডব্যাক দেয় তাতে রাস্তা ভিজা হক বা শুকনা।
CBS ব্রেকিং সিস্টেমে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় কাদামাটির রোডে যখন পায়ের ব্রেক ধরা হয়, অফ রোডে বা বালির রোডে মাঝে মাঝে সামনের চাকা লক হয়ে যায়। যদি এই ধরনের কোন সমস্যার সম্মুখিন হন তাহলে পরামর্শ থাকবে বাইকটিকে সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে এর ব্রেকিং ফোর্সের প্রেশারটা এ্যাডজাস্ট করে নিতে। Strength of the bike:
- কম মুল্যের মধ্যে অনেক ভাল ফিচার সমৃদ্ধ যা যেকোন ইন্ডিয়ান কমিউটিং বাইকের সাথে প্রতিযোগীতা করতে পারবে।
- চাইনিজ কোম্পানী গুলোর মধ্যে এর বিল্ড কোয়ালিটি অন্যতম (মূল্য এর মধ্য)।
- আসলেই এর CBS কাজ করে।
- টিউবলেস টায়ার এর অন্যতম ভালো দিক।
- এত ফিচার থাকার পরও এর মূল্যে মাত্র ১,৬৩,০০০ টাকা মাত্র।
- এর হ্যান্ডেলিং এবং কন্ট্রোলিং উভয় শহর এবং হাইওয়েতে খুব ভালো।
Some issues:
- CBS কারনে এর পিছনের চাকা মাঝে মাঝে লক হয়ে যায়।
- এর সিঙ্গেল হর্ন খুব একটা ভালো নয়।
- চেইনের মান খারাপ।
- বাইকটি একটু প্রশস্ত যার এর প্রশস্ত মিররের কারনে।
- চাবির মান ভাল না।
- সাইড স্ট্যান্ডটি কোন কাজের নয়।
- এর গলার লকটির মান আরো উন্নত করতে হবে।
- এর স্পোর্টস নামটি বাইকটির সাথে যায় না।
- স্পিডোমিটারে ভুল আছে।
Final Verdict: এটি একটি কমিউটিং বাইক যা হাইওয়েতে চালানোর জন্য খুবই উপযোগী। এই বাইকটি চালানো খুবই আরামদায়ক এবং এর নতুন ফিচার যোগ হওয়া সত্তেও এর মূল্য খুব একটা বাড়েনি এর পূর্বের মডেলের তুনলায়। এই টেস্ট রাইডের আমাদের এক্সেসরিজ পার্টনার ছিল রেস এবং রাইড শেয়ারিং পার্টনার ছিল মুভ।