Haojue KA 135 ৩০,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - অনিক মিয়া
This page was last updated on 31-Jul-2024 11:28am , By Ashik Mahmud Bangla
আমি অনিক মিয়া । বর্তমানে আমি ঢাকা কলেজে পড়াশোনা করছি । আমি ঢাকার ধানমন্ডিতে থাকি। আমার জীবনের প্রথম বাইক হচ্ছে Haojue KA 135 । আজ আমি আপনাদের আমার বাইকটি ৩০,০০০ কিলোমিটার রাইডের অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু কথা বলবো ।
Haojue KA 135 ৩০,০০০ কিমি রাইড রিভিউ
আমি যখন খুব ছোট ঠিক তখন থেকেই আমার বাইকের প্রতি আলাদা একটা ভালবাসা ছিল। ছোট থেকেই আমি চাচা এবং বড় ভাইদের বাইকের পিছনে বসে ঘুরতাম এবং কিভাবে বাইক চালাতে হয় ধারনা নিতাম। আর ঠিক তখন থেকেই আমার বাইকের প্রতি একটা আকর্ষণ আসে এবং বাইক চালানো শেখার আগ্রহ জাগে। তারপর আমি আমার চাচার বাইক দিয়ে ২০১৩ সালে বাইক চালানো শিখি ।
বাইক চালানো শেখার পরই বাইক কেনার আগ্রহ জাগে। তারপর আমি আমার আব্বুকে বললাম আব্বু বাইক কিনবো কিন্তু আমি তাদের একমাত্র ছেলে তাই খুব ভয় পেত যদি এক্সিডেন্ট করি তাই প্রথমে বাইক দিতে রাজি হয়নি । কিন্তু আমি বাইক কেনার আশা ছাড়িনি আব্বুর কাছে বলতে বলতে সে এক পযার্য়ে বাইক দিতে রাজি হয়। আব্বু প্রথমে Bajaj Pulser 150cc কিনে । যেটা আমি ও আমার আব্বু ব্যবহার করতাম । কিন্তু আমার পছন্দ ছিল Suzuki Gixxer । পরে আমরা জিক্সার বাইকটি কিনি ।
জিক্সার বাইকটি আব্বু এবং আমি দুজনই ব্যবহার করতাম। পরে আমার পড়াশোনার জন্য আমার ঢাকা চলে যেতে হয় যার জন্য আব্বু একাই ব্যবহার করত । আমি মাঝে মাঝে বাড়িতে গিয়ে ব্যাবহার করতাম । পরে একান্ত নিজের বাইক কেনার প্রয়োজন মনে করি কিন্তু আব্বু কিনে দিতে চায় না । যদি কোন এক্সিডেন্ট করে কিছু হয় । পরে নিজেই আস্তে আস্তে টাকা জমিয়ে Haojue KA 135 বাইকটি ক্রয় করি।
প্রথম বাইক কেনার অনূভুতি ছিলো দারুন । আমি এবং আমার এক বড়ো ভাই বাইক কিনতে যাই । দিনটি ছিল জীবনের স্মরনীয় মূহুর্ত গুলোর মধ্যে একটা ।
বাইকটির কিছু ভালো দিকঃ
- অসাধারণ লুকিং এবং কালার
- মোটামুটি ভালো মাইলেজ পাচ্ছি
- ব্রেকিং সিস্টেম খুব ভালো
- কর্নারিং এ বেশ মজা পাই তবে একটু সাবধান থাকতে হয় কারন চাকা চিকন এর জন্য
- কন্ট্রোলিং খুব ভালো
বাইকটির কিছু খারাপ দিকঃ
- বাইকটি চিকন চাকা হওয়ার অনেক সময় চাকা স্কিড করে
- লং রানে পার্ফমেন্স একটু ড্রপ এবং ইঞ্জিনের শব্দ একটু বেড়ে যায় যা খুবই সামান্য
- আরপিএম ৬০০০ এর বেশি হলে পা দানিতে একটু একটু ভাইব্রেশন ফিল হয় যা খুবই সামান্য
- ১৩৫ সিসি সেগমেন্ট এর বাইক হওয়ার পরেও হাইওয়েতে স্পিড স্বল্পতা ফিল করি
- হাইওয়েতে ফাকা রাস্থায় হেডলাইটের আলো কম
আমি বাইকটি ২০১৮ সালে ১ লক্ষ ২২ হাজার টাকা দিয়ে ঢাকা বিজয় স্মরনীর শোরুম থেকে কিনেছি । Haojue KA 135 বাইকটি হচ্ছে ১৩৫ সিসি সেগমেন্ট এর অনেক স্ট্রং এবং ভালো একটি বাইক। বাইকটিতে দেয়া হয়েছে ৫ স্টেপ গিয়ার, টিউবলেস টায়ার, মাস্কুলার লুক, কালার গুলো অনেক সুন্দর। সিটিং পজিশন হ্যান্ডেলবার লং রাইডেও বেশ ভালো কম্ফোর্ট দেয়।
আমার বাইকটি আমি প্রথমে ৫০০ কিলোমিটার, ৮০০ কিলোমিটার এবং ১০০০ কিলোমিটার এ ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তজ করি এবং ১০০০ কিলোমিটার এ প্রথম সার্ভিস করাই Haojue ডিলার পয়েন্ট থেকে। এরপর থেকে ১০০০ কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন ওয়েল চেঞ্জ পরিবর্তন করি। ৩ হাজার কিলোমিটার পর পর ওয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করি। আমি আমার বাইকে প্রথম থেকে 20w40 Castrol ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করছি।
বেশ ভালোই স্মুথ চলেছে বাইক । প্রথম ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইলেজ পেয়েছি ২৫ - ৩০ কিমি প্রতি লিটার । এরপরে ব্রেকিং পিরিয়ড শেষে ফ্রি সার্ভিস করানোর পরে সিটিতে মাইলেজ পেয়েছি ৩২ - ৩৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার । আর হাইওয়েতে পেয়েছি ৩৫ - ৪০কিলোমিটার প্রতি লিটার । আমি মনে করি ১৩৫ সিসি সেগমেন্ট এ বেশ ভালো মাইলেজ পাচ্ছি। তবে মাইলেজ ৪৫+ কিলোমিটার প্রতি লিটার হলে ভালো হতো ।
বাইকটি রেগুলার চালানোর পাশাপাশি আমি কিছু মেইন্টিনেন্স করি যেমন - এয়ার ফিল্টার নিয়মিত পরিস্কার করি, চেইন এডজাস্টমেন্ট, চেইন লুব, টাইম মত ইঞ্জিন ওয়েল চেঞ্জ, ২ - ৩ বার ইঞ্জিন ওয়েল চেঞ্জ করার পরে ওয়েল ফিল্টার চেঞ্জ করি ।সঠিক টায়ার প্রেশার দেই ।
আমি আমার বাইকটিকে অনেক বেশি ভালোবাসি তাই আমি আমার বাইকটি ভালো রাখার জন্য যা যা করা দরকার আমি তাই তাই করি এবং সঠিক যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করি । আমি আমার বাইকটি নিয়ে যথেষ্ট খুশি । বাইকটি সিটিতেই বেশি চালানো হয় । এখন পর্যন্ত আমার লং ট্যুর হচ্ছে ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ, হয়ে ঢাকা। প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার ভ্রমন ছিল ।
হাইওয়েতে এর ব্রেকিং কর্নারিং মাইলেজ ছিল প্রশংসা করার মত । তবে টপ স্পিডের অভাব ফিল করেছি । বাইকটিতে আমি টপ স্পিড তুলেছি ১০৭ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা । খুব স্মুথলি স্পিড উঠে যায় । তবে একটু টাইম নেয় ১০০ পরে স্পিড উঠতে ।
অবশেষে বলতে চাই সবদিক থেকে Haojue KA 135 এর পারফর্মেন্স খুব ভালো । এই বাইকটি চালিয়ে আমি সেস্টিফাই। ৩০ হাজার কিলোমিটার পথ চলার অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারন । বাজেট , লুকস , কম্ফোর্ট সব দিকে বিবেচনা করলে বাইকটি যথেষ্ট ভালো একটি বাইক ।
সার্ভিস ও বেশ ভালোই পাচ্ছি । সবশেষে একটি কথা – সবাই সবসময় সার্টিফাইড হেলমেট পরে বাইক চালাবেন । সাবধানে নিয়ম মেনে সেফটি নিয়ে বাইক রাইড করবেন । গতি কে নয় নিরাপদে বাড়ি ফেরাকে গুরুত্ব দিন । কারন দিন শেষে আপনার পরিবার আপনার জন্য অপেক্ষা করে থাকে । ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ অনিক মিয়া
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।