Bajaj Platina 110 H Gear ৩০০০ কিলোমিটার রিভিউ – আল আমিন

This page was last updated on 01-Aug-2024 05:37am , By Shuvo Bangla

আমি মোঃ আল-আমিন । ঠিকানা গাজীশাহ লেইন , চট্রেশরী রোড , চকবাজার , চট্টগ্রাম ।  আমি একটি Bajaj Platina 110 H Gear বাইক ব্যবহার করি । আজ আমি বাইকটি নিয়ে আমার মালিকানা রিভিউ শেয়ার করবো ।bajaj platina 110 h gear bike pic
আমি চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি । বাইকের প্রতি যখন থেকে ভালবাসা জন্মায় তখন থেকেই আমার ইচ্ছে হয় আমি একদিন আমার স্বপ্নের বাইক ক্রয় করবো । প্রথমে যখন হোন্ডা লিভো বাজারে আসে তখন যেখানে যাই হোন্ডা শোরুম দেখলে বাইক একবার হলেও দেখে যেতাম ।
 
২০১৯ সালে ঢাকা বাইক শো তে বাইক মেলা দেখতে শুক্রবার সকালে বাসায় অফিস খোলা বলে চট্টগ্রাম থেকে সকালে ট্রেনে করে ঢাকা চলে আসি ও হোন্ডা লিভো টেস্ট রাইড দিয়ে ও অনেক গুলো বাইক দেখে আবার বিকেলের দিকে বাসে করে চট্টগ্রাম চলে আসি ।
 
তারপর যখন টিভিএস রেডিয়ন বাইক বাজারে আসে তখন থেকেই সেই বাইকটি আমার অনেক ভালো লাগতে শুরু করলো এবং অনেক বার এই বাইকটি দেখতে শুরুমে গিয়েছি । সবশেষ যখন বাজাজ প্লাটিনা এইচ গিয়ার বাইকটি আসে রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় কখন কিনবো । ইনশাআল্লাহ আল্লাহর রহমতে ও মায়ের দোয়া ছিল বলে গত ২০-০৩-২০২১ সালে আমার স্বপ্ন পূরণ হয় আল্লাহর কাছে লক্ষ কোটি শুকরিয়া আদায় করছি ।
 
এই প্লাটিনা এইচ গিয়ার ১১০ বাইকটি আমার জীবনের প্রথম ক্রয় করা ভালোবাসার বাইক । Bajaj Platina 110 H Gear বাইকটি আমি এখন পর্যন্ত ৩০০০ প্লাস কিলোমিটার চালিয়েছি। আমার বাইকের জন্য বাজেট কম ছিল তাই আমি প্রথম তিনটি বাইক বাছাই করি যেমন হোন্ডা লিভো , টিভিএস রেডিয়ন ও প্লাটিনা ১১০ এইচ গিয়ার ।
 
এই তিনটি বাইক নিয়ে ইউটিউবে প্রচুর ভালো মন্দ রিভিউ দেখে আমার কাছে মনে হল প্লাটিনা এইচ গিয়ার বাইকটি বাকি দুইটি বাইক থেকে আমার জন্য সেরা বাইক । তাই দেরি না করে প্লাটিনা এইচ গিয়ার ১১০ ব্লাক & ব্লু কালারের এই বাইকটি ক্রয় করি।bajaj platina 110 h gear
বাইকটি ক্রয় করতে আমার খরচ হয়েছে দুই বছরের রেজিষ্ট্রেশন সহ ১,২৫,৪০০ টাকা । আল্লাহর রহমতে ভালো সার্ভিস পাচ্ছি । প্লাটিনা এইচ গিয়ার বাইকটি দিয়ে আমি বাইক চালানো শিখি । এই বাইকটি ক্রয় করার কারন সেমি ডিজিটাল মিটার , গিয়ার ইন্ডিকেটর ও গিয়ার শিফট গাইড , কম্বাইন ব্রেকিং , ভালো কমফোর্ট ফিল ও মাইলেজ।
 
বাইকটি যেদিন Bajaj Showroom এ যাই সেই দিনটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরনীয় একটা দিন । যেদিন বাইকটি ক্রয় করতে যাবো সেদিন অফিস ছুটির পর আমার অফিসের দুই কলিগ কে সাথে করে বাইকের শুরুমে চলে যাই ও সাথে আমার বাসার পাশের তিন বন্ধুকে ফোন করে শুরুমে চলে আসতে বলি বাসায় কাউকে না জানিয়ে বাইক ক্রয় করি কারণ বাসায় সবাইকে চমকে দেয়ার জন্য ।
 
বাইকের ব্রেক ইন পিরিয়ড চলাকালীন সময় ৪০-৫০ এর বেশি স্পিড এর বেশি কখনো উঠায়নি । খুব ভালোভাবেই ব্রেকি ইন পিরিয়ড ২৫০০ কিলোমিটার বাইক চালিয়েছি কোন সমস্যা ছাড়াই । যখন আমার বাইকের ওডো মিটার এ ১৬০০+ কিলোমিটার চালিয়েছি তখন কিভাবে যেন আমার বাইকের মিটার নষ্ট হয়ে যায় আমি মনে অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম কারণ বাইকটি বাজারে নতুন আসছে এবং আমার জীবনের প্রথম বাইক ।
 
বাইকের মিটার কোথাও পাইনি আমি অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলাম আমি ধন্যবাদ জানাই Bajaj Bike শপ এর সিনিয়র টেকনিশিয়ান নয়ন দাদা চট্টগ্রাম এর বাজাজ এর পার্টস হেড রজ্জন দা ও উত্তরা মটরসকে উনারা আমাকে অনেক কষ্ট করে আমার বাইকের জন্য মিটার ব্যবস্থা করেছে অনেক অল্প সময়ে ।
 
প্রথম ৩০০ কিলোমিটারে প্রথমবার এবং ৮০০ কিলোমিটারে ২য় বার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করেছি। এরপর প্রতি ১০০০ কিলোমিটার এ আমি ইঞ্জিন অয়েল ও অয়েল ফিল্টার একসাথে পরিবর্তন করি । আমি সবসময় বাজাজের নিজস্ব সার্ভিস সেন্টারে বাইকের সার্ভিস করাই তারা খুব যত্ন সহকারে সার্ভিস করেন ও তাদের ব্যবহার অনেক ভালো ।



প্লাটিনা এইচ গিয়ার 110 বাইকটি নিয়ে আমি চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই লেক হয়ে রাঙামাটি পিলিয়ন সহ লং ট্যুরে গিয়েছি । প্রায় সময় ছুটির দিনে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত , ভাটিয়ারী ক্যাফে ২৪ পার্ক ও বায়জিদ লিংক রোড ঘুরতে চলে যাই আল্লাহর রহমতে কখনো কোন সমস্যা হয়নি ।


আমি এই বাইকটি থেকে মাইলেজ পাই ৫৮ থেকে ৬৩+ আমি টপ স্পিড পছন্দ করিনা তাই কখনো টপ স্পিড চেক করি নাই । আমি সবসময় ৫০- ৬০ এর বেশি স্পিডে বাইক রাইড করিনা । ফাঁকা রাস্তায় সবোর্চ্চ ৭৫ স্পিডে পিলিয়ন সহ এর বেশি কখনো তুলতে ইচ্ছে করে না । বাইকে ০ থেকে ৬০ স্পিড সহজেই উঠে যায় তারপর আরো স্পিড উঠতে একটু সময় লাগে ।
 
প্লাটিনা এইচ গিয়ার আমার বাইকটি থেকে এখনো ৬০-৭০ কিলোমিটার স্পিডে তেমন ভাইব্রেশন অনুভব করিনি । আমি শুরু থেকে ইঞ্জিন অয়েল কোম্পানির ম্যনুয়াল বইতে উল্লেখ করা 10W30 এর ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি । আমি মতুল 10W30 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল সবসময় ব্যবহার করি মাশাআল্লাহ খুব স্মুথ ভাবে চলে কোন বাজে নয়েজ আসে না ইঞ্জিন থেকে ।

bajaj platina 110 h gear bikeআমি বাইকে মডিফিকেশন পছন্দ করিনা তাই কোন মডিফিকেশন করি নাই । এখন পর্যন্ত আমি ইঞ্জিন অয়েল ও অয়েল ফিল্টার আর একবার ডিস্ক প্রেড ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কোন কিছু চেঞ্জ করতে হয় নাই

 

Bajaj Platina 110 H Gear বাইকের কিছু ভালো দিক  -

  • মাইলেজ মোটামুটি ৬০+।
  • দীর্ঘ সময় বাইক রাইড করলেও কোন ক্লান্তি বোধ করি না ।
  • গিয়ার ইন্ডিকেটর
  • ডিস্ক ব্রেক সহ কম্বাইন ব্রেকিং সিস্টেম ।
  • গিয়ার সংখ্যা ৫টি যা ১১০ cc বাইকে আমার জানামতে এটাই প্রথম ।
  • মেইনটেনেন্স খরচ অনেক কম ।
  • ব্রেলেন্স আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো
  • টিউবলেছ টায়ার।
  • বাইকটির ওজন ১২২ কেজি হওয়াতে বাইকটি চালালে হালকা মনে হয় ।

Bajaj Platina 110 H Gear বাইকের কিছু খারাপ দিক  -

  • চিকন চাকা
  • হেডলাইটের আলো
  • বাইকটি একটু চিকন
এই বাইকের এই তিনটি খারাপ দিক ছাড়া আর সবকিছু আমার কাছে ভালো লাগে ।
 
আমার দৃষ্টিতে প্লাটিনা ১১০ বাইকের রেটিং -
  • মাইলেজ ৯/১০
  • বাইকের লুক ৭/১০
  • ইন্জিন পারফরমেন্স ১০/১০
  • কমফোর্ট ১০/১০
  • ব্রেকিং ১০/১০
  • হেডলাইট ৮/১০
  • থ্রটল রেসপন্স ৯/১০

bajaj platina 110 h gearসবশেষে একটা কথাই বলবো যে এই বাইকটি এই প্রাইজে আমার কাছে একটা সেরা বাইক । সকল বাইকার ভাইদের বলবো সবাই ভালো মানের সার্টিফাইট হেলমেট ব্যবহার করবেন সবসময় । সবার প্রতি রইল অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুভকামনা । ধন্যবাদ সবাইকে ভালো থাকবেন সবসময় এই দোয়া করি ।

 
লিখেছেনঃ মোঃ আল-আমিন
 
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।