গত ৬ বছরে মোটরসাইকেল বিক্রিতে সর্বনিম্ন রেকর্ড

This page was last updated on 20-Jan-2025 02:53pm , By Raihan Opu Bangla

সম্প্রতি এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা গিয়েছে যে গত ৫ বছরে মোটরসাইকেল বিক্রয় ক্রমাগত নিম্নমুখী হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই নিম্নমুখী প্রবণতা। তার ধারাবাহিকতায় গত বছর দেশে মোটরসাইকেল বিক্রি গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

মোটরসাইকেল বিক্রিতে ৬ বছরের সর্বনিম্ন রেকর্ড

মোটরসাইকেল বিক্রিতে ৬ বছরের সর্বনিম্ন রেকর্ড

এসিআই মোটরসের সামগ্রিক বাজার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, গত ২০২৩ সালের তুলনায় দুই শতাংশ কমে ২০২৪ সালে বিক্রি হয়েছে তিন লাখ ৯২ হাজার ৬১০টি মোটরসাইকেল। এমনকি করোনা মহামারি সময়কালের চেয়েও বেশি বিক্রি কমেছে। 

এর জন্য এসিআই মোটরস এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ গুলোকে দায়ী করেছেন। তিনি আরও বলেছেন যে, 'ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতির কারণে মোটরসাইকেলের দামও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে গিয়েছে।'

তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হচ্ছে যে দামী মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে এই জায়গাতে ব্যতিক্রম ঘটেছে। ২০২৪ সালে দামি মোটরসাইকেলের বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।

Also Read: Bike Price In Bangladesh

উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস আরও উল্লেখ করেছেন যে, ধনী ক্রেতাদের ওপর অর্থনৈতিক চাপের প্রভাব না পড়ায় দামি মোটরসাইকেলের চাহিদা ছিল। তিনি সতর্ক করে বলেন, সামগ্রিক বাজারে প্রবৃদ্ধির সুযোগ খুবই সীমিত।

তার ভাষ্যমতে, “অর্থনীতি চাপে থাকায় পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক এবং খুচরা বিক্রেতাদের জন্য বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ অনেক কম”।

সবশেষ বিক্রয় তথ্য অনুযায়ী, “২০২৪ সালে মোটরসাইকেলের বাজারে কিছু ব্র্যান্ড এর উল্লেখযোগ্য ভাবে বিক্রয় বাড়লেও অন্যান্য ব্র্যান্ডের বিক্রয় কমেছে। এতে করে ক্রেতাদের পছন্দ এবং বাজারের গতিশীলতা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

এসিআই মোটরস এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে শুধু হিরো মোটরসাইকেল ১৯ শতাংশ বিক্রয়ের মাধ্যমে বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে। 

এতে পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে হিরো মোটরসাইকেলের বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫৮ হাজার ১৮৯ ইউনিট, যার কারনে তাদের বাজারে অবস্থান হচ্ছে ১৪ দশমিক আট শতাংশে।

এই প্রতিষ্ঠানের বিক্রি বেড়েছে মূলত সাশ্রয়ী মডেল ও জ্বালানি সাশ্রয়ী ডিজাইনের ওপর মনোযোগ দেওয়ায়। বাজেট-সচেতন ক্রেতাদের কাছে তারা জনপ্রিয় হয়েছে।

এসিআই এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাজারে সুজুকি এবং ইয়ামাহা যথাক্রমে আট শতাংশ ও ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে। ব্র্যান্ড দুটির বাজারে এখন অংশীদারীত্ব হচ্ছে ১৯ দশমিক তিন শতাংশ করে। ধ্যম মানের মোটরসাইকেলে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

ইয়ামাহার আগ্রাসী প্রচারণা ও উদ্ভাবনী বৈশিষ্ট্যের কারণে চাহিদা বেড়েছে। আর সুজুকি ধারাবাহিকভাবে নির্ভরযোগ্য হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করায় ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে পেরেছে।

তবে পরিসংখ্যানে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে বাজাজ মোটরসাইকেলে। এক সময় বাজাজ ছিল এই দেশের শীর্ষ স্থানীয় একটি ব্র্যান্ড। বর্তমানে তাদের বিক্রয় কমেছে ১০ শতাংশ। 

কোম্পানিটি ২০২৪ সালে ৮৫ হাজার ৬৯৬ ইউনিট মোটরসাইকেল বিক্রি করেছে, যার ফলে তাদের বাজার অংশীদারিত্ব ২১ দশমিক আট শতাংশে নেমে এসেছে। তারপরও তারা এখনো বাজারে বড় অংশীদার।

অপরদিকে হোন্ডা মোটরসাইকেলের বিক্রিও কমেছে। গত বছর ২০২৪ সালে তাদের বিক্রি কমেছে এক শতাংশ। ফলে সামান্য কমে বাজারে তাদের অংশীদারিত্ব এখন ১৫ দশমিক দুই শতাংশ। কিন্তু হোন্ডা দাবি করছে তাদের বিক্রয় তিন শতাংশ বেড়েছে। 

বিশ্লেষকদের মতে, হোন্ডার বাজারে শীর্ষ স্থান পেতে এবং ক্রেতাদের প্রত্যাশা পূরন করার জন্য তাদের পণ্যের লাইন আপ আবার নতুন ভাবে করা দরকার। 

শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং বাজারে নতুন মডেল কম আসায় বিক্রি কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।

সামগ্রিকভাবে মোটরসাইকেলের বাজারে গতিশীল প্রেক্ষাপট লক্ষনীয়। তবে ব্র্যান্ডগুলো উদ্ভাবন, মূল্য নির্ধারণ কৌশল ও প্রচারণার মাধ্যমে বাজার ধরার প্রতিযোগিতায় রয়েছে। 

মোট বিক্রয় পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ক্রেতারা স্টাইল ও পারফরম্যান্সের সঙ্গে আপস না করে সাশ্রয়ী মূল্যের মোটরসাইকেল বেছে নেওয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

টিভিএস অটো বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার রায় জানান, ভারতের টিভিএস মোটর কোম্পানির স্থানীয় পরিবেশক ও নির্মাতা হিসেবে তাদের বিক্রি গত বছর প্রায় ৩৫ শতাংশ কমে ২৯ হাজার ৯৩২ ইউনিটে নেমে এসেছে।

তিনি বলেন, 'মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও দুর্বল অর্থনীতি বাজারে প্রভাব ফেলেছে।'

তার মতে, গত বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাজনৈতিক সংযোগের সুবিধা নেওয়া ক্রেতাদের সুবিধা পাওয়ার পরিমাণ শূন্যে নেমে যাওয়ায় বাজারে প্রভাব পড়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত বছর খুচরা বিক্রেতারা এক মাসের বেশি সময় আউটলেট খুলতে পারেনি।

২০২৪ সালের পড়ন্ত বাজারেও হোন্ডার সন্তোষজনক বিক্রির জন্য নিজেদের উদ্ভাবন ও গ্রাহককেন্দ্রিক ডিজাইনের দিকে নজর দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের (বিএইচএল) প্রধান বিপণন কর্মকর্তা শাহ মুহাম্মদ আশেকুর রহমান।

তিনি বলেন, 'আমাদের মডেলগুলো হোন্ডার রেসিং ডিএনএ থেকে অনুপ্রাণিত এবং ক্রমাগত গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে এর পারফরমেন্স উন্নত করা হচ্ছে।'

বিএইচএল জাপানের হোন্ডা মোটর কোম্পানি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ স্টিল ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয়।

আশেকুর রহমান এই চ্যালেঞ্জিং বাজারে হোন্ডার উদ্ভাবন ও নির্ভরযোগ্যতার ঐতিহ্য কাজে লাগিয়ে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।