রাইডিং সেফটি গিয়ারস নিয়ে ভুল ধারণা
This page was last updated on 01-Apr-2025 02:23pm , By Badhan Roy
গত বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় হতাহতের পরিমান বেড়েছে ৭১.৩৫%। অন্যান্য যান্ত্রিক যানবাহন বা মোটরাইজড ভেহিকল গুলোর মধ্যে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনা ঘটলে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপ্তি বেশি কারন এই দূর্ঘটনায় রাইডার এবং পিলিয়নের উপরে সরাসরি ইম্প্যাক্ট পড়ে। এই কারনে অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সকল বাইকার এবং পিলিয়নের হেলমেট সহ অন্যান্য সেফটি গার্ড ব্যাবহার করা উচিৎ।
কিন্তু রাইডিং গিয়ারস নিয়ে আমাদের অসচেতনতার পাশাপাশি অনেক ভুল ধারণা রয়েছে যার কারনে এখনো অনেক বাইকারই হেলমেট ব্যাবহারে উদাসীন এবং গ্লাভস, এলবো/নি গার্ড, বুট ইত্যাদি সেফটি গিয়ারস কে বিলাসিতা হিসেবে দেখে ব্যাবহার করতে আগ্রহী নন। আমাদের এই আর্টিকেলের উদ্দেশ্য অন্তত একজন মানুষের হলেও যাতে সেফটি গিয়ারস সম্পর্কে ভুল ধারণার অবসান ঘটে এবং মোটরসাইকেল চালানো অথবা পিলিওন হিসেবে যাত্রার সময় হেলমেট সহ সেফটি গিয়ার পরার জন্য সচেতন হন।

রাইডিং সেফটি গিয়ারস নিয়ে ভুল ধারণা
জেনে নেওয়া যাক সেফটি গিয়ার বিষয়ে আমাদের প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো কি কি?

১) অনেক বাইকারদের ধারণা ভালমানের হেলমেট এবং সেফটি গার্ড কেবলমাত্র হাইওয়ের লং রাইডের জন্য প্রযোজ্য, সিটি অথবা গ্রামের রাস্তায় এগুলো পরার বিশেষ প্রয়োজন নেই এবং পরলেও শুধুমাত্র নিম্নমানের “বাটি হেলমেট” পুলিশ চেকপোস্টে জরিমানা থেকে বাঁচাতে যথেষ্ট।
কিন্তু দূর্ঘটনা যেকোন রাস্তায় এবং যে কোন পরিস্থিতিতে নিজের অজান্তে ঘটে যেটে পারে। আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি দূর্ঘটনা ঘটে বাড়ির কাছাকাছি রাস্তায় ও কম গতিতে। সার্টিফাইড হেলমেট এবং সেফটি গিয়ারস অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনার আঘাত থেকে রক্ষা করবে।

২) যেহেতু বাংলাদেশ গ্রীষ্মপ্রধান দেশ তাই অনেকের ধারণা ফুলফেস হেলমেট এবং অন্যান্য গিয়ারস ব্যাবহার করলে আরো বেশি গরম লাগবে এবং রাইডিং অস্বস্তিকর হবে। আসল বাস্তবতা হচ্ছে এই ধরনের হেলমেট এবং গিয়ারস গুলোতে বাতাস চলাচলের পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন চেম্বার থাকে এবং সূর্যের আলো থেকে প্রতিরোধী হওায় আরামদায়ক রাইড নিশ্চিত করে।
৩) অধিকাংশের চিন্তা সেফটি গিয়ার এবং ভালমানের হেলমেট মনে হয় বেশ ব্যায়বহুল। কিন্তু আমরা অনেকেই মার্কেট যাচাই করে দেখি না যে বাজেটের ভিতরেও ভাল ভাল ব্র্যান্ডের গিয়ারস আর হেলমেট বাজারে এভেইলেবল। এটা সত্যি যে টপ ব্র্যান্ডের দামী গিয়ারস ব্যাবহার আপনাকে বাড়তি নিরাপত্তা দিবে।
কিন্তু বাজেটের ভিতরেও সার্টিফাইড হেলমেট এবং ভালমানের বুট ও গিয়ারস আপনাকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা প্রদান করতে যথেষ্ট। আমেরিকান বাইকিং কম্যুনিটি গুলোতে সেফটি প্রমোট করার জন্য প্রায়ই একটা কথা বলা হয় তা হচ্ছে “ছোটখাটো বাইক দূর্ঘটনার চিকিৎসায় প্রায় ৫০০০ ডলার খরচ হলেও একটা ভাল মানের রাইডিং জ্যাকেট কিনতে খরচ হয় মাত্র ১৫০ ডলার।
৪) অনেক অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ব্যাক্তি মনে করেন অভিজ্ঞ রাইডার বা তাদের ভাষায় “প্রো-রাইডার” দের হেলমেট ও গিয়ারস লাগে না। এই ধরণের ব্যাক্তিরাই সাধারণত বাইকারদের মধ্যে সেফটি প্রমোট করেন না এবং এদের দেখে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ হেলমেট ও গিয়ারস ব্যাবহারে নিরুৎসাহী হন।
কিন্তু বাস্তবতা বুঝতে হলে গ্রাম বাংলার পুরাতন একটি প্রবাদের কথা বলতে হয় – “চোরের ১০ দিন, গৃহস্থের এক দিন।” অনেক সচেতন অভিজ্ঞ রাইডার দের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা শুনলে তার মধ্যে অনেকেই স্বীকার করেন শুধুমাত্র সেফটি গার্ড এবং ভালমানের গিয়ারস এর জন্য তারা ভয়াবহ দূর্ঘটনার সম্মুখীন হলেও প্রাণে বেঁচে গেছেন।
সর্বোপরি, সার্টিফাইড হেলমেট এবং সেফটি গিয়ারস এর মূল্য আপনার জীবনের মূল্য থেকে বেশি না। তাই যে কোন রাস্তায় রাইডার অথবা পিলিয়ন যে হিসেবেই আপনি বাইক রাইড করবেন দয়া করে হেলমেট ও গিয়ারস ব্যাবহার করুন। আমরা চাই, প্রত্যেক বাইকার নিরাপদে তার গন্তব্যে সুস্থভাবে ফিরুক।
জনস্বার্থে - টিম বাইকবিডি।
