মোটরসাইক্লিংয়ে ব্যাকপেইন কিভাবে এড়াবেন – কার্যকরী কিছু টিপস

This page was last updated on 27-Oct-2024 09:30am , By Saleh Bangla

মোটরসাইকেল রাইডিং সাধারণত বেশিরভাগ রাইডারদের কাছেই একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা। এটি একইসাথে যাতায়াতের সুবিধা দেবার পাশাপাশি একধরনের স্বাধীনতা এবং সাহসিকতার অনুভূতি দেয়, যা অন্যকোনো বাহনের সাথে মেল‍ানো কঠিন। ফলে, বিশ্বব্যাপী মোটরসাইক্লিং জনপ্রিয় একটি সংস্কৃতি। তবে মোটরসাইক্লিংয়ে অত্যন্ত সাধারণ একটি সমস্যা হলো ব্যাকপেইন, যাতে অনেক রাইডারই ভুগে থাকেন। তো আজ আমরা মোটরসাইক্লিংয়ে ব্যাকপেইন কিভাবে এড়াবেন সেই বিষয়ে কার্যকরী কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করবো, আমাদের সাথেই থাকুন।

 

মোটরসাইক্লিংয়ে ব্যাকপেইন কিভাবে এড়াবেন – কার্যকরী কিছু টিপস

সাধারণভাবে মোটরসাইকেল রাইডিংয়ের জন্য একজন রাইডারের অবশ্যই ন্যূনতম শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস থাকতে হয়। তবে রাইডিংয়ে যদিও একজন রাইডারের শরীর এবং মন উভয়ই যথেষ্ট ধকল সামলায়, তথাপি মোটরসাইকেল চালানোর সময় রাইডারের মেরুদণ্ড অনেকটাই বেশি চাপ নেয়, বিশেষ করে দীর্ঘসময় ধরে চালানোর সময়। আর এটিই মেরুদণ্ডে অস্বস্তি তৈরি করে এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যথারও সৃষ্টি করে। সুতরাং, এই ব্যাথার সমস্যা কিভাবে কার্যকরভাবে এড়ানো যায় বা প্রতিরোধ করা যায় সে সম্পর্কে এখানে কিছু পরামর্শ দেয়া গেল।

সঠিক সিটিং ও রাইডিং ভঙ্গিমা বজায় রাখুন

মোটরসাইকেল রাইডিংয়ে কার্যকরভাবে ব্যাকপেইন প্রতিরোধের জন্য সঠিক সিটিং ও রাইডিং ভঙ্গিমা বজায় রাখ‍া অত্যন্ত জরুরী। কেননা মোটরসাইকেল রাইডারের ব্যাকপেইনের অন্যতম মূল কারণ হলো বেশিরভাগ রাইডারই তাদের লং রাইডিংয়ে তো বটেই এমনকি প্রতিদিনের যাতায়াতেও সঠিক সিটিং ও রাইডিং ভঙ্গিমা বজায় রাখে না। ফলে তাদের মেরুদন্ডে অসম ও বাড়তি চাপ পড়ে এবং দীর্ঘসময়ে সেটি স্থায়ী ব্যাথার সৃষ্টি করে।

সঠিক ক্যাটাগরীর মোটরসাইকেল বেছে নিন

একজন রাইডার হিসেবে আপনি সম্মত হন বা না হন, এটা ধ্রুব সত্য যে সব ক্যাটাগরীর মোটরসাইকেল সমান রাইডিং কম্ফোর্ট দিতে পারে না। ক্যাটাগরী অনুযায়ী তাদের ডিজাইন যেমন ভিন্ন, তেমনি তাদের ব্যবহারক্ষেত্রও ভিন্ন, আর সেইসাথে তাদের কম্ফোর্ট লেভেলও ভিন্ন। আর আমরা যে ধরণের মোটরসাইকেল ব্যবহার করি আক্ষরিক অর্থে সেটি সেভাবেই আমাদের শরীরের উপর প্রভাব ফেলে। 

উদাহরণস্বরুপ স্পোর্টবাইক আর ক্রজার বাইক যেমন এক নয়। তেমনি সব মোটরসাইকেলের সিটিং পজিশন, রাইডিং পজিশন, হ্যান্ডেলবার, সাসপেনশন ও হুইল সেটআপের মতো অন্যান্য ফিচারগুলি একরকম নয়। ফলে এগুলি রাইডারদের শরীর ও মনে একেক রকম প্রভাব ফেলে। তাই, নিয়মিত ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত ধরনের ও আরামদায়ক মোটরসাইকেল বেছে নিন।

আরামের জন্য সিট ও হ্যান্ডেলবার পজিশন কাইস্টমাইজ করুন

মোটরসাইকেল রাইডিংকে আরামদায়ক করতে ও কার্যকরীভাবে ব্যাকপেইন প্রতিরোধ করতে রাইডারের বডি প্রফাইল ও কম্ফোর্ট জোন অনুসারে মোটরসাইকেল কাস্টমাইজ করা বেশ ফলদায়ক। এক্ষেত্রে মোটরসাইকেলের সিট এবং হ্যান্ডেলবার পজিশন কাস্টমাইজ করা অত্যন্ত জরুরী। এখানে সিটের উচ্চতা, সিট কুশন, হ্যান্ডেলবারের উচ্চতা ও দুরত্ব এমনভাবে সমন্বয় করা উচিৎ যাতে রাইডার আরামে বসে কোন বাড়তি চাপ ছাড়াই হ্যান্ডেলবার ধরে রাখতে পারেন এবং তার সিটিং ও রাইডিং পজিশনও ঠিক থাকে।

সাপোর্টিভ রাইডিং গিয়ার ব্যবহার করুন

মোটরসাইকেল চালানোর সময় আকষ্মিক আঘাত এড়াতে সঠিক ধরণের রাইডিং গিয়ার ব্যবহার করা জরূরি। এসব রাইডিং গিয়ার রাইডিংয়ে কেবল সুরক্ষাই দেয়না বরং রাইডারের শরীরের সংবেদনশীল অংশগুলিতেও বাড়তি সাপোর্ট দেয়। ভালোমানের ডেডিকেটেড সেফটি গিয়ার রাইডিংয়ে রাইডারের শারিরীক কাঠামো যেমন ঠিক রাখতে সহায়ক হয়, তেমনি শরীরের কোন অংশে অসম চাপ পড়ার সম্ভাবনাও হ্রাস করে। ফলে সঠিক রাইডিং ভঙ্গিমা বজায় রাখার সাথে সাথে কার্যকরীভাবে ব্যাকপেইন এড়ানোও সম্ভব হয়।

রোড কন্ডিশন সম্পর্কে সচেতন থাকুন

রুক্ষ বা অমসৃণ রোড সারফেসের মধ্য দিয়ে মোটরসাইকেল রাইডিং রাইডারের মেরুদণ্ডের উপর সরাসরি চাপ ফেলে এবং এটি বিদ্যমান ব্যথার আরো অবনতি ঘটায়। তাই, যখনই সম্ভব খারাপ রাস্তা এড়িয়ে চলুন, আকস্মিক বাম্পে গতি কমিয়ে দিন, যতটা সম্ভব বিকল্প ভালো রাস্তায় চলাচল করুন। আর লম্বা রাইডের ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক রোড কন্ডিশন সম্পর্কে সচেতন থাকুন ও ধৈর্য্যের সাথে নিজের সেফটি ও কম্ফোর্ট নিশ্চিত করে রাইড করুন।

লং রাইডে ঘন ঘন ব্রেক নিন এবং হাইড্রেটেড থাকুন

একটানা দীর্ঘক্ষণ মোটরসাইকেল চালানো রাইডারের শারীরিক চাপ এবং ব্যাকপেইনের অন্যতম একটি প্রধান কারণ। সঠিক বিরতি এবং রিফ্রেশমেন্ট ছাড়া দীর্ঘ রাইড একজন রাইডারের মেরুদন্ডে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে, যেটি অবশ্যই শারিরীক অস্বস্তি ও ব্যথার সৃষ্টি করবে। তাই, প্রলম্বিত শারীরিক চাপ এড়াতে ও শারিরীক সুস্থতা অক্ষুন্ন রাখতে, বিশেষ করে লং মোটরসাইকেল রাইডে নিয়মিত বিরতি নেওয়া জরুরী।

আর রাইডিংয়ে একজন রাইডারকে সর্ব অবস্থাতেই সঠিকভাবে হাইড্রেটেড থাকতে হবে। হাইড্রেটেড থাকার বিষয়টি অনেক রাইডারই অচেতনভাবে উপেক্ষা করেন। কিন্তু ক্লান্তি এড়াতে, পেশীর কর্মক্ষমতা ধরে রাখতে, এবং সামগ্রিক সুস্ততার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, ডিহাইড্রেশন রাইডারকে গুরুতর ক্লান্ত ও দুর্বল করার সাথে সাথে মাসল ও নার্ভ সিস্টেমকেও দুর্বল করে দিতে পারে। তাই যথাযথ ব্রেক নেবার সাথে সাথে হাইড্রেটেড থাকার জন্য প্রতিবার পর্যাপ্ত পানি বা স্বাস্থ্যকর তরল পান করতে হবে।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাহায্য নিন

মোটরসাইকেল রাইডারদের জন্য তাদের শরীরের কোর মাসল শক্তিশালী করা জরুরী, বিশেষকরে যারা নিয়মিত বা সিরিয়াস টাইপের মোটরসাইক্লিং করেন। কেননা, শক্তিশালী কোর কোর মাসল আমাদের শরীরকে একটি শক্ত কাঠামো দেয়, বাড়তি চাপ নেবার সক্ষমতা বাড়ায়, এবং লং মোটরসাইকেল রাইডের ধকল সামলাতেও প্রত্যক্ষ সহায়তা করে। তাই রাইডারদের চেষ্ট, এবডোমিনাল ও লোয়ার ব্যাক মাসল শক্তিশালি করার জন্য যথাযথ ব্যায়াম করা উচিৎ। আর যারা পেশি বা ব্যাকপেইনের সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করুন।

 

তো বন্ধুরা, এই ছিলো মোটরসাইক্লিংয়ে ব্যাকপেইন কিভাবে এড়াবেন সে বিষয়ে আমাদের আজকের আলোচনা এবং সেটি প্রতিরোধের জন্য কার্যকর কিছু টিপস শেয়ারিং। আশাকরি আপনি যদি আমাদের উপরের বর্নিত টিপসগুলো অনুসরণ করেন তাহলে কার্যকরভাবে মোটরসাইক্লিংয়ের ফলে উদ্ভুত শারিরীক ব্যাথা বা ব্যাকপেইন এড়াতে পারবেন এবং প্রতিবার আরামদায়ক ও রোমাঞ্চকর রাইড উপভোগ করবেন, ধন্যবাদ।