Suzuki Gixxer SD ১৬০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - রাব্বি

This page was last updated on 30-Jul-2024 04:38pm , By Shuvo Bangla

আমি রাব্বি হাসান। আমার বসবাস ঝিনাইদহ জেলায় । বর্তমানে Suzuki Gixxer 155 SD বাইক ব্যবহার করছি। আর এটা আমার জীবনের প্রথম বাইক।
suzuki gixxer sd bike
জীবনে প্রথম বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা -
২০১৩ সালের কথা। তখন আমার বয়স ১৪ বছর। নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করি। দুলাভাইয়ের একটা মোটরসাইকেল ছিলো হোন্ডা ৮০ সিসি।
ভাই মাঝেমধ্যেই দুলাভাইয়ের বাইক নিয়ে বের হতো শখের বসে। আমিও তার পিছনে বসে কিভাবে চালাচ্ছে খেয়াল করতাম। কিভাবে পায়ে কিক দিচ্ছে, ক্লাস ধরছে, গিয়ারে ফেলছে সব খেয়াল করতাম। ওখান থেকেই মূলত আমার বাইকের প্রতি শখ জাগে।
 
একদিন দুলাভাই তার ফুফাতো ভাইয়ের ওয়ালটন বাইক নিয়ে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে। সে বাইকটা ছিলো সেল্ফ স্ট্যার্ট। তাই সহজেই স্ট্যার্ট করা যেত।


 Also Read: Race Fiero 150FR টীম বাইকবিডি ২৫০০ কিমি টেস্ট রাইড রিভিউ


তখন ভরদুপুর। দুলাভাই ঘুমাচ্ছে। ভাবলাম চাবিটা চুরি করে বাইক চালানো শিখার এটাই চরম সুযোগ। যেই ভাবা সেই কাজ। দুলাভাইয়ের প্যান্টের পকেট থেকে চাবি চুরি করে ওই জীবনে প্রথম গাড়ি স্ট্যার্ট দিয়ে ড্রাইভ করা। তবে বেশি পথ যেতে পারিনি। ৩০-৩৫ মিটার যেতেই দেখি আপু সামনে। যেই দেখা, সেই বকা। সাথে সাথে বাইক রেখে দিলাম।
এই ঘটনার মাস খানিক পর আব্বু বাড়িতে এসেছে ঢাকা থেকে। তাই দুলাভাই, আপু, ভাগ্নি বেড়াতে এসেছে। এদিনও দুলাভাই ঘুমাচ্ছে দুপুরবেলা। তবে এবার দুলাভাইয়ের বাইক হোন্ডা ৮০ সিসি বাইক আনায় চাবি চুরি করেও লাভ হচ্ছিলো না। কারণ এটা কিক দিতে হয়। আর আমি কিক স্ট্যার্ট কখনোই দিইনি। তবে ১০-১৫ বার ট্রাই করার পরে সফল হলাম। ঠিক ভাবে বাইকের ক্লাস ছাড়লাম, গিয়ার শিফট করলাম।
 
আহা! কি দারুণ অনুভূতি। জীবনের প্রথম বাইক চালানো আসলেই বেশ রোমাঞ্চকর।
suzuki gixxer sd


নিজের টাকায় গাড়ি কেনার প্রতিজ্ঞা -

এভাবেই দিন যায় দিন আসে, বছর যায় বছর আসে। আমিও ইন্টারে উঠলাম। দুলাভাই হোন্ডা ৮০ সিসি বিক্রি করে ডিসকাভার ১২৫ কিনে। সেই বাইক নিয়ে বেড়াতে আসলে, চাবি চুরি করে নানু বাড়ি থেকে ঘুরে এসেছিলাম। বাসায় ফিরে সবার কাছে অনেক বকা খেয়েছিলাম। (অবশ্য বকা খাওয়া স্বাভাবিক, কেননা শখের বাইক কে চাই ক্ষতি হোক?) সেই থেকে অভিমান করে ওই বাইকে আর হাত দিতাম না। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি, বড় হয়ে আমি এর থেকেও দামি বাইক কিনবো।


Also Read: Hero Hunk ৩০,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ

 
এভাবে আস্তে আস্তে বড় হতে থাকি। সময় পাল্টাই। যশোর সিটি কলেজ থেকে অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে শখ পূরণ এবং ক্যারিয়ার পোক্ত করার উদ্দেশ্যে ঢাকায় রওনা হই টিউশনির আশা করে। শুনেছি ঢাকায় টিউশনির ভালো দাম।
 
ঢাকা জীবন শুরু। আল্লাহ একটা ৩০০০ টাকার টিউশনি মিলিয়ে দিলো। (আলহামদুলিল্লাহ) কিন্তু তাতে তো মেস চলে না। লিফলেট মেরে ১৫০০ টাকার একটা টিউশনি মিলে গেল। একাউন্টিং বিষয় সাবজেক্ট পড়ায়। দুজনি ইন্টার ক্যান্ডিডেট। নিজের পড়াশোনা খরচ, হাত খরচ, ভাড়া, সবমিলিয়ে চলে না।



একটা আমেরিকান (মেটলাইফ) কোম্পানি তে জয়েন করলাম চাচাতো দুলাভাইয়ের রেফারেন্স এ। কিন্তু এখানে কমিশনের কাজ। আর আমি ঢাকাতে একদম নতুন তাই কোনো সুফল পাচ্ছিলাম না। কারণ এ কাজে রেফারেন্স ছাড়া এপয়েন্টমেন্ট হয় না সহজে।
 
তাই ইভেন্টের কাজ, লিফলেট বিতরণ, টিউশনি করে, দিনে একবেলা খেয়ে মেস চালাতাম। নীল কালারের একটা বাইসাইকেল কিনি ভাড়া ও সময় বাচাতে। জ্যামের শহর। রোজ মিরপুর টু পল্টন যেতাম আসতাম বাইসাইকেলে। ওখান থেকে গুলশান, বারিধারা, মোহাম্মাদপুর, চিটাগং রোড, নারায়ণগঞ্জ এক কথায় পুরো ঢাকা শহর ঘুরতে হত কাজের জন্য।
 
অফিসের কাপড় ঘেমে নষ্ট হয়ে যেত বলে ডাবল ড্রেস নিয়ে যেতাম। এভাবে ৮ মাস পর মেটলাইফ থেকে বেনিফিট পাওয়া শুরু করি।(নিজের হতাশার কারণে এত সময় লেগেছে আমার) আল্লাহ কপালে মিলিয়ে দিলো এমনভাবে, যে অপেক্ষার ফল আসলেই মিঠা হয়। মাত্র দুইদিনের খাটুনি তে কমিশন দাঁড়িয়ে গেল মাসে ১৫,০০০ টাকা।তার মাঝে ৩০০০ টাকার আরো একটা টিউশনি পেয়েছিলাম। এইবার ইনকাম দাঁড়িয়ে গেলো আল্লাহর রহমতে ২০-২২ হাজার টাকা প্রত্যেক মাসে।


টাকা আসায় কাজে মনোযোগী হইছি। ২ দিনের মধ্যে আরো ৫ টা কোম্পানির এমডি, চেয়ারম্যান এর সাথে এপয়েন্টমেন্ট রেডি করে ফেলি। উনারা ১ সপ্তাহর সময় নেন। আর আমিও অনেক ক্লান্ত ছিলাম তাই ভেবেছিলাম গ্রামে গিয়ে একটু স্থির হই। তাই এক সপ্তাহের ছুটিতে এসে করোনায় আটকে গেলাম। ৭ মাস বাড়িতে বসে থাকতে হলো। তবে বসে থাকলেও কমিশন অটোমেটিক একাউন্টে ঢুকে যেত।
 
তাই করোনার মধ্যেই বাইক কেনার সিদ্ধান্ত নিই। আকিব ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় হইছিলো এই বাইকবিডি গ্রুপ থেকে। তাই উনার থেকে পরামর্শ নিলাম। বললাম, ভাই পালসার ডিডি নিবো। উনি বললেন, সবদিক থেকে আমি মনে করি Suzuki Gixxer SD নেওয়াটা বেটার হবে। আমিও অনেক ঘাটাঘাটি করে দেখলাম আসলেই Suzuki Gixxer 155 SD নিলে ভালো হবে।
 
বাইক কেনার দিনের অভিজ্ঞতা - 
বাইক কেনার দিন জুলাই ২০ তারিখ ২০২০ সাল। আব্বু আর আমি যশোর নিউ ট্রেডিং শোরুমে গেলাম। দু বছর ধরে স্বপ্ন দেখি Black Gixxer SF এর। কিন্তু শোরুমে গিয়ে কালো কালারটা পেলাম না। তাই আব্বুর পছন্দ মতে গ্রে কালারটা নিলাম ১,৭৪,৯৫০ টাকায়। Suzuki Gixxer SF পাওয়া যাচ্ছিলো না, গেলেও টাকায় মিলছিলো না।
বাইক কিনে চালিয়ে বাসায় ফেরার সময় নিউমার্কেট এর ছোট্ট একটা স্পীড ব্রেকার হটাৎ দেখে আব্বু আমাকে ঘাবড়িয়ে দেয়। আমিও ভয়ে ডিস্ক ব্রেক জোরে চেপে ধরায় আর বৃষ্টি হওয়ায় চাকা স্কীড করে পড়ে যায়। দুজনেরই হাটু আর কনুইতে লাগে। স্পীড কম থাকায় বেশি ক্ষতি হয়নি। বাইকের সামনের সুজুকি লিখা বোর্ড টা ভেঙে যায়। শোরুমে ফেরত গিয়ে আবার সব ফ্রেশ করে নিয়ে বাসায় ফিরি।
 
বাইকের মাইলেজ, মেইনটেইন্স এবং পছন্দের কারণ - 
আলহামদুলিল্লাহ বাইক এখন ১৬০০০+ কিলোমিটার চলছে কোনো সমস্যায় হয়নি এখনো অব্দি। এই অব্দি অফিশিয়াল সার্ভিসিং করেছি ৪টা। তাতে একটা এয়ার ফিল্টার চেঞ্জ করা লেগেছে। আর সপ্তাহখানেক আগে একটা মাস্টার সার্ভিসিং করেছি। তাতে বল রেসার, ব্রেক প্যাড, ফর্ক সিল অয়েল চেঞ্জ করা লেগেছে। তাছাড়া এই অব্দি দামি কোনো পার্টস পত্র চেঞ্জ করা লাগেনি।
 
ব্রেকিং পিরিয়ডে ৫০০০ কিলোমিটার অব্দি শেল এডভান্স 20W40 মিনারেল ইউজ করেছি। ১০,০০০ কিলোমিটার অব্দি শেল এডভান্স আল্ট্রা 20w40 ইউজ করতাম যেটা ১০৫০ টাকা দাম নিতো। মটুল দিয়ে সাউন্ড ফেটে যেত তাই শেল ইউজ করতাম। তবে এখন মটুল 300V 10w40 ইউজ করি।

হাইওয়েতে আমি ৫২ কিলোমিটার লিটারে মাইলেজ পাচ্ছি। এবং শুরু থেকেই গ্রামে আমি ৫২-৫৩ করে মাইলেজ পাচ্ছি। ঢাকা সিটিতে কখনো মাইলেজ চেক করিনি। খুব ভালো পারফরম্যান্স পাচ্ছি Suzuki Gixxer 155 SD বাইকে। মোটা টিউবলেস টায়ার, স্পোর্টি বাইক, সুন্দর ডিজাইন আর পারফরম্যান্স দেখে আমি একই টাকায় পালসার বাদ রেখে Suzuki Gixxer SD নিয়েছি।


Also Read: Yamaha R15 V3 Indo ৬,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ 


সর্বোচ্চ গতি -  একা রাইড করে ১২০ অব্দি উঠিয়ে আর সাহস করিনি। আর পিলিয়নসহ ১১১ অব্দি উঠিয়েছি। তবে টপ স্পীড আমাকে টানে না। আমাদের মনে রাখা উচিত, যত গতি তত ক্ষতি।

Suzuki Gixxer 155 SD বাইকের পাঁচটি ভালো দিক - 

  • মোটা টিউবলেস চাকা।
  • ব্যাক পেইন হয়না।
  • স্পোর্টি লুক।
  • মাইলেজ।
  • কনফিডেন্ট লেভেল ব্রেকিং।

Suzuki Gixxer 155 SD বাইকের পাঁচটি খারাপ দিক - 

  • এবিএস নেই।
  • পিলিয়ন সিটে বসলে সামনে গড়ায় আসে।
  • ফ্যামিলি বাইক না।
  • হেডলাইটের আলো কম।
  • হর্ণ একদমই কম সাউন্ড।
লং ট্যুর - ঢাকা টু যশোর অনেকবার আসা যাওয়া করেছি। তাতে কখনো কোনো সমস্যায় পড়িনি। তবে টায়ারে ২ বার পেরেক ঢুকেছিলো, জেল দেওয়া ছিলো বিধায় কোনো সমস্যায় হয়নি।
 
পরিশেষে বলবো, Suzuki Gixxer 155 SD ইউজ করে আমি সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট। শুধু ফ্যামিলি রাইডে প্যারা লাগে। তাছাড়া অভারঅল বাইকটা বেশ স্বাচ্ছন্দপূর্ণ। Lets See Suzuki Gixxer price in Bangladesh here.
 

লিখেছেনঃ রাব্বি হাসান

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Best Bikes

Honda CB Hornet 160R

Honda CB Hornet 160R

Price: 169800.00

Honda CB Hornet 160R ABS

Honda CB Hornet 160R ABS

Price: 255000.00

Honda CB Hornet 160R CBS

Honda CB Hornet 160R CBS

Price: 212000.00

View all Best Bikes

Latest Bikes

CFMoto 125NK

CFMoto 125NK

Price: 0.00

Liban Wind

Liban Wind

Price: 0.00

Liban Phoenix Plus

Liban Phoenix Plus

Price: 0.00

View all Sports Bikes

Upcoming Bikes

Liban Wind

Liban Wind

Price: 0.00

Liban Phoenix Plus

Liban Phoenix Plus

Price: 0.00

Liban Phoenix

Liban Phoenix

Price: 0.00

View all Upcoming Bikes