মোটরসাইক্লিংয়ে কিছু লুকানো সত্য যা আপনার জানা উচিত
This page was last updated on 27-Aug-2024 10:15am , By Saleh Bangla
বিশ্বব্যাপী মোটরসাইক্লিং অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি রোমাঞ্চকর এবং উত্তেজনাপূর্ণ একটিভিটি, যা লক্ষ লক্ষ রাইডারের হৃদয় ছুঁয়ে আছে। মূলত বেশিরভাগ মানুষই মোটরসাইকেল এবং মোটরসাইক্লিং পছন্দ করেন। তবে মোটরসাইক্লিংয়ে কিছু লুকানো সত্য রয়েছে, যা হয়তো অনেকেই জানেন না, অথবা জানলেও সচেতনভাবে তেমন গুরুত্ব দেন না। তো আমাদের আজকের আলোচনায় আমরা মোটরসাইক্লিংয়ে কিছু লুকানো সত্য নিয়ে আলোচনা করবো, যেগুলি আসলেই আপনার জানা উচিত ও গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। তো চলুন তবে আজকের আলোচনায়।
মোটরসাইক্লিংয়ে কিছু লুকানো সত্য যা আপনার জানা উচিত
মোটরসাইক্লিংয়ে ফ্রিডম ফিলিং ও অ্যাড্রেনালিন রাশের যে অনন্য অনুভুতি পাওয়া যায় তা অন্য যেকোন স্পোর্টস বা এ্যাডভেঞ্চার এক্টিভিটির সাথে মেলানো যায় না। তাই মোটরসাইক্লিং সবসময়ই অনন্য এবং সেকারনেই মোটরসাইক্লিং প্রায় সবাই এতো পছন্দ করে। তবে মোটামুটি সবাই মোটরসাইক্লিং পছন্দ করলেও মোটরসাইক্লিংয়ের অনেককিছুই থাকে অনেকেরই অজানা। তো সবার জানার সুবিধার্থে সেই আপাত এড়িয়ে যাওয়া বিষয়গুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে দেয়া হলো, যা সত্যিই মোটরসাইক্লিং নিয়ে আপনাকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেবে।
মোটরসাইকেল চালানো আসলেই যথেষ্ট বিপজ্জনক
মোটরসাইক্লিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও লুকানো বা এড়িয়ে যাওয়া সত্যগুলির মধ্যে একটি হলো, মোটরসাইকেল রাইড নিঃসন্দেহে যথেষ্ট বিপজ্জনক একটি এক্টিভিটি। সাধারন চার চাকার গাড়ির বিপরীতে, মোটরসাইকেল একটি খোলা দুইচাকার বাহন। আর এতে গাড়ির মতো কোন কেবিন বা রাইডারের জন্য কোন সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই।
সুতরাং, মোটরসাইকেল রাইডাররা রাইডের সময় পারিপার্শ্বিক পরিবেশে পুরোপুরি উম্মুক্ত থাকেন। এমনকি পরিবর্তিত ও রুক্ষ আবহাওয়ায়ও তাদের পোশাক ছাড়া অন্য কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকে না। ফলে মোটরসাইকেল রাইডের সময় একজন রাইডার যেমন উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন, তেমনি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও তার আঘাত বা মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
মোটরসাইকেল মেইনটেন্যান্স অতীব গুরুত্বপূর্ণ
নিরাপদ ও সুখকর মোটরসাইক্লিংয়ের একটি লুকানো সূত্র হলো, ব্যবহৃত মোটরসাইকলটি সবসময় সময়মতো ও সঠিক মেইনটেন্যান্স করা। এটি বেশ সিরিয়াসভাবে একজন রাইডারের মানা উচিৎ। কেননা, একটি খোলা মেশিনারিযুক্ত বাহন হিসেবে সাধারন গাড়ির বিপরীতে মোটরসাইকেলের বেশ ঘন ঘন মেইনটেন্যান্স প্রয়োজন হয়।
আর সঠিক মেইনটেন্যান্সই একটি মোটরসাইকেলকে দীর্ঘদিন নিরাপদে ও নির্ঝঞ্ঝাটে চলতে সাহায্য করে। তাই একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর রাইডারদের নিয়মিত তাদের মোটরসাইকেলের যান্ত্রিক অবস্থা, বিভিন্ন ফ্লুইড লেভেল, টায়ার, ব্রেক, চেইন টেনশন ইত্যাদি পরীক্ষা ও সার্ভিস করা উচিত। এসব কাজ সত্যিকার অর্থে অবহেলা করার বিষয় নয়।
ওয়েদার কন্ডিশন রাইডিংকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে
অনেক রাইডারই তাদের চারপাশের ওয়েদার কন্ডিশন নিয়ে তেমন সচেতন থাকেন না। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হলো ওয়েদার কন্ডিশন একজন রাইডার এবং তার রাইডিং প্যাটার্ন তথা রাইডিংকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। প্রখর রোদ, বৃষ্টি, তুষার এবং উচ্চ বাতাসের চাপ রাইডিংকে যেমন কঠিন এবং বিপজ্জনক করে তুলতে পারে, তেমনি সাধারণ আবহাওয়ার কমবেশি এবং রোড কন্ডিশনও একজন রাইডের চালানোর ধরন ও মেজাজ মর্জিতে আমূল প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই প্রাত্যহিক রাইডে তো বটেই, লম্বা রাস্তায় বের হবার আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নেয়ার অভ্যাস থাকা উচিত, এবং পরিবর্তনশীল আবহাওয়া পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সবসময়েই সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও রাখা উচিত। তো সেই হিসেবে, সাধারন সেফটি গিয়ারের সাথে সাথে সঠিক রাইডিং গিয়ার, যেমন রেইন গিয়ার এবং শীতের পোশাক বাজে আবহাওয়া পরিস্থিতিতে রাইডারদের আরামদায়ক এবং নিরাপদ থাকতে সাহায্য করতে পারে।
গ্রুপ রাইডিং যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং
মোটরসাইকেল রাইডাররা বেশিরভাগ সময়েই প্রাত্যহিক রাইডে একা রাইড করে থাকেন। তবে অনেকেই লং-ট্রাভেল বা এ্যাডভেঞ্চার রাইডেও একা বের হতে পছন্দ বা সাচ্ছ্যন্দ বোধ করলেও নিঃসন্দেহে গ্রুপ মোটরসাইকেল রাইড যথেষ্ট মজার এবং মোটামুটি প্রায় সবার কাছেই উপভোগ্য ধরনের রাইড। আর মোটরসাইক্লিংয়ে গ্রুপ মোটরসাইকেল রাইড একধরনের সামাজিকতাও বটে। তবে সবকিছুর ওপরে গ্রুপ মোটরসাইকেল রাইড কিন্তু যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং।
মোটরসাইকেল গ্রুপ রাইডে রাইডারদের মধ্যে যথেষ্ট একাত্বতা ও অন্তত রাইডের সময় একধরণের আন্তসম্পর্ক থাকতে হয়। গ্রুপ রাইডে রাইডারদের কেবল তাদের আশেপাশের বিষয়েই সচেতন থাকতে হয়না না, বরং নিরাপদ রাইডিং নিশ্চিত করতে গ্রুপের অন্যান্য রাইডারদের সাথে কার্যকরভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়। আর নিজেকে অন্যান্য রাইডারদের স্বাচ্ছন্দ্যের স্তর ও দক্ষতার স্তরের সাথেও মিলিয়ে চলতে হয়। সেইসাথে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অনুভূতি ও ইগোটিক মনোভাব এড়িয়ে গ্রুপ রাইড সফল করতে সবার ত্যাগের মানসিকতাও অত্যন্ত জরুরী।
মোটরসাইক্লিং একটি ব্যয়বহুল শখ
সবশেষে বলতে হয়, এ্যাডভেঞ্চার মোটরসাইক্লিং অবশ্যই একটি ব্যয়বহুল শখ। কেননা, একটি মোটরসাইকেল কেনার যেমন প্রাথমিক খরচ রয়েছে, তেমনি মোটরসাইকেলের ইনস্যুরেন্স, গ্যাজেট এন্ড গিয়ার কেনা, মেইনটেন্যান্স, রিপেয়ার প্রভৃতির মতো চলমান খরচও রয়েছে। অধিকন্তু, সময়ের সাথে সাথে মোটরসাইকেল পার্সোনালাইজেশন, মডিফিকেশন, আপগ্রেড, এবং বাড়তি গ্যাজেট ইনস্টলেশন ইত্যাদির জন্যও একজন রাইডারের প্রচুর খরচ হয়। আর মোটরসাইকেল নিয়ে ঘোরাঘুরি ও ভ্রমণও প্রচুর খরচের ব্যাপার। সুতরাং, মোটরসাইক্লিং অবশ্যই একটি ব্যয়বহুল শখ।
সুতরাং বন্ধুরা, মোটরসাইক্লিং একটি আনন্দদায়ক ও উত্তেজনাপূর্ণ কর্মকান্ড এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এতে অনেক বিষয় রয়েছে যা সচরাচর অনেকের নজর এড়িয়ে যায় এবং সেসব বিবেচনা ব্যাতিরেকেই অনেকে মোটরসাইক্লিংয়ে জড়িয়ে পড়েন। তো সেরকমই কিছু বিষয আজ আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আশাকরি এই চ্যালেঞ্জগুলি বিবেচনা করে আপনারা মোটরসাইক্লিংয়ে জড়িত হবেন এবং আপনাদের সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটাবেন। সুতরাং সচেতন থাকুন, প্রস্তুত থাকুন, এবং নিরাপদে মোটরসাইকেল চালান, ধন্যবাদ।