TVS Apache RTR 160 4V SD ২০,০০০ কিলোমিটার রাইড - তানজীর
This page was last updated on 16-Jul-2024 02:22pm , By Raihan Opu Bangla
আমি তানজীর হোসেন । আমি খুলনার শিরোমনি, খানজাহান আলী থানায় বসবাস করি । বর্তমানে আমি একটি TVS Apache RTR 160 4V SD বাইক ব্যবহার করি । আজ আমি আমার TVS Apache RTR 160 4V SD বাইকটির ব্যপারে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
TVS Apache RTR 160 4V SD ২০,০০০ কিলোমিটার রাইড - তানজীর
আমার বাইকটি বর্তমানে আমি মোট ২০,০০০+ কিলোমিটার রাইড করেছি। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ১০ তারিখে আমি বাইকটি কিনেছিলাম। প্রথমত বাইকের প্রতি ভালো লাগা ছোট বেলা থেকে। বর্তমানে ব্যবসায়িক কাজে বাইক অনেক বেশি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ঘোরাঘুরি করার জন্য বাইকটা ব্যবহার করি।
আমি ২০১৯ সাল এর ফেব্রুয়ারীতে TVS Apache RTR 160 4V SD বাইকটি খুলনা টিভিএস অথরাইজড ডিলার পয়েন্ট নিউ মোটরসাইকেল মার্ট থেকে ২০৫০০০ টাকা দিয়ে ক্রয় করি । যেহেতু বাইকটি আগে থেকে পছন্দ ছিলো। আর আম্মুর পছন্দে কালো কালার এর বাইকটা নেই। বাইকটা কেনার পিছনে আমার আম্মু এবং বড় ভাইয়ের অবদান সব থেকে বেশি। আব্বু বাইক পছন্দ করে না।
কিন্তু আম্মুকে দিয়ে আব্বুকে রাজি করাই। এছাড়া আমার বন্ধুদেরও অনেক অবদান আছে আমার বাইক কেনার পিছনে। তারপর সরাসরি শো-রুমে গিয়ে বাইকটি ক্রয় করি।
প্রথম যখন TVS Apache RTR 160 4V SD বাইকটি আমি হাতে পাই সেই অনুভূতি বলে বুঝানো যাবে না। স্বপ্ন যখন বাস্তব এ রুপ নেয় তখন সেই অনুভূতি বলে বুঝানো যায়না। অনেক বেশি ভালো লাগা কাজ করছিলো।
আর তখন এই মডেলটি নতুন বের হয়েছিলো। আমার এলাকায় আমি প্রথম এই বাইকটি ক্রয় করি। তারপর কোথাও বের হলে অনেকে জিজ্ঞাসা করতো, কি বাইক, কত দাম অনেক কিছু। বাইকটা কোনো বাজারের পাশে রাখলে সব সময়ই ৩/৪ জন লোক কাছে এসে ঘুরে ঘুরে দেখতো। ব্যাপারটা খুবই ভালো লাগতো।
TVS Apache RTR 160 4V Test Ride Review In Bangla – Team BikeBD
TVS Apache RTR 160 4V SD সম্পর্কে সবাই কম বেশি জানেন। বাইকটির ব্রেকিং অনেক ভালো লেগেছে আমার কাছে। এবং কন্ট্রোল অনেক ভালো লেগেছে আমার কাছে। অনেকে বলেছিল RTR অনেক ভাইব্রশন করে, ব্রেকিং ভালো না, হালকা বাইক। কিন্তু আমি বাইক বিডি এর রিভিউ দেখে এই TVS Apache RTR 160 4V SD বাইকটা কিনি। আলহামদুলিল্লাহ বাইকটা আগের RTR এর থেকে অনেক স্মুথ ।
ব্রেকিং, কন্ট্রোলিং, রেডি পিকাপ সব অনেক ভাল ভাবে রিফাইন্ড করছে। সবদিক থেকে বিবেচনা করলে বাইকটির লুকস অনেক বেশি সুন্দর লেগেছে আমার কাছে। আমার বাইকটি এখন পর্যন্ত ৬টি ফ্রি সার্ভিস করিয়েছি নিউ মোটরসাইকেল মার্ট এর সার্ভিস পয়েন্ট থেকে। তারা অনেক যত্ন সহকারে বাইকের সার্ভিস করে দেয় । মাঝে মাঝে বিভিন্ন ফ্রি সার্ভিস ক্যাম্পের মাধ্যমে সার্ভিস পেয়ে থাকি।
তাদের সার্ভিস অনেক ভালো। এবং তাদের দক্ষ টেকনিশিয়ান গুলো অনেক যত্ন সহকারে বাইকের সার্ভিস করে দেয়। TVS Apache RTR 160 4V SD বাইকে ২৫০০ কিলমিটার পর্যন্ত চালানোর আগে মাইলেজ পেয়েছি ৩৫-৪০ । এরপরে সার্ভিসিং এবং ব্রেকিং পিরিয়ড শেষ হওয়ার পরে মাইলেজ পাচ্ছি ৩৮-৪২ ।
৪ ভাল্ব এর ইঞ্জিন এই জন্য মাইলেজ একটু কম। কিন্তু গিয়ার অনুযায়ী আরপিএম ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার মেইনটেইন করে চালালে ৪০+ মাইলেজ পাই। অতিরিক্ত হাই আরপিএম এ বাইক চালালে মাইলেজ ৩০-৩৫ এর মধ্যে পাই। বর্তমানে আমি প্রতি লিটার অকটেনে ৪০+ মাইলেজ পাচ্ছি। মাইলেজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। আমি আমার বাইকের সঠিক সময়ে নিয়মিত সার্ভিস করাই।
কোনো রকম সমস্যা হলে সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যাই এবং সমস্যা সমাধান করাই। আমি বাইক ওয়াশ করি কম, কিন্তু মুছে পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করি ।
সব সময় বাইকের টায়ারের হাওয়ার প্রেশার সঠিক রাখি এর ফলে ব্রেকিং মাইলেজ কনফিডেন্স সব কিছুই ঠিকঠাক থাকে । সব সময় সামনে ৩০ এবং পিছনে ৪০ হাওয়ার প্রেশার রাখি। নিয়মিত চেইন লুজ হলে টাইট করি, চেইন পরিষ্কার করে গিয়ার অয়েল ব্যবহার করি। আমি প্রথম থেকেই মতুল 10w30 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করছি । যার মুল্য ৫০০ টাকা।
৩ হাজার কিলোমিটার রাইড করার পরে আমি মতুল 7100 10w30 ফুল সেন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা শুরু করি। যার মূল্য ১২০০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে Shell Advance ইঞ্জিন অয়েলটি ব্যবহার করছি। আমি প্রতিবার ১৫০০-১৮০০ কিলোমিটার এর মধ্যে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি । এবং প্রতিবার অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করি। এছাড়া আমাদের বাইকের পার্টস এর ব্যবসা আছে, তাই যখন যেটা প্রয়োজন ঠিক করিয়ে নেই।
আমি এখনো পর্যন্ত ২০,০০০+ কিলোমিটার বাইকটি রাইড করেছি। আমি এর ভিতর দুইটি এয়ার ফিল্টার, হেডলাইট বাল্ব পরিবর্তন করেছি। সিট কভার লাগিয়েছি। লুকিং গ্লাস পরিবর্তন করেছি।
আমার বাইকে ২০০ সিসি লাল কালারের স্টিকার মডিফাই করা আছে। এছাড়া ২০০ সিসি এর মিটার শেড গ্লাস লাগিয়েছি। হেডলাইটে স্টিকার লাগিয়েছি। সাইলেন্সার গার্ড লাগিয়েছি। স্টিকার দিয়ে বাইকের ট্যাংকিতে আমার নাম লিখেছি। এবং ট্যাংকির সাদা অংশে লাল স্টিকার করেছি।
বাইকটা মনের মতো করে সাজিয়েছি। আমি বাইকটি নিয়ে সর্বোচ্চ ১৩৭ টপ স্পীড তুলেছি খুলনা সিটি বাইপাস রোডে। আমি তেমন জোরে বাইক চালাই না। আমার নিজের আয়ত্তে রেখে বাইক রাইড করি। সব সময় মিডিয়াম স্পিডে বাইক রাইড করি।
TVS Apache RTR 160 4V SD বাইকটির কিছু ভালো দিক -
- লুকিং
- কন্ট্রোল
- ব্রেকিং
- মাইলেজ
- টপ স্পীড
TVS Apache RTR 160 4V SD বাইকের কিছু খারাপ দিক-
- টার্নিং রেডিয়াস
- স্পিড অনুযায়ী এবিএস দেওয়া উচিৎ
- ওজন তুলনামূলক বেশি মনে হয়েছে
- টায়ার গ্রিপ কম
- মিটারে ৫-১০ স্পিড বেশি দেখায়
বাইকটি নিয়ে আমি গত ১৫ নভেম্বর ২০২০ খুলনা থেকে কুয়াকাটা প্রায় ৬০০+ কিমি একাই রাইড করেছি কোনো রকম সমস্যা ছাড়া । লং রাইড করে আমার কোনো রকম হাতে ব্যাথা, কোমরে ব্যাথা, কাধে ব্যাথা অনুভব করিনি।
লং রাইডে পিলিয়ন সহ খুব ভালোভাবে ট্যুর করতে পারছি। আমি TVS Apache RTR 160 4V SD বাইকটি সকল দিক থেকে পার্ফেক্ট মনে করি। আমি এখনো পর্যন্ত এই বাইকটি ব্যবহার করে অনেক হ্যাপি। আমি চেষ্টা করেছি আমার নিজের মতামত শেয়ার করার জন্য ।
আর আমি রিকমেন্ড করবো নেকেড স্পোর্টস বাইকের এর ভিতর এই বাইকটি আপনাদের ফার্স্ট চয়েস এ রাখার জন্য। বাইকের প্রতি ভালোবাসা দিক থেকে খুলনায় আমি Club RTR 4v Khulna BD নামে একটি গ্রুপ করেছি । আলহামদুলিল্লাহ গ্রুপটি খুবই ভালোভাবে চলছে। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ তানজীর হোসেন
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।