মোটরসাইকেলের আইকন হোন্ডা'র বড় হয়ে উঠা

This page was last updated on 27-Aug-2025 09:34am , By Md Kamruzzaman Shuvo

ছেলেটি বললো, আঙ্কেল-বিরাট এক হোন্ডা মিছিল!! বের হয়ে দেখলাম, মিছিলে প্রায় শতেক খানি মোটর সাইকেল, কিন্তু একটিও হোন্ডা নেই। দুয়েকটি ব্র্যান্ড চিনলেও-বাকী গুলো নাম না জানা কোম্পানীর বাইক। ঠিক এভাবেই বহু বছর ধরেই মোটর সাইকেল মানেই হোন্ডাকে বুঝানো হয় আমাদের দেশে। আর যিনি এই জনপ্রিয় যানটির তৈরী করেছিলেন, তার নামটি হচ্ছে 'সইচিরো হোন্ডা'!!

মোটরসাইকেলের আইকন হোন্ডা'র বড় হয়ে উঠা

Soichiro_Honda

জাপানের হামামাতসু ছোট শহরে তাঁতী মা আর কামার বাবার ঘরে জন্ম নেওয়া এক কিংবদন্তী-মিঃ হোন্ডা। বাবার একটি সাইকেল মেরামতের দোকান ছিল-ছোট্ট সইচিরো বাবাকে দোকানে সহায়তা করতো। সে সময় জাপানে একটি নিয়ম ছিল, বার্ষিক পরীক্ষার রিপোর্টটি ছাত্রদের দিয়ে দেওয়া হতো- আর তা প্রত্যেকের বাড়ী থেকে অভিভাবককে দেখিয়ে পারিবারিক-সীল মেরে পুনরায় স্কুলে জমা দিতে হতো। তিনি ভাল ছাত্র ছিলেন না, তাই নিজেই নকল সীল বানিয়ে, সীল মেরে জমা দিতেন। এই বিষয়টি ধরা পড়ার পর, বাবার কাছে তাকে কঠিন শাস্তি পেতে হয়েছিল।

১৯২২ সালে স্কুল শেষ করে তিনি চাকুরী খুজতে থাকেন এবং পেয়েও যান-রাজধানী টোকিওর একটি গাড়ী মেরামতের দোকান, 'আর্টো শুকাই' এ সহকারী হিসেবে। বয়স কম, কোন অভিজ্ঞতা নেই-কাজ শুধু ধোয়া-মোছা এবং ষ্টাফদের খাওয়া দাওয়া তৈরী। তবে মালিকের অনুমতি নিয়ে, তাদেরই অন্য একটি দোকানে রেসিং-কার ডিজাইনে সহযোগীতার কাজ করতে থাকে রাত-ভর।

Also read: হোন্ডা সিবি ট্রীগার ৪,০০০কিমি মালিকানা রিভিউ - ফজলে রাব্বি

১৯২৩ সালে এক ভুমিকম্পে দোকানের গ্যারেজে আগুন ধরলে, তিনি একাই অতি দামী ৩টি রেসিং-কার রক্ষা করে মালিকের নেক নজরে পড়ে যায়। তারপর থেকে মালিকের সঙ্গে সরাসরি রেসিং-কার ডিজাইনে সহযোগীতার কাজ করতে থাকে।

১৯২৪ সালে জাপান রেসিং-কার প্রতিযোগীতায় ১ম স্থান অধিকারী টিমে মেকানিক হিসাবে ছিল হোন্ডা। পরবর্তী ০৫ বছরে হোন্ডা 'আর্টো শুকাই' কে টোকিওর একটি জনপ্রিয় সার্ভিস সেন্টারে পরিনত করেন। সার্ভিস সেন্টারটির বেশ কয়েকটি শাখা খোলা হয় এবং এর একটি শাখায়, প্রধান হিসাবে কাজ শুরু করেন ২১ বছর বয়সী হোন্ডা। কিন্তু তার ভ্রত ছিলো অনেক দূর পাড়ি দেওয়ার, তাই চাকুরীর পাশাপাশি নিজের সব জমানো টাকা খরচ করে, এমনকি স্ত্রীর গহনা বন্ধক রেখে, গাড়ীর পিষ্টন বানানো শুরু করেন। কিন্তু তার বানানো পিষ্টনগুলো তেমন ভাল হচ্ছিলো না-তিনি উপলব্ধি করলেন তার কারিগরী জ্ঞানটুকু আরো বাড়ানো দরকার। তাই তিনি এ বয়সেও একটি টেকনিক্যাল স্কুলে ভর্তি হন।

Soichiro-Honda

১৯৩৬ সালে একটি গাড়ী দুর্ঘটনায় হোন্ডার একটি হাত ভেঙ্গে যায় এবং হাসপাতালে শুয়ে থেকে তিনি ২টি খারাপ সংবাদ শুনতে-১ম টি, টয়োটা কোম্পানীতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো, তার এতদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) পিষ্টনের মধ্যে মাত্র ৩টি কোয়ালিটি কন্ট্রোলে পাশ করে এবং ২য়টি তাকে টেকনিক্যাল স্কুল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার খবর।

Also Read: Honda Rebel 500 price in Bangladesh

সুস্থতার পর, ভেঙ্গে না পড়ে ১৯৩৭ সালে হোন্ডা নিজেই 'টোকাই সিক' নামে একটি কোম্পানী দিয়ে নতুন উদ্যোমে পিষ্টন বানানো শুরু করেন এবং কোয়ালিটি ভাল করে, সেই টয়োটা কোম্পানীতেই সরবরাহ করতে থাকেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধকালীন সময়ে, শুধু টয়োটাতেই প্রায় ৪০% পিষ্টন সাপ্লাই করতেন। কিন্তু ১৯৪৫ সালে, যুদ্ধের শেষের দিকে তার কারখানার শহরে আমেরিকান বিমান বাহিনী বোমা ফেলে প্রচুর ক্ষতিসাধন করে। ফলে তিনি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি টয়োটা কোম্পানীর কাছে বিক্রি করে দেন মাত্র সাড়ে চার লাখ ইয়েনে। তারপর বছরখানিকের জন্য পর্দার আড়ালে চলে যান।

১৯৪৬ সালে ফিরে এসে প্রতিষ্ঠা করেন 'হোন্ডা টেকনোলজি রিসার্স ইনষ্টিটিউট' পরবর্তী ২ বছরে যাকে 'হোন্ডা মোটর কোম্পানী'তে রূপান্তর করেন। তিনি একটি সাধারন বাই-সাইকেলে ছোট একটি ইঞ্জিন লাগিয়ে তৈরী করেন হোন্ডার ১ম মোটর সাইকেল, যার তেলের ট্যাংকটি ছিল ছোট একটি পানির বোতল দিয়ে তৈরী।

সেই যে শুরু, তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। আজ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই যার জয় জয়কার শুধু মোটর সাইকেল নয়, গাড়ী, জেনারেটর, মেরিন মেশিনারিজ, এমনকি জেট-বিমানও তৈরী করছে এই কোম্পানী।

ব্যর্থতা মানে নিচে পড়ে যাওয়া নয় এ যেন হয়, নব-উদ্যোমে প্রবলতর করে নিজেকে সাজানো সামনে এগুনো!!

(অনুবাদ : মাহবুব লতিফ-টরেন্টো, কানাডা, সুত্র: উইকিপিডিয়া)