বাইকার দেশের সম্পদ , দেশের সমস্যা না - দেশে বাইকারদের অবদান
This page was last updated on 30-Jul-2024 05:54pm , By Ashik Mahmud Bangla
বর্তমান সময়ে বাইকার আমাদের সমাজের সবচেয়ে আলোচিত একটা শব্দ। আমরা সবাই জানি সম্প্রতি বাইকারদের নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা চলছে , এর ফলে এবার ঈদে মহাসড়কে বাইক চালানোর উপর বেশ কড়াকড়ি ছিলো। তবে ধন্যবাদ বাংলাদেশ পুলিশকে এবারের ঈদের যাত্রায় বাইকারদের পাশে থাকার জন্য। আমাদের সমাজের কিছু কিছু মানুষ বাইক সম্পর্কে কোন কিছু না জেনে অনেক অবান্তর কথা বলছে। কিন্তু বাইকার দেশের কত বড় সম্পদ সেটা এই মানুষগুলো জানেই না। আজ আমি আলোচনা করবো বাইকার কিভাবে দেশের সম্পদ সেই সম্পর্কে।
বাইকার দেশের সম্পদ , দেশের সমস্যা না - দেশে বাইকারদের অবদান
১- রাজস্ব খাতে বাইকারদের অবদান
সবার প্রথমে বাইকাররা দেশের রাজস্ব খাতে অনেক বড় একটা ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে বাইকের বাজার মূল্যের তুলনা করেন তাহলে দেখতে পাবেন আমাদের দেশে বাইকের দাম তুলনা মূলক অনেক বেশি। এর প্রধান কারন হচ্ছে আমরা আমাদের দেশে যে বাইকগুলো ব্যবহার করে থাকি বাইকগুলো যদি CBU হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে বাইকের সাথে ১৫৩% ট্যাক্স যুক্ত করে বাইকের দাম নির্ধারণ করা হয়। বাইক যদি CKD হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ৮৪% থেকে ৯১% ট্যাক্স যুক্ত করে বাইকের দাম নির্ধারণ করা হয়। আর আমরা যখন বাইক কিনে থাকি তখন কিন্তু আমরা বাইকের নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করেই বাইক কিনি। এছাড়াও ট্যাক্স টোকেন , মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ আমরা টাকা জমা দিয়ে থাকি। বর্তমান সময়ে দেশে বাইকের সংখ্যা যদি আপনি হিসাব করেন তাহলে সেটা অন্য যে কেনো যানবাহনের তুলনায় অনেক বেশি। এর অর্থ হচ্ছে বাইকাররা দেশের রাজস্ব খাতে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে।
এখানেই কিন্তু শেষ না ,পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কথা আমাদের সবার মনে আছে। উদ্বোধনের পর কি সংখ্যক বাইকার ঘুরতে গিয়েছিলো সেটা আমাদের কারও কিন্তু অজানা না। প্রতি বাইকার যদি ১০০ টাকা করে টোল দিয়ে থাকে তাহলে যে সংখ্যক বাইক উপস্থিত ছিলো সেটা মনে রাখার মতোন। আমরা বাইকাররা রাস্তায় অনেক বেশি অবহেলিত, কিন্তু আমরা দেশের অনেক খাতেই কিন্তু ভূমিকা রাখছি।
২- পর্যটন খাতে বাইকারদের অবদান
একটা সময় ছিলো যখন ভ্রমণ জিনিসটা আমাদের দেশে খুব বেশি জনপ্রিয় ছিলো না। কিন্তু সেই সময়টা এখন পরিবর্তন হয়েছে ,বর্তমানে আমাদের দেশে অসংখ্য বাইক ট্রাভেলিং গ্রুপ আছে। যারা ট্রাফিক আইন মেনে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করে থাকে। শুধু ভ্রমণে তাদের কাজ সীমাবদ্ধ থাকে না , তারা সোস্যাল মিডিয়াতে ভিডিও এবং ছবির মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর জায়গাগুলো বহি বিশ্বের সামনে তুলে ধরছে। এতে করে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে বাইকাররা অনেক বড় ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশে এমন অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে যে জায়গাগুলোতে আপনি গাড়ি নিয়ে চাইলেই যেতে পারবেন না, হয়তো আপনার পায়ে হেটে যেতে হবে অথবা বাইক নিয়ে যেতে হবে।
আর বাইকাররা এডভেঞ্চার অনেক পছন্দ করে , তাই তারা বাইক নিয়ে ছুটে যায় দূর্গম অনেক গন্তব্যে। এতে করে নতুন নতুন জায়গায় পর্যটন সম্ভাবনার সূচনা হয়। একটা সময় ছিলো যখন বাইরের দেশ থেকে বাইক নিয়ে বাংলাদেশে বেড়াতে আসবে এমনটা চিন্তা করা যেতো না , কিন্তু বাংলাদেশের বাইকারদের কারনে বর্তমানে বাইরের দেশ থেকে অনেক বাইকার বাংলাদেশে ভ্রমণে আসছে। এতে করে বাইরের দেশের সামনে আমাদের দেশের ভাবমূর্তির ও অনেক উন্নয়ন হচ্ছে।
৩- দেশের দূর্যোগে বাইকারদের অবদান
বাংলাদেশের বাইকিং ক্লাব নিয়ে আমাদের সমাজের একটা শ্রেণীর মানুষের অনেক মাথা ব্যাথা। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের এই বাইকিং গ্রুপগুলো দেশের দূর্যোগে মানুষের পাশে গিয়ে দাড়াচ্ছে। আপনারা যদি বাইকারদের এক্টিভিটি ভালোভাবে খেয়াল করেন তাহলে দেখতে পাবেন বর্তমান সময়ে কোন ট্রাজিডি হউক অথবা প্রাকৃতিক দূর্যোগ, বাইকাররা কিন্তু নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করে থাকে।
৪- আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নয়নে বাইকারদের অবদান
সমাজের কিছু মানুষ বলে আমাদের দেশের বাইক নাকি মহাসড়ক এর জন্য উপযুক্ত না। অথচ বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বাইকাররা বাংলাদেশের মহাসড়ক অতিক্রম করে বাংলাদেশ থেকে রেজিষ্ট্রেশন করা বাইক নিয়ে বহি বিশ্বে ভ্রমণ করে বেড়াচ্ছে। অনেক বাইকার আছেন যারা সফলভাবে ইন্টারন্যাশনাল ট্যুর সম্পন্ন করেছেন। বাংলাদেশের একটা বাইক নিয়ে বহি বিশ্বে ভ্রমণ করা কতটা গর্বের ব্যাপার সেটা তো সবাই বুঝবে না। জীবনের লম্বা একটা সময় এসি গাড়ি নিয়ে ছুটে চলা মানুষেরা কখনো বাইকারদের আবেগ বুঝতে পারবে না। বাংলাদেশের পতাকা যুক্ত একটা বাইক যখন বহি বিশ্বে ছুটে চলে তখন সেই সব দেশের সামনে আমাদের প্রিয় দেশটা নতুনভাবে রিপ্রেজেন্ট হয়। এই সব আন্তর্জাতিক ট্যুরের মাধ্যমে এক দেশের বাইকারদের সাথে আরেকদেশের বাইকারদের একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। এতে করে আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির উন্নয়ন হয়।
৫-জীবনকে সহজ করতে বাইকারদের অবদান
আপনি যদি কয়েকবছর পিছে ফিরে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন,সেই সময়টাতে ঢাকা শহরে চলাচল কতটা কষ্ট সাধ্য ছিলো। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে গণপরিবহন পাওয়া যেতো না , সিএনজি ওয়ালাদের সিন্ডিকেট এর জন্য সাধারণ মানুষের পক্ষে সিএনজি তে যাতায়াত করা সম্ভব হতো না।
দেশে যেদিন থেকে রাইড শেয়ারিং চালু হলো ঠিক তখন থেকে এই চিত্র সম্পূর্ণ বদলে গেলো। এখন আমাদের দেশের অনেক মানুষের চলাচলের অন্যতম বাহন হচ্ছে রাইড শেয়ারিং, একজন বাইকার যেমন রাইড শেয়ারিং করে দেশের বেকারত্বের হার কমাচ্ছে ঠিক তেমনি এই সেবার মাধ্যমে মানুষের জীবন অনেক সহজ হয়ে উঠেছে।
৬- আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সভ্য গোষ্ঠীঃ
বর্তমান সময়ে আমরা যারা বাইক ব্যবহার করে থাকি তাদেরকে একটা গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে বলতে হয় আমরা আমাদের দেশের সবচেয়ে সভ্য গোষ্ঠী । কারন আপনি যদি খেয়াল করেন তাহলে দেখতে পাবেন গণপরিবহন শ্রমিক এবং অন্যান্য সংসঠণ যখন কিছু থেকে কিছু হয় তখন তারা মাঠে নেমে পরে , রাস্তা বন্ধ করে আরও কত কিছু। কিন্তু আমাদের দেশের এতো সংখ্যক বাইকার থাকার পরও আমরা দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল , আমাদের নিয়ে যখন কোন আইনজারী করা হয় আমরা সেটা সভ্য গোষ্ঠী মতোন মেনে নেই। আমরা বাইকারা জানি এবং মানি দেশ এবং দেশের মানুষের সমস্যা করা কোন সমাধান না।
কখনো যদি কোন আদেশ নিয়ে আমাদের সমস্যা হয় আমরা সেটা শান্তিপূর্ণ সমাধান করার চেষ্টা করি। শুধু তাই না আপনি যদি ঢাকা শহরের দিকে ভালোভাবে খেয়াল করেন তাহলে দেখতে পাবেন সব বাইকারের মাথায় হেলমেট আছে , বাইকের সব ডকুমেন্ট আপডেট আছে। অর্থাৎ আমরা বাইকাররা আইনের প্রতি অনেক বেশি শ্রদ্ধাশীল। শুধু তাই না ঢাকা শহরের অন্যান্য যানবাহনের সাথে বাইকগুলোর তুলনা করেন তাহলে দেখবেন বাইকের ফিটনেস অনেক যানবাহনের তুলনায় ভালো আছে। আমাদের বাইকগুলোতে ব্যাক লাইট, ইন্ডিকেটর লাইট সব কিছুই থাকে। তাই আমাদের আইন মেনে সব জায়গার চলাচলের অধিকার থাকাটা খুব জরুরি। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সভ্য একটা গোষ্ঠী একটা দেশের জন্য অনেক বড় সম্পদ।
আমাদের দেশে বাইকারদের অবদান বলে শেষ করার মতোন না ,আমি তো মাত্র কয়েকটা দিক তুলে ধরলাম। বাইকার দেশের সম্পদ , আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটা গোষ্ঠী কখনো দেশের সমস্যার কারণ হতে পারে না। আশাকরি আমাদের দেশের বাইকার ভাইয়েরা এই আর্টিকেলটি বেশি বেশি শেয়ার করবেন , যাতে করে বাইকারদের অবদান সম্পর্কে আমাদের দেশের সব শ্রেণীর মানুষ জানতে পারে।