বন্যার পানিতে মোটরসাইকেল ডুবে গেলে কি করবেন?
This page was last updated on 29-Aug-2024 06:56pm , By Saleh Bangla
ঋতু বৈচিত্রের এই বাংলাদেশে বর্ষাকালে হঠাৎ বন্যা একটি সাধারণ সমস্যা। বর্তমানে এদেশের নদী-নালা অনেকটা ভরাট হয়ে যাওয়ায় উজানে হওয়া হঠাৎ প্রবল বৃষ্টির পানিতে নিম্নাঞ্চলে সৃষ্ট বন্যায় আমাদের অনেকেরই বসতবাড়ি ডুবে যাচ্ছে। সেইসাথে হয়তো অনেকেরই শখের মোটরসাইকেলটিও বন্যার পানিতে আংশিক বা পুরোপুরি ডুবে গেছে। এমতাবস্থায় বন্যার পানিতে মোটরসাইকেল ডুবে গেলে পরবর্তীতে কি করণীয় সেই বিষয়ে পরামর্শ নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা। তো চলুন সেই আলোচনায়।
বন্যার পানিতে মোটরসাইকেল ডুবে গেলে কি করবেন?
সাধারনত একটি স্তর পর্যন্ত বন্যার পানি বা জমে থাকা পানিতে কোন মোরসাইকেল ডুবে গেলে তাৎক্ষনিক তেমন কোন ক্ষতি হয় না। এতে দ্রুত মোটরসাইকেল চালিয়ে বের হয়ে যাওয়া যেতে পারে। যেমন: মোটরসাইকেলের এয়ার-ফিল্টার ইনলেট, একজষ্ট ভালভ বা হেডার, ও স্পার্ক-প্লাগ লেভেলের নিচে পর্যন্ত বন্যার পানি থাকলে মোটরসাইকেল চালানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে একজষ্ট মাফলার ডুবে গেলেও সমস্যা হয় না। তবে উল্লেখিত লেভেলে বা তার উপরে পানি চলে আসলে অবশ্যই তাতে মোটরসাইকেল চালানো যাবে না।
বরং এরকম ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল কিছুক্ষন পানিতে ডুবে থাকলেও সেটি চালানোর আগে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। আর যদি দীর্ঘসময় ধরে কোনো মোটরসাইকেল উপরে উল্লেখিত লেভেলের বেশি গভীর পানিতে নিমজ্জিত থাকে তবে সেই মোটরসাইকেলটি পুনরায় চালানোর আগে অবশ্য অবশ্যই কিছু সতর্কতামূলক কর্মপন্থা অবলম্বন করতে হয়। নয়তো পানিতে ডুবে থাকা সেই মোটরসাইকেলটি চালাতে গেলে সেটির বড় কোন ক্ষতি হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। তো চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক বন্যার পানিতে মোটরসাইকেল অনেকটা ডুবে থাকলে কি কি করবেন সেই আলোচনায়।
মোটরসাইকেলের ক্ষতি নির্নয় করা
বন্যার পানিতে মোটরসাইকেল ডুবে গেলে প্রাথমিক কাজ হলো সেটিকে পানি থেকে তুলে সরিয়ে শুকনো কোনো স্থানে নিয়ে আসা। তারপর সেটিকে ভালোভাবে নিরিক্ষা করে দেখতে হবে যে সেটি আসলে কতটা পানিতে তলিয়ে ছিলো। যদি সেফটি লেভেল তথা এয়ারফিল্টার ইনলেট, একজষ্ট হেডার, ও স্পার্ক-প্লাগ লেভেলের নিচে পর্যন্ত তলিয়ে গিয়ে থাকে তবে সাধারন পরিস্কার কার্য শেষ করে বিভিন্ন স্থান লুব করেই মোটরসাইকেলটি চালু করা যেতে পারে।
তবে এর আগে ব্যাটারী,ইলেকট্রিক্যাল লাইন, ও ব্রেক গুলি পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরী। আর যদি বন্যার পানিতে মোটরসাইকেলাটি সেফটি লেভেলের উপরে বা তার বেশি পরিমান তলিয়ে গিয়ে থাকে, বা অনেকটা সময় ডুবে থাকে, তবে তার জন্য মোটরসাইকেলটিকে বেশ বিস্তৃত সার্ভিস করানো জরুরী। আর এই সার্ভিস ও মেইনটেন্যান্সগুলো নিজে নিজেও করা যেতে পারে অথবা সাধারণ ওয়ার্কশপেও করিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তো মোটরসাইকেল এরকম অবস্থায় ডুবে থাকলে তা সচল করতে করনীয়গুলো দেখে নেওয়া যাক।
ডুবে যাওয়া মোটরসাইকেল সচল করতে করনীয়
>> কোন মোটরসাইকেল তার সেফটি লেভেলের বেশি পানিতে ডুবে গেলে বা ডুবে থাকলে সেটিকে পানির বাইরে তুলে শুকনো স্থানে নিয়ে আসতে হবে। এসময় কোনভাবেই মোটরসাইকেলটির ইঞ্জিন স্টার্ট করার চেষ্টা করা যাবে না। কেননা তাতে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
>> দ্বিতীয়ত মোটরসাইকেলটির ব্যাটারি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে। পরবর্তীতে ব্যাটারীটি পরিস্কার করে শুকিয়ে নিয়ে ভালোভাবে চেক করতে হবে। সঠিক চার্জ নিশ্চিত করে রাখতে হবে।
>> মোটরসাইকেলটিকে যথাসম্ভব পরিস্কার করে সেটি শুকানোর সুযোগ দিতে হবে। এরই সাথে মোটরসাইকেলের বডি-প্যানেল যথাসম্ভব খুলে ইলেকট্রিক্যাল ওয়্যারিংগুলোও পরীক্ষা করতে হবে।
>> ইলেকট্রিক্যাল ওয়্যারিং ও তার সাথের ইলেকট্রিক্যাল কম্পোনেন্টগুলোতে এয়ার-ব্লোয়ার দিয়ে পানি ঝরিয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। কোন লুজ কন্ট্যাক্ট বা মরচে ধরা প্রান্ত থাকলে তা পরিস্কার করে ঠিক করে নিতে হবে। এরপর ব্যাটারী কানেকশন করা যেতে পারে।
>> পরবর্তী ধাপে মোটরসাইকেলের এয়ার-ফিল্টার খুলে ফিল্টার বক্সে পানি প্রবেশ করেছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে। যদি পানি ঢুকে থাকে, তবে তা মুছে শুকিয়ে নিয়ে নতুন এয়ার-ফিল্টার লাগাতে হবে। সেইসাথে কার্বুরেটর বাইক হলে কার্বুরেটর ড্রেইন নাট খুলে তা ড্রেইন করে নিতে হবে।
>> মোটরসাইকেলটি ফুয়েল ট্যাঙ্ক পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকলে অবশ্যই ট্যাঙ্কের পুরো তেল বের করে ফেলে তা ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। তাতে নতুন তেল ভরতে হবে। আর কার্বুরেটর বাইক হলে সেই নতুন তেলেই কার্বুরেটর ভালোভাবে ড্রেইন করতে হবে।
>> এসময়ে মোটরসাইকেলের স্পার্ক-প্লাগ খুলে তার অবস্থাও নিশ্চিত হতে হবে। কোন আশংকা থাকলে স্পার্ক-প্লাগ বদলে ফেলাটাই সবচেয়ে নিরাপদ। আর সেইসাথে নতুন প্লাগ লাগানোর আগে তা কিছুক্ষণ খুলে রেখে কম্বাশ্চন চেম্বারের ভেতরটা শুকানোর সুযোগ দেওয়াটাও ভালো।
>> আর ইঞ্জিনের পিষ্টন যাতে সিলিন্ডারের দেয়ালে কোন কারণে জ্যাম না হয়ে থাকে সেজন্য সতর্কতামূলকভাবে প্লাগ-হোল দিয়ে কয়েকফোটা ইঞ্জিনওয়েল ভেতরে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে।
>> এর পরের ধাপ হলো মোটরসাইকেলে ইঞ্জিনের ক্রাঙ্ককেসের ভেতর পানি ঢুকেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া। একাজের জন্য মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন-লুব পুরোইটাই ড্রেইন দিতে হবে। ওয়েল-ফিল্টার থাকলে তাও খুলে নিতে হবে। ড্রেইন করা লুব যদি সাদাটে ঘোলা মনে হয়, তবে বুঝে নিতে হবে তাতে পানি প্রবেশ করেছে।
>> মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের ভেতর পানি ঢুকেছে কিনা তা নিশ্চিত হলে ইঞ্জিন-লুব পুরোইটাই ফেলে দিতে হবে। আর প্রেশার-এয়ার ব্যবহার করে ভেতরের তেল-পানি যতটা সম্ভব বের করে দিতে হবে। এসময়ে সবচেয়ে ভালো হয় একবার ইঞ্জিন ফ্লাশ ওয়েল ব্যবহার করা। আর তারপর অবশ্যই নতুন একটি ওয়েল ফিল্টার লাগিয়ে নেওয়াটাও জরুরী।
>> এরপর মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনে সম্পূর্ণ নতুন লুবওয়েল ভরে ব্যাটারী ও ইলেকট্রিক্যাল সংযোগ সঠিকভাবে নিশ্চিত করে তারপর মোটরসাইকেল ইঞ্জিন স্টার্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে মোটরসাইকেলটিতে কিকস্টার্টার থাকলে প্রথমে সেটি ব্যবহার করাই ভালো
তো বন্ধুরা মোটামুটি এই হলো বন্যার পানিতে মোটরসাইকেল ডুবে গেলে সেটিকে সচল করতে প্রাথমিক করনীয়। এতে সাধারণভাবে মোটরসাইকেলটি চলার উপযোগী হবে যদিনা কোন ইলেকট্রিক পার্টস নষ্ট হয়ে থাকে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে কোন মোটরসাইকেল বন্যার পানির তলায় ডুবে থাকলে সেটিকে ভালো কোন সার্ভিসসেন্টারে নিয়ে ভালোভাবে সার্ভিস করানোই শ্রেয়।
কেননা, দীর্ঘ সময় ধরে পানিতে ডুবে থাকার ফলে মোটরসাইকেলের ইলেট্রিক যন্ত্রাংশ, কেবল, ব্রেক সেটআপ, ট্রানসমিশন সিস্টেম, ও পিভট বিয়ারিংসহ বিভিন্ন ধাতব অংশের ক্ষতি হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার মোটরসাইকেলের জন্য একটি ভালো ও ফুল সার্ভিসই সেটিকে পুনরায় পূর্ণমাত্রায় কর্মক্ষম করে তুলতে পারে। সেইসাথে আপনিও নিশ্চিন্ত হতে পারেন আপনার শখের বাহনটির পারফর্মেন্স নিয়ে, ধন্যবাদ।