বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল (দর্শনীয় স্থানগুলো)- বিস্তারিত
This page was last updated on 30-Jul-2024 06:54am , By Ashik Mahmud Bangla
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল এবং Mountain in Bangladesh নিয়ে জানার ইচ্ছা অনেক মানুষের আছে , অনেক বাইকাররা আছেন যারা একটু সুযোগ পেলেই এখন বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল এর দিকে ঘুরতে চলে যান। আজকের আর্টিকেলে আমি বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল এর দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল (দর্শনীয় স্থানগুলো)- বিস্তারিত
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে জানতে গেলে সবার আগে আমাদের জানতে হবে বাংলাদেশের বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল কয়টি অথবা বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা কয়টি।
বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা কয়টি?
বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা ৩ টি , রাঙ্গামাটি , বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি, আর এই ৩ জেলা নিয়ে গঠিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। এই এলাকাগুলো পাহাড় ও উপত্যকায় পূর্ণ বলে এর নামকরণ হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম।
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল এর দর্শনীয় স্থানগুলোঃ ( Mountain in Bangladesh )
১- চিম্বুক পাহাড় ( Chimbuk Hill Bandarban )
বান্দরবানের অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে চিম্বুক পাহাড় একটি, এই পাহাড়ের সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য লেখে প্রকাশ করার মতো না। Chimbuk Hill কে বাংলার দার্জিলিং হিসেবেও ডাকা হয়ে থাকে। যাত্রাপথের আঁকা-বাঁকা রাস্তা আপনার ভ্রমণকে রোমাঞ্চিত করবে। আর নিচ দিকে তাকালে মনে হবে আপনি সাদা মেঘের মাঝখানে ভেসে বেড়াচ্ছেন।
২- তাজিংডং পাহাড় ( Tazing Dong )
স্থানীয়দের ভাষায় তাজিং শব্দের অর্থ বিশাল আর ডং অর্থ পাহাড় অর্থাৎ তাজিংডং মানে বিশাল পাহাড়। বালাদেশের সর্বোচ্চ পাহাড় কিন্তু তাজিংডং পাহাড়, আপনি যদি সেখানে যান তাহলে দেখতে পাবেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি আর তাদের কাছে শুনতে পাবেন প্রাকৃতিক পরিবেশে তাদের টিকে থাকার গল্প। পাহাড়ের যে দিকেই তাকাবেন আপনি অবশ্যই মুগ্ধ হবেন।
৩- স্বর্ণ মন্দির ( Bandarban Golden Temple )
সোনালী রং এর মন্দিরটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে জায়গাটি তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। মন্দিরটির নির্মাণ শৈলী ও আধুনিক স্থাপত্য নকশার জন্য পর্যটকদেরকে আকর্ষণ করে। এখান থেকে আপনি সাঙ্গু নদী এবং তার পারিপার্শ্বিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
৪- চাকমা রাজার রাজবাড়ি
ঐতিহ্যবাহী রাজপুণ্যাহ অনুষ্ঠান দেখতে যেতে পারেন চাকমা রাজার বাড়িতে, নববর্ষের শুরুতেই একসঙ্গে দুটি অনুষ্ঠানই চলতে থাকে এখানে। রাজবন বিহারের পাশেই চাকমা রাজার রাজবাড়ি অবস্থিত, রাজবন বিহার ও চাকমা রাজার বাড়ির মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা হ্রদের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
৫- কেওক্রাডং ( Keokradong )
শীতের মৌসুমে রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষেরা বেশি ছুটে যায় কেওক্রাডং দেখতে, আপনিও অবাক হয়ে যাবেন সেখানের অপরূপ সৌন্দর্যে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই অঞ্চল, ছোটবড় পাহাড়, ঘন জঙ্গল আর বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখিতে ভরা দুর্গম এলাকাটিতে আরও রয়েছে ঝর্ণাধারা, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ এবং আকাশে মেঘের লুকোচুরি। সব মিলে কেওক্রাডং আপনার মন রিফ্রেশ করে দিবে।
৬- আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র
ব্যতিক্রমধর্মী এক পর্যটক স্থান হচ্ছে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, খাগড়াছড়ি যাওয়ার সময়ই আপনার চোখে পড়বে পর্যটন এই কেন্দ্রটি। আপনি যখন পর্যটন কেন্দ্রটির সামনে দাড়াবেন আপনি ভিতরে প্রবেশ করার লোভ সামলাতে পারবেন না,পর্যটন কেন্দ্র থেকে দূরে তাকালেই দেখতে পাবেন খাগড়াছড়ি শহর।
৭- শান্তিপুর অরণ্য কুটির
বিশাল অরণ্যের মাঝে এক কুটির, প্রচলিত আছে ভিক্ষুরা নিরিবিলি পরিবেশে প্রাকৃতিক পরিবেশে ধ্যান করার জন্য কুটিরটি ব্যবহার করতেন। এটি মূলত একটি বৌদ্ধ মন্দির। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তিটি এখানেই রয়েছে। জায়াগটি সবার জন্যই উন্মুক্ত, সব ধর্মের লোকদের অবার যাতায়াত রয়েছে সেখানে।
৮- নীলাচল
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল এর নাম আসবে আর নীলাচল এর নাম আসবে না তা তো হবে না, বান্দরবান শহরে চোখবুলিয়ে নিতে চাইলে যেতে পারেন নীলাচল। নীলাচলকে অনেকেই স্বর্গভূমি হিসেবেই ডেকে থাকেন, নীলাচলের নির্মল বাতাসে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য আপনাকে এক স্বর্গীয় অুভূতি এনে দিবে।পর্যটকদের থাকার জন্য নীলাচলে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
৯- নীলগিরি
নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রটি বাইকারদের কাছে বেশ জনপ্রিয়, কারণ এটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এখানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করে দিবে। এখানে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে পারবেন শীতকালের মিষ্টি রোদ, বর্ষাকালে আকাশের গর্জন, বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক পরিবর্তন, যা আপনাকে সারা বছরই নীলগিরি যাওয়ার জন্য আকর্ষণ করবেই।
১০- টুকটুক ইকো ভিলেজ
পাহাড় চূড়ায় তৈরি করা হয়েছে টুক টুক ইকো ভিলেজ, যেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনুভব করবেন হিমেল বাতাসের একটা অন্য রকম ধাক্কা। সামনে তাকালেই দেখতে পাবেন স্বচ্ছ পানি আর পানির মাঝে জেগে উঠেছে সবুজ পাহাড়। কাপ্তাই হ্রদে নৌভ্রমণ করে ক্লান্ত হয়ে গেলে বিশ্রাম ও বিনোদনের জন্য চলে যান টুক টুক ইকো ভিলেজের রেস্তরাঁয়। সেখানে অনেক রকম খাবারের ব্যবস্থা আছে , এখানে দেশীয় এবং আদিবাসীদের প্রিয় খাবার পাওয়া যায়।
১১- উপজাতীয় টেক্সটাইল মার্কেট
রাঙ্গামাটি ভ্রমণে গিয়ে যারা উপজাতিদের তৈরি বিভিন্ন ধরনের পণ্য কিনতে চান, তারা যেতে পারেন উপজাতীয় টেক্সটাইল মার্কেটে। সেখানে উপজাতিদের তৈরি বিভিন্ন ধরনের পোশাক পাওয়া যায়। এছাড়া আরও পাওয়া যায় উপজাতিদের হস্ত নির্মিত বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। রাঙ্গামাটি জেলার তবলছড়ির কাছাকাছি গেলেই উপজাতীয় টেক্সটাইল মার্কেট।
১২- কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান
পর্যটকরা নদী, পাহাড় আর সবুজের সহাবস্থান দেখতে ভীড় করে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে। এখানে রয়েছে সেগুন, পারুল, গামারী আর কড়ই গাছের সারি । রাঙ্গামাটি থেকে কাপ্তাই ভ্রমণ করতে পারেন এবং কাপ্তাইয়ে থাকা-খাওয়ার জন্য বিভিন্ন আবাসিক হোটেল রয়েছে।
১৩- পর্যটন মোটেল ও ঝুলন্ত সেতু
রাঙ্গামাটির শেষ প্রান্তে কর্ণফুলির কোল ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স। সেখানে পর্যটন মোটেল আছে, বর্তমানে মোটেল এলাকাটি পরিচিতি পেয়েছে ডিয়ার পার্ক নামে। মোটেল থেকে দেখতে পাবেন লাল পাহাড়ের সারি কোথাও উঁচু আবার কোথাও নিচু হয়েছে। সেখানো আরও রয়েছে তিনশতাধিক দীর্ঘ ঝুলন্ত সেতু। সেতুটি পরিচিতি পেয়েছে সিম্বল অব রাঙ্গামাটি হিসেবে।
১৪- আলুটিলার সুড়ঙ্গ বা রহস্যময় সুড়ঙ্গ
পর্যটন কেন্দ্রটির প্রধান আকর্ষণই হলো গুহা, যারা অনেক বেশি এডভেঞ্জার পছন্দ করেন এই জায়গাটি তাদের জন্য। আলুটিলা সুড়ঙ্গটি দেখতে হলে পাহাড়ের চূড়া থেকে ২৬৬ টি সিড়ি বেয়ে নামতে হবে আপনাকে পাহাড়ের পাদ দেশে। সুড়ঙ্গটি পাথর আর শিলা মাটির ভাঁজে গড়া, প্রায় ১৮ ফুট ব্যাসের গুহামুখ আর গুহাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮০ ফুট। সুড়েঙ্গের ভিতরে গা ছমছম অন্ধকার, গুহার তলদেশ দিয়ে গড়িয়ে চলেছে জল। গুহায় প্রবেশ করার জন্য ১০ টাকার বিনিময়ে মশাল কিনে নিতে পারেন গুহার কাছে থেকেই। গুহার একদিক দিয়ে প্রবেশ করে অন্য দিক দিয়ে বের হতে সময় লাগবে প্রায় ১০/১৫ মিনিট।
১৫- বগা লেক
বগালেক প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হওয়া পাহাড়ের উপরে একটি ভিন্ন লেক, যার পানির স্তর সারা বছরই প্রায় একই অবস্থানে থাকে। বগা লেক এর দিকে আপনি যতোই তাকিয়ে থাকেন না কেনো আপনার কোন ক্লান্তি আসবে না।
১৬- কাপ্তাই প্রশান্তি পার্ক
প্রশান্তি পার্ক কর্ণফুলী নদীর পাড়ে অবস্থিত, আশপাশে সবুজ পাহাড় ও বিভিন্ন ধরনের গাছ ও বাগানসমৃদ্ধ পার্কটিতে প্রাকৃতিক পরিবেশ ঘোরাঘুরি করার জন্য সেরা একটি জায়গা। অবসর সময় কাটানো, আড্ডা, পিকনিক ও পরিবার-পরিজন বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাটানোর জন্য আপনি ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে। যারা তাঁবুতে থাকতে পছন্দ করেন তারা বাইকার ভাইয়েরা মিলে ছুটে যেতে পারেন এখানে, আশাকরি জায়গাটি আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।
যাদের এই সব জায়গা ঘুরা শেষ কিন্তু এডভেঞ্জার অনেক বেশি পছন্দ করেন তাদের জন্য রহস্যময় আন্ধারমানিক হতে পারে এক নতুন গন্তব্য।
১৭- রহস্যময় আন্ধারমানিক
কেনো এই জায়গাটি রহস্যময় ? আন্ধারমানিক নিয়ে অনেক প্রবাদ প্রচলিত আছে আমাদের দেশে।বান্দরবান গেলেই প্রকৃতির অপার বিস্ময়ে নয়ন জুড়াবে আপনার। তবে জানেন কি, বান্দরবানের অন্যতম সেরা এক দর্শনীয় স্থান হলো আন্ধারমানিক।প্রত্যন্ত এ স্থানটি বান্দরবানের অনেক গভীরে। সেখানে ঘুরতে যাওয়াও অতটা সহজ বিষয় নয়। তবে প্রকৃতির সবটুকু সৌন্দর্য হয়তো আপনি সেখানে গেলেই উপভোগ করতে পারবেন! কল্পনার রাজ্যের মতো আন্ধারমানিক পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এক স্থান।
১৮- ডিম পাহাড় বান্দরবান
ডিম পাহাড় ( Dim Pahar ) বাংলাদেশের বান্দরবান জেলায় অবস্থিত সমুদ্র সমতল থেকে আড়াই হাজার ফুট উঁচুতে নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু সড়কপথ। পাহাড়টি বান্দরবানের আলীকদম এবং থানচি উপজেলার ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। যা দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সড়কপথ। বান্দরবানের থানচি থেকে আলীকদম হয়ে এ পথ চলে গেছে আরেক পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। এ পাহাড় চূড়ার আকৃতি দেখতে ডিমের মতো হওয়ায় স্থানীয়রা একে ডিম পাহাড় নামেই চেনে।
১৯- মারাইংতং
‘মারায়ংতং’, ‘মারাইংতং’, ‘মেরাইথং’ বিভিন্ন নামেই ডাকা হয় এই পাহাড়কে। চূড়ায় উঠেই যেটা সবার প্রথমে চোখে পড়ে, তা হল বিশাল একটি জাদি। জাদি মানে বৌদ্ধদের পূজা-অর্চনার জন্য বানানো বুদ্ধমূর্তি। এমনভাবে জাদিটি বানানো যেন সে দূর কোনো প্রান্তের দিকে তাকিয়ে প্রকৃতির রহস্য নিয়ে ভাবছে আর স্মিত হাসি ফুটে উঠছে তার ঠোঁটে।
পাহাড়টির ওপরের অংশটুকু সমতল, এখান থেকে যত দূর দৃষ্টি যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। সেসবের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে জনবসতি। নিচে সাপের মতো এঁকে-বেঁকে বয়ে চলেছে মাতামুহুরী নদী। তার দুই কূলে দেখা যায় ফসলের ক্ষেত, এই পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন আদিবাসীর বসবাস। এই জায়গায় তাঁবুতে করে থাকার মজাটায় আলাদা, একটা সময় এখানে তাঁবুতে থাকতে দিতো, কিন্তু বর্তমান সময়ে মনে হয় দেয় না।
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল অনেক সুন্দর, আর দর্শনীয় স্থানের কোন কমতি নেই আমাদের দেশে। একটা আর্টিকেলের মাধ্যমে সব জায়গাগুলো কখনো তুলে ধরা সম্ভব না, আপনি যেখানেই ভ্রমণে যান না কেনো সব সময় নিয়ন্ত্রিত গতিতে বাইক রাইড করুন। আর কোথাও গেলে এমন কোন কাজ করবেন না যার ফলে বাইকারদের নাম নষ্ট হয়।
ধন্যবাদ
তথ্যসূত্রঃ একুশে টিভি, Tour Today