ট্র্যাকার্সবিডি, একটি রাত ও চুরি যাওয়া মোটরসাইকেলের গল্প
This page was last updated on 01-Aug-2024 11:33am , By Raihan Opu Bangla
বাংলাদেশে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা অনেক ঘটে থাকে। সাধারনত চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে অনেকেই তাদের প্রিয় এবং শখের বাইকটি হারিয়ে ফেলেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে সিকিউরিটি থাকা স্বত্ত্বেও দেখা যায় বাসার গেট বা পার্কিং থেকে বাইক চুরি হয়। এক্ষেত্রে তখন দ্রুত ব্যবস্থা নিলে হয়ত বাইকটি ফেরত পাওয়া যেতে পারে।
বর্তমানে জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইস বাংলাদেশ বেশ প্রচলিত হয়েছে। সেখান থেকে দেখা যায় অনেক কোম্পানি রয়েছে যারা এই ধরনের সার্ভিস দিয়ে থাকে। আজ আমি আপনাদের কাছে বাংলাদেশের অন্যতম জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইস ট্র্যাকার্সবিডি নিয়ে একটা ঘটনা শেয়ার করতে যাচ্ছি।
তখন রাত আনুমানিক ১২টা বাজে, যাচ্ছিলাম বাবাকে ইমার্জেন্সী রক্ত দিতে, গ্রামের একটি হাসপাতালে। তাড়াহুড়া করার কারণে বাসায় ফোন চার্জে রেখেই চলে গিয়েছিলাম। উল্লেখ্য যে আমার নিজের বাইক থাকা সত্ত্বেও সেদিন বড় ভাইয়ার বাইকটা নিয়ে যাই। বাবার সাথে শুধু মা ও বড় ভাই ছিলেন। যথা সময়ে পৌছে রক্ত দেই কিন্তু চোখে ঘুম থাকার কারণে এবং ক্লান্ত থাকার কারণে হাসপাতালের বিছানায় কতক্ষন যে শুয়ে ছিলাম মনে করতে পারি নি।
ঘুম থেকে উঠে চলে আসার সময় দেখি রাত ২ টা বেজে গেছে। একা একা চলে আসবো তাই ভয় ভয় লাগছিল। ভয় নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে বাইকের কাছে যেতেই দেখি যেখানে বাইকটি রেখেছিলাম সেখানে বাইকটি নেই।
শুরুতে অনুমান করতে পারছিলাম না কি হচ্ছে আমার সাথে। তখন মনে পড়লো, তাড়াহুড়া করে বাইকের ঘাড় শুধু লক দিয়েছিলাম কিনা। দায়িত্বরত দারোয়ানের কাছে জিজ্ঞেস করতে গেলাম, তারা ঘুম ঘুম চোখে কোনো সদুত্তর দিতে পারলো না। এদিকে আমার সাথে মোবাইল নেই যে ভাইয়াকে জানাবো।
দৌড়ে আবার উপরে কেবিনে যাই, বড় ভাইকে বিষয়টা জানাই, তিনি বুঝতে পারলেন যা হওয়ার তাই হয়েছে, তার বাইকটা চুরি হয়ে গেছে। একথা শুনে আমি খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। চিন্তা করতে থাকলাম, একদিকে আব্বুর দুর্ঘটনা অপর দিকে বড় ভাইয়ের শখের বাইকটা আমি হারালাম। কি করবো মাথায় যেনো কিছুই কাজ করছিল না, এই মধ্যরাতে বাইক খুঁজতে যাবো নাকি আব্বুর সাথে থাকবো!
কিন্তু আমাকে সব থেকে যে বিষয়টা অবাক করলো সেটা হলো ভাইয়ার মুখে কোনো দুশ্চিন্তার ছাপ দেখছিলাম না। সে তার মোবাইলে যেনো বার তাকাচ্ছিলেন আর কি যেনো করতেছিলেন। ভাবলাম হয়তো তার কোনো বন্ধুদের বিষয়টা জানাচ্ছেন। এসব করতে করতে তখন প্রায় ফজরের আযান দিচ্ছে। আমি চিন্তিত মুখ নিয়ে ভাইয়ার সাথে মসজিদে নামাজে গেলাম। আজকের নামাজটা যেন আমার জন্য অন্যরকম ছিল। বাবার জন্য দোয়া করলাম, আর দোয়া করলাম যেনো ভাইয়ার বাইকটা কোনো ভাবে ফিরে পেতে পারি।
নামায শেষ করে মসজিদ থেকে বের হতে হাসপাতালের সামনে আসি, এসে দেখি একটা জটলার মত মানুষ দেখা যাচ্ছে। ভাবলাম হয়তো কেউ মারা গেছে। ভাইয়া এগিয়ে গেলেন আমার আগেই।
তারপর আমাকে জোরে ডাক দিলেন জটলার কাছে যেতে। জটলার কাছে যেয়ে আমি নিজের চোখ-কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। দেখলাম সবাই ভাইয়ার হারিয়ে যাওয়া বাইকটা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। বাইকের উপর ছিল ভাইয়ার বন্ধু ২ জন।
আমি অবাক হয় ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে তারা বাইকটা খুঁজে পেলো? ভাইয়া তখন বললেন তার ভাইকে লাগানো ছিল একটি জিপিএস ট্র্যাকার। ট্র্যাকারটি সারারাত তার কাছে বাইকের লোকেশন দিচ্ছিল। সেই হিসেবে তিনি তার বন্ধুদের সেখানে পাঠান এবং তারা বাইকটি উদ্ধার করতে সক্ষম হন, তবে দুর্ভাগ্যবশত চোর আগেই টের পেয়ে পালিয়ে যায়।
Also Read: মোটরসাইকেল কাষ্টমাইজেশন ও মোডিফিকেশন – কম্ফোর্ট ও কন্ট্রোল বাড়ান
পরবর্তীতে ভাইয়ার কাছে জানতে পারলাম সেই বিশেষ যন্ত্রটি যা আজকে আমাদের বাইকটির লোকেশন ট্রাক করতে সাহায্য করলো সেটি আর কিছুই না ট্র্যাকার্স বিডি এর জিপিএস ট্র্যাকার। এই সুবিধার জন্যই এটি আমার কাছে বাস্তবের Spiderman।
এরপর আমিও আমার নিজের বাইকে এটি ব্যাবহার শুরু করি কারণ এর লোকেশন ট্র্যাকিং সুবিধা আমার সব থেকে উপকারী লেগেছে। তাছাড়াও এর অন্যান্য সুবিধা যেমন ইঞ্জিন অন/অফ অ্যালার্ট, ইঞ্জিন ব্লক (যে কোন জায়গায় বসে ইঞ্জিন বন্ধ করে দিতে পারবেন), সারাদিনের মাইলেজ এবং ট্রিপ রিপোর্ট, রিয়েল টাইম ইঞ্জিন স্ট্যাটাস, জিওফেন্স অ্যালার্ট ইত্যাদি রয়েছে। তাই নিজের বাইককে ভালোবাসুন আর নিরাপদে রাখুন, ব্যবহার করুন জিপিএস ট্র্যাকার।
রিভিউ – সাদেকুর রহমান