কোন ধরণের বাইক আপনার জন্য উপযোগী?

This page was last updated on 22-Jun-2025 04:47pm , By Badhan Roy

প্রায়ই আমাদের ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ এর ইনবক্সে অনেকে জানতে চান বাজেট এত, কোন বাইকটি কেনা তার জন্য উপযুক্ত হবে। আমরা প্রায়ই একটি পরামর্শ দিয়ে থাকি সেটা হচ্ছে একটি বাইক কেনার পূর্বে আপনার আগে বোঝা উচিৎ বাইকটি থেকে আপনি কি চাচ্ছেন বা কোন ক্ষেত্রে বাইকটি আপনি ব্যাবহার করবেন। 

 

কোন ধরণের বাইক আপনার জন্য উপযোগী?

তৈা আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার উপযোগী বাইক নির্বাচন করতে সাহায্য করবে বলে আমরা আশাবাদী। 

কম্যুটার বাইক- আপনার চাহিদা যদি হয় কম বাজেটের মধ্যে একটি লো-মেইনটেনেন্স, জ্বালানী সাশ্রয়ী, পরিবার নিয়ে মোটামুটি স্বল্প থেকে মধ্যম দূরত্বের পথ প্রতিদিন পাড়ি দেওয়া তাহলে আপনার জন্য কম্যুটার বাইক উপযোগী। ৮০-১৬৫ সিসি পর্যন্ত কম্যুটার বাইক বাংলাদেশের বাজারে এভেইলেবল। 

সিসি ভেদে এই বাইকগুলোর পাওয়ার এবং ফিচারস কম বেশি হয়ে থাকলেও এই বাইকগুলো তৈরির উদ্দেশ্য একই। যদিও অনেকের ভুল ধারণা আছে ৮০-১২৫ সিসির বাইক কেবল বয়স্ক মানুষ ব্যাবহার করেন বা তাদের জন্য বানানো। বর্তমানে কম্যুটার বাইকগুলো লুক এবং ফিচারস এর দিক থেকে বেশ সময়োপযোগী এবং সকল বয়সীদের জন্য মানানসই হিসেবেই তৈরি করা হয়ে থাকে। 

 

মপেড- বাংলাদেশে বর্তমানে ডেলিভারি সার্ভিসের জন্য মপেড বাইকগুলোর চাহিদা ও জনপ্রিয়তা বেশ লক্ষণীয়। মপেড বাইকের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি ওজনে হালকা, অধিক লোড বহনে সক্ষম, অধিক মাইলেজ প্রদান করে এবং গিয়ার শিফটিং করতে হয় না বিধায় এটি চালানো তুলনামূলক সহজ। সিটি বা মেট্রোপলিটন এরিয়ার মধ্যে ডেলিভারি সার্ভিস ছাড়াও স্বল্প দূরত্বে স্বল্প গতিতে চলাচলের জন্য মপেড হতে পারে একটি ভাল অপশন। 

 

ক্রুজার- ক্রুজার বাইক গুলো লং রাইডের বা হাইওয়ে ট্যুরিং এর জন্য বিশেষভাবে তৈরি। এই বাইকগুলোর রাইডিং পজিশন খুবই রিলাক্সড। পা থাকে সামনের দিকে, হাত হ্যান্ডেলবারে আর পিঠ সোজা বা হালকা হেলানো অবস্থায় থাকে। যারা দীর্ঘ সময় আরামদায়কভাবে লং রাইড করতে চান হাইওয়েতে এবং ইউনিক পারসোনালিটি প্রকাশ করতে চান ক্রুজার বাইক তাদের জন্য। তবে এই বাইকগুলো অভিজ্ঞ ও ধৈর্য্যশীল রাইডারদের জন্য উপযুক্ত। নতুন রাইডার ও ট্রাফিক জ্যাম যুক্ত এলাকায় যারা বেশি রাইড করেন তাদের জন্য এই বাইক পছন্দের থেকে বিরক্তির কারন ও হয়ে দাঁড়াতে পারে।

 

স্পোর্টস বাইক - স্পোর্টস বাইক মূলত তরুণ রাইডারদের বেশি পছন্দের। যারা গতি, স্টাইল, এড্রেনালিন রাশ এবং সৌখিনতার সাথে হাই পারফরম্যান্স চান তাদের জন্য স্পোর্টস বাইক। স্পোর্টস বাইকের মেইন্টেনেন্স খরচ কিছুটা বেশি হয়ে থাকে এবং এই বাইকগুলোর দাম ও সাধারণ বাইকগুলোর তুলনায় কয়েকগুন বেশী। তবে একটা জিনিস বাংলাদেশের অধিকাংশ বাইকাররা মাথায় রাখেন না সেটা হচ্ছে স্পোর্টস বাইক যতই দামী হোক তা তাদের প্রয়োজন ও শারিরীক সক্ষমতার সাথে সামঞ্জস্য রাখছে কিনা।

স্পোর্টস বাইক এর সিটিং পজিশন এগ্রেসিভ হওয়ার কারনে প্রায়ই দেখা যায় অধিকাংশ বাইকারের ব্যাক পেইন, রিস্ট পেইন ও বডি পেইন সহ বিভিন্ন শারিরীক জটিলতা দেখা যায় সবসময় সব ধরণের রাস্তায় দীর্ঘ সময় যাবৎ এই বাইকগুলো রাইড করার কারনে। যদি আপনি হাই পারফর্মেন্স অন রোড ফিল চান এবং যথেষ্ট অভিজ্ঞ রাইডার হন তবেই আপনার স্পোর্টস বাইক নেওয়া উচিৎ। তবে স্পোর্টস বাইকের সাথে সিটিং কমফোর্টের বিষয়টি মাথায় রাখতে চাইলে আপনাকে ন্যাকেড স্পোর্টস বাইক বেছে নিতে হবে। 

 

এডিভি- যদি আপনি একই সাথে লং ট্যুর, অফ-রোড অ্যাডভেঞ্চার ও ভার্সেটাইল রাইডিং এক্সপিরিয়েন্স চান তাহলে আপনার জন্য সেরা চয়েস হবে এডিভি বা এডভেঞ্চার ক্যাটাগরির বাইক। যারা অন-রোড এবং অফ-রোড দুই জায়গায়ই রাইডকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন, পাওয়ার এবং কম্ফোর্টের সাথে লং ট্যুরিং পছন্দ করেন, যাদের অতিরিক্ত বেশি লোড বহন করতে হয় তাদের এডিভি ক্যাটাগরির বাইক কেনা উচিৎ। তবে মাথায় রাখতে হবে এডিভি এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ও সিট হাইট বেশি এবং তুলনামূলক ভারি হওয়ার কারনে সহজে ব্যালান্স করার জন্য রাইডারের পর্যাপ্ত উচ্চতা, শক্তি, চালানোর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকা জরুরি। 

 

ডার্ট- যাদের একমাত্র লক্ষ্য অফ রোডিং এবং অফরোড কে যারা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন তাদের জন্য বেস্ট চয়েস ডার্ট বাইক। মাটি, পাহাড়, বালি বা খারাপ রাস্তাতে বেশ সহজে রাইড ও ট্রেইল করতে ডার্ট বাইকের বিকল্প নেই। তবে অন রোড বা সিটি রাইডের জন্য উপযুক্ত না এবং ডার্ট বাইক চালাতে প্রচুর স্কিলের দরকার হয়। 

 

স্কুটার- যারা সিটি কম্যুটিং এবং প্র্যাক্টিকালিটিকে প্রাধান্য বেশি দেন তাদের জন্য বেস্ট চয়েস স্কুটার। স্কুটার নিয়ন্ত্রণ সহজ এবং অধিকাংশ স্কুটারে স্টোরেজ স্পেস থাকায় এটি প্র্যাক্টিকালিটির দিক দিয়ে বেশ ভাল। অধিকাংশ নারী বাইকার বাইক এর থেকে স্কুটার ব্যাবহার বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।


মোট কথা, যে দামের বা যে ব্র্যান্ডের ই বাইক আপনি ব্যাবহার করার সিদ্ধান্ত নেন না কেন আমাদের অনুরোধ কেবলমাত্র লুক বা পারফর্মেন্স দেখে বাইক না কিনে ক্যাটাগরি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন কোন বাইকটি আপনার কাজের জন্য উপযোগী। চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রায় প্রতিটি বাইকের রিভিউ, স্পেসিফিকেশন এবং দাম যাচাই করার পর সম্ভব হলে সরাসরি টেস্ট রাইড দিয়ে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বাইক কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।