কিভাবে বাইক কিনে দেবার জন্য বাবা-মাকে রাজি করানো যায়?
This page was last updated on 29-Jul-2024 11:35pm , By Raihan Opu Bangla
কিভাবে বাইক কিনে দেবার জন্য বাবা-মাকে রাজি করানো যায়? আপনি কি পরিবারের উপর নির্ভরশীলএকজন? আপনি কিনতে সক্ষম না কিন্তু আপনার কি একটি বাইক দরকার? অথবা আপনার কোনও উপার্জন নেই, আর সেকারণেই আপনি আপনার বাবা-মাকে একটি বাইক কিনে দিতে রাজি করাতে চান?
বিষয়টি যদি তাই-ই হয়ে থাকে তবে আমাদের আজকের আলোচনায় যোগ দিতে পারেন। কিভাবে বাইক কিনে দেবার জন্য বাবা-মাকে রাজি করানো যায়, এটিই আমাদের আজকের বিষয়। আশা করি আমাদের আলোচনা থেকে আপনি কোন সমাধান পেয়েও যেতে পারেন।
কিভাবে বাইক কিনে দেবার জন্য বাবা-মাকে রাজি করানো যায়?
বন্ধুরা, বিশ্বব্যাপী মোটরসাইক্লিং বা বাইক চালানোর অভ্যাসটি প্রথমে সাধারনত নিজ পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকেই আসে। এরপরই মূলত: পারিপার্শ্বিক পরিসর থেকে মানুষ উৎসাহিত হয়। তবে আমাদের দেশে বিষয়টি মোটামুটি অনেকটাই আলাদা।
আমাদের দেশে বেশিরভাগ পরিবারই মোটরসাইক্লিংয়ের ধারাটি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বহন করে না। আর সেইসাথে অনেকেই পারিপার্শ্বিক পরিসর থেকে উৎসাহিত হয়ে মোটরসাইক্লিংয়ে এগিয়ে আসে যা-কিনা অনেকসময়ই তাদের পরিবারে অনুপস্থিত।
সুতরাং, সাধারনভাবে বলা যায় আমাদের অনেক পরিবারই মোটরসাইক্লিংয়ের সংস্কৃতি থেকে অনেকটাই দূরে। আর বড় আরেকটি সত্য হলো বিপুল সংখ্যক পরিবার মোটরসাইক্লিং বিষয়টিকেই ভয় পায় এবং অনেকে ঘৃণাও করে।
এর কারন হিসেবে বলা যেতে পারে মোটরসাইক্লিং কালচার আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে এখনো তেমন স্বাভাবিক বিষয় হতে পারেনি। আর এখনো অনেকেই এটিকে একটি সাধারণ স্পোর্ট-ম্যাটেরিয়াল বা ট্রাস্টেড কমিউটিং ভেহিকেল হিসেবে গন্য করেন না।
তবে যাই হোক-না কেন, এখনকার দিন কিন্তু অনেক বদলে গেছে। জীবনযাত্রা আজকাল খুবই ফাস্ট আর মানুষকে দ্রুত চলাচল করতে হয়। সেইসাথে সময় ও অর্থের সাশ্রয়ও আরো বড়ো একটি ব্যাপার। আর এখানেই একটি মোটরসাইকেল একটি বড় অবদান রাখতে পারে। সেজন্যই মোটরসাইকেল এখনকার সময়ে এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তো আপনি যদি পূর্ণবয়স্ক হন আর আপনার ভালো একটি রোজগার থাকে, তাহলে নি:সন্দেহে নিজের বাইকটি কিনে নিতে পারেন। কিন্তু পরিবারের উপর নির্ভরশীল একজন, যার কোন আয় নেই তার জন্য বিষয়টি অবশ্যই সহজ নয়। এক্ষেত্রে তার পারিবারিক আর্থিক ও মানসিক সাহায্য অবশ্যই দরকার। আর এখানেই বিষয়টির জটিলতা।
কিভাবে বাইক কিনে দেবার জন্য বাবা-মাকে রাজি করানো যায়?
তো কিভাবে বাইক কিনে দেবার জন্য বাবা-মাকে রাজি করানো যায়? এজন্য প্রথমেই আপনাকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করতে হবে। আপনার পিতা-মাতা বা অভিভাবকের উপার্জন, আপনার বয়স, আপনার প্রয়োজনীয়তা, আপনি বাইকের সাহায্যে কিভাবে অন্যদের জন্য সহায়ক হতে পারেন, পারিপার্শ্বিক সামাজিক পরিস্থিতি, ইত্যাদি অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত।
আবার, হতে পারে আপনার বাবা-মা বা অভিভাবক আর্থিকভাবে যথেষ্ট সক্ষম নন। অথবা প্রতিদিনের মোটরসাইকেলজনিত দুর্ঘটনা নিয়ে তারা ভীত বা উৎকন্ঠীত। অথবা বাইক ও বাইকিং নিয়ে তারা কিছু ভুল ধারণায় রয়েছেন। সুতরাং এসব বিচারে বিবেচনা ও ধৈর্য সহকারে তাদের সাথে আলোচনা করুন। আর আমাদের পরামর্শগুলো অনুসরণ করুন।
- আপনার প্রয়োজন নিয়ে খুব সুনির্দিষ্ট অলোচনা করুন। সরাসরি পরিবারকে জানান যে প্রতিদিনের যাতায়াত বা অন্য কাজের প্রয়োজনে আপনার বাইক প্রয়োজন।
- আপনার পিতামাতাকে বলুন কিভাবে একটি বাইক আপনার দৈনন্দিন জীবন বা অন্যান্য কাজে সহায়তা করতে পারে। সেইসাথে সময় ও অর্থ সাশ্রযয়ের বিষয়টিও তুলে ধরুন।
- পিতা-মাতাকেআপনার চালানোর দক্ষতা, নিরাপদ আচরন, ট্রাফিক আইন, এবং সরকারী বিধিমালার প্রতি আনুগত্য সম্পর্কে তাদের আশ্বাস দিন।
- আপনার অভিভাবকের কাছে তুলে ধরুন যে বাইকটি আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রতিদিনের যাতায়াতের ক্ষেত্রেও কতটা সহায়ক হতে পারে। পরিবারের প্রাত্যহিক চলাচলকারী সদস্যদের প্রয়োজনে বাইকটি ব্যবহারের আশ্বাস দিন।
- তাদের কাছে তুলে ধরুন একটি বাইক কিভাবে অন্যান্য গণপরিবহণের চেয়ে ভাল এবং স্বাধীনভাবে চলাচলের জন্য সহায়ক।
- আপনার পরিবার যদি আর্থিকভাবে তেমন সচ্ছল না হয় তবে মোটরসাইকেল কোম্পানীগুলির কিস্তি সুবিধা বর্ণনা করে তাদের বোঝাতে পারেন।
- এছাড়াও পার্ট-টাইম ডেলিভারী সার্ভিস ও রাইড-এন্ড-শেয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে একটি বাইক থেকে কিভাবে আয় করা সম্ভব তাও আলোচনা করুন।
- আপনার পরিবার যদি যথেষ্ট উপার্জনক্ষম হয় তবে পরীক্ষায় আরো ভালো ফলাফলের সঠিক আশ্বাস দিতে পারেন।
- অনেক পিতামাতার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাজনিত ট্রমা, ভয়, বা বাইক চালানো সম্পর্কে কিছু ভুল ধারনা থাকতে পারে। এসব ক্ষেত্রে আলোচনায় আরও সাবধানতা অবলম্বন করুন। আপনার যত্নশীল মনোভাব, ট্রাফিক-রূলসের আনুগত্য, সুরক্ষা-সতর্কতার উপায়, ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের আশ্বাস দিন। তবে অবশ্যই ইতিবাচকভাবে আলোচনা করার পরিবর্তে কোনকিছুতে চাপ দেবেন না।
বাবা-মাকে রাজি করানোর জন্য ইতিবাচক হোন
তো বন্ধুরা, বাইক কিনে দেবার জন্য বাবা-মাকে রাজি করানোর জন্য মূলত: এভাবেই আলোচনা করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই কারো মনোভাব বা চিন্তাভাবনাকে আঘাত করবেননা। কেননা প্রত্যেক পিতামাতাই তাদের সন্তানের জন্য যত্নশীল এবং শুভাকাঙ্ক্ষী। তবে আপনি যা করতে পারেন, তা হলো ইতিবাচকভাবে তাদের বোঝান, আর তারা আপনার কাছে কি প্রত্যাশা করে তার প্রতি যত্নশীল হোন।
সুতরাং তাদের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজ করুন। হ্যাঁ, অবশ্যই অভিভাবকদের বোঝানোর কোননা কোন উপায় রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি, আপনার পিতামাতার সামর্থ্য, এবং আপনাকে একটি বাইক দেওয়ার কিছু মানসিক প্রস্তুতিও রয়েছে। এসব বিবেচনা করুন। আর আপনি তাদের যে প্রতিশ্রুতি দেবেন তা রক্ষা করতে ভুলবেন না।
সবশেষে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আপনার আশা ও প্রত্যাশায় কিছুনা কিছু ছাড় দেবার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন। আর ফোকাস করুন যে, একটি নতুন সূচনার জন্য আপনার একটি বাইক প্রয়োজন। হয়তোবা সেটি আপনার আশা বা প্রত্যাশার সমান হবেনা। তবুও এটিই শেষ নয়, কেননা সামনের দিনগুলোতে অবশ্যই আপনার নিজস্ব উপার্জনের সুযোগ রয়েছে। তখন নিশ্চয়ই সবটুকু ইচ্ছে পূরন করে নেয়া যাবে। ধন্যবাদ।