Honda Livo 110 ৫০,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - সোহরাব
This page was last updated on 20-Nov-2023 03:00pm , By Shuvo Bangla
আমি মোহাম্মদ সোহরাব হোসেইন । আজকে আমি আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে যাচ্ছি আমার জিবনের সবচেয়ে প্রিয় বাহন আমার Honda Livo 110 বাইকের মালিকানা রিভিউ
Honda Livo 110 ৫০,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - সোহরাব
আমি একটা ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানিতে আফটার সেল সার্ভিস টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত আছি। ঠিক ছোট বেলা থেকে আমার বাইকের প্রতি তেমন কোনো আগ্রহ ছিল নাহ! আগ্রহটা হয় ঠিক যখন ইন্টার কম্পলিট করি । একদিন কি একটা দেখে খুব বাইক চালানোর ইচ্ছা জাগে ঠিক সেদিনই আমার আরো ৩ জন একত্র হয়ে ইচ্ছা পোষন করি যে বাইক চালানো শিখব ।
আমরা ৩ জন ২০,০০০ টাকায় , এক একজন ৫ হাজার করে দিয়ে একটা বাইক ক্রয় করি সেটা দিয়ে সবাই মোটামোটি চালানো শিখার পর আবার সেটা ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিই কারন বাইকটার কোনো ডকুমেন্টস ছিল নাহ। তারপর একটা কোম্পানীতে জব নেই এবং সেখানে কমিউনিকেশন এর জন্য বাইকের কোনো বিকল্প নেই ।
প্রথম দিক থেকেই আমার খুব ফরমাল বাইক পছন্দ করতাম তার শীর্ষে ছিল এই বাইকটি । কারন একদিকে আমার প্রয়োজন ছিল ভালো মাইলেজ, স্মার্ট লুক, এবং বিল্ড কোয়ালিটির পাশাপাশি রিসেল ভ্যালু যেন ভালো হয় । সব কিছু মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিই হোন্ডা ব্রান্ড এর বাইকই হয়ত আমার জন্য পারফেক্ট।
সময়টা তখন ২০১৮ সাল এর কথা। তারপর হোন্ডার শোরুম থেকে আমার নতুন পথচলা এই নতুন সঙিকে নিয়ে একটু একটু করে আজ আমার বাইক প্রায় ৫০ হাজার কিলোমিটারের মাইলফলক ছুই ছুই হয়ে গেছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আজও একটি বারের জন্য সে আমায় হতাশ করেনি এবং কোনোদিন কোনো বিপদেও ফেলেনি। এবং কয়েকবার গিয়ার ঠিক ভাবে না থাকায় ছাড়া অযথা কারনে কখনো চলার পথে বন্ধ হয়ে যায়নি।
সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমার বাইকটা আজ এই সকল এবিএস ও সিবিএস এর যুগে এসেও আজও ডাবল ড্রাম ব্রেক হয়েও আমায় নিরন্তর আল্লাহর রহমতে নিরলস চালিয়ে নিচ্ছে! এই বাইকটার সবচেয়ে ভালো লাগার মতো ব্যাপার হচ্ছে এই বাইকটার ইঞ্জিন সাউন্ড। বাইকটির ইঞ্জিনের এমন এক সাউন্ড যেটা বুঝতে দেয়না বাইকের ইঞ্জিন কি চলছে নাকি বন্ধ হয়ে গেছে!
এর লুকটা আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে। আর সিট হাইট আমার জন্য পারফেক্ট আমার উচ্চতা অবশ্য ৫.৬" । আমার বাইকের এখনো পর্যন্ত আমি ইঞ্জিনে কোন কাজ করিনি না ক্লাচ প্লেট নাহ টাইমিং চেইন। কখনোই আমাকে ইঞ্জিনের কোনো বিষয়ে হাত দিতে হয়নি এর পিছনে অবশ্য আমি যেটা মনে করি সেটা আমার ড্রাইভিং স্কিল এর জন্যই হয়েছে কারন আমি সবসময় ইকোনোমিতে চালাই সর্বোচ্চ প্রয়োজন হলে ৭০ উঠাই আর না হলে ৩০ থেকে ৫০ এর মধ্যেই চালাই ।
প্রতি ১৫০০ কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি! কারন শুরু থেকেই আমি মটুল ইউজ করি। প্রথম কয়েকবার মিনারেল দিই এরপর থেকে সেমি সিন্থেটিক ব্যাবহার করতে থাকি । সেটা দিয়ে ২০০০ কিলোমিটার ও চালানো যায় কিন্তু আমি ১৫০০ কিলোমিটার পর পর পরিবর্তন করি ।
সেটার মুল্য শুরু থেকে ৭৫০ টাকা করে নেয় এবং আমাদের বাড়ির পাশেই একটা গ্যারেজ আছে যেখানে সে অরিজিনাল ইঞ্জিন অয়েল রাখে তার কাছ থেকেই নেয়া। আমি আমার বাইকের থ্রটল রেসপন্স সর্বদা ভালোই পেয়েছি কারন এটা একটা কমিউটার বাইক এর থেকে স্পোর্টি রেস্পন্স আশা করাও বোকামি।
আমি কখনো স্পোর্টস বাইক চালাইনি। তাই অতটা স্পিডে চালানোর অভ্যাস ও আমার নেই । আমি এখনো রাস্তায় কোনো স্পিড ব্রেকার বা গর্ত থাকলে সাবধানে পার হই যাতে ওর উপর প্রেশার না পরে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ৩ জন চালানো থেকে সর্বদা বিরত থাকি । একা রাইড করার চেষ্টা করি সবসময়। আর যেহেতু আমি ফিল্ডে কাজ করি দৈনিক ছুটির দিন ছাড়া আমায় রোজ ৪০/৫০ কিলোমিটার চালানো পরে তাই খুব প্রয়োজন ছাড়া পাম্প ছাড়া তেল নিইনা ।
সব সময় পাম্প থেকেই তেল নেওয়ার চেষ্টা করি। এখনো আমি আমার বাইকে ৫৫-৬০ মাইলেজ পাই কারন আমি আমার বাইকের বাইরের লুকটা ফিল্ডে কাজ করায় বিধায় তেমন কোনো বিশেষ যত্ন নিতে পারি নাহ কিন্তু সর্বদা ইঞ্জিনটা ভালো রাখার চেষ্টা করেছি প্রতি ৫/৬ হাজারে এয়ার ফিল্টার পাল্টেছি।
এখনো আমার বাইক যখন রান করি স্মুথ ভাবে রান করতে পারি। অনেকে অনেক কথায় বলেছে চিকন চাকা স্কিড করবে। পড়ে যাবে তবে আমার যেটা মনে হয়েছে কোম্পানি যেহেতু বানিয়েছে অবশ্যই ভেবে চিন্তে বানিয়েছে। তাই আমি কখনো বেশি সেকশন এর টায়ার লাগিয়ে ইঞ্জিনের উপর প্রেশার দিইনি। আর বিশেষ যে পার্টস সেটা হচ্ছে চেইন।
ইঞ্জিন অয়েল ,এয়ার ফিল্টার , প্লাগ পরিষ্কার আর চেইনের যত্ন নিলে সম্পুর্ন বাইক ভালো থাকে । আমি আমার এই বাইক নিয়ে ১০/১৫ বারের মতো রাঙামাটি ও কাপ্তাই গিয়েছি তার ও বেশি নিলাচল, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি,মহামায়া,বাশবাড়িয়া চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল শুধু মাত্র সাজেক ছাড়া ধরা যায় পার্বত্য অঞ্চলের শতকরা ১০০ ভাগের ৭০% ঘুরেছি কিছু কিছু জায়গায় পিলিয়ন সহ কিছু কিছু পিলিয়ন ছাড়া।
বাইকটি কখনো কিছুতেই হতাশ করেনি । শুধু মাত্র একবার ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়েতে পিছনের চাকায় একটা পেরেক ঢুকে গিয়েছিল ঐ অবস্থায় ২/৩ কিলোমিটার চালিয়ে লিক সাড়িয়ে আবার চলেছি। কখনো কোনো অবস্থাতেই সে আমায় বিপদে ফেলেনি আমার কাছে কখনোই হতাশ হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি সর্বদা পাহাড় পর্বত , উচু নিচু রাস্তা, ভেজা পিচ্ছিল সকল রাস্তায় সে আমায় ড্রাম ব্রেক হওয়া সত্বেও কখনো নিরাশ করেনি বরং সাপোর্ট দিয়ে গেছে।
Honda Livo 110 বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- পিছনের সাসপেন্সনটা খুব দুর্বল।
- হেড লাইট টা খুব আলো কম ।
এছাড়া আর কোনো সমস্যা পাইনি । এই সেগমেন্ট এ এর থেকে বেশি আশা করা যায় না যেমন ব্রেকিং আপনি যখন ইকোনোমিতে বাইক চালাবেন তখন যেকোনো বাইকই আপনার কন্টোলে থাকবে। আমি এগুলোতে মানিয়ে নিয়েছি ।
৫০ হাজার রাইডিং অভিজ্ঞতায় কি কি পরিবর্তন করেছি -
- ৪২ হাজার কিলোমিটার এ এসে চেইন সেট পরিবর্তন করেছি ১৫৫০ টাকা নিয়েছে
- ব্রেক কেবল ২ বার ২৭০টাকা নিয়েছে
- ক্লাচ কেবল ১ বার ৩০০ টাকা নিয়েছে
- লুকিং গ্লাস বা পাশেরটা ১ বার সেটা অবশ্য আমার কারনেই দাম ছিল ৫৫০ টাকা
- মিটার ক্যাবল ১ বার যার দাম ৩২০ টাকা
- মিটার লাইট ১ বার।
- ব্রেক সু সামনে ৩ বার আর পিছনে ৪ বার যেগুলোর দাম ৩০০ টাকা
- সামনেরটা ঠিক আছে তবে পিছনের চাকা মনে হয় আর ৩-৪ হাজার পরেই পরিবর্তন করতে হবে
- সামনে পিছনে মিলে ৪ বার টায়ার জেল পরিবর্তন করেছি এক একটা ৩০০-৩৫০ করে নিয়েছে
- প্লাগ, এয়ার ফিল্টার, ইঞ্জিন অয়েল এগুলো সঠিক সময়ে পরিবর্তন করি
সব কথার বড় কথা এই বাইকটা একটা অসাধারন বাইক যদি আপনি এর সঠিক যত্ন এবং সবসময় ইকোনোমিতে রাইড করেন তাহলে আমি বলতে পারি এই বাইক আপনাকে কখনো হতাশ করবে নাহ । তার জন্য অবশ্যই অবশ্যই আপনাকে কমিউটার বাইক কমিউটার হিসেবে ব্যাবহার করতে হবে। এটাকে রেসিং বাইক হিসেবে ব্যাবহার করলে আশানুরূপ নাও পেতে পারেন।
আবারো বলছি যদি আপনি এই বাইক সবসময় ভালো ভাবে রাইড করেন ইকোনোমিতে চালান। বা চালাতে পছন্দ করেন তাহলে এই বাইকটি আপনার জন্য । আপনি এর পারফরম্যান্স এ মুগ্ধ হয়ে যাবেন। এটুকু বলে শেষ করছি । ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন । সবসময় যতটুকু গতি আপনার কন্ট্রোলে থাকবে সেই গতিতেই চালাবেন। এবং অবশ্যই অবশ্যই একটা ভালো হেলমেট ব্যাবহার করেবেন। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ মোহাম্মদ সোহরাব হোসেইন