ইয়ামাহা ফেজার নিয়ে লিখেছেন শাইখুল
This page was last updated on 06-Jul-2024 12:40pm , By Shuvo Bangla
ইয়ামাহা ফেজার নিয়ে লিখেছেন শাইখুল
প্রায় ১ বছর ধরে একটা পুরাতন Hero Honda Hunk চালিয়েছি। ইচ্ছা ছিলো পরে এফজেড সিরিজের কোন একটা বাইক কিনবো। ব্যক্তিগত পছন্দ ছিলো Fz-16. কিন্তু মার্কেট আউট হয়ে যাওয়ায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হয়। প্রায় সারা বছরে তিল তিল করে জমানো পুজি দিয়ে কিনে ফেললাম একটা Yamaha Fazer. এর মধ্যেই পার করে ফেলেছি ২০০০ কিমি। দুই মাসের ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্যই এই পোস্ট।
Also Read: চলছে ইয়ামাহা স্প্রিং ফেস্ট – মার্চ ২০১৯ !!!
বাইক কিনার পরেই আমি বাইকের সাথে দেয়া User manual খুটিয়ে খুটিয়ে পড়েছি। কোম্পানি থেকে বলে দেয়া ব্রেক ইন পিরিয়ডের যাবতীয় নিয়মাবলী মানার চেষ্টা করেছি। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রথম ৫০০ কিমি পর্যন্ত বাইকের RPM এর কাটা 4.5 এর উপরে উপরে উঠতে দেইনি। টপ স্পীড ছিলো ৫১ কিমি/ঘন্টা। এরপর ১০০০ কিমি পর্যন্ত সর্বোচ্চ আরপিএম রেখেছি ৬০০০ এবং টপ স্পীড ৭৫কিমি/ঘন্টা। প্রথম ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন করেছিলাম ৫০০ কিমি পরেই। প্রথম ১০০০ কিমি পার হবার পরেই বাইক মোটামুটি কোন রেস্ট্রিকশন ছাড়াই চালিয়েছি। নিচে ব্যক্তিগত উপলব্ধিতে বাইকের পসিটিভ আর নেগেটিভ কিছু দিক তুলে ধরেছি। আমার মতামতগুলো নিতান্তই নিজের পারসোনাল এক্সপেরিয়েন্স মাত্র।
Positive points:
1) লুকঃ ফেজার এর প্রথম ভালো দিকটা হলো এর লুক। R15 আর CBR বাদে বাকী ১৫০ সিসি বাইকগুলোর মধ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে স্মার্ট আর Sporty লুক হচ্ছে ফেজারের। বাইকের ড্যাশবোর্ড, রিয়ার টায়ার, হ্যান্ডেল, লুকিং গ্লাস, সাস্পেনশন সবকিছুতেই একটা অন্যরকম স্মার্টনেস আছে। বাইকে বসলেই মনে হয় " I m on a machine..." সত্যি কথা বলতে কি এই ভাবের জন্যই বাইকের এতো আকাশছোয়া দামকে নিমিশে মেনে নেয়া যায়।
2) কর্নারিংঃ আমি ফেজার নিয়ে সবচেয়ে বেশি কম্ফোর্ট ফিল করেছি কর্নারিং করে। FZ এর চেয়ে এই বাইকের কর্নারিং আমার কাছে বেশি স্মুথ মনে হয়। সুন্দরমত একদিকে হেলিয়ে দিয়ে আবার বেশ কনফিডেন্স নিয়ে বাইক সোজা করে ফেলা যায়। আর হ্যান্ডেলে কোন ভার না থাকায় ক্ষুদ্রতম সময়ে বাউলি মেরে আবার আগের পজিশনে যাওয়া কোন ঘটনাই না।
3) ব্রেকিংঃ ইয়ামাহা এফজেড সিরিজের ব্রেকিং নিয়ে আমার নিজের কিছু বলা লাগবে না। এর স্মুথ ব্রেকিং সিস্টেম এর কথা সবাই কমবেশি জানে। বেশ কয়েকটি ইমার্জেন্সি মোমেন্টে বেশ কনফিডন্সের সাথে ব্রেক করে পার পেয়েছি ফেজার দিয়ে। ব্রেকিং এর উপর আস্থা আছে বলেই আপনি নিশ্চিন্তে ৭৫ কিমি/ঘন্টায় বাইক চালিয়ে যেতে পারবেন টানা।
4) কম্ফোর্টঃ হাইওয়ের জন্য বেস্ট বাইক হলো ফেজার। এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। বাইক কেনার পরে প্রায় ৪০০ কিমি এর মত হাইওয়েতে চালানো হয়েছে আমার। ফেজারের সিটিং পজিশন, হ্যান্ডেল বেশ আরামদায়ক। টানা চালালেও কোন ব্যাথা বা অস্বস্তি হবে না। আর সামনের Aerodynamic কিট বাতাস কাটিয়ে নিয়ে যাবে। মানে গায়ে বাতাস কম লাগবে। স্পীডোমিটারে না তাকালে আপনি টেরই পাবেন না যে বাইকের স্পীড 90 kmph পার হয়ে গেছে।
5) টপ স্পীড এবং Acceleration: সত্যি কথা বলতে কি, এই পোস্ট যখন লিখছি আর একটু আগেই আমি বাইকের টপ স্পীড টেস্ট করে এসেছি...... যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারে ফুল থ্রোটলে বাইকের স্পীড ছিলো ১১৭ কিমি/ঘন্টা। এর উপরে আর উঠানো যায় নি। বাইকের স্পীড নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কোন অভিযোগ নেই। ঢাকার রাস্তায় ৭০-৮০ তে চালাতে পেরেই আমি বেশ খুশি এবং স্বচ্ছন্দ। আর Acceleration নিয়ে বলবো ফেজারের আসল রুপ বোঝা যায় 4th গিয়ারে উঠার পর। প্রথম দুই গিয়ারে এক্সিলারেশন কম থাকলেও বাকী বাইকগুলোর তুলনার ৪ নাম্বার গিয়ারে এটা অনেক শক্তিশালী এবং সাবলীল। এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি। অভিজ্ঞরা দ্বিমত পোষন করতে পারে।
Also Read: ইয়ামাহা ফেজার এফআই মালিকানা রিভিউ
Negative points:
1) ফেজারের সামনের কিটের জন্য জ্যামের রাস্তায় এটি চালাতে হালকা সমস্যা হতে পারে। ইউটার্ন নেয়ার সময় FZ এর চেয়ে তুলনামুলক বেশি radius দরকার হয়। মাঝে মাঝে এটা বেশ পীড়াদায়ক।
2) সিট ছোট হওয়াতে এই বাইকে ২ জনের বেশি নেয়া বেশ কষ্টসাধ্য। ৩ জন নিয়ে চালাতে গেলে চালকের অবস্থা খারাপ হবে......
3) চওড়া লুকিং গ্লাস জ্যামের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় ঝামেলা করবে। কোন ট্রাক বা কারের সাথে লেগে হালকা আচড়ও লাগতে পারে।
4) জ্বালানীখরচ নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই যদিও এটাই এফজেড সিরিজের অন্যতম নেগেটিভ পয়েন্ট। আমার নতুন ফেজার অনায়াসে এক লিটার পেট্রোলে ৩০ কিমি+ যায় এবং এতেই আমি খুশি।
সবাইকে ধন্যবাদ । সাবধানে বাইক চালান এবং হেলমেট ব্যবহার করুন......