Yamaha R15 V3 Indian ১০,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - মৈনাক
This page was last updated on 30-Jul-2024 03:00pm , By Raihan Opu Bangla
আমি হুমায়ুন কবির মৈনাক, বর্তমানে একটি Yamaha R15 V3 Indian ভার্শন এর বাইক চালাচ্ছি । আমি একটি কনষ্ট্রাকশন ফার্মে কর্মরত আছি। ছোট বেলা থেকেই বাইকের উপর অসম্ভব একটা আকর্ষন অনুভব করতাম।
Yamaha R15 V3 Indian ১০,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ
২০১৭ সালে প্রথম একটি বাইক চালানো শুরু করি, বাইকটি ছিল Honda CG 125। তারপর ক্রয় করি TVS Metro 100। ২০১৯ সালে কেনা হয় Yamaha Fazer। Fazer সেল করে ২০২১ সালের জানুয়ারী মাসে ক্রয় করি Yamaha R15 V3 Indian ভার্শন এর বাইকটি।
এই ৯ মাস বাইকটি চালিয়ে আমার যেরকম মনে হয়েছে যা আমি অনুভব করেছি তাই আপনাদের কাছে শেয়ার করবো। Yamaha R15 V3 ইন্দো ভালো না Yamaha R15 V3 Indian ভার্শন ভালো সেই তর্কে আমি জাবোনা। আমি ইন্ডিয়ান ভার্শন চালাচ্ছি গত ৯ মাস যাবৎ আমার এই রাইডিং অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করেই আমি আমার রিভিউ দিচ্ছি।
বাইকটা কেনার দিন ডেলিভারী নিতে নিতে রাত ১০টা বেজে গিয়েছিল। এবং বাইকটা প্রথম বার চালাতে আমার খুব ভয় হচ্ছিল। কিন্তু ১০ মিনিট চালানোর পর সব ঠিক হয়ে যায় মনের ভয় কেটে যায়।বাইকটা কিনেছিলাম বাংলামটর থেকে ৪.০০ লক্ষ টাকা দিয়ে। এসিআই থেকে কিনতে পারিনাই বাজেটের অভাবে। কারন ওরা ৪ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা চাচ্ছিলো।
আমার বয়স ৪৩ বছর। এখানে উল্লেখ্য যে ২০১৫ সালে টাংগাইল গোবিন্দাসী গরুর হাটে বাইক এ্যাক্সিডেন্টে আমার বাম হাতের কলার বোন ভেঙ্গে যায়। যা মাঝে মাঝেই আমাকে প্যারাদেয়। হাত ঝিন ঝিন করে। এই কথা বলার পিছনে যথাযথ কারন আছে যা লেখাটি পড়তে পড়তেই বুঝতে পারবেন।
তো যেকথা বলছিলাম বাইকটি কিনে চালানো শুরু করার পর ১০ মিনিটের মধ্যেই আমার মনের ভয় কেটে যায় এবং বাইকটি ভালো ভাবেই চালানো শুরু করি। কিন্তু আমার হাত অসম্ভব ব্যাথা করা শুরু করে। বাসায় এসে একাকি চিন্তা করতে থাকি এটা কি করলাম ফেজার বিক্রি করে এটা কি কিনলাম এখন কি হবে।
কারন আমার হাত অবশ হয়ে ছিল। সারা রাত ব্যাথা করছিল। আমি ইউটিউব দেখ, অন্যদের কাছে শুনে এই বাইকটাতে যথাযথ বসে, পায়ে ভরদিয়ে বাইকটি চালিয়ে দেখেছি কিন্তু আমার হাতের ব্যাথা কোন ভাবেই কমছিল না। এটা কিন্তু বাইকের ফল্ট না আমার হাতের।
ফেজার বাইকটা বিক্রি করার পেছনে মূল কারন ছিল এর রেডি পিকাপ অসম্ভব কম। আমি ঢাকা টু গাইবান্ধা, ঢাকা টু জামালপুর, সিলেট, জাফলং, ছাতক, সুনামগঞ্জি ইত্যাদি জেলায় ফেজার নিয়ে অহরহ যাতায়াত করতাম।
একবার আমার ওয়াইফ কে নিয়ে সিলেট বিছনা কান্দি যাবার সময় আমি ফেজারের রেডি পিকাম যে কম সেটা খুব অনুভব করি এবং সিদ্ধান্ত নেই যে একটা রেডি পিকাপ আছে এমন বাইক কিনবো।
এই কারনেই আমার Yamaha R15 V3 Indian ভার্শন নেওয়া। যাইহোক আমি ঢাকার গেন্ডারীয়ার ঢালকানগর থাকি এবং আড্ডা দেই কাদরী মটর বাইক নামক দোকানে যা জুরাইন পাইপ রাস্তা মুন্সীবাড়ির ঢালে অবস্থিত। বাইকটি কেনার পর আট দিনের মাথায় আমি বাইকের হ্যান্ডেল বার মডিফাই করতে বাধ্য হই।
কাদরী মটর বাইক দোকানের মালিক জনাব সার্জেন্ট সৈয়দ জামান উদ্দিন। আমরা তাকে চাচা বলে ডাকি। উনি আর্মি রিটায়ার্ড। আমাদের অনুরোধেই উনি তার নিজের বাড়ির নিচে এই মটর রিপেয়ার সপ দিয়ে বসেছেন। যাইহোক চাচাকে আমার সমস্যার কথা জানানোর পর উনি কিছুতেই রাজি হচ্ছিলনা হ্যান্ডেল বার মডি ফাই করতে।
চাচাকে দিয়েই বাইকের হ্যান্ডেলবার মডিফাই করাই। হ্যান্ডেল বার আমি প্রায় ৭” উচু করেছি। সক অবজারভারে বুশ লাগিয়ে উচু করা হয়। যার ফলে আমার বাইকের উইনসেড কাটা লাগে। এবং ব্রেক ক্যাবল ও হাইড্রোলিক ক্যাবল পরিবর্তন করতে হয়
যাক হাত ব্যাথা থেকে আমি এখন মুক্ত। ব্যালেন্সে কোন পরিবর্তন হয় নাই। চমৎকার ব্রেক এন্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম(ABS) সহ। শুধু টপ কমে গেছে মনে হয়, কারন এখন আমার ঝুকা লাগেনা ফলে বাতাস সব আমার শরীরেই লাগে।
বাইকটি এপর্যন্ত চালিয়েছি ১০,০০০কিলোমিটার। ২১ জুলাই ২০২১ ইং তারিখ আমি মৌলভীবাজারে ডে ট্যুর দিয়েছিলাম অফিসের কাজে প্রায় ৪০৮ কিলোমিটার। ট্যুরে মাইলেজ পেয়েছিলাম ৫০+।
বাইকটিতে আমি ইয়ামাহা রেসিং 10w40 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করি এবং ৩০০০ কিলোমিটার পরপর পরিবর্তন করি। আমি চমৎকার পার্ফরমেন্স পাচ্ছি এই ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করে।
বাইকটির হেড লাইটের আলো হাইওয়েতে খুব একটা সাপোর্ট দেয় না। এবং বাইকটির পেইন্ট খুব ভালো কোয়ালিটির না । অল্প কয়েকদিন পরই উঠে যেতে থাকে। বাইকটিতে পিলিয়ন হিসাবে আমার ওয়াইফ কে নিয়ে আমি শ্রিমঙ্গল ভ্রমন করেছি। আমার বা তার তরফ থেকে কোন অভিযোগ পাইনাই।
কারন সে আমার পিছনে ফেজারে বসেও সিলেট ভ্রমন করেছিল। তাকে জিজ্ঞাগ করা হলে সে বলে তার জন্য ফেজারও যা Yamaha R15 V3 Indian ভার্শন তাই, তার কোন সমস্যা নাই। ভাই আমি কিন্তু Yamaha R15 V3 চালাই ফেজারের মতো। আমার হ্যান্ডেল বার উচু হবার কারনে আমাকে আর ঝুকে থাকতে হয় না।
গত ১২-৮-২০২১ ইং তারিখে আমি যথারিতি আমার ওয়াইফ সহ ঢাকা থেকে ডিম পাহারের উদ্দেশ্যে ভোর ৪টা বাজে রওনা দেই। ৭০০০ আপিএম এর পরে যখন ভিভিএ একটিভ হয় তখন বাইকের যে সাউন্ড হয় তা অসাধারন। বাইকটির পাওয়ার আমাকে মুগদ্ধ করেছে। এক কথায় অসাধারন।
Yamaha R15 V3 2018 Edition First Impression Review By Team BikeBD
বাইকটি নিয়ে কর্নারিং করাটাও একটা অসাধারণ উপলব্ধি। কুমিল্লা পার হচ্ছি যখন তখন অসম্ভব বৃষ্টির মধ্যে পরি। ব্যাগ থেকে রেইন কোট পরে বাইক রাইড যখন শুরু করি ২মিনিট চালানোর পর রাস্তার সাথে এ্যাডজাস্ট হয়ে যাই। এবং বাইকের ব্যালেন্স খুব ভালো পাই এবং চাকা পিছলে যেতে পারে এই ভয়ও পাই নাই কারন বাইকটি বরাবরি মাটি কামরে চলে।
মোট কথা বৃষ্টিতেও বাইকটি চালাতে আমার কোন রকম সমস্যা হয় নাই। ভাটিয়ারী পার হবার পর নতুন একটি রাস্তা হয়েছে যা বাম দিকদিয়ে যেতে হয় যা কিনা বায়জীদ লিংক রোড নামে পরিচিত। পাহাড় কেটে অসম্ভব সুন্দর একটি রাস্তা বানিয়েছে। তো বায়জীদ লিং রোড ধরে কর্নফুলী ২ ব্রীজ অতিক্রম করে বেলা ৪টায় সময় বান্দরবান পৌছাই।
আমার বাইকের ইঞ্জিন অয়েল তখন অলরেডি ২৪০০কিলোমিটার হয়ে গেছে। বান্দরবান পৌছিয়ে হোটেলে উঠে খাওয়া দাওয়া করে ঘুম। ভোর ৬টায় উঠে নাস্তা করে থানচির পথে রওনা হতে হতে বেলা ৭টা। যাই হোক পাহাড়ী রাস্তা চলতে চলতে বাইকের ইঞ্জিন এর পাওয়ার অনুভব করছিলাম।
নীলগিরির পর নীলদিগন্ত উঠার সময় হঠাৎ একটা খাড়া ঢাল আছে যা আমি পিলিয়ন নিয়ে ২ গিয়ারে উঠে গিয়েছি কোন সমস্যা ছাড়াই। বান্দরবান থেকে থানচি মোটামোটি ৭৮ কিলোমিটার পাহাড়ী পথ ।
আমি বলতে গেলে চিম্বুক পাহাড়ে আধাঘন্টা দাড়াই এবং বলি পাড়া চেকপোষ্টে ৩০ মিনিট দাড়াই এছাড়া মোটামোটি টানা বাইক চালাই এতে আমার বাইকের ইঞ্জিন বা ডিক্সব্রেক কোন প্রকার গরম হয় নাই যা কিনা আমাকে সমস্যায় ফেলতে পারে।
আমি থানচিতে পৌছে হোটেল নিয়ে আবার ডিম পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হই। কোন রকম সমস্যা ছাড়াই বৃষ্টির মধ্যে পিলিয়ন নিয়ে ডিম পাড়ার তিন্দু সংযোগ সড়ক ঘুরে আবার থানচি ফিরে আসি। এবং ১৪-০৮-২০২১ইং তারিখ থানচি টু ডিম পাহাড় টু ঢাকা এই পুরা রাস্তা আমি একদিনেই চালিয়ে আসি কোন রকম সমস্যা ছাড়া। বাইকটি খুব একটা বাজে ভাবে কখনোই গড়ম হয় না। বাইকটি আমাকে মডিফাই করার পর হতাশ করেনি।
ইয়ামাহার এমন ইউজার রিভিউ এবং r15 v3 price in bangladesh এর সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে আমাদের ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেল ঘুরে দেখুন। শুধু ইয়ামাহা নয় আরো বাইকের ইউজার রিভিউ রয়েছে আমাদের ওয়েবসাইটে। আপনাদের মূল্যবান বক্তব্য এবং r15 v3 ভালো বা খারাপ দিক আপনার কাছে কোনটা মনে হয় সেগুলো আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন । ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ হুমায়ুন কবির মৈনাক
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।