Yamaha FZS V2 DD Dark Night ৯০০০ কিলোমিটার রাইড - তন্ময়
This page was last updated on 28-Jul-2024 12:42pm , By Shuvo Bangla
আমি তন্ময় । ঢাকা সিটি কলেজে অধ্যায়নরত আছি। আমি পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকায় থাকি। বর্তমানে আমি Yamaha FZS V2 DD Dark Night বাইকটি ব্যাবহার করতেছি । আজ আমি আমার এই Yamaha FZS V2 DD Dark Night বাইকটি ৯,০০০ কিলোমিটার রাইড করার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
Yamaha FZS V2 DD Dark Night ৯০০০ কিলোমিটার রাইড - তন্ময়
Yamaha FZS V2 DD Dark Night বাইকটি আমার চার নাম্বার বাইক। এর আগে আমি Yamaha R15 V2 এবং Bajaj Pulsar NS 160 বাইক গুলো ব্যাবহার করেছি। আমি যেহেতু একজন স্টুডেন্ট তাই বাইকের লুকিং এবং মেন্টিনেন্স খরচের কথা মাথায় রেখেই আমার এফজেড ভার্সান টু বাইকটি কেনা।
আমি যেহেতু বাইকিং এর সঙ্গে যুক্ত, এবং ভ্রমণ করতে অনেক ভালোবাসি,নিজের দেশটিকে ঘুরে দেখতে চাই সেই কারণে আমার সুন্দর একটি লুকিং যুক্ত, মেনটেনেন্স খরচ কম, রিসেল ভ্যালু, ব্র্যান্ড ভ্যালু যুক্ত একটি বাইকের প্রয়োজন ছিল। আমি যতদূর রিভিউ বা ভাই-ব্রাদারদের থেকে ফিডব্যাক পেয়েছি তার থেকে আমার মনে হলো Yamaha FZS V2 DD Dark Night বাইকটি আমার জন্য ভালো হবে। এর আগে আমি Yamaha R15 V2 এবং Bajaj Pulsar NS 160 বাইক গুলো ব্যাবহার করেছি। বাইকটি বর্তমানে স্টুডেন্টদের জন্য অন্যতম সেরা একটি বাইক।
আমি মুলত বাইক ব্যবহার করি ঘোরাঘুরি এবং পড়াশুনার কাজে এদিক-সেদিক যাওয়ার জন্য এবং ফ্যামিলির প্রয়োজনে । ফ্যামিলির কথা আসলে প্রথমেই মাথায় আসে পিলিয়ন ছিট এর কথা, FZ সিরিজে খুবই কম্ফোর্ট একটি পিলিয়ন ছিট দেওয়া হয়েছে। যতদুর জানি FI বাইক মানেই মাইলেজ খুব ভালো, আর যতদূর শুনেছি এফ জেড সিরিজ নাকি মাইলেজের সেরা বা মাইলেজ কিং বলা হয় এই সিরিজটিকে। সুতারাং সবকিছু মিলিয়ে চিন্তা করে দেখলাম এ দামে Yamaha FZS V2 DD Dark Night এর থেকে ভালো অপশন আমার হাতে আর নেই। সবকিছু ঠিকঠাক হওয়ার পর ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর আমি আমার প্রিয় FZS V2 DD বাইকটি ঢাকা-মিরপুরের ক্রিসেন্ট এন্টারপ্রাইজ থেকে ২,৩৬,০০০ টাকায় কিনেছিলাম। কিন্তু বর্তমানে এর মূল্য ২,১০,০০০ টাকা।
Click To See Yamaha FZS V2 DD Test Ride Review – Team BikeBD
আমার Yamaha FZS V2 DD Dark Night বাইক কিনতে যাওয়ার দিনটি আমার কাছে খুবই স্মরণীয় হয়ে থাকবে,কারণ এই প্রথমবার আমি নিজে একা গিয়ে বাইক কিনেছিলাম। আসলে সেদিন আমার পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে আমি আমার মিরপুরের একটি বন্ধুকে সাথে নিয়ে বাইকটি কিনতে গিয়েছিলাম। আমার মনে আছে সেদিন শো-রূমে কোনো বাইক ছিলোনা। মোটামুটি আমি তিন ঘন্টার মত শো-রুমের মধ্যে বসে ছিলাম এরপর সন্ধ্যা সাতটায় ট্রাকে করে বাইক আসলো যাক সবকিছু মিলে দিনটি অনেক সুন্দর ছিল। প্রথমবার বাইকটা চালানোর অনুভূতিটা বলে প্রকাশ করার মতো না। কিন্তু মাঝখানে একটু সমস্যা হয়েছিল কারণ আমি একটি স্পোর্টস সেগমেন্টের বাইক থেকে হঠাৎ কমিউটার বাইক চালাচ্ছি , তাই এডজাস্ট হতে ২ দিন সময় লেগেছিল।
এর আগের বারের FZS V2 সিঙ্গেল ডিক্স এর তুলনায়, FZS V2 DD এ কিছু বাড়তি ফিচার যোগ করা হয়েছে। নতুন ডিজাইনের মিরর এবং শুধুমাত্র ডুয়েল ডিক্স ভার্সনেই ম্যাট কালার এর অপশন রয়েছে । এগুলো ছাড়া এফ জেড ভার্সন টু সিঙ্গেল ডিক্স এর সঙ্গে তেমন কোন পার্থক্য নেই।
আমি এ পর্যন্ত আমার বাইকটি চারবার সার্ভিসিং করেছি। প্রথমে ১০০০ কিলোমিটারে তারপর ৩০০০ কিলোমিটারে , তারপর ৬০০০ কিলোমিটারে এবং এর পরে ৮০০০ কিলোমিটারে সার্ভিসিং করেছিলাম। আমার মতে ইয়ামাহার অথোরাইজ সার্ভিস সেন্টার গুলোর মধ্যে (3s সেন্টার তেজগাঁও) বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম বেস্ট একটি সার্ভিস সেন্টার। আমি আমার ইয়ামহা বাইক গুলো এবং আমার পরিচিত ইয়ামাহা ইউজারদের সবসময় 3S সেন্টার তেজগাঁও সাধারণত রিকমান্ড করে থাকি। আমি প্রথম ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাইকের ব্রেক ইন পিরিয়ড মেইনটেইন করেছিলাম। কিন্তু প্রথম ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাইকের মাইলেজ আমাকে খুবই হতাস করেছিল আমি প্রথম ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাইকের মাইলেজ মাত্র ৩০ থেকে ৩২ কিলোমিটার পার লিটারে পেয়েছিলাম ।
খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি নতুন বাইকে মাইলেজ একটু কম দেয় । তারপর মোটামুটি কিছুদিন যাওয়ার পর মানে ৫০০ কিলোমিটার পার হওয়ার পর আমার বাইকের মাইলেজ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং বর্তমানে আমি বাইকের মাইলেজ ৪২ থেকে ৪৪ পাচ্ছি । আমি সর্বোচ্চ ৪৯ কিলোমিটার পার লিটার মাইলেজ পেয়েছি। আমি আমার এই বাইকটিতে Yamalub ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করি এবং মাঝে মাঝে মতুল এর 10W40 গ্রেডের সেন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে থাকি। বাইকটিতে আমি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্পিড পেয়েছি পিলিয়ন নিয়ে ১১২ এবং সিংগেলে ১১৫ । আসলে টপ স্পিড নিয়ে আমার বেশি আগ্রহ নেই,কারণ বাংলাদেশ সেরকম রাস্তা নেই।
এ বাইকটি ভালো লাগার মত আমার কাছে কিছু দিক হলো, এটি ৭০ এর নিচে স্পীড থাকলে মাইলেজ খুবই ভালো পাওয়া যায়। এর জন্য আমার কাছে খুবই বেশি ভালো লাগে। তাছাড়া এর ব্রেকিং,কন্ট্রোলিং, লুকিং এবং কম্ফোর্ট যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। বাইকটির কিছু দিক আমার খারাপ লেগেছে তা হলো ৭০ এর উপরে স্পিড উঠলে বাইকটির মাইলেজ প্রায় ৪০ এর দিকে চলে আসে। কিন্তু এই সমস্যাটি আমি R15 সিরিজে পাইনি তাছাড়া ওভার টেকিং এর ক্ষেত্রে গিয়ার কমিয়ে তারপর এক্সেলেটর দিয়ে ওভারটেক করতে হয়। পাওয়ার কম থাকার কারনে অনেক সময় ওভারটেকিং এ কনফিডেন্স কম পাই ।
বাইকটি ম্যাট ব্ল্যাক কালার হওয়ার কারণে বাইকটি অনেক বেশি ময়লা হয় । যদি আমি এখন পর্যন্ত কোনো কিছু পরিবর্তন করিনি তবে শুনেছি,এই বাইকের রেয়ার ব্রেক-শো এর দাম 2000 টাকার বেশি যেটি আমার কাছে খুবই খারাপ লেগেছে। এ কয় মাসে বাইকটি নিয়ে মোটামুটি অনেক জায়গায় ঘুরেছি। কিন্তু সব থেকে ভালো ট্যুর ছিল আমার রাজশাহীতে। আর রাজশাহী যাওয়ার সময় ব্রেকিং ভালো থাকার কারণে এক জায়গায় এক্সিডেন্ট এর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছি । রাজশাহী যাওয়ার পথে অনেক ভাঙ্গা রাস্তা ছিল সেখানে অফরোডিংয়ে আমাকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছে বাইকটি। ধন্যবাদ জানাই ইয়ামাহাকে আমাদের জন্য এত সুন্দর একটি বাইক তৈরী করার জন্য। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ তন্ময়
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।