Yamaha FZS Fi V2 Review - ২৫০০ কিলোমিটার টেস্ট রাইড
This page was last updated on 27-Jul-2024 05:32pm , By Saleh Bangla
ইয়ামাহা বাংলাদেশ এর অন্যতম জনপ্রিয় মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড। তারা সাধারনত প্রিমিয়াম কোয়ালিটির জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ইয়ামাহার এক মাত্র কমিউটিং সেগমেন্টের বাইক হচ্ছে Yamaha Saluto এছাড়া বাকি সব মোটরসাইকেল ১৫০সিসি সেগমেন্টের। যদিও গত এক বছরে ইয়ামাহার কোয়ালিটি এবং সার্ভিস নিয়ে অনেক অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। বিশেষ করে Yamaha FZS/Fazer এই দুটি বাইক নিয়ে অনেক অভিযোগ শোনা গিয়েছে। তাই আজ আমরা টিম বাইকবিডি আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি Yamaha FZS Fi V2 Review ।
Yamaha FZS Fi V2 Review - ২৫০০ কিলোমিটার টেস্ট রাইড
Yamaha FZS Fi V2 হচ্ছে ইয়ামাহার সম্পূর্ন নতুন মোটরসাইকেল। এর ডিজাইন সম্পূর্ন নতুন ভাবে করা হয়েছে এবং ইঞ্জিনে ফুয়েল ইঞ্জেক্ট সিস্টেম দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাইকের বেসিক সব কিছুই আগের মত রয়েছে। এই বাইকটি গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে Aci Motors বাইকটি লঞ্চ করে। মোটরসাইকেলটি লঞ্চ হওয়ার পর পর অনেক অভিযোগ পাওয়া গিয়াছে বিশেষ ভাবে চেইন স্পোকেট এবং বিল্ড কোয়ালিটি ও সেল সার্ভিস তেমন ভালো ছিল না।
Yamaha FZS Fi V2 Review – ইঞ্জিন
Yamaha FZS Fi V2 এর ইঞ্জিন হচ্ছে ১৪৯সিসি, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, দুটি ভালব এবং এয়ার কুল্ড। ইঞ্জিনের চেম্বার কম্বিনেশন ডিজাইন করা হয়েছে ফুয়েল ইকোনমি এবং এক্সিলারেশনের জন্য। ইয়াহামাহা দাবী করছে যে এই বাইকটি কার্বুরেটর ভার্সনের চেয়ে ১৪% ভাগ বেশি মাইলেজ দেবে। ইঞ্জিনের বোর ছোট এবং ইনটেক ভাল্ব হওয়াতে এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে বেষ্ট কম্বিনেশন পাওয়া যায়। মোটরসাইকেলটির বেসিক কনসেপ্ট হচ্ছে ফুয়েল ইফিসিয়েন্ট করা এবং রাইডিং কে স্মুথ করা। ইঞ্জিনের স্মুথ হওয়ার কারণ হচ্ছে Fuel Injection(FI) সিস্টেম যা সবাই ইয়ামাহার Blue Core Technology হিসেব চিনে থাকে। এছাড়া কিছু এডভান্স সেন্সর এবং একিউরেটরস যা বেস্ট মাইলেজ এবং ফুয়েল পারফর্মেন্স দেয়।
নতুন এই Yamaha FZS Fi এর ১৪৯ সিসি ইঞ্জিন 13BHP @ 8000rpm এবং 12.8NM Torque @ 6000rpm ক্ষমতা সমৃদ্ধ। এছাড়া এর সাথে ৫ স্পিড গিয়ার বক্স যুক্ত আছে। ইঞ্জিনটি BSIV হওয়াতে কমপ্লায়েন্স মাইলেজ এবং এক্স হস্ট পাইপ থেকে কম ধোয়া বের হয় তাই এটি পরিবেশের কম ক্ষতি করে।
Yamaha FZS Fi V2 Review – ডিজাইন এবং স্টাইল
ইয়ামাহার এই নতুন এফজেডএস এফআই ভার্সন ২ বাইকটি পুরাতন ভার্সনটির চেয়ে অনেক বেশি স্টাইলিশ। Yamaha FZS Fi V2 বাইকটিতে সম্পূর্ন নতুন ধরনের রিফলেকটর হ্যালোজেন লাইট এবং সাইডে এয়ার স্কুপ দেয়া আছে। ঠিক ফুয়েল ট্যাংক এর পাশে। প্রথম দিকের বাইক গুলোতে রেয়ার টায়ার মাড গার্ড দেয়া ছিল কিন্তু এখন যে বাইক গুলো বাংলাদেশে আনা হয়েছে তাতে একটু বাড়তি রেয়ার মাড গার্ড দেয়া হয়েছে। তবে চেইন এখনও খোলাই রাখা হয়েছে। মোটরসাইকেলটিতে একদম সম্পূর্ন নতুন ধরনের এক্স হস্ট দেয়া হয়েছে। যা এর আগের ভার্সনটি থেকে এর লুকিংকে অনেক বেশি সুন্দর করেছে। রিয়ার সাইড অনেক বেশি প্রশস্থ হওয়ার কারনে রাইডার এবং পিলিয়ন দুইজনের জন্য অনেক বেশি কমফোর্টেবল।
Yamaha FZS Fi V2 টেল এর শেষ দিকে আগের ভার্সনের মতই এক রকম রাখা হয়েছে। বাইকটিতে আগের ভার্সনের মতই সুইচ গিয়ার ও হ্যান্ডেল বার রাখা হয়েছে। এই বাইকটিতে AHO দেয়া হয়েছে, তাই হেড লাইট অন বা অফ করার কোন সুইচ দেয়া হয়নি। এছাড়া ফুয়েল ট্যাংক নতুন ভাবে ডিজাইন করা ও স্পিডোমিটারটিও নতুন। এফজেডএস এর এই ভার্সনটিতে কিল সুইচ ও পাস লাইট দেয়া হয়েছে। মোটরসাইকেলের স্পিডোমিটারটি সম্পূর্ন ব্র্যান্ড নিউ। এটি ডিজিটাল সাথে রেভ কাউন্টার, ফুয়েল গেজ এবং আরপিএম কাউন্টার দেয়া হয়েছে। এছাড়া কোন ওয়ার্নিং লাইটস নেই এবং কোন ঘড়ি বা সিঙ্গেল কন্ট্রোল বাটন নেই, যা হতাশাজনক। রিয়ার ভিউ মিরর বেশি বাইরের দিকে দেয়া নয়।
Yamaha FZS Fi V2 Review – ফিচারসমূহ
বাইকটির সিট অনেক বেশি প্রশস্থ এবং সিট তৈরিতে ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হয়েছে সিল্প রেসিস্টেন্স, যাতে করে রাইডার বা পিলিয়নের কোন সমস্যা না হয়। প্রশস্ত সিট রাইডার এবং পিলিয়নের জন্য অনেক বেশি কমফোর্টেবল। এছাড়া পিলিয়নের জন্য গ্রেইব রেইল দেয়া হয়েছে। যাতে পিলিয়ন আরাম করে ধরে বসতে পারে। FZS V2 Fi এ পিছনের দিকে সারি গার্ড দেয়া হয়েছে কিন্তু এক্সট্রা কোন ফুট রেস্ট দেয়া হয়নি। এছাড়া রাইডারের ফুট পেগ কিছু পিছনের দিকে দেয়া হয়েছে যাতে রাইডিং পজিশনে আপনি ঘাড়ে বা বাহুতে কোন পেইন অনুভব করবেন না সিটি বা হাইওয়েতে।
বাইকটিতে আগের ভার্সন থেকে ওজন কমিয়ে ফেলা হয়েছে। বাইকটি র প্রায় ৩ কেজি ওজন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এর এতেই এর ব্রেকিং ও কন্ট্রোলিং অনেক বেশি স্মুথ হয়েছে। এছাড়া নতুন ফুয়েল ট্যাংকের ডিজাইনে লেগ স্পেস অনেক বেশি আগের ভার্সনের তুলনায়।
Yamaha FZS Fi V2 Review – সাসপেনশন এবং ব্রেকিং
যদিও এটি একটি ক্ষমতা সম্পন্ন বাইক। তবুও যখন ব্রেক ও সাসপেনশনের দিক থেকে এই সেগমেন্টের বেস্ট। এর ফ্রেম হচ্ছে ডায়মন্ড ফ্রেম ও মোটা টেলিস্কোপিক ফ্রন্ট সাসপেনশন এবং রিয়ার সাসপেনশন হচ্ছে মনোশক। বাইকটির ফ্রন্ট টায়ার হচ্ছে ১০০/৮০ এবং রিয়ার টায়ার হচ্ছে ১৪০/৬০ স্পেসিফিকেশনের। ২৪০মিমি ফ্রন্ট ডিস্ক ব্রেক এবং রিয়ার হচ্ছে ড্রাম ব্রেক। ইয়ামাহা অনেকটা সুজুকির মত রিয়ার এর ক্ষেত্রে ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করে থাকে না। যা অনেকটাই হতাশাজনক।
সাসপেনশন, টায়ার ও ব্রেক এই তিনের কম্বিনেশনে ১৫০সিসি সেগমেন্টে এই বাইকটি বেস্ট হ্যান্ডেলিং ও ব্রেকিং অদ্বিতীয়। আর এই কারণেই এই বাইকটি স্টান্ট বাইক হিসেবে বেশি পরিচিত বাংলাদেশি স্টান্ট লাভারদের কাছে।
Yamaha FZS Fi V2 Review – রাইডিং অভিজ্ঞতা
যদি আপনি মোটরসাইকেল ঠিক ভাবে রাইড করতে পারেন তবে সিটি বা হাইওয়েতে আপনি বাইকটি খুব ভালো ভাবে কন্ট্রোল করতে পারবেন। যদিও আপনার মনে হতে পারে যে এর ক্ষমতা একটু কম তবে FI ইঞ্জিনের কারনে আপনার বাইকের এক্সেলারেশন অনেক স্মুথ হবে। বাইকটির পাওয়ার ডেলিভারির ক্ষমতা অসাধারন। এছাড়া সময়ের সাথে সাথে আপনি এর বেস্ট পাওয়ার ও ফুয়েল ইফিশিয়েন্সি পাবেন। ইয়ামাহা এফজেডএস এফ আই ভার্সন ২ এর AHO সিস্টেমটি আপনার কাছে বিরক্তকর মনে হতে পারে। কারণ জ্যামের মধ্যে আপনি যখন ইগনিশন অন করে রাখবেন তখন ক্যাপাসিটর থেকে চার্জ নিয়ে লাইট অন থাকবে। আপনি সর্বোচ্চ ৩০ মিনিটের মত ব্যাকআপ পাবেন।
প্রথম ১০০০কিমি তে গিয়ার একটু হার্ড মনে হবে। যদি আপনি টায়ার প্রেসার সঠিকভাবে রাখতে পারেন তবে আপনি অনুভব করবেন যে বাইকটি তৈরি করা হয়েছে স্ট্রেইট এবং কর্নারিং এর ক্ষেত্রে কোন ঝামেলা পাবেন না। কিন্তু সিটিতে পিলিয়ন নিয়ে চলাফেরা করা একটু কষ্টকর হবে এছাড়া এর টার্নিং রেডিয়াস একটু কম। আমরা আজ পর্যন্ত যতগুলো বাইক স্টেট করেছি তাদের মধ্যে কোন না কোন সাসপেনশন ঠিক ভাবে কাজ করত না। তবে FZS Fi V2 এর সাসপেনশন অসাধারন। ফ্রন্ট এবং রেয়ার সাসপেনশন ভাল ভাবেই কাজ করে। তবে খারাপ রাস্তায় রিয়ার সাসপেনশন একটু কম ফিডব্যাক দেয়। ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে FZS FI V2 অসাধারন কাজ দেখিয়ে ইয়ামাহা। আপনি অনেক বেশি স্পিডেও ব্রেকিং এ কনফিডেন্স পাবেন। আজকাল যেসব বাইক তিন লাখের নিচে পাওয়া যায় তাদের এক্সেলারেশনের সাথে ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে তেমন কনফিডেন্স পাওয়া যায় না। কিন্তু এই দিক থেকে FZS একদম আলাদা। তবে আরো ভালো হতো যদি রিয়ার ব্রেকে ডিস্ক ব্রেক দেয়া হতো।
FZS FI V2 বিল্ড কোয়ালিটির দিক থেকে তেমন ভালো ফিনিশিং দিতে পারেনি। যে বাইকটি আমরা টেস্ট করেছি তাতে নতুন স্পেসিফিকেশন হিসেবে চেইনের সাথে রাবার যুক্ত করা হয়েছে। যদিও রাবারের কারনে ড্রাগ অনেক কমে যাবে কিন্তু চেইনের দীর্ঘস্থায়ীত্ব অনেক বেড়ে যাবে। যারা এপ্রিল এর দিকে বাইকটি কিনেছেন তাদের অনেকেই চেইনের বিষয়ে কমপ্লেইন জানিয়েছেন। এই অভিযোগের প্রক্ষিতে এসিআই মোটরস একটি মেগা সার্ভিস ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে। আর তারা চেইন সেটটি পরিবর্তন করে দেয়। আশা করা যায় খুব দ্রুত তারা সারা দেশে এই সার্ভিস ক্যাম্পেইনের আয়োজন করবে।
২০০০ কিমি টেস্ট রাইডিং এ আমরা টপ স্পিড পেয়েছি ১২০কিমি প্রতি ঘন্টায়। আর মাইলেজ পেয়েছি ৩৮কিমি/লিটার সিটিতে এবং হাইওয়েতে ৪৫ কিমি/লিটার। এসিআই মোটরস দাবী করছে যে ২৫০০কিমি পর যে সেকেন্ড সার্ভিসিং করা হবে তাতে মাইলেজ প্রায় ৪০কিমি/লিটার এ পৌছবে। যেহেতু FZS Fi V2 ফুয়েল ইঞ্জেক্ট ইঞ্জিন তাই এতে ভালো গ্রেডের ফুয়েল ব্যবহার করতে হয়। যদি আপনি নিম্ন মানের ও গ্রেডের ফুয়েল ব্যবহার করেন তাতে করে বাইকের পারফর্মেন্স কমে যাবে। তাই আপনাকে যেই গ্রেডের ফুয়েল এবং মোবিল ব্যবহার করতে বলা হবে সেটা ব্যবহারের চেষ্টা করুন। Lets See FZS V2 Price In BD here.
Yamaha FZS Fi V2 Review এর সম্পর্কে চারটি সমস্যা পেয়েছি আমাদের এই টেস্ট রাইডে:
- চেইনঃ বর্তমানে সব FZS FI V2 এবং Fazer Fi V2 ও-রিং চেইন ব্যবহার করা হয়েছে, যা চেইনের দীর্ঘস্থায়ীত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। যারা চেইন নিয়ে সমস্যায় আছেন তাদের কে এসিআই মোটরস এর সার্ভিসং সেন্টারে কল করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
- ফিনিশ প্রোডাক্টঃ এই বিষয়টিতে একটু উন্নতি করা দরকার। যেহেতু ইয়ামাহা বাংলাদেশের অন্যতম বাইক কোম্পানি গুলোর মধ্যে অন্যতম তাই এই বিষয়টির দিকে খেয়াল রাখা উচিত।
- ডুয়েল এক্সলারেশন ক্যাবলঃ বাংলাদেশে বর্তমানে FZS সিরিজে কোন ডুয়েল এক্সেলারেশন নেই। তাই এসিআই এর উচিত এই দিকে বেশি করে খেয়াল করা।
- সার্ভিস সেন্টারঃ এই দিক থেকে ইয়ামাহা কিছুটা পিছিয়ে আছে। তাদের উচতি জেলা শহর বা যারা ডিলার আছে তাদের মাধ্যমে সার্ভিস সেন্টার ওপেন করে সার্ভিস দেয়া। বর্তমানে তাদের ঢাকাতে বড় একটি সার্ভিস সেন্টার রয়েছে যেখানে এক সাথে ১০-১২ বাইক এক সাথে সার্ভিস করা যায়।
এই টেস্ট রাইডে আমরা দেখতে পেয়েছি যে ইয়ামাহা এর অন্যতম বেস্ট কন্ট্রোলিং ও ব্রেকিং সিস্টেম বাইক। যদিও পাওয়ারের দিক থেকে একটু কমতি রয়েছে কিন্তু গ্রাউন্ড এবং কর্নারে সেটি আপনার মনে হবে না। আমাদের এই টেস্ট রাইড রিভিউ এ এক্সেসরিজ পার্টনার ছিল রেস এক্সেসরিজ। যাই হোক এই ছিল আজ আমাদের Yamaha FZS FI V2 Review। আশা করছি আপনারা সবাই বাইকটি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা পেয়েছেন। ধন্যবাদ সবাইকে।