Yamaha FZS FI বাইক নিয়ে মালিকানা রিভিউ - এন. কে. তীর্থ
This page was last updated on 30-Jul-2024 12:51pm , By Shuvo Bangla
আমি এন.কে.তীর্থ । আমি Yamaha FZS FI বাইক ব্যাবহার করি । ২০১৭ - ১৮ সাল নাগাদ যখন Yamaha তাদের FZs মডেলটা বাজারে আনলো তখন থেকেই এর আকর্ষণীয় লুক এর প্রেমে পড়ে যাই।
কালার কম্বিনেশন, মাসকিউলার ট্যাংক আর চমৎকার মাফলার এর বাইকটা আরো বেশি নজরে আসে সে সময়ে আলোচিত মিউজিক ভিডিও "তুমি দুরে দুরে আর থেকো না"-তে আফরান নিশো ভাইয়ার ব্লু-এ্যাস কালারটা দেখার পর থেকে।
আমি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এ ইংরেজি বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করছি। টিউশন, টুকটাক ঘোরাঘুরি আর যাতায়াতের জন্য একটা বাইক নিব চিন্তা করার সাথে প্রথমেই কৈশোরের ক্রাশ সেই বাইকের কথা মনে পড়ে। অবশ্য ততদিনে ম্যাট কালার + Fi এর সাথে কম্পিটিটিভ দামে FZs V2 আলাদা জায়গা করে নিয়েছে মার্কেটে। Dark night FZs V2 ই আমার প্রথম বাইক।
পছন্দের তালিকার অন্যান্য বাইকের সাথে তুলনাকরে FZs V2 ই সব দিক দিয়ে ঠিকঠাক মনে হলো।আমি দ্রুত গতিতে চালাই না, তাছাড়া নতুন রাইডার, হাইট তুলনামূলক কম (৫'২") সব দিক হিসেবে এটাই ছিলো সেরা পছন্দ। বাড়ির লোকজনও এটাই পছন্দ করায় শেষমেশ ইয়ামাহার শোরুম থেকে FZs V2 নেওয়া। তবে এখন বাইকিং একটা নেশার মতো কাজ করে,অন্তত ২০ কিলোমিটার রাইড না করলে শান্তি লাগে না।
বাইক কেনার সিদ্ধান্তে আসার ব্যপারটা ছিলো বেশ কুটনৈতিক। মা সরাসরি নাকচ করার পরে জামাইবাবু আর দিদিকে হাত করলাম। আসলে তারাই কিভাবে যেন বাড়িতে ম্যানেজ করলো। তবে বাইকটা আসলেই যাতায়াতের জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ছিলো।
আমার পছন্দ ছিলোই ম্যাট ব্লাক। বরিশালে একটা মাত্র বাইক এভেইলেবল ছিলো, কন্ডিশন খুব একটা পছন্দসই ছিলো না। পরে নিজের শহর বাগেরহাট থেকে বাবাই অর্ডার দিয়েছিলো বাইকটা। বরিশাল থেকে নিতে হলে প্রি বুকিং করা লাগতো।
আমি চালাতে জানতাম না, তাই জামাইবাবু উপরেই আবার চাপ পড়লো। অফিসে ছুটি ম্যানেজ করে বাগেরহাটে গিয়ে বাইক নিয়ে আমায় পৌছে দিয়ে গিয়েছিলো বরিশাল শহরে, কারণ আমি একেবারেই আনাড়ি আর লাইসেন্স নেই আমার,তাই হাইওয়েতে চালাতে পারবো না।
একটা মজার কথা বলি, আমি বাইক চালানো শিখেছি বন্ধুর Runner Deluxe 80CC দিয়ে। সে বাইকে ইঞ্জিন কিল সুইচ ছিলো না। প্রথম নিজের বাইকে উঠে যখন দু-তিনবার চাপ দিয়েও স্টার্ট ওঠে না, টেকনিশিয়ান কে জিগ্যেস করলাম "ভাই,ব্যাটারী ডাউন নাকি?" তিনি যখন ইগনিশন সুইচ অন করতে বললেন খুব লজ্জা পেয়েছিলাম তখন ।
Yamaha র বেস্ট দিক তাদের প্রোডাক্ট না বরং তাদের সার্ভিস। এ যাবত তিনটা সার্ভিস করিয়েছি। আমার দেখা বেস্ট সার্ভিস দেয় তারা। একদম স্যাটিস্ফাইড। মোটামুটি ১২০০ কিলোমিটার পরে আমি ইঞ্জিন অয়েল বদলে ফেলি এখন আপাতত 10W40 Semi Synthetic Yamalube ব্যবহার করছি।তবে Yamalube এর পারফরম্যান্স আশাপ্রদ নয়।
বাইকের পার্টস একদমই স্টক রেখেছি, রাতে তুলে রাখার সময়ে সুতি কাপড় দিয়ে মুছে রাখি বাড়িতে গেলে শ্যাম্পু দিয়ে ধোয়া হয় এখনও ফোম ওয়াস করাইনি। সবচেয়ে লম্বা সফর বলতে বাড়িতে যাওয়া। বরিশাল থেকে বাগেরহাটের দুরত্ব ৯২ কিলোমিটার। আমি আস্তে ধীরে চালাই , বেশিরভাগ সময় একাই রাইড করি।
সর্বোচ্চ ১০৪ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিসীমা টাচ করেছি, তবে মোটামুটি ৪০ - ৭০ স্পিড মেইনটেইন করে চালাই। ভ্রমণে বাইকের সিটটা কিছুটা আনকমফর্টেবল।
Yamaha FZS FI বাইকের কিছু ভালো দিক -
- এই বাইকের লুকটা খুব ভালো ।
- Fi হওয়ায় ইঞ্জিন পারফরম্যান্স ভালো এবং মাইলেজও ভালো ।
- Yamaha র সার্ভিস + পার্টস এভেইলেবলিটি খুব ভালো ।
- পেছনের ১৪০ সেকশনের টায়ার যথেষ্ট কনফিডেন্স দেয় রাস্তায় ।
- বাইকটা নিয়ে আমি দু'বার এক্সিডেন্ট করি। এ বাইকে রাইডার সেফটির বিষয়টা চমৎকার ভাবে মেইনটেইন করা হয়েছে বলে মনে করি।
Yamaha FZS FI বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- প্রথমেই বলবো স্টক ক্রাশ গার্ডটা একেবারেই বাজে। বাইক এক্সিডেন্ট করে বেঁকে এসে বেন্ড পাইপে লেগে পাইপ বেঁকে যায়।
- বাইকের মিটার যথেষ্ট পুরনো মডেল এর প্রয়োজনীয় অনেক তথ্যই মিসিং
- বাইকের সামনের চাকার বাইট বেশ ভালো। এতোই ভালো যে হাই স্পিডে ব্রেক ধরলে বাইক কাত হয়ে পড়ে যায়।
- স্টুডেন্ট হিসেবে এই বাইকের মেইনটেইনেন্স বেশ ব্যয়সাপেক্ষ।
- পার্টসের দাম যথেষ্ট বেশি মনে হয়।
- বাইকের দামটা ২ লাখের মধ্যে হওয়া উচিত এর ফিচার বিবেচনায় ।
সর্বোপরি ২ লাখ ১০ হাজার টাকায় পাওয়া জীবনের প্রথম বাইক নিয়ে আমি অন্তত সন্তুষ্ট। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ এন.কে.তীর্থ