TVS Apache RTR 160 4V ২৫০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - আনন্দ
This page was last updated on 01-Aug-2024 12:10pm , By Shuvo Bangla
আমি ডা. আনন্দ। বাসা কুমিল্লা। অনেকদিন ধরেই আমার ব্যবহৃত TVS Apache RTR 160 4V এর রিভিউ লিখবো করেও লেখা হচ্ছিলো না। গত ০৮ জুন ২৫,০০০ কিলোমিটার পূর্ন হওয়ায়,ভাবলাম এখন একটা রিভিও লেখাই যায়।
আমার বাইকের নেশা বলতে গেলে কাজিনের বাইক দেখে। ওনার Hero Splendor দিয়েই বাইকের হাতেখড়ি। এরপর অন্য কাজিনের Bajaj Discover 125, বন্ধুর Tvs Stryker 125 চালানো হলেও হাইয়ার সিসি বাইক চালানোর কোন অভিজ্ঞতা ছিলো না ৷ আর অন্যদের থেকে বাইক চেয়ে চালানোর অভ্যাসও আমার ছিলো না কখনো৷ ইউটিউবে বাইকের রিভিউ, বাইক ট্যুরের ভিডিও দেখে বাইকের নেশা আরো জেঁকে বসে।
আমার বাইক কেনার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিলো ট্যুর করা। তাই চাচ্ছিলাম মিড বাজেটের মধ্যে পাওয়ারফুল একটা বাইক। আমার হাইট ৫.৯ ফুট। তাই প্রথম পছন্দে ছিলো Bajaj Pulsar NS 160। কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে এর পার্টস এভেইলেবিলিটি কম থাকায় দ্বিতীয় চয়েজে চলে আসে এই বাইকটি। স্পেসিফিকেসন এবং এগ্রেসিভ লুকের জন্য বাইকটি পছন্দের তালিকায় স্থান করে নেয়।
আর আট-দশটা ফ্যামিলির মতো আমার বাবা-মা ও ছিলো বাইক কেনার বিপক্ষে। অনেকদিন ধরে রিকোয়েস্টের করার পর অবশেষে বাইক নেওয়ার জন্য সম্মত হয়। ফ্রেন্ড এবং পরিচিত বাইকারদের নিষেধ এক প্রকার উপেক্ষা করেই ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর TVS Apache 4V ABS বাইকটি আমি ক্রয় করি। ঐ দিনের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
বাইক কেনার জন্য এতটাই এক্সাইটেড ছিলাম যে, ৩ দিন আগেই আমি হেলমেট, গ্লাভস, নি-এলবো গার্ড, উইন্ড ব্রেকার কিনে বসে আছি। পূর্বে হাইয়ার সিসির বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকায় ঐদিন আমার কাজিনই বাইকটি চালিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাইকটির সাথে তারপরের স্মৃতি সুধুই সুখের।
ব্রেকইন পিরিয়ড -
২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাইকটিতে আমি ব্রেকইন পিরিয়ড মেইনটেইন করি। প্রথম থেকেই TVS TRU4 1.2L ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে আসছি। মাঝখানে Honda SPX1 ইউজ করে আশানুরূপ পারফর্মেন্স না পাওয়ায় আবার TRU4 এ ফিরে আসি। প্রথম ২০০০ কিলোমিটারে ৩ বার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি। তবে বর্তমানে ৩০০০+ কিলোমিটার পরপর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করছি, সাথে অয়েল ফিল্টার।
পারফর্মেন্স কন্ট্রোলিং ও ব্রেকিং -
বাইকটির পারফর্মেন্স এক-কথায় অসাধারণ। সিটিং পজিশন ও সিটের কুশনিং যথেষ্ট ভালো। এর সাসপেনসন ফিডব্যাকও সন্তোষজনক। বাইকটির ব্রেকিং নিয়ে অনেকেরই কমপ্লেন শুনা যায়। নতুন যারা RTR 4V ইউজার তাদের থেকে এটা বেশি শুনা যায়। আমারো প্রথম দিকে প্রবলেম হতো। পেছনের চাকা স্কিড করতো। কিন্তু এখন বাইকটিতে এতোটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে,সঠিক রেশিও ম্যান্টেইন করে কম্বিনেশন ব্রেক করলে অনেক স্মুথ ব্রেকিং হয়। বাইকটিকে কন্ট্রোল করতেও আমার কোন প্রকার বেগ পেতে হয় না। বাইকটিতে আমি কখনো টপ স্পিড তোলার চেষ্টা করি নি। ঢাকা-চট্রগ্রাম হাইওয়েতে একবার সর্বোচ্চ ১১১ তোলা হয়েছে।
মেইনটেইন্যান্স ও মাইলেজ -
এই বাইকের কথা আসলেই যেটা সবার মাথায় আসবেই, সেটা হলো মাইলেজ। বরাবরই আমি জেন্টেল রাইড করি। RPM ৫/৬০০০ এর মাঝে রেখে রাইড করার চেষ্টা করি, সবসময় এক ব্রান্ডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি,ভালো পাম্প থেকে ফুয়েল নেওয়ার চেষ্টা করি, অযথা ক্লাস বা, ব্রেইক প্রেস করি না, জ্যামে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকলে স্টার্ট বন্ধ রাখি, নিয়মিত বাইক সার্ভিসিং করাই, চেইন লিউব করি, টায়ার প্রেসার পেছনের চাকায় ৩৪ এবং সামনের চাকায় ২৮ রাখি। সিটি রাইডে আমি সবসময় ৪০± কি.মি./লি আর হাইওয়েতে ৪৫+ কি.মি./লি. মাইলেজ পেয়ে আসছি। গত মে মাসে রাজশাহী ট্যুরে মাইলেজ ছিলো প্রায় ৪৭ কি.মি./লি.। ফোর ভাল্বের এত পাওয়ারফুল ইঞ্জিন থেকে এমন মাইলেজ সত্যিই অবিশ্বাস্য।
লং ট্যুরের অভিজ্ঞতা -
আমার বাইকটি মূলত ট্যুরের জন্য কেনা। তাই ২০০০ কিলোমিটার ব্রেকইন পিরিয়ড পার করার পরপরই ট্যুরের জন্য বের হয়ে পরি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। আমার প্রথম ট্যুরটিই ছিলো সলো ট্যুর। নতুন রাইডার হিসাবে যেটা আমার জন্য বেশ দুঃসাহসিক ছিলো বটে। কিন্তু আমার মধ্যে এই কনফিডেন্সে ছিলো , যে আমি পারবো। এরপর ছোটবড় অনেক ট্যুর দেওয়া হয়েছে।
ট্যুরের মেক্সিমামই ছিলো সলো ট্যুর। বাইকটি কখনোই আমাকে হতাশ করেনি লং ট্যুরে। দীর্ঘক্ষণ একটানা রাইড করলেও ব্যাক পেইন ফিল করিনি। এর পিলিয়ন সিটও যথেষ্ট কম্ফোর্টেবল এবং পিলিয়ন থেকেও কখনো কোন কমপ্লেইন শুনিনি। আমি সাধারনত লং ট্যুরে স্পিড ৮০ এর মধ্যে রাখি এবং ৭০/৮০ কিলোমিটার পরপর বিরতি দিয়ে রাইড করি। দীর্ঘক্ষন একটানা রাইড করেও বাইকটিতে আমি ওভার হিটিং কিংবা ইঞ্জিন পাওয়ার ড্রপ ইস্যু ফিল করিনি।
২৫ হাজার কিলোমিটারে যা যা পরিবর্তন করলাম -
- চেইন সেট।
- সামনের ডিস্কের ব্রেক সু।
- হ্যান্ডেলবার।
- স্পার্ক প্লাগ
- বল রেসার।
- পেছনের টায়ার পরিবর্তন করে CEAT 130 সেকশনের টায়ার লাগানো হয়েছে।
- নিয়মিত এয়ার ফিল্টার।
- অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করা হয়।
মডিফিকেশন -
আমার বাইকে মডিফিকেশন বলতে স্টক 13T ফ্রন্ট চেইন স্প্রকেট পরিবর্তন করে 14T এর স্পকেট লাগানো আছে। পূর্বে ৫০০০ RPM এ স্পিড সর্বোচ্চ ৬৩ উঠতো, এই মডিফিকেশনের পর ৬৮ পর্যন্ত স্পিড উঠে। ফলে মাইলেজও কিছুটা বেড়ে গেছে।
TVS Apache RTR 160 4V বাইকটির খারাপ দিক -
- মাঝে মাঝে গিয়ার ভুল ইন্ডিকেট করে।
- সিঙ্গেল চ্যানেল ABS , ডুয়াল এবিএস দরকার ।
TVS Apache RTR 160 4V বাইকটির ভালো দিক -
- এই সেগমেন্টর অন্য বাইকের তুলনায় ফিচার এবং দামের দিক থেকে অনেক এগিয়ে।
- পারফর্মেন্স এবং ইঞ্জিন স্মুথনেস। দিন যত যাচ্ছে বাইকটি ততই স্মুথ হচ্ছে।
- রাইডার ভেদে মাইলেজে পার্থক্য থাকলেও,আমি সবসময় ভালো মাইলেজ পেয়ে আসছি।
- স্মুথ ক্লাস এবং গেয়ার সিফটিং।
- অনেকেই এক্সোস্ট মডিফাই করলেও,এর স্টক সাইন্ড অনেক ভালো এবং স্মুথ।
- ভালো বিল্ড কোয়ালিটি, X-Connect মিটার।
যতই রাইড করছি, দিনদিন বাইকটির প্রতি ভালবাসা বেড়েই চলেছে। আমার কাছে বাইক একটি ভালবাসা, আবেগের নাম। মন খারাপ থাকলেই বাইক নিয়ে বের হয়ে পরি। এখন বলতে গেলে বাইকটি আমাদের ফ্যামিলি মেম্বারদের একজন হয়ে গেছে । বাসায় গেলে আমার চেয়ে বাবা মা ই বাইকের যত্ন বেশি নেয়।
এতো এতো ভালো দিক থাকার পরও প্রায়শই "ছাপড়ি বাইক" নামে RTR এর বদনাম শুনা যায়। কম দামের মধ্যে বেশ পাওয়ারফুল বাইক হওয়ায় ইয়াং স্টারদের ক্রেজ বলা চলে বাইকটাকে। তাদের মেক্সিমাই দেখা যায় বাইকটা রাফ রাইডিং করতে। রাইডার বাইক চালায়,বাইক রাইডারকে নয়।তাই কারো রাইডিং স্টাইল দেখে বাইকের বদনাম করার যুক্তি আমার বোধগম্য নয়।
আমি মনেকরি,সরকারের উচিত বাইক রাইডিং এর ক্ষেত্রে একটা বয়স সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া। সবাই প্রয়োজনীয় সেফ্টি গিয়ার পরিধান করে সাবধানে বাইক রাইড করবেন। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি। রিভিউটি কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ আনন্দ