TVS Apache RTR 160 ৩০,০০০ কিলোমিটার রাইড - মনোয়ারুল ইসলাম অমি

This page was last updated on 29-Jul-2024 05:38am , By Raihan Opu Bangla

আমি মনোয়ারুল ইসলাম অমি । আজ আমি আপনাদের কাছে আমার TVS Apache RTR 160 বাইকটির বিষয়ে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো । আমার বাইকটি বর্তমানে চলেছে প্রায় ৩০,০০০ কিলোমিটার । আমি মানিকগঞ্জ জেলায় থাকি এবং এটি আমার জীবনের প্রথম বাইক । কলেজে যাতায়াত এবং শখের কারনেই বাইকটি ক্রয় করা ।tvs apache rtr 160 headlight 

TVS Apache RTR 160 ৩০,০০০ কিলোমিটার রাইড


ছোট থেকেই আমার বাইকের প্রতি একটা আগ্রহ ছিল যা বাবার বাইকের পিছনে বসলে বুঝতে পারতাম। কিছু কিছু সময় বাইকটা স্টার্ট ও করতে চাইতাম। বাইকিং জগতে আর কিছু না পেলেও কিছু সুন্দর মুহুর্ত এবং কিছু ভালোবাসার ভাই পেয়েছি যা আমাকে বাইকিং কে ভালোবাসতে বাধ্য করেছে। ছোট থেকেই এপাচির প্রতি একটা ভালোবাসা এবং আগ্রহ কাজ করতো যে বড় হয়ে একদিন এই বাইকটি কিনবো। 

TVS Apache RTR 160 বাইকটি পছন্দ করার একমাত্র কারন হচ্ছে এর লুকস এবং এক্সেলেরেশন যা এক কথায় অসাধারন । বাইকটি আমি যখন ক্রয় করি তখন বাইকটির দাম ছিল ১ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা । আর ১০ বছরের পেপার্স সহ বাইকটির দাম হয়েছিল ২ লক্ষ টাকা । 

এটি মানিকগঞ্জ এর টিভিএস ডিলার পয়েন্ট ঈশান মটরস থেকে নেয়া । আসলে বাইকটি আমার বাবা হুট করেই আমাকে কিনে দেয় । কারন বাবা জানতো আমার পছন্দের বাইক এটি । একদিন হুট করে এসে বললো রেডি হও তোমার পছন্দের বাইকটি আনতে যাবো। আমি খুশি হয়ে রেডি হয়ে চলে গেলাম বাবার সাথে । আমি আমার বাইকটি দুপুর ৩ টায় হাতে পাই।rtr 160 user

বাইকটি যখন প্রথম হাতে পাই আগে বাবাকে দেই চালানোর জন্যে বাবা চালানোর পরে আমি চালিয়ে বাসা পর্যন্ত নিয়ে আসি । সেই অনুভূতির কথা বলে বোঝানো যাবেনা যে নিজের বাইক নিজে চালাচ্ছি। বাবা আমার বাইক ফুল ট্যাংক ফুয়েল নিয়ে দিয়েছিলেন । বাইকটি চালানোর মূল কারন হচ্ছে কলেজে যাতায়াত । কলেজের যাতায়াত ব্যাবস্থা সহজতর করার জন্যেই আমার বাইকটি রাইড করা । 

TVS Apache RTR 160 বাইকটিতে আছে ডিজিটাল স্পিডোমিটার, ১৬ লিটার এর বড় ফুয়েল ট্যাংক । ১১০/৭০/১৭ সেকশনের পেছনের টায়ার এবং ৯০/৯০/১৭ সেকশনের সামনের টিউবলেস টায়ার । বাইকটির ব্রেকিং সিস্টেমে রয়েছে ২৭০ মিমি ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনে রয়েছে ১৩০ মিমি ড্রাম ব্রেক । এর ডাবল ডিক্স ভার্সন টি বাজারে রয়েছে। এর ইনিশিয়াল পিকাপ আমাকে মুগ্ধ করেছে এবং ব্রেকিং এ কিছুটা জটিলতা রয়েছে যা সাধারনত কিছুদিন চালালে এডজাস্ট হয়ে যা ।

TVS Apache RTR 160 Test Ride Review

আমি আমার বাইকটি টিভিএস এর অথোরাইজ সার্ভিস পয়েন্ট এর দক্ষ মেকানিকস শাহীন ভাইকে দিয়েই আমার বাইকের কাজ করাই এবং আলহামদুলিল্লাহ উনি ছাড়া অন্য কাউকে আমার বাইক কখনো দেখাতে হয়নি। প্রতি মাসেই বাইকের রেগুলার চেকাপ করিয়েছি এবং টুরের আগে পরে ভালো করে মাস্টার সার্ভিস করিয়ে নিয়েছি । মাইলেজ নিয়ে কথা বলতে গেলে এর প্রশংসা করতেই হয়ে । 


প্রথম ২৫০০ কিলোমিটার এ বাইকটির মাইলেজ পেয়েছিলাম ৩৮/৩৯ কিলোমিটার প্রতি লিটার এর মত। ৩০০০ কিলোমিটার এর পর তা সিটি তে ৪৩/৪৪ কিলোমিটার প্রতি লিটার এবং হাই-ওয়েতে ৪৫-৪৬ কিলোমিটার প্রতি লিটার পেয়েছি ।tvs bike user review

আমার বাইকে বড় কোন কাজ করাতে হয়নি এখন পর্যন্ত । প্রতি ১২০০/১৩০০ কিলো পরপর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি । প্রতিটি বাইকের নির্দিষ্ট গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল থাকে এবং এপাচি আরটিআর এর ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড 10W30। আমি ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত Motul এর 10w30 মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি এবং এরপর থেকে সেমি সিন্থেটিক এ শিফট করি। যার কারনে আমার বাইক থেকে অনেক কম ভাইব্রেশন ফিল হয় অন্যান্য এপাচি বাইক এর থেকে।

আলো স্বল্পতার কারনে বাইকের স্টক হেডলাইট পরিবর্তন করেছি । কারন রাতে হাইওয়েতে হেডলাইটের আলো পর্যাপ্ত না । আমি প্রছনের টায়ার পরিবর্তন করে MRF 120-80-17 সেকশন এর টায়ার ব্যবহার করেছি। এয়ার ফিল্টার ৩ বার পরিবর্তন করেছি প্রতি ১০,০০০ কিলোমিটার পরপর এবং একটি স্পার্ক প্লাগ পরিবর্তন করেছি । 

বাইকের স্টক চেইন সেট পরিবর্তন করে রোলন এর চেইন সেট ব্যবহার করতেছি। বাইকটির রিম গুলো কালার করেছি, যার কারনে বাইকটি দেখতে আরো সুন্দর লাগে।rtr speedometer

বাইকটির কিছু ভালো দিক -

  • লুকস
  • ইনিশিয়াল পিকাপ
  • মাইলেজ
  • প্রশস্ত টায়ার
  • ১৬ লিটার এর ফুয়েল ট্যাংক

বাইকটির কিছু খারাপ দিক -

  • স্টক টায়ার
  • ব্রেকিং
  • ভাইব্রেশন
  • চেইন স্পোকেট যা ১২,০০০ কিলোমিটারে নষ্ট হয়ে যায় এবং প্রচুর শব্দ করে ও দ্রুত লুজ হয়
  • স্টক হেডলাইট হাইওয়ের জন্যে যথেষ্ট না


আমি আমার বাইক নিয়ে দেশের অনেক জায়গায় ট্যুর করেছি। এর মধ্যে বরিশাল, ভোলা, কুয়াকাটা, টাংগাইল, কুষ্টিয়া, কিশোরগঞ্জ, নিকলি, সিলেট, সাজেক,কক্সবাজার সহ আরো অনেক জায়গা। বাইকটি কখনো আমাকে ভ্রমনের সময় হতাশ করেনি । খুব ভালো পার্ফরমেন্স পেয়েছি । বাইকটির স্টক টায়ার এবং চেইন সেট আমাকে হতাশ করেছে । তাছাড়া বাইকটি আলহামদুলিল্লাহ আমার অনেক পছন্দের একটি বাইক। অনেকের প্রশ্ন থাকে আমার বাইকের ভাইব্রেশন এত আর আপনার বাইক এত স্মুথ কেন? আসলে আমি প্রথম থেকেই সঠিক গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে আসছি যার কারনে আমার বাইকের ইঞ্জিন অনেক স্মুথ এবং অনেক কম ভাইব্রেশন করে থাকে ।

TVS Apache RTR 160 বাইকটির ইনিশিয়াল পিকাপ বেশি হওয়াতে তরুন বয়সের অনেকেই এই বাইকটি বেশি পছন্দ করে থাকে এবং অসাবধানতার সাথে রাইডের কারনে দূর্ঘটনা ও ঘটে থাকে। সবার উচিত সাবধানে বাইকটি রাইড করা । এতক্ষন ধরে আমার লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।


লিখেছেনঃ মনোয়ারুল ইসলাম অমি

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে