TVS Apache RTR 150 ২৫০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - আবির
This page was last updated on 01-Aug-2024 11:04am , By Shuvo Bangla
আমার নাম জসিমুজ্জামান আবির। বয়স ২৭ বছর। বর্তমানে ঢাকার অদূরে সাভার এলাকায় বসবাস করছি। আজকে আমি আমার জীবনের প্রথম বাইক TVS Apache RTR 150 এর সাথে ২৫,০০০ কিলোমিটার রাইডের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমার অনুভূতি গুলো তুলে ধরবো।
আমি যখন মাত্র কলেজে ঊঠলাম তখন তখন আমার কাজিন একটি নতুন টিভিএস এপাচি হাইপার এজ মডেল এর বাইক ক্রয় করে নিয়ে আসে। আমি ২০০৭ সাল থেকেই টুকটাক বাইক চালানো শিখেছি। মোটামুটি ২০০৮ এর দিকে স্বতস্বফূর্ত ভাবে বাইক চালাতে পারি। প্রথম দিন বাইক টি দেখে আমার অনেক ভাল লেগে যায়।
পরবর্তীতে বাইক চালিয়ে আমার নিজের কাছে খুব ভাল লাগে। মনস্থির করেছিলাম যদি কখনো নিজের অর্থে বাইক কিনতে পারি তাহলে টিভিএস এপাচিই কিনব ইনশাল্লাহ। ২০১৪ সালে ইন্টার মিডিয়েট এক্সাম এর ফল প্রকাশ এর পর একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি নেই। তখন থেকেই নিজের মধ্যে বাইক কেনার একটি আগ্রহ প্রচুর পরিমাণে আমাকে নাড়া দেয়। ২০১৬ সালে প্রথম নিজের জমানো অর্থে এপাচি আর টি আর ১৫০ সিসি , গ্লসি লাল কালারের বাইকটি ক্রয় করি ।
বাইক কেনার দিন এর অনুভুতি ছিল এক অন্য রকম। অনেক খোজাখুজির পর সাভারে গ্লসি লাল কালারটা আমি স্টক আউট এর জন্য আমি পাইনি। সাভারের আশে পাশে খোজ নিয়ে আমি জানতে পেরেছি যে এটি ঈশান মটরস, কালিয়াকৈর,গাজিপুর শোরুমে আছে। সন্ধ্যায় আগে চলে গেলাম শোরুমে এবং ১,৯৯,০০০ টাকায় প্রথম বারের মত তাকে আমি আমার করে পেয়েছিলাম।
দুই মাস পর আমি এটার রেজিস্ট্রেশন করতে সফল হই এবং নিজেকে ভ্রমণের জন্য তৈরী করি। ২০১৮ সালে নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পাই। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছিলাম বাইক বিডি, দুই চাক্কা, দেশি বাইকার, ক্লাব আর টি আর, সাভার বাইক রাইডার্স এর সাথে। এই সকল গ্রুপ গুলো কে খুব ফলো করতাম ।
এইবার আসি আমার এই বাইকটি কেনো এত পছন্দের ছিলোঃ এই বাইকটির রয়েছে অসাধারণ লুক্স । সত্যি বলতে সেই প্রথম হাইপার এজ চালিয়ে আমি এই আর টি আর সেগমেন্ট এর প্রেমে পরেছিলাম। বাইকের ইঞ্জিন এর শক্তি ছিলো অসাধারন। এটার সাউন্ড আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে।
বাইক নিয়ে আমার আলাদা একটি প্যাশন কাজ করে। সেই সুবাদে আমি বিভিন্ন গ্রুপের সাথে মোটামুটি অনেক জায়গায় ট্যুর করেছি। নিজে সলো ট্যুর ও করেছি। কোনো দিক থেকে এটি আমাকে কখনো হতাশ করে নি। এই বাইকটি নিয়ে আমার প্রথম ট্যুর ছিলো সিলেট এর রাতারগুল, জাফলং ও বিছানাকান্দি এবং সিলেট শহর।
এর পর ক্লাব আর টি আর সাথে Club RTR Southern Tour 2017 তে ১১ জন ১১ টি আর টি আর নিয়ে বান্দরবান, থানচি,আলিকদম, রাঙ্গামাটি, কাপ্তাই ট্যুর সম্পন্ন করি। ২০১৮ সালে কুয়াকাটা ট্যুর সম্পন্ন করি। মোট কথা এটা আমাকে কখনো এর পারফর্মেন্স এর দিক থেকে কখনো নিরাশ করেনি।
TVS Apache RTR 150 বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- বাইকের ব্রেকিং সিস্টেম। অন্যান্য বাইকের তুলনায় এটি একটু বেশি হার্ড মনে হয়েছে।
- টিভিএস এর টায়ার খুবি অনুপযোক্ত। প্রচুর পরিমাণে স্কিড করে।
- ৭০ কিলোমিটার/ঘন্টা এর উপরে স্পিড উঠলে মারাত্নক ভাইব্রেশন শুরু হয়ে যায়।
- হাইওয়েতে এর হেডলাইটের আলো খুবই কম।
- প্রচুর পরিমাণে চেইন লুজ হয়ে যায়।
TVS Apache RTR 150 বাইকের কিছু ভালো দিক -
- আসাধারন থ্রটল রেস্পন্স।
- বাজেটের মধ্যে সেরা বাইক।
- এগ্রেসিভ লুক।
- বাইকের দাম অনুযায়ী সাধ্যের মধ্যে ভাল একটা বাইক।
- মাইলেজ এভারেজ ৪০।
অন্যান্য ১৫০ সিসি বাইকের মেইন্টেইনেন্স এর তুলনায় এই বাইকের মেইন্টেইনেন্স খরচ তুলনা মুলক কম মনে হয়েছে। ২৫০০০ কিলোমিটারে আমি সব গুলো অফিসিয়াল সার্ভিস করিয়েছি এবং পাশাপাশি ট্যুর এর আগ মুহুর্তে আমি ঢাকার Gear up Servicing Club, Torque Service Club থেকে বাইকের স্পেশাল সার্ভিস করেছিলাম।
আমি বরাবরই বাইকের যত্ন করতাম। ইঞ্জিন ওয়েল হিসেবে ব্রেকিং পিরিয়ড কালীন সময়ে Havoline 20w40 দিয়ে ২০০০ কিলোমিটার চালিয়েছি। পরবর্তী ৮০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত Motul Semi Synthetic 10w40 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেছি । এবং বাকি ২৫০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত Motul full Synthetic 7100 ব্যবহার করেছি । সেমি গ্রেডের ইঞ্জিন ওয়েল দিয়ে ১৫০০-১৮০০ কিলোমিটার চালিয়েছি এবং ফুল সিনথেটিক দিয়ে ২৫০০-৩০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চালিয়েছি ।
প্রতিটি লং ট্যুর এর আগে এবং পরে বাইকের ফুল মাস্টার সার্ভিসিং করেছি যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ন। কারণ আমি বাইকের প্রব্লেম নিয়ে কখনো দুরের রাস্তায় ভ্রমন এর পক্ষে ছিলাম না।
এপাচি আর টি আর বাইকটি যথেস্ট মজবুত এবং টেকসই। ২ লক্ষ টাকার মধ্যে খুবই চমৎকার একটি বাইক। পরিশেষে এটাই বলবো , নিরাপদে বাইক চালান। ভ্রমণ হোক সুন্দর। সবসময় সার্টিফাইড হেলমেট ,সেফটি গিয়ার্স ব্যবহার করে বাইক চালাবেন। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ জসিমুজ্জামান আবির