Suzuki Gixxer SF 155 ১৪০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ-মোজাম্মেল
This page was last updated on 30-Jul-2024 11:35am , By Raihan Opu Bangla
আমার নাম মোজাম্মেল হক। ছোট বেলা থেকেই চট্রগ্রামে পরিবারের সাথে বসবাস, কিন্তু জন্ম স্থান কুমিল্লা। আমার Suzuki Gixxer SF 155 বাইকটির রিভিও লিখবো । আশাকরি আমার এই রাইডিং অভিজ্ঞতা পড়ে আপনাদের ভালো লাগবে ।
Suzuki Gixxer SF 155 ১৪০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ
শুরু করব জীবনের বাইকের প্রতি ভালোবাসা শুরুর প্রথম দিক থেকে। যখন ক্লাস ৭ এ পড়ি তখন থেকেই বাইকের প্রতি একটা আগ্রহ তৈরি হয় তখন এতটাও বড় হইনি তাই বাইক কেনার কথা চিন্তা করিনি ।
বাইক খুব ভালোবাসতাম মা ব্যাপারটা খেয়াল করতো । মা ছিলো সখ পূরনের চাবি আবদার করে একটা সাইকেল কিনি বেশ কয়েক বছর সাইকেল চালাই । পুরাতন সাইকেল বিক্রি করে নতুন আরেকটা সাইকেল ক্রয় করি তাও মায়ের দেয়া।
এস এস সি পরীহ্মা দেয়ার পর বাইক ক্রয় করার প্রতি আগ্রহ জাগে। কিন্তু আশেপাশের মানুষের মুখে একটাই কথা বাইকে প্রচুর দূর্ঘটনা হয়। এসব মানুষের কথা শুনে পরিবার এর একটাই কথা বাইক দেয়া যাবে না । আমার অনেক স্বপ্ন একটা বাইক কিনবো তাই একটা কুরিয়ার কোম্পানীতে পার্সেল ডেলিভারি চাকরি নেই।
পার্ট টাইম জব ছিলো তাই পড়ালেখার পাশাপাশি ভালোই চলতে লাগলো। প্রায় ১ বছর চাকরি করে পরিবারে টাকা দিয়ে নিজে কিছু টাকা জমিয়ে বাসায় বাইকের কথা বলি কিন্তু রাজি হচ্ছিলো না । ডেলিভারিতে কষ্ট হয় এটা বলাতে মায়ের ইচ্ছা হয় একটা ছোট বাইক কিনে দিবে ।
বাইক কিনে দেওয়ার কথা বলায় ইউটিউবে বাইকের রিভিউ দেখা শুরু করি। বাইক বিডিতে এড হই, এক বড় ভাই এড করে দেয়। বড় ভাইদের থেকে বাইক চালানো শিখি । বাইক কিনবো, কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারে সন্তান হওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও দামি বাইক কেনার টাকা ছিলো না ।
নিজের জমানো টাকা আর বাবা মায়ের থেকে কিছু টাকা নিয়ে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক ক্রয় করি । বাইকটা ছিলো রানার টার্বো ১২৫। বাইকটি আমি ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করি । বাইকটি ভালো কন্ডিশনে ছিলো তাই ভাবনা চিন্তা না করে জীবনে প্রথম বাইক ক্রয় করি।
বাইকটি ক্রয় করে চট্রগ্রাম অক্সিজেন এলাকা থেকে মাকে বাইকে নিয়ে নিজের বাসা পর্যন্ত আসি, অনেক খুশি লাগছিলো মা ও অনেক খুশি প্রথম বাইকে চড়ে। ওই দিন একটা হেলমেট ক্রয় করি হেলমেট টি ছিল ফুল ফেস ভেগা ব্রান্ডের । দাম ছিল ১৯০০ টাকা।
বাইকটি প্রায় ১ বছর চালাই কিন্তু চাইনিজ বাইক হওয়ায় বাইকের পারফরম্যান্স এতটা ভালো ছিলো না, পার্টস পেতাম না তাই বিক্রি করে দেই। Suzuki Gixxer নেওয়ার অনেক ইচ্ছে ছিলো বাইক বিডিতে ওয়াসিফ আনোয়ার ভাইয়ের রিভিওটা অনেক বার দেখেছি । এর ১ মাস পর Suzuki Gixxer 155 SF ডাবল ডিক্স বাইকটা ক্রয় করি।
পছন্দের বাইক ক্রয় করতে পেরে অনেক খুশি আমি। তখন থেকে আমার বাইক নিয়ে ভ্রমন করা শুরু । আস্তে আস্তে স্যাফটি গিয়ার কিনতে শুরু করি রাইডিং ট্রাইবের একটা জ্যাকেট ক্রয় করি, প্রো বাইকার ব্রান্ডের স্যফটি গার্ড, সমি ব্রান্ডের হ্যান্ড গ্ল্যাবস, ইউহি ৯৭৮ একটা ফুল ফেইস হেলমেট ক্রয় করি । প্রতি দিন হেলমেট গ্লাভস পরে বাইক রাইড করি।
যেহেতু বাইকটি নতুন তাই ব্রেকিং পিরিওড এর ব্যাপারে বাইক বিডির শুভ্র সেন দাদার ভিডিও দেখে আইডিয়া নেই। কিছু দিন চালানোর পর ঈদ পালন করার জন্য নিজের গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করি বাসা থেকে অনুমতি নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা হই এইটাই ছিলো আমার জীবনে নিজের বাইক চালিয়ে লম্বা সফর ।
খুব সাবধানে যাত্রা শুরু করি পেট্রোল পাম্প থেকে ফুল ট্যাংক তেল নেই । যেহেতু নতুন বাইক তাই আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলাম মাইলেজ কম পাবো কিন্তু লিটারে ৩৮ মাইলেজ পাচ্ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ আমি সন্তুষ্ট ছিলাম এক ট্যাংক তেল দিয়ে বাড়িতে পৌছাই যেহেতু গ্রামের মধ্যে পাম্প নেই ওই তেল দিয়ে ৩ দিন ঘুরাঘুরি করি ।
প্রায় ৩১০ কিলোমিটার চালাই এর পর চট্রগ্রাম এর দিকে যাওয়ার পথে কুমিল্লা ক্যন্টনম্যান্ট এর পাশে পাম্প থেকে আবার ফুল ট্যাংক তেল নিয়ে চট্রগ্রাম চলে আসি। আসা যাওয়া সম্পূর্ন রাস্তাই আরপিএম মেনে চালাই । আর পি এম ৪০০০-৪৫০০ এর মধ্যেই থাকি স্পিড ছিলো ৬০+- এর পর চট্রগ্রাম এসেই বাইকের সার্ভিস করাই।
প্রথম সার্ভিসিং এর সময় ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি । ইঞ্জিন অয়েল হিসেবে লিকুমলি 10w40 মিনারেল ব্যবহার করি । ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন এর সাথে অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করি।
Suzuki Gixxer SF FI First Impression Review!
সুজুকি সার্ভিস সেন্টার এর কাজ আমার কাছে ভালো লাগেনি আবার পার্টস এর দামও বেশি । তাই পরের বার থেকে আমি আর সেখানে সার্ভিস করাইনি। চট্রগ্রামে অনেক আন অথরাইজড সার্ভিস সেন্টার আছে যারা অনেক ভালো কাজ করে। সুজুকির পার্টস এর দাম বেশি সামনের ব্রাক প্যাড ৫৫০ টাকা, পিছনেরটা ১৪০০ টাকা ।
তাও সন্তুস্ট কারন বাইকের পার্ফরমেন্স বেশ ভালো । ৮০০ কিলোমিটার চালিয়ে প্রথম সার্ভিসিং করাই, এরপর ভালো পারফরম্যান্স পাই। মাইলেজ ৪০+- পাই । ২০০০ কিলোমিটার চালিয়ে আবার সার্ভিসিং করাই, ইঞ্জিন অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করি ।
ব্রেকিং পিরিওড শেষ করার পর একটা লং ট্যুর করি। বাইকটি নিয়ে আমি সাজেক যাই সখের বাইক নিয়ে ২য় লং ট্যুর চট্রগ্রাম থেকে সাজেক অনেকটা রাস্তা আকা বাকা পাহাড়ি আনন্দের হলেও বিপদজনক, তবে বাইক রাইড করে প্রকৃতি উপভোগ করতে করতে সাজেক চলে যাই ।
বাইক ট্যুরের মধ্যে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করি, আল্লাহর রহমতে কোনো বিপদে পরিনি । রাস্তার সিনিয়র রাইডারদের থেকে অনেক সাহায্যে পাই ইঞ্জিন ব্রেক শিখিয়ে দেয় আরও অনেক অভিজ্ঞতা চিটাগাং থেকে ফুল ট্যাংক তেল নিয়ে সাজেক আবার সাজেক থেকে মানিকছড়ি প্রায় অনেকটা পথ চালাই সেদিন অনেক ভালো মাইলেজ পাই ।
সাজেক থেকে ফিরে বাইকের বল রেসার পরিবর্তন করি, এমনিতে সাধারণ কিছু সমস্যা ছাড়া বড় কোনো সমস্যায় এখনো পরিনি। ব্রেকিং পিড়িয়ড শেষ হওয়ার পর আমি টপ স্পিড চেক করে ১১৮ পাই। এত স্পিড তোলা আসলে ঠিক না তবুও ফাকা রাস্তা পেয়ে চেষ্টা করেছিলাম ।
বাইকটি প্রায় ১৪০০০+ কিলোমিটার রাইড করতেছি ব্রেক প্যাড, ইঞ্জিন অয়েল, অয়েল ফিল্টার, বল রেসার, থ্রটল ক্যাবল, চেইন সেট ছাড়া কিছুই পরিবর্তন করতে হয়নি। বাইকের হেড লাইটের সামনে নোজ লাগিয়েছি ১৪০০ টাকা দিয়ে টুকি টাকি কিছু মডিফাইড করেছি যেগুলা চোখে লাগার মত যেমন চাকার রিম কালার, সিট ২ পাট, নতুন মডেল এর স্টিকার ।
৮ টা সার্ভিসিং করিয়েছি শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো সার্ভিস পাচ্ছি। এই বাইকের ভালো দিক তো আছেই সাথে কিছু খারাপ দিকও আছে।
Suzuki Gixxer SF 155 বাইকের কিছু ভালো দিক -
- বাইকটি দেখতে অনেক সুন্দর।
- কম্ফরটেবল।
- সিট হাইড বেশ ভালো যে কেউ চালাতে পারে।
- ভালো মাইলেজ পাওয়া যায়।
- থ্রটল রেস্পন্স বেশ ভালো ।
Suzuki Gixxer SF 155 বাইকের কিছু খারাপ দিক -
- স্টক লাইটের আলো খুব কম।
- পিলিয়ন সিট ছোট হওয়ায় পিলিয়ন বসে আরাম পায় না।
- পার্টস এর দাম বেশি।
- এয়ার কুলিং সিস্টেম হওয়ায় ইঞ্জিন গরম হলে ঠান্ডা হতে বেশি সময় নেয়।
- গাড়ির প্লাস্টিক কোয়ালিটি খুব একটা ভালো না।
লিখেছেনঃ মোজাম্মেল হক
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।