Suzuki Gixxer 155 SD ৩০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - শাওন
This page was last updated on 30-Jul-2024 01:22pm , By Raihan Opu Bangla
আমি মোঃ শাহ্রিয়ার শাওন, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ফাইনাল ইয়ার স্টুডেন্ট। গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর হলেও বর্তমানে ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা। ইচ্ছে ছিল নিজের বাইক চালিয়ে নিজে রিভিউ লিখবো। অবশেষে আজ আমি আমার Suzuki Gixxer 155 SD বাইকটি ৩০০০ কিলোমিটার রাইডের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
Suzuki Gixxer 155 SD ৩০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ
বাইক আমার কাছে একই সাথে আবেগের নাম, আবার খুবই প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। নানা জল্পনা - কল্পনা শেষ করে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ আমি Suzuki Gixxer 155 SD বাইকটি ক্রয় করি , বাইকটি আমার জীবনের প্রথম বাইক ।
জীবনে প্রথম বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা -
যতদূর মনে পরে ২০০৪ সালে আমি প্রথম বাইকের রাইডিং সীটে বসি। পেছনে বসে শিখিয়ে দিচ্ছিলেন আমার আব্বু। বাইকটি ছিলো Honda 80 CC । এই বাইকটি এক ভাই এর ছিল। যেদিন আমি প্রথম এই বাইকের রাইডিং সীটে বসি সেদিন আমার পায়ে একটি অপারেশন ছিলো।
অপারেশনের আগে আমি খুব উদ্বেগ এর মধ্যে ছিলাম তাই আব্বু ঐ ভাইয়ের কাছ থেকে তার বাইকটি কিছুক্ষণের জন্য নিয়ে আমাকে চালানো শিখান যেন আমি কিছুক্ষণের জন্য অপারেশনের ভয় ভুলে থাকি।
এর পরে বিভিন্ন সময় Bajaj CT 100, Bajaj Calibar 125, Bajaj Discover 125, Dayang 80, Bajaj Platina 100, TVS Metro, Bajaj Pulsar ও Yamaha FZs V2.0 চালিয়েছি। এর মধ্যে Bajaj Pulsar SD ও Yamaha FZs V2.0 সবচেয়ে বেশি চালানো হয়েছে।
আমি যেভাবে বাইকটি পছন্দ করলাম -
বাইক পছন্দের জিনিস হলেও আমার মা - বাবা কখনোই সমর্থন করেননি বাইক কেনার ব্যাপারে। কারন ছিলো দুইটি। প্রথমত আমার ডান পায়ে একটি মেজর অপারেশন করা আছে, যার কারনে ডান পায়ে আমার শক্তি কিছুটা কম ও একটু খুড়িয়ে হাঁটতে হয়। দ্বিতীয় কারন, আশে - পাশে প্রচুর মানুষের বাইক দুর্ঘটনার সংবাদ শুনে আমার পরিবারের লোকজন খুব ভয় পান।
কিন্তু ধীরে ধীরে এর প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা বুঝতে পেরে রাজি হয় কিন্তু বাঁধা হয় বাজেট। বাজেটের সাথে মিলিয়ে তিনটি বাইক ছিলো পছন্দের তালিকায়। FZs V2.0, Pulsar SD ও Pulsar NS 160। বাজারে বাইকের সংকট আর দাম বেড়ে যাওয়ার কারনে FZs V2.0 বাইকটি তালিকা থেকে বাদ পরে যায়। অন্যদিকে আমার উচ্চতার কথা চিন্তা করে Pulsar NS 160 বাইকটি তালিকা থেকে বাদ দিতে হয়।
এরপর Pulsar SD থাকে লিস্টে। পালসার মোটামুটি পছন্দের বাইক হলেও এটি কিনতে খুব একটা ইচ্ছা ছিলো না এর হ্যান্ডেল বা মাথার দিকটা অতিরিক্ত ভারী ফীল হওয়ার কারনে। তাই বলে পালসার বাইককে আমি অবজ্ঞা করছি না, সকল বাইক তার নিজের জায়গায় সেরা। কিন্তু আমি প্রচন্ড সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম কোন বাইকটি কিনব।
Suzuki Gixxer 155 Review Bangla By Team BikeBD
একদিন গল্পে গল্পে আমার প্রিয় মানুষটি Suzuki Gixxer বাইকটির কথা বলে। সত্যি বলতে আমার মাথায় একদমই ছিলো না এই বাইকটির কথা। এরপর শুরু করি বাইকটি সম্পর্কে খোঁজ নেয়া।
বাইকটি লঞ্চ হওয়ার ৪ বছর পরে এই বাইকটি টীম বাইকবিডি রিভিউ করে দেখে মনে মনে ভাবি বাইকটার দম আছে বটে , নাহলে লঞ্চ হওয়ার ৪ বছর পর কেউ রিভিউ করতো না ! এছাড়া রিভিউ এর কয়েকটি পয়েন্ট জাস্ট মন কেড়ে নেয়।
“Man, this is an epic machine!” - টীম বাইকবিডির করা রিভিউ এর এই লাইনটি এখনো মাথায় ঘুড়পাক খায়। এছাড়া এর সিটিং পজিশনের জন্য আমি বেশি আগ্রহ পাই এই বাইকটি কেনার জন্য । এবং শেষমেশ এটি কিনে ফেলি।
এটিই আমার জীবনের প্রথম বাইক। নিজের উপার্জনের টাকা জমিয়ে কিনতে পারার অনুভূতিটা লিখে বা বলে বুঝানো কখনোই সম্ভব নয় !
বাইকটি প্রথমবার চালানোর অনুভূতি -
বাইকটি কেনার পরে শোরুম থেকে চালিয়ে বাসায় নিয়ে আসার পথেই এর প্রেমে পরে যাই। এক্সিলারেশন অসাধারণ লাগে। বাইকটি কিনতে ছোট বোনকে সাথে নিয়ে যাই। আসার পথে বোনকে অনেকবার বলে বসি, “এটা আমার বাইক! বিশ্বাসই হচ্ছে না!”
কি কি আছে Suzuki Gixxer 155 SD বাইকটিতে -
Suzuki Gixxer 155 SD বাইকটি একটি monotone বা এক রঙ বিশিষ্ট বাইক। এতে ব্যবহার করা হয়েছে 4-stroke, Single Cylinder, Air-cooled ইঞ্জিন। এতে ব্যবহার করা হয়েছে 154.9 CC এর একটি শক্তিশালী ইঞ্জিন সাথে ৫ স্পিড গিয়ার বক্স।
এর সর্বোচ্চ পাওয়ার দেওয়া হয়েছে 14.8ps@8000 rpm এবং সর্বোচ্চ 14Nm Torque উৎপন্ন করতে পারে 6000 rpm এ। এর ওজন প্রায় 139 কেজি।
এর পেছনে ব্যবহার করা হয়েছে 160/60R-17 সেকশন এর টায়ার ও সামনে 100/80-17 সেকশনের টিউবলেস টায়ার।
বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ও লোকমুখে একে নেকেড স্পোর্টস বাইক হিসেবে শুনে থাকতে পারেন তবে আমি বলবো এটি কমিউটার নেকেড স্পোর্টস বাইক। তবে এর অফিসিয়াল ট্যাগ “The street sports” যথেষ্ট সুন্দর ও সত্য বটে!
ভ্রমণ অভিজ্ঞতা -
বাইকটি মূলত ইউনিভার্সিটিতে যাতায়াত এর উদ্দেশ্যে কেনা কিন্তু এই করোনার কারনে আর সেই সুযোগ হয়ে উঠলো না। সবকিছু ঠিক ঠাক থাকলে চাকরি জীবনে এটি আমার সঙ্গী হবে।
বাইকটি দিয়ে ভ্রমণ করা হয়নি তেমন। তবে টুক টাক কাজের জন্য বেশ দূরে যাওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩০০০ কিলোমিটার বাইকটি রাইড করেছি। বাইকটি রাইড করে খুবই সন্তুষ্ট আমি। এর এক্সিলারেশন খুব দ্রুত এবং বেশ স্মুথ। বাইকের ব্রেকিং যথেষ্ট ভালো হলেও উচ্চ গতিতে এর ব্রেক নিয়ে কিছুটা ভয়ে থাকি।
যদিও ধীরে ধীরে ইঞ্জিন ব্রেকিং আয়ত্ব করে নেয়ার ফলে এখন আর তেমন সমস্যা হয় না। তবে এই সেগমেন্ট এর অন্যান্য বাইকের সাথে তুলোনা করলে Suzuki Gixxer SD এর ব্রেকিং বেশ এগিয়ে থাকবে।
বাইকটির রেডি পিকাপ ওভারটেকিং এর সময় বেশ কনফিডেন্স প্রদান করে। এর সিটিং পজিশনের জন্য দীর্ঘক্ষণ চালালেও কোমড় ব্যাথা বা অত্যাধিক ক্লান্তি কাজ করেনা। তবে বলা বাহুল্য, এর পিলিওন সিট তেমন সুবিধাজনক নয়। পেছন দিকটা উঁচু হওয়াতে লেডি পিলিওন তো বটেই, বাবার বয়সীরাও বেশ অসস্তিতে পড়েন ওঠার সময়।
বাইকটির স্টক হর্ন খুবই নিম্নমানের যার কারনে বাইক কেনার পরপরই আফটার মার্কেট হর্ন লাগাতে হয়েছে। এর হেডলাইটের আলো যথেষ্ট কম তবে এলাকার ছোট - খাটো রাস্তায় চালনোর জন্য গুড এনাফ! তবে বর্তমানে আমি বাজারে বেশ প্রচলিত 7S LED Headlight লাগিয়ে ব্যবহার করছি এবং আমি সন্তুষ্ট।
বাইকটি আমি ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্রেক-ইন-পিরিয়ড মেনে চলেছি ৷ এই সময় অতিরিক্ত গতি কিংবা উচ্চ আরপিএম দুটোই পরিহার করেছি।
গত ১৮ মে ২০২১ তারিখে গাজীপুর কোনাবাড়ি ফ্লাইওভারে ওঠার পথে পিলিওনসহ 113kmp/h টপ স্পীড তুলতে পেরেছি খুবই স্মুথ ভাবে। বলা বাহুল্য, আমি অতিরিক্ত স্পীডিং এর বিপক্ষে এবং নিরুৎসাহিত করতে চাই সকলকে।
এর মাইলেজ এই সেগমেন্ট এর অন্যান্য বাইকের তুলনায় বেশ কম তবে এর পাওয়ার কিংবা রেডি পিকাপ এর সাথে বিবেচনা করলে আমার ঠিক ঠাক মনে হয়। ৩৮-৪০ km/L পাচ্ছি এখনো।
যা কিছু পরিবর্তন করেছি -
নতুন বাইক তাই হর্ন ছাড়া আর কিছু পরিবর্তন করিনি এখনো। সামনে হেডলাইট পরিবর্তন করে 7S এলইডি লাগিয়েছি। সাথে হালের ট্রেন্ড RCB এর ব্রেক এবং ক্লাচ ইন্সটল করার ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে। এছাড়া পেছনের চাকায় দুটো কাঁটা ঢুকেছিলো, ওগুলো বের করার জন্য টায়ার জেল ভরতে হয়েছে।
বাইকের সার্ভিসিং বিস্তারিত -
আমার বাইকটি এই পর্যন্ত ২টি ফ্রি সার্ভিস করিয়েছি সুজুকির অথোরাইজড সার্ভিস সেন্টার “সুজুকি - জাপান বাইক সিটি, বগাবাড়ি, বাইপাইল, সাভার, ঢাকা” থেকে। তাদের সার্ভিস এর মান যথেষ্ট ভালো মনে হয়েছে আমার। তবে অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান বৃদ্ধি করার প্রয়োজন এখানে।
যেভাবে বাইকের যত্ন নিয়ে থাকি -
প্রথমত বাইকটি নিজে চালাই, আবেগের বশে অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ বন্ধুদের বা প্রতিবেশীদের দেইনা আমি। এতে করে কেউ মনঃক্ষুণ্ণ হলেও আমি এটিকে পজিটিভভাবে নিয়ে থাকি নিজের স্বার্থেই!
অন্যদিকে বাইকটির চেইন প্রতি সপ্তাহে একবার করে ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করি। চেইন কাভার না থাকায় খুবই দ্রুত নোংরা হয়ে যায়। চালাতে চালাতে যখন বুঝতে পারি চেইন শুকিয়ে এসেছে তখন ভালোভাবে পরিষ্কার করে চেইনে লুব করি। আমি এখন Flamingo Chain Lube ব্যাবহার করছি।
এছাড়া প্রতিদিন ঘড়ে তোলার আগে সাধারণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেই তুলি। বাইকটি চকচকে রাখার জন্য প্রতিবার ওয়াশ করার পর Flamingo Dashboard Polish ব্যাবহার করি।
যে ইঞ্জিন ওয়েল ব্যাবহার করি -
আমি এখনো Motul 300 10W40 মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করছি। এর মূল্য ৫০০ টাকা। ইঞ্জিন ড্রেইন পিরিয়ড ধীরে ধীরে বাড়িয়েছি। একদম প্রথমটি ২৫০ কিলো পরেই ড্রেইন দিয়ে নতুন দিয়েছি। এরপরে ৫০০, তারপর ৬৫০, তারপর ৭৫০ ও ৮৫০ এভাবে ড্রেইন দিয়েছি।
আমি সবসময় সুজুকির অথোরাইজড শোরুম বা সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন করেছি, কারন বাজারে অসংখ্য নকল পণ্য রয়েছে যেগুলো আসলে অরিজিনাল এর সাথে ডিফারেনশিয়েট করাও বেশ মুশকিল!
Suzuki Gixxer 155 SD এর কিছু ভালো দিক -
- অসাধারণ স্মুথ রেডি পিকাপ
- কর্নারিং এ কনফিডেন্স দেয়
- ব্রেকিং যথেষ্ট ভালো
- ইঞ্জিন পাওয়ার বেশ ভালো
- এর বডি শেপ অন্যান্য বাইকের চেয়ে আলাদা এবং খুব সুন্দর ভাবে পা রাখা যায়
- এর ওজন এভারেজ হওয়ায় সহজে কন্ট্রোল করা যায়
- রাইডিং সিট এর কম্ফোর্ট অসাধারণ
- গিয়ার ইন্ডিকেটর থাকায় ও সম্পূর্ণ ডিজিটাল মিটার হওয়ায় খুব সুন্দর লাগে
- এই সেগমেন্ট এর বাইকের মধ্যে হাই আরপিএম এ ভাইব্রেশন নাই বললেই চলে
Suzuki Gixxer 155 SD এর কিছু খারাপ দিক -
- ক্লাচ খুব হার্ড
- গিয়ার শিফটিং হার্ড
- ব্রেক উন্নত করার অনেক সুযোগ রয়েছে
- পিলিওন কম্ফোর্ট খুব খারাপ
- স্টক হর্ন খুবই নিম্নমানের
- সামনের সাসপেনশন বেশ হার্ড, ফলে ভাঙ্গা রাস্তায় চালালে হাত ব্যাথা করে
Suzuki Gixxer 155 SD বাইকটি নিয়ে আমার চূড়ান্ত মতামত -
শুধু নিজের বাইক বলে বলছি না, সত্যিকার অর্থেই বাইকটি খুব ভালো একটি বাইক। স্মুথ এক্সিলারেশন, ভালো টপ স্পীড, ডে টু ডে লাইফের কমিউটিং ও সলো লং ট্যুর এর জন্য বেশ ভালো একটি বাইক।
পিলিওন কম্ফোট এর কথা চিন্তা করলে বাইকটি অনেক পিছিয়ে যাবে। নিয়মিত ফ্যামিলি নিয়ে রাইড করতে হয় এমন কাউকে বাইকটি না নেয়ার পরামর্শ রইলো।
সমসময় সাবধানে বাইক রাইড করুন, ভালো মানের সার্টিফাইড হেলমেট ব্যাবহার করুন। উচ্চ গতি পরহার করুন, সুস্থ ভাবে ঘরে ফিরতে পারলেই আপনি একজন প্রকৃত বাইকার। হ্যাপি বাইকিং। Lets See Suzuki Gixxer price in Bangladesh here.
লিখেছেনঃ শাওন
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।