Suzuki Gixxer 155 cc ৬,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - রায়হান রিয়াদ
This page was last updated on 16-Jul-2024 05:54pm , By Raihan Opu Bangla
আমি রায়হান রিয়াদ । পেশা পার্ট টাইম ইংরেজি শিক্ষক । ঠিকানা গাইবান্ধা সদর। আমি একটি Suzuki Gixxer 155 cc বাইক ব্যবহার করি । আজ আমি আমার বাইকটি ৬,০০০ কিলোমিটার রাইড এর কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
Suzuki Gixxer 155 Cc ৬,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - রায়হান রিয়াদ
আমার জীবনের প্রথম বাইক ছিল Bajaj Discover 100 । ২০১৪ সালে বাংলাদেশে যখন Suzuki Gixxer 155 cc লঞ্চ করে তখন আমার এক বড় ভাই ২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা দিয়ে Suzuki Gixxer 155 cc বাইকটি কেনে।
বাইকটি নিয়ে ১০ মিনিটের একটা টেস্ট রাইড দিয়েছিলাম তখন থেকেই Suzuki Gixxer 155 cc এর প্রতি একটা ভালবাসা তৈরী হয়। টিউশন এর টাকা যোগার করে সব মিলিয়ে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে Suzuki Gixxer 155 cc এর স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো । নিয়ে নিলাম Bajaj discover 100 ১ লাখ ৪০ হাজার + নাম্বার সহ ১ লাখ ৬০ হাজার ।
বাইকের প্রতি ছোট বেলা থেকেই একটা ভালোবাসা ছিল কিন্তু মধ্যে বিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করায় তা কখনো প্রকাশ করতে পারিনি এ জন্য ২০১০ সাল থেকে টিউশনি শুরু করি টাকা জমাতে থাকি বাইক এর জন্য। Riding is not my hobby it's my passion । বিশেষ করে রাতের বেলা বাইক চালাতে অনেক ভালো লাগে। বাইকের প্রতি কখনো অনিহা সৃষ্টি হয়নি। বিশেষ করে গ্রুপ রাইডিং অনেক ভালো লাগে। আর আমার একটা ইচ্ছে বাংলাদেশ এর ৬৪ জেলা বাইক নিয়ে ঘুরে দেখবো।
Suzuki Gixxer 155 cc Test Ride Review In Bangla – Team BikeBD
Suzuki Gixxer 155 cc বাইকটি প্রথমত আমার স্বপ্ন ছিল। আর এই বাইকের লুক অন্যান্য বাইকের চেয়ে অনেক সুন্দর, কমফোর্ট এবং স্টাইলিশ। এবং এই সেগমেন্ট এ এই বাইকটি আমার মতে বেস্ট মনে হয়েছে । Suzuki Gixxer 155 cc বাইকটি 154.9cc এয়ার কুল্ড, 2 ভাল্ব, ১ সিলিন্ডার, ইঞ্জিন থেকে 14.8 BHP পাওয়ার উৎপন্ন করে এবং 14 Nm টর্ক উৎপন্ন করে ৬০০০ আরপিএম এ । এতে রয়েছে একটি 5-speed গিয়ার বক্স । এতে রয়েছে ৭ স্টেপ এডজাস্টেবল মনোশক । সামনে রয়েছে Disc ব্রেক আর পিছনে Drum ব্রেক।
আমি বাইকটি কিনি ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর । আমার বাসা গাইবান্ধা সদরে হলেও তখন এই বাইকটি স্টকে ছিলো না । পরে জানতে পারি রংপুরে একটা বাইক আছে । পরদিন সকাল ১ টার সময় রওনা দেই এক ফ্রেন্ড এবং এক ছোট ভাই রাশেদ কে নিয়ে। আমার বাসা থেকে শো-রুম এর দূরত্ব ছিল ৪৮ কিলোমিটার।
আমি যখন বাইকটি ক্রয় করি তখন বাইকটির মূল্য ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা । প্রথম বার যখন Gixxer এ উঠে স্টার্ট দেই সেই অনুভূতিটা ছিল অন্যরকম। স্বপ্ন পুরন হলে মানুষ সবচেয়ে বেশি খুশি হয়। ৪ বছরের সাধনার পর কষ্টের টাকায় নিজের বাইক। সত্যিই অসাধারণ একটা অনুভুতি ছিল। ট্রাভেলিং করতে আমার অনেক ভালো লাগে আর সেটা যদি হয় বাইক নিয়ে তাহলে তো কোন কথাই নাই।
এখন পর্যন্ত ৩২ টা জেলা ট্যুর করেছি বাইক নিয়ে। ইচ্ছে আছে ৬৪ জেলা ট্যুর দিব। এশিয়া ঘুরে আসবো বাইক নিয়ে আল্লাহ্ যদি চায় । বাইকটি এখন ৬,০০০ কিলোমিটার রানিং ।
প্রথম ৫০০ কিলোমিটার এ একটা ফ্রি সার্ভিসং করাই। এরপর ১৫০০ কিলোমিটার এবং ব্রেক ইন পিরিয়ড শেষ এ ২৬০০ কিলোমিটার এ সার্ভিসিং করাই এগুলো সব ফ্রি সার্ভিস। প্রতিটা সার্ভিস Suzuki showroom থেকে করিয়েছি।
ব্রেক ইন পিরিয়ড মেইনটেইন করায় ৫ হাজার RPM এর মধ্যে রাইড করিয়েছি এবং গিয়ার সিফটিং মেইনটেইন করে ২৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইলেজ ছিল ২৮ থেকে ৩৫ । ব্রেক ইন পিরিয়ড এর পর তৃতীয় সার্ভিস এর পর মাইলেজ পেয়েছি ৪০+ ।
প্রথম তিনটা ইঞ্জিন অয়েল Suzuki 20w40 ব্যবহার করেছি যেটা Showroom থেকে নেয়া । দাম নিয়েছে ৫০০ টাকা । এরপর Motul 10w40 Mineral ব্যবহার করছি। এটার দাম ৪৯০ টাকা। এখন পর্যন্ত বাইকে কোন পার্টস পরিবর্তন করা হয়নি । এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্পিড পেয়েছি ১২৭ নওগাঁ-রাজশাহী হাইওয়েতে। পিলিয়ন সহ টপ স্পিড পেয়েছি ১২২ ।
Suzuki Gixxer 155 cc বাইকটির কিছু ভালো দিক-
- বাইকটির রাইডিং কম্ফোর্ট অসাধারণ
- হ্যান্ডেলবারটি আপরাইট হওয়ায় সিটি এবং হাইওয়েতে রাইডিং এ কোন প্রব্লেম হয় না
- রাইডিং এর সময় একটা স্পোর্টি ফিল আসে
- লুকস অসাধারন
- বাইকটাতে থ্রটল রেসপন্স অনেক ভালো পাওয়া যায়
- ব্রেকিং যথেষ্ট ভালো
- পিছনে চওড়া টায়ার এর কারনে কর্নারিং এ কোন প্রব্লেম হয় না
- ইঞ্জিন এবং বিল্ড কোয়ালিটি যথেষ্ঠ ভালো
Suzuki Gixxer 155 cc বাইকটির কিছু খারাপ দিক-
- পিলিয়ন সিট অনেক হার্ড
- গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স কম হওয়ায় স্পিড ব্রেকারে বেধে যায়
- হেড লাইট এর আলো রাতে হাইওয়ের জন্য পার্ফেক্ট না
- পার্টসের দাম তুলনামূলক বেশি
- গিয়ার সিফটিং হার্ড
Suzuki Gixxer 155 cc বাইকটি নিয়ে আমার সবচেয়ে বড় লং ট্যুর ছিল গাইবান্ধা টু বাংলাবান্ধা ০ পয়েন্ট ৬০০ কিলোমিটার যাওয়া এবং আসা । রাইডটি ছিল ডে লং পিলিয়ন সহ। পুরো ট্যুর ছিল বৃষ্টির মধ্যে। তবে বৃষ্টির মধ্যে Suzuki Gixxer 155 cc হওয়াতে ব্রেকিং এবং কর্নারিং করার সময় কোন সমস্যা হয় নি।
লং ট্যুরে Gixxer অসাধারণ। তবে ১০০ কিলোমিটার পর পর ৩০ মিনিটের ব্রেক দিয়েছিলাম। আর রাইডিং এ এখন পর্যন্ত কোন ব্যাক পেইন ফিল হয়নি। এছাড়া গাইবান্ধা টু চাপাই যাওয়া আশা করা হয়েছে। মুলত বাইকটি কেনা হইছে লং ট্যুর দেয়ার জন্যই।
লং ট্যুর এ এটার পারফরম্যান্স অনেক ভালো। আমি নিয়মিত ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি ৮০০ কিলোমিটার পর পর এবং প্রতিটি ইঞ্জিন অয়েলের সাথে অয়েল ফিল্টার ও পরিবর্তন করি । এর জন্য খরচ হয় ইঞ্জিন ওয়েল ৪৯০ ওয়েল ফিল্টার ১০০ মোট ৫৯০ টাকা। আর ইঞ্জিন অয়েল আমি নিজেই পরিবর্তন করি ।
Suzuki Gixxer 155 cc বাইকে ৮৫০ এম এল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে হয় । আর অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করলে ৯০০ এম এল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে হয় ।
১৫ দিন পর পর চেইন ক্লিন করি কেরোসিন দিয়ে। ১৫ মিনিট শুকানোর পর গিয়ার ওয়েল দেই। এবং নিয়মিত টায়ার প্রেশার চেক করি। টায়ার প্রেশার সামনে ২৯ এবং পিছনে ৩৪। প্রতি মাসে এয়ার ফিল্টার ক্লিন করি । এছাড়া এখন পর্যন্ত বাইকটিতে কোন সমস্যা ফিল হয়নি বা কোন কাজ করতে হয়নি ।
আমার মতে কমফোর্ট, ব্রেকিং, মাইলেজ,পারফরমেন্স,সিটি হাইওয়ে সব কিছু বিবেচনা করে Gixxer বেস্ট । আর আগের থেকে বর্তমান বাজার মূল্য অনেক কম । তাই বাজেট হিসেব করলে বাইকটি বেষ্ট বাইক বলা যায় । wear helmets , Ride safe । ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ রায়হান রিয়াদ
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।