Yamaha FZS V3 ১০,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - তুষার
This page was last updated on 29-Jul-2024 03:18pm , By Raihan Opu Bangla
আমি শরিফুল ইসলাম তুষার। মোহাম্মদপুর এর ঢাকা উদ্যান এলাকায় বসবাস করি। বর্তমানে আমি Yamaha FZS V3 বাইক ব্যবহার করছি। বাইকটি আমি এখন পর্যন্ত ১০,০০০+ কিলোমিটার রাইড করেছি । আজ আমি আমার বাইকটির ব্যপারে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
Yamaha FZS V3 ১০,০০০ কিমি রাইড রিভিউ
ছোটবেলায় সাইকেল চালাতে খুব ভালোবাসতাম। আস্তে আস্তে যখন বড় হয়ে উঠি তখন বাইক ভালো লাগতে শুরু করে। পরবর্তীতে আমি আমার এক বড় ভাইয়ের বাইক দিয়ে বাইক চালানো শিখি। এরপর বাইক চালানোটা যেন নেশায় পরিনত হয়ে যায়। মূলত বাইক দিয়ে যেকোনো জায়গায় খুব স্বাচ্ছন্দে অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছানো যায়।
আমার জীবনের প্রথম বাইক Yamaha FZS V3 । ছোটবেলা থেকে আমার স্বপ্ন ছিল আমার নিজের একটি বাইক হবে। তার জন্য প্রায় দীর্ঘদিন ধরে আমি টাকা জমাচ্ছিলাম, কিন্তু আমার পছন্দের বাইক কেনার জন্য যে টাকা দরকার তার পুরোটা সংগ্রহ পারিনি।
পরবর্তীতে আমার বড় ভাই আমার জমানো টাকার সাথে প্রয়োজনীয় টাকা যোগ করে আমার স্বপ্নের বাইকটি আমাকে কিনে দেয়। অনেক কষ্ট করে বাইক কেনার জন্য টাকা জমিয়েছি, তাই আমি উপলব্ধি করতে পারি নিজের টাকায় বাইক কিনার যে আনন্দ তা কোন মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় না।
আমার মূলত পছন্দ ছিল Yamaha FZS V2, কিন্তু পরবর্তীতে যখন জানতে পারলাম Yamaha FZS V3 তে ABS ব্রেকিং সিস্টেম আছে তখন চিন্তায় পরে গেলাম। কিন্তু বাইকবিডি এর Yamaha FZS V3 নিয়ে রিভিউ দেখার পর যখন বুঝতে পারলাম ABS ব্রেকিং সিস্টেম কি এবং এটা থাকার কারণে ব্রেকিং এন্ড কন্ট্রোল Yamaha FZS V2 থেকে Yamaha FZS V3 এর অনেক ভালো, তখনই আমি আমার টার্গেট লক করে ফেলি Yamaha FZS V3 বাইকটিতে।
বাইকটি আমি ২,৯৫,০০০ হাজার টাকা দিয়ে এ সি আই মটরস এর ক্রিসেন্ট এন্টারপ্রাইজ, মিরপুর ৬০ ফিট থেকে ক্রয় করি।
Yamaha FZS V3 Test Ride Review In Bangla – Team BikeBD
ক্রিসেন্ট এন্টারপ্রাইজ কর্তৃপক্ষ বাইকটি রেডি করে যখন আমার কাছে হস্তান্তর করে তখন আমি আমার বড় ভাইকে দিয়ে বাইকটি প্রথমবার স্টার্ট করাই, যদিও তিনি বাইক চালাতে পারেন না। মূলত তিনি হেল্প না করলে হয়তো আমার পছন্দের বাইক কেনা হতোনা।
কারণ আমি যে পরিমান টাকা জমিয়েছিলাম তা আমার পছন্দের বাইকের বাজার মূল্যের অর্ধেক মাত্র। আমার ইচ্ছে ছিল বাইকটি প্রথমবার আমার বড় ভাইকে দিয়ে স্টার্ট করা। বাইক স্টার্ট করার পর ইঞ্জিনের স্মুথ শব্দ আমার খুব ভালো লাগে ।
আমি একজন ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া আসার জন্যই বেশিরভাগ সময় বাইকটি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ট্যুরে যাওয়ার জন্য বাইকটি ব্যবহার করে থাকি।
বাইক নিয়ে রাতের ঢাকায় ঘুরে বেড়ানো আমার কাছে একটা অন্যরকম ব্যাপার। এই ফিল কার অথবা রিক্সায় ঘুরে পাওয়া যায় না। শুধু রাত না, আমার অবশ্য সবসময় বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়াতে খুব ভালো লাগে। ইচ্ছে আছে বাইক নিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ করবো।
এই বাইকের ফিচারস গুলোর মধ্যে অন্যতম ফিচার হচ্ছে ABS। এবং বাইকটির ABS এর পারফরমেন্স অসাধারণ। এছাড়াও এই বাইকে রয়েছে Fi Air-cooled 149cc ইঞ্জিন, maximum power : 9.7 kW (13.2PS) @ 8,000 RPM , maximum torque : 12.8 Nm @ 6,000 RPM, ৫ টি গিয়ার , টিউবলেস চাকা , ডুয়াল ডিক্স ব্রেক ।
বাইকটিতে আমি এখন পর্যন্ত ৪ টি ফ্রি সার্ভিস করিয়েছি। আর সার্ভিসগুলো আমি ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন মিরপুর ক্রিসেন্ট এন্টারপ্রাইজ এর হাসান ভাইকে দিয়ে করাই। হাসান ভাই অনেক সুন্দর করে আমার বাইকের সার্ভিসিং করে দেয়। যার ফলে আমার বাইকটি আবার নতুনের মত হয়ে যায় এবং সাউন্ড অনেক স্মুথ হয়।
বাইকের ব্রেক-ইন পিরিয়ড সম্পন্ন করেছি ৩০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত । এই ৩০০০ কিলোমিটার এ ঢাকার মধ্যে প্রতি লিটার অকটেনে ৩২-৩৫ কিলোমিটার এবং হাইওয়েতে ৪৫ কিলোমিটার মাইলেজ পেয়েছি। ব্রেক-ইন পিরিয়ড এর পর সিটিতে প্রতি লিটার অকটেনে এভারেজ ৩৫ এবং হাইওয়েতে ৫০ মাইলেজ পাই।
আমার বাইকটি আমি সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পছন্দ করি, এবং এত যত্ন করি যে এলাকার সবাই বলে তারা নাকি অন্য কাউকে কখনোই বাইকের এত যত্ন করতে দেখেনি।
ভাল মানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার এবং নিয়মিত ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনের দিকে আমি অধিক গুরুত্ব দেই। ব্রেক ইন পিরিয়ড চলাকালীন ইঞ্জিন অয়েল ইয়ামালুব 10w40 মিনারেল ব্যবহার করেছি, যার দাম ৪৯০ টাকা। ৩০০০ হাজার কিলোমিটার পর ইয়ামালুব 10w40 সেমি-সিন্থেটিক ব্যবহার করেছি, যার দাম ৬৮০ টাকা। এবং ৭০০০ কিলোমিটার চালানোর পর আমি ফুল সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি।
বর্তমানে ব্যবহার করি Mobil 1 10w40 ফুল সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল। দাম ১২৮০ টাকা। এখন পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে ব্রেক প্যড ছাড়া আমার বাইকের কোন পার্টস পরিবর্তন করতে হয়নি। শুধুমাত্র একবারই সামনে এবং পিছনের ব্রেক প্যড পরিবর্তন করেছি ৫২০০ কিলোমিটারের পর।
আমার বাইক আমি কোন প্রকার মডিফাই করিনি। আমার কাছে বাইকটির স্টক লুকস খুব ভালো লাগে তাই মডিফাই করার ইচ্ছা হয়নি। আমি আমার বাইকে পিলিয়ন সহ ১১৭ এবং সিঙ্গেল ১১৯ টপ স্পিড পেয়েছি।
Yamaha FZS V3 বাইকের কিছু ভালো দিক-
- লুক ।
- ব্রেকিং সিস্টেম।
- সিটিং পজিশন পিলিয়নসহ বেশ আরামদায়ক।
- মাইলেজ ভালো ।
- কন্ট্রোল ।
প্রত্যেক বাইকের যেমন ভালো দিক থাকে তেমনি খারাপ দিকও থাকে যা এই বাইকেও রয়েছে।
Yamaha FZS V3 বাইকের কিছু খারাপ দিক-
- হেডলাইট হাইওয়ের জন্য পারফেক্ট না ।
- এই দামে বাইকের এয়ার কুল্ড ইঞ্জিন ভাল লাগেনি ।
- কোন গিয়ার ইন্ডিকেটর নেই ।
- রেডি পিকাপ কম হওয়ায় হাইওয়েতে ওভারটেকিং খুব বিপজ্জনক।
- হাই আর পি এম এ বাইকটির ভাইব্রেশন একটু বেশি মনে হয়েছে আমার কাছে।
আমি আমার বাইক নিয়ে এ পর্যন্ত কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর, মৈনট ঘাট, সাভার, ভোলা এই জায়গাগুলোতে ট্যুর করেছি। কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়নি এখন পর্যন্ত। তাই এই বাইকের পারফরম্যান্স নিয়ে আমি ১০০% সন্তুষ্ট। বাইকটি সম্পর্কে আমার চূরান্ত মতামত হচ্ছে, এককথায় বাইকটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে।
যারা স্পিডিং পছন্দ করেন না মূলত এই বাইক তাদের জন্য। আমি দীর্ঘদিন ধরে এই বাইকটি ব্যবহার করছি। তেমন কোনো বড় সমস্যায় পড়িনি এখনো। আশা করি ভালোভাবে মেইনটেইন করতে পারলে বাইকটি দীর্ঘদিন স্মুথ থাকবে। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ শরিফুল ইসলাম তুষার
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।